ঢাকা থেকে বাসায় ফিরে আসার পুরো সময়টা টোটন কোনো কথা বলল না। আব্বু এবারে আর মাইক্রোবাস ভাড়া করার সাহস পেলেন না, সবাইকে নিয়ে বাসে চলে এসেছেন। বাস থেকে নেমে রিকশা করে বাসার কাছাকাছি এসে একেবারে হকচকিয়ে গেলেন। বাসার রাস্তার কাছাকাছি পুলিশ ব্যারিকেড করে রেখেছে, কাউকে যেতে দিচ্ছে না। অস্ত্র হাতে একজন পুলিশ মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, “এই রাস্ত Tয় যেতে পারবেন না। অন্য রাস্তায় যান।”
আব্বু বললেন, “অন্য রাস্তায় যাব মানে? আমার বাসা এই রাস্তায়, আমি অন্য রাস্তায় গিয়ে কী করব? কী হয়েছে এই রাস্তায়?”
“আমি জানি না।”
“কে জানে?”
পুলিশটি এবারে অস্ত্র ঝাঁকিয়ে বলল, “আমি সেটাও জানি না।”
“আমরা তাহলে কী করব? নিজের বাসায় যেতে পারব না?”
“সেটা আমি জানি না। আমার উপর অর্ডার কাউকে যেতে দেয়া যাবে না।”
আম্মু এবারে রিকশা থেকে নেমে এসে কড়া গলায় বললেন, “কে আপনাকে অর্ডার দিয়েছে তাকে ডেকে আনেন। আমরা কথা বলব।”
আম্মুর তেজি গলায় পুলিশ একটু থতমত খেয়ে গেল। মাথা চুলকে বলল, “আপনারা দাঁড়ান, স্যারকে ডেকে আনি।”
কিছুক্ষণের মাঝেই একজন সুদর্শন পুলিশ অফিসার এসে ভুরু কুঁচকে আব্বুকে জিজ্ঞেস করল, “কোনো সমস্যা?”
আব্বু মাথা নাড়লেন, “জি, সমস্যা। আমি আমার বাসায় যেতে পারছি না।”
“আপনার বাসা কোথায়?”
“এই রাস্তায়, এখান থেকে চারটা বাসার পর।”
পুলিশ অফিসার কেমন যেন ইলেকট্রিক শক খাওয়ার মতো চমকে উঠল। বলল, “দোতলা বাসটা? সামনে নারকেল গাছ?”
“জি।”
পুলিশ অফিসার বলল, “মাই গড!”
আম্মু ভয় পাওয়া গলায় বললেন, “কী হয়েছে?”
পুলিশ অফিসার বলল, “আমরা কেউ জানি না কী হয়েছে ঐ বাসায়। টপ সিক্রেট। আমাদের ওপর দায়িত্ব প্রটেকশান দেওয়া। আপনাদের জন্যে কন্ট্রোল টিম অপেক্ষা করছে।
“কোথায়?”
“আপনাদের বাসার সামনে একটা ট্রেইলারে কন্ট্রোল সেন্টার তৈরি হয়েছে। সেখানে। চলেন আমাদের সাথে।”
আম্মু বললেন, “আমাদের জিনিসপত্র?”
“আমরা দেখব।” তারপর যে পুলিশটা তাদের আটকানোর চেষ্টা করছিল তাকে বলল, “এই মালপত্রগুলো দেখে রাখো। খবরদার যেন কিছু না হয়।”
“হবে না স্যার।”
ঠিক তারা যখন পুলিশ অফিসারের সাথে হাঁটতে শুরু করবে তখন অন্য-তিতুনি আব্বুর হাত ধরে বলল, “আব্বু।”
“কী হলো?”
“রিকশা ভাড়া।”
“ও, তাই তো।” তাড়াহুড়াতে আব্বু রিকশা ভাড়ার কথা ভুলেই যাচ্ছিলেন। বড় একটা নোট দিয়ে ভাংতির জন্যে আর অপেক্ষা করলেন না, পুলিশ অফিসারের সাথে হাঁটতে শুরু করলেন।
বাসার সামনে যাওয়ার আগে আরো কয়েকটা ব্যারিকেড পার হতে হলো। সবার শেষে দুজন মানুষ দাঁড়িয়েছিল, তারা পুলিশ অফিসারটিকে থামাল। পুলিশ অফিসার বলল, “এই বাসাটিতে এই ফ্যামিলি থাকে।”
একজন মানুষ বলল, “ঠিক আছে, আমি দেখছি।” তারপর চারজনকে নিয়ে তারা ট্রেইলারের ভেতরে ঢুকে গেল।
আব্বু-আম্মু বা অন্য কেউ এর আগে কখনো এ রকম ট্রেইলারে ঢুকেননি। ভেতরে ঢুকে অবাক হয়ে গেলেন। দেখতে একটা বাসার মতো কিন্তু এই বাসার প্রত্যেকটা স্কয়ার ইঞ্চি যন্ত্রপাতি দিয়ে ঠাসা। যন্ত্রপাতির নিজস্ব একটা শব্দ থাকে, সেই শব্দের জন্যে ভেতরে একটা বিচিত্র চাপা শব্দ। ট্রেইলারের ভেতরে বসার বিশেষ জায়গা নেই। এর মাঝে দুইজন বিদেশিসহ কয়েকজন বসেছিল, আব্বু-আম্মুকে বসানোর জন্যে দুইজন উঠে জায়গা করে দিল।
আবু-আম্মু কিংবা টোটন কিছুই বুঝতে পারছিল না। শুধু অন্য তিতুনি পুরোটা জানে, তাকে ধরার জন্যে এই আয়োজন এবং সে নিজেই এখন তাদের সামনে বসে আছে। আব্বু বললেন, “এখানে কী হচ্ছে আমাদের একটু বলবেন?”
জিন্স এবং টি-শার্ট পরা মানুষটি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তখন টিশটাশ মেয়েটা বলল, “দাঁড়াও। এখানে দুজন বাচ্চা আছে তাদের সামনে কথা বলা কি ঠিক হবে?”
জিন্স-টি-শার্ট পরা ছেলেটা বলল, “আমার মনে হয় পুরো ফ্যামিলির সামনেই কথা বলা উচিত। ফ্যামিলির বড় মানুষদের থেকে হয়তো ছোটরাই আমাদেরকে বেশি ইনপুট দিতে পারবে।”
টিশটাশ মেয়েটা তখন বিদেশি দুইজনের সাথে কথা বলল, তারা আবার নিজেরা নিজেরা গুনগুন করে কিছুক্ষণ কথা বলল, তারপর মাথা নেড়ে সায় দিল। তখন জিন্স আর টি-শার্ট পরা ছেলেটা কথা বলতে শুরু করল। গলা পরিষ্কার করে বলল, “আমি শামীম। ডক্টর শামীম। মহাকাশ বিজ্ঞানে আমার পিএইচ.ডি আছে। আমি আই.এস.এ.এল.-এ কাজ করি। আই.এস.এ.এল. হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল সার্চ ফর এলিয়েন লাইফ। আমাদের টিম লোকাল সাপোর্ট নিয়ে এখন আপনাদের বাসাটাকে ঘিরে রেখেছে। মডার্ন টেকনোলজির সর্বোচ্চ ইলেকট্রনিক্স সার্ভেলেন্স দিয়ে আপনাদের বাসাটা ট্র্যাক করা হচ্ছে।”
আব্বু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কেন?”
“আমরা সন্দেহ করছি আপনাদের বাসায় এই মুহূর্তে একটা এলিয়েন লাইফ ফর্ম ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
আব্বু-আম্মু এবং টোটন একসাথে চিৎকার করে উঠল এবং চিৎকার করতেই থাকল। শুধু অন্য-তিতুনি চুপচাপ বসে থেকে সবার মুখভঙ্গি একধরনের কৌতূহল নিয়ে দেখতে থাকল।
জিন্স-টি-শার্ট পরা শামীম অন্য-তিতুনির দিকে তাকিয়ে বলল, “খুকি।”
“আমার নাম তিতুনি।”
“তিতুনি, তুমি বুঝতে পেরেছ আমরা কি বলেছি? আমরা বলেছি যে তোমাদের বাসায়–”
অন্য-তিতুনি বলল, “আপনারা কী বলছেন আমি বুঝতে পারছি। আপনারা বলেছেন আমাদের বাসায় একটা এলিয়েন আছে।”
টিশটাশ মেয়েটা বলল, “খবরটা শুনে তুমি একটুও অবাক হলে, তাই ভেবেছিলাম তুমি বুঝতে পারোনি।”
অন্য-তিতুনি বলল, “আমি অবাক হই নাই কারণ আমি এটা আগে থেকে জানি। এই এলিয়েন তিন দিন থেকে আমার সাথে থাকে।”
ঘরের ভেতরে একটা বোমা ফেললেও কেউ এত অবাক হতো। একসাথে সবাই চিৎকার করে উঠল। বিদেশি দুইজন অন্য তিতুনির কথা বুঝতে পারেনি বলে তাদেরকে কথাটা অনুবাদ করে দিতে হলো, তখন তারা দুইজন সবার চাইতে জোরে চিৎকার করে উঠল। সবাই অন্য-তিতুনিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে যায়। সবাই একসাথে কথা বলতে থাকে, সবাই কিছু না কিছু প্রশ্ন করে। বিদেশি দুইজনও গলার ভেতর থেকে ঘর্ঘর ধরনের একটা শব্দ করে অন্য-তিতুনিকে কী যেন জিজ্ঞেস করল। অন্য-তিতুনি কারো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আম্মুর দিকে তাকাল, আম্মু জিজ্ঞেস করলেন, “তুই কী বলছিস এসব?”
অন্য-তিতুনি বলল, “সত্যি আম্মু। খোদার কসম।”
আবার সবাই প্রশ্ন করতে থাকে। অন্য-তিতুনি কারো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আবার আম্মুর দিকে তাকাল, আম্মু জিজ্ঞেস করলেন, “এত বড় একটা ব্যাপার, আমাদেরকে কিছু বললি না?”
অন্য-তিতুনি মাথা চুলকে বলল, “আমি ভাবছিলাম তোমাদেরকে বলব, কিন্তু তোমরা ব্যাপারটা কীভাবে নাও, কী মনে করো বুঝতে পারি নাই।”
“কী মনে করি মানে? মনে করার কী আছে?”
অন্য-তিতুনি বলল, “আসলে হয়েছে কী জানেনা, এই এলিয়েনটা বাসার পিছনে ল্যান্ড করেছে। মনে আছে সেদিন ভূমিকম্পের মতো হলো? আমি তখন এটাকে ল্যান্ড করতে দেখেছি। আমাদের বাসার পিছনের জঙ্গলে ল্যান্ড করেছে, আমি ভেবেছিলাম উল্কা। গিয়ে দেখি মাটিতে একটা গর্ত, আমি যখন গর্তটার দিকে তাকিয়েছিলাম তখন গর্তের ভেতর থেকে এলিয়েনটা বের হয়ে এলো।”
সবাই একটা আর্তচিৎকার করে উঠল। টোটন জিজ্ঞেস করল, “তুই ভয় পাসনি?”
অন্য-তিতুনি বলল, “নাহ্।”
“কেন ভয় পাসনি?”
“আমি ভয় পাই নাই, কারণ এলিয়েনটা দেখতে আমার মতো।”
সবাই একসাথে চিৎকার করে উঠল, “তোমার মতো?”
“হ্যাঁ। হুবহু আমার মতো। দেখতে আমার মতো, কথাবার্তা, ভাবভঙ্গি সব কিছু আমার মতো। প্রথমে আমি একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম কিন্তু আস্তে আস্তে তার সাথে একটু খাতির হলো, তখন তার জন্য একটু মায়া হলো, তখন আমি আমার ঘরে লুকিয়ে রেখেছি।”
টোটন তখন চিৎকার করে বলল, “মনে আছে আব্ব, আম্মু? আমি তিতুনির ঘরে আরেকটা তিতুনি দেখেছিলাম? মনে আছে? তার মানে আমি এলিয়েনটাকে দেখেছিলাম!”
অন্য-তিতুনি মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ। যখন তোমরা সবাই ভেতরে খুঁজতে গেছ তখন এলিয়েনটা সিলিং ফ্যানের পাখাটার উপর বসে ছিল, সে জন্যে কেউ খুঁজে পায় নাই।”
বিদেশি দুইজন যেহেতু অন্য-তিতুনির কথা বুঝতে পারছিল না তাই তাকে সব কথা অনুবাদ করে শোনানো হচ্ছিল। তারা টিশটাশ মেয়েটিকে দিয়ে অনেক রকম প্রশ্ন করে যাচ্ছিল কিন্তু অন্য-তিতুনি কথাবার্তা বলছিল আম্মু, আব্বু আর টোটনের সাথে।
আম্মু বললেন, “তার মানে মাঝরাতে যে ফ্রিজ খুলে খাচ্ছিল সেটি এলিয়েন?”
অন্য-তিতুনি মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ আম্মু। ঠিক আমার মতো হয়েছে বলে তার মানুষের মতো খিদে পায়।”
আম্মু বললেন, “ওমা! সে তো একেবারে তোর মতো। আসলে তোর মতো না, আসলে তুই।”
“হ্যাঁ মা! আরেকজন আমি।”
“তুই আমাকে একবার বললি না? বেচারি কোথা থেকে এসে একা একা এই পৃথিবীতে কত না জানি মন খারাপ করেছে। পৃথিবীর মানুষ নিয়ে একটা ভুল ধারণা নিয়ে যাবে না? ভাববে যে এখানে কারো ভেতরে কোনো মায়া নেই?”
বিদেশি দুইজন এবং তার সাথে সাথে তাদের টিমের সবাই এতক্ষণে একেবারে অধৈর্য হয়ে উঠেছিল, এবারে রীতিমতো জোর করে তারা অন্য-তিতুনির সাথে কথা বলার চেষ্টা করল। জিন্স, টি-শার্ট পরা শামীম বেশ গলা উঁচিয়ে বলল, “তিতুনি, তুমি আগে আমাদের কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দাও।”
অন্য-তিতুনি ঘুরে এবারে তার দিকে তাকাল, বলল, “কী প্রশ্ন?”
শামীম কঠিন মুখে জিজ্ঞেস করল, “তুমি ঠিক ঠিক বলছ যে এলিয়েনটা দেখতে একেবারে হুবহু তোমার মতো?”
অন্য-তিতুনির একটু হাসি পেয়ে গেল, বলল, “আমি এই মাত্র আমার আম্মুকে সেটা বলেছি, আপনি শুনেননি?”
শামীম একটু থতমত খেয়ে বলল, “হ্যাঁ শুনেছি। কিন্তু বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই নিশ্চিত হতে চাচ্ছি।”
টিশটাশ মেয়েটা বলল, “আমি ডক্টর নাহার। আমি ইন্টেলিজেন্ট লাইফ ফর্মের বিহেভিয়ার নিয়ে কাজ করি। আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও।”
অন্য-তিতুনি বলল, “বলেন।”
“তুমি দাবি করছ এলিয়েন লাইফ ফর্মটা দেখতে হুবহু তোমার মতো। সেটার ব্যবহার, কথাবার্তা, অর্থাৎ বুদ্ধিমত্তাও কি তোমার মতো?”
“হ্যাঁ আমার মতো।“
শামীম বলল, “এটা খুবই ইম্পরট্যান্ট। এলিয়েন সায়েন্সের অনেক বড় একটা থিসিস হচ্ছে, যদি তারা পৃথিবীতে এসে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চায় তাহলে তারা মানুষের ফর্ম নিবে। তোমার কথা যদি সত্যি হয় তাহলে সেটা কনফার্ম হবে।”
চাঁছাছোলা মাথার বিদেশিটা কী একটা বলল, টিশটাশ নাহার সেটা তিতুনিকে জিজ্ঞেস করল, বলল, “এলিয়েন এক্সপেডিশনের ডিরেক্টর প্রফেসর রিক গার্নার জানতে চাইছেন এই এলিয়েনের কি কোনো বাড়তি ক্ষমতা আছে?”
অন্য-তিতুনি বলল, “মনে হয় আছে।”
“কী রকম ক্ষমতা?”
“আমার সাথে যখন থাকে তখন তো আর ক্ষমতা দেখাতে হয় না। কিন্তু মনে করেন হঠাৎ করে আম্মু ঘরে ঢুকে গেলে সে এত তাড়াতাড়ি সরে যায় যে আম্মু দেখতে পান না। কিংবা মনে করেন, রাত্রে যখন বাসায় আসে তখন দোতলার জানালা দিয়ে শিক বাঁকা করে ঢুকে যায়।”
ন্যাড়া মাথা গার্নার আবার কিছু একটা বলল, ড. নাহার আবার অন্য-তিতুনিকে বলল, “এটা তো শারীরিক ক্ষমতা। মানসিক ক্ষমতা কী আছে?”
অন্য-তিতুনি বলল, “নিশ্চয়ই আছে। সে আমার মতো কথা বলে, চিন্তা করে, মানসিক ক্ষমতা না থাকলে কেমন করে সেটা সম্ভব?”
ন্যাড়া মাথা বিদেশি তখন পাকা চুল বিদেশির সাথে বেশ কিছুক্ষণ গুজগুজ-ফুসফুস করে কথা বলল। তারপর নাহার আর শামীমের সাথে কথা বলল। নাহার আর শামীম তখন অন্য-তিতুনির সাথে কথা বলতে এলো, অন্য-তিতুনি তখন হাত-পা নেড়ে আবু-আম্মু আর টোটনের সাথে এলিয়েনের কাজকর্মের একটা বর্ণনা দিচ্ছিল। শামীম আর নাহার গল্পটা শেষ করার সময় দিল, তারপর বলল, “তিতুনি, আমরা কি তোমার সাথে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারি?”
অন্য-তিতুনি বলল, “জি বলেন।”
নাহার বলল, “আমরা পৃথিবীর মানুষেরা এখন একটা যুগান্তকারী মুহূর্তের সামনে আছি। এই প্রথমবার পৃথিবীর মানুষ একটা এলিয়েনের সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ পেয়েছে। একটা এলিয়েনের সাথে কীভাবে যোগাযোগ করা উচিত সেগুলো নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, অনেক আলোচনা হয়েছে কিন্তু কেউ সেটা সঠিকভাবে জানে না। কিন্তু আমরা অসম্ভব সৌভাগ্যবান যে তোমার সাথে একজন এলিয়েনের যোগাযোগ হয়েছে এবং তুমি যদি আমাদের সাহায্য করো তাহলে পৃথিবীর মানুষেরা প্রথমবার একটা এলিয়েনের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। এখন তিতুনি, তুমি কি আমাদের সাহায্যটুকু করবে?”
“কী রকম সাহায্য?”
এবারে শামীম বলল, “মনে করো এলিয়েনটাকে রাজি করিয়ে তুমি কি তাকে এই ট্রেইলারে নিয়ে আসতে পারবে?”
অন্য-তিতুনি একটু সন্দেহের চোখে দুইজনের দিকে তাকিয়ে বলল, “এলিয়েনকে আনার পর আপনারা কী করবেন? তাকে কি ধরে ফেলবেন? কাটাকুটি করবেন?”
দুইজন একসাথে চিৎকার করে বলল, “না না। মোটেও কাটাকুটি করব না। কাটাকুটি কেন করব? আমরা একটু কথা বলব। কয়েকটা টেস্ট করব। কিছু স্যাম্পল নেব, কিছু ছবি তুলব, স্ক্যানিং করব। এ রকম রুটিন কাজকর্ম।”
অন্য-তিতুনি পরিষ্কার শুনতে পেল মনে মনে তারা বলছে, কোনোমতে এই ট্রেইলারে আনতে পারলেই এলিয়েনটাকে আটকে ফেলা যাবে। একবার আটকে ফেললে তাকে কাটাকুটি করতে সমস্যা কী? মুখে বলছে অন্য কথা। কত বড় বদমাইস!
অন্য-তিতুনি আবার জিজ্ঞেস করল, “আপনারা কথা দিচ্ছেন তার কোনো ক্ষতি করবেন না?”
সবগুলো মিথ্যুক মানুষ জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলল, “অবশ্যই কথা দিচ্ছি।”
“দুইজন বিদেশি মানুষও কথা দিচ্ছেন? তাদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখেন।”
টিশটাশ ড. নাহার বলল, “জিজ্ঞেস করতে হবে না, আমি জানি তারাও কথা দিচ্ছেন।”
অন্য-তিতুনি সবার মনের কথা জানে তাই সে জোর করল, “না। আপনারা জিজ্ঞেস করে দেখেন। আমি তাদের নিজেদের মুখে শুনতে চাই। এই এলিয়েন বহু দূর গ্যালাক্সি থেকে এসেছে, আমি তাকে একটুও বিপদের মুখে ফেলব না।”
নাহার আর শামীম বিরক্ত মুখে তখন ন্যাড়া মাথা এবং পাকা চুলের দুই বিদেশির সাথে কথা বলল, তারা জোরে জোরে মাথা নেড়ে তাদের কথায় সায় দিল। নাহার বলল, “প্রফেসর রিক গার্নার আর প্রফেসর বব ক্লাইড কথা দিচ্ছেন।”
অন্য-তিতুনি তখন উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “ঠিক আছে আমি তাহলে এলিয়েনকে ডেকে আনি।”
নাহার বলল, “যাও।” আমরা তোমার জন্যে এই ট্রেইলারে অপেক্ষা করছি।”
অন্য-তিতুনি ট্রেইলার থেকে বের হয়ে চারিদিকে তাকিয়ে বলল, “আমাদের বাসার চারপাশে এত যন্ত্রপাতি লাগিয়েছে, এগুলো এলিয়েনের কোনো ক্ষতি করবে না তো?”
“না কোনো ক্ষতি করবে না। এগুলো লাগিয়েছি শুধুমাত্র মনিটর করার জন্য।”
অন্য-তিতুনির সাথে সাথে আব্ব, আম্মু আর টোটনও ট্রেইলারের বাইরে এসে দাঁড়ালেন। আম্মু খুশি খুশি গলায় বললেন, “যা, মেয়েটাকে ডেকে আন, আমরা দেখি।”
অন্য-তিতুনি বলল, “আম্মু, তুমি অনেকবার দেখেছ, শুধু বুঝতে পারোনি।”
“এবারে আমি বুঝে-শুনে দেখতে চাই।”
অন্য-তিতুনি বলল, “ঠিক আছে।” তারপর আব্বুর দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, “আব্বু বাসার চাবিটা দাও।” আব্বু পকেট থেকে বের করে চাবিটা এগিয়ে দিলেন। তিতুনি সেই চাবিটা নিয়ে বাসার দিকে হাঁটতে শুরু করে।