পনেরোশো ত্রিশ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাস। গাঢ় কুয়াশাচ্ছন্ন রাত।
সেভিলের বন্দরে তাঁর খাস জাহাজে পিজারো তাঁর সহকারী পেড্রো দে কানডিয়ার সঙ্গে নিজের কেবিনে গুম হয়ে বসে আছেন।
খানিক আগে এ কামরায় পিজারোর আরও চার ভাই ছিলেন। পিজারোর জ্যেষ্ঠ হার্নারেমন্ডো আর বাকি তিন ভাই গঞ্জালো পিজারো, জুয়ান পিজারো আর ফ্রানসিসকো মার্টিন দে আলকান্ট্রা।
নিজের দেশ টুকসিলোতে গিয়ে এই চার ভাইকে পিজারো দলে পেয়েছেন।
এই চার ভাই-এর মধ্যে বড় হার্নারেমন্ডোই সত্যিকার পিজারো পদবি নেবার অধিকারী। তিনিই পিজারোর পিতার একমাত্র বৈধ বিবাহের সন্তান। অন্য তিন ভাই-এর কেউই সে মর্যাদা দাবি করতে পারেন না। গঞ্জালো আর জুয়ান এ অভিযানের নায়ক ফ্রানসিসকোর মতোই অবিবাহিত মাতার সন্তান আর ফ্রানসিসকো আলকান্ট্রা তাঁদের সৎভাই শুধু মায়ের দিক দিয়ে।
পাঁচ ভাই মিলে কিছুক্ষণ আগে এই কেবিনে বসে অনেক জল্পনাকল্পনাই করেছেন। কিন্তু সমস্যার কোনও মীমাংসা কেউ করতে পারেননি।
সমস্যা সত্যিই বুঝি সব সমাধানের বাইরে।
টোলেদোয় সম্রাজ্ঞীর দস্তখত করা দলিল হাতে পেয়ে পিজারো যখন আহ্বাদে আটখানা হয়েছিলেন তখন স্বয়ং সম্রাটের অনুগ্রহধন্য এরকম অভিযানে ছ-মাস সময় পেয়েও মাত্র শ-আড়াই লশকর আর মজবুত কটা জাহাজ জোগাড় করতে প্রাণান্ত হবে ভাবতে পারেননি।
ছ-মাসের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। লোকলশকর আর জাহাজ যা জোগাড় করতে পেরেছেন কাউন্সিল অফ ইন্ডিজ-এর কর্তারা তা দেখলে যে খুশি হবেন না তা বলাই বাহুল্য।
কাউন্সিল অফ ইন্ডিজ-ই নতুন মহাদেশ সংক্রান্ত সব কিছু সম্রাটের হয়ে দেখাশুনা করেন। তাঁরা যদি পিজারোর বিরুদ্ধে তাঁদের মতামত জানান তা হলে সম্রাট সেই মুহূর্তে সব অনুগ্রহ ফিরিয়ে নিয়ে এ অভিযান নাকচ করে দেবেন।
কাউন্সিল অফ ইন্ডিজ পিজারোর অভিযানের আয়োজন সম্বন্ধে কিছু সন্দিগ্ধ নিশ্চয় হয়েছেন। কোনও দেশে, কোনও যুগেই কান ভাঙাবার লোকের অভাব হয় না। পিজারোর আশাতীত অনুগ্রহ পাওয়ায় অনেকেরই চোখ টাটিয়েছিল, তাদেরই কেউ কেউ পিজারোর সত্যিকার অবস্থার কথা রাজদরবারে জানিয়েছে।
কাউন্সিল অফ ইন্ডিজ থেকে ক-জন কর্তাব্যক্তি দু-এক দিনের মধ্যেই পিজারোর অভিযানে আয়োজনের সঠিক খবর জানতে সরেজমিনে তদারক করতে আসছেন এ খবর সেইদিনই সবে এসেছে।
পাঁচ ভাই মিলে অনেক রাত পর্যন্ত আলোচনা করেও এ সংকট থেকে উদ্ধার পাবার কোনও পথ দেখতে পাননি।
অন্য কোনও সরকারি বিভাগ হলে ঘুষ দিয়ে মুখ বন্ধ করবার কথা ভাবা যেত। কিন্তু কাউন্সিল অফ ইন্ডিজ তখনও এ সমস্ত প্রলোভনের ঊর্ধ্বে বলে সবাই জানে। তা ছাড়া কাউন্সিল অফ ইন্ডিজ-এর কর্তারা তো আর হেঁজিপেজি নন। ঘুষই যদি তাঁরা নেন তা হলে নেংটি ইঁদুরের নয়, তাঁদের খাঁই হবে একেবারে সিংহের। অভিযানের খরচ জোগাড় করতে যারা হিমসিম খাচ্ছে তারা এ খাঁই মেটাবে কোথা থেকে!
না, কাউন্সিল অফ ইন্ডিজকে সন্তুষ্ট করবার কি তাদের চোখে ধুলো দেবার কোনও উপায়ই নেই।
আসল অবস্থাটা কাউন্সিলের কাছে জানবার পর সম্রাট বিরক্ত হয়ে শুধু এ অভিযানই বন্ধ করে দেবেন না, তাঁকে মিথ্যে স্তোক দিয়ে ফাঁকি দেবার জন্যে রেগে আগুন হয়ে আরও কঠিন শাস্তি দেওয়াই তাঁর পক্ষে স্বাভাবিক।
এ বিপদ এড়াবার একমাত্র উপায় অভিযানের আশায় জলাঞ্জলি দিয়ে জাহাজ-টাহাজ ছেড়ে একেবারে গা ঢাকা দেওয়া কি না, পাঁচ ভাই শেষ পর্যন্ত সেইটেই ভেবে ঠিক করবার জন্য মাঝরাতে পরস্পরের কাছে বিদায় নিয়েছেন। বড় ভাই হার্নারেমন্ডোর সঙ্গে আর তিন ভাই গেছেন অন্য দুটি জাহাজে। ফ্রানসিসকো।
পিজারো অনুগত দে কানডিয়ার সঙ্গে তাঁর কামরায় এসে বসেছেন হতাশ ভাবে।
এই রাত্রের মধ্যেই একটা কোনও সিদ্ধান্ত তাঁকে নিতেই হবে।
হয় কাউন্সিল অফ ইন্ডিজকে তাঁর যথার্থ অবস্থা জানিয়ে যে কোনও শাস্তির জন্যে প্রস্তুত হয়ে সম্রাটের কাছে আত্মসমর্পণ, নয় জাহাজ-টাহাজ সব ছেড়ে নিঃশব্দে পলায়ন।
বাইরে গাঢ় কুয়াশার দিকে চেয়ে হঠাৎ পিজারোর মনে হয়েছে পালাতে হলে এরকম কুয়াশাচ্ছন্ন অন্ধকার রাতই তো সবচেয়ে সুবিধের। মাঝি, মাল্লা লশকরদের—এমনকী তাঁর ভাইদেরও কাউকে কিছু না জানিয়ে চুপি চুপি শুতে যাওয়ার নাম করে জাহাজ থেকে জলে নেমে সাঁতরে তীরে উঠে একবার নিরুদ্দেশ হয়ে গেলে ক্ষতি কী?
তাঁর পালানো নিয়ে সাড়া পড়বার আগেই তীরে নেমে কোনওরকমে স্পেন ছেড়ে সাগরপারে উধাও হওয়ার চেষ্টা করা তবু সম্ভব। এ যাত্রায় সেখানে পৌঁছে সম্রাটের কোপদৃষ্টি এড়াতে পারলে ভবিষ্যতে হয়তো আবার সোনায় মোড়া দেশ খোঁজবার সুযোগ পেতে পারেন। আর না যদি পান তা হলেও স্পেনের কারাগারে বন্দি হয়ে তো পচে মরতে হবে না।
ভাইদের কিছু না জানিয়ে যাওয়ার জন্যে মনে তাঁর কোনও খুঁত থাকা উচিত নয়। রাজদরবারের সঙ্গে শর্ত তো তিনি করেছেন, ভাইরা তো নয়। তিনি ফেরারি হলে তাঁর অপরাধের জন্যে তাদের দায়ী করবে না কেউ। লোকসান তাদের বিশেষ কিছু হবে না শুধু একটু আশাভঙ্গ হওয়া ছাড়া। কুড়ি বছরের নিরুদ্দেশ ভাই হঠাৎ উদয় হয়ে তাদেরও ধাপ্পা দিয়ে ঠকিয়ে গেল এই রাগে তারা গালাগাল দিতে দিতে ঘরে ফিরে যাবে নিশ্চয়।
সবচেয়ে বেশি গালাগাল দেবে বড়ভাই হার্নারেমন্ডো। সে বয়সেই বড় নয়, মেজাজও তার সবচেয়ে কড়া। বেজন্মা বলে ফ্রানসিসকো পিজারোকে সে যে গাল দেবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। ও গাল দেবার অধিকার একমাত্র তারই আছে।
ভাইরা যা করে করুক, যাই ভাবুক তার লোকলশকর, পিজারোর সামনে ওই। একটি রাস্তাই খোলা। এই কুয়াশায় ঢাকা রাত্রে নিঃশব্দে জাহাজ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া।
পিজারো সংকল্প স্থির করে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে হঠাৎ চমকে ওঠেন।
এ কী! তাঁর জাহাজ যে চলতে শুরু করেছে!
কিন্তু কেমন করে তা সম্ভব? বন্দরে নোঙর বাঁধা জাহাজ হঠাৎ নিজে থেকে ভেসে যেতে পারে কী করে? নোঙর কি তা হলে উপড়ে গেছে হঠাৎ? তা তো অসম্ভব। অজানা সমুদ্রে বাঁধবার জন্যে তৈরি অত্যন্ত মজবুত নোঙর। তা ছাড়া নোঙর উপড়ে দেবার মতো কোনও ঢেউ কি স্রোতের বেগই এখানে নেই।
নোঙর কি তা হলে তোলা হয়েছে? কিন্তু তাঁর হুকুম ছাড়া কেউ তো তা তুলতে পারে না।
ব্যাপারটা যে একেবারে ভৌতিক বলে মনে হচ্ছে। সবচেয়ে বিপদ হচ্ছে এই গাঢ় কুয়াশায় আপনা-থেকে-ভেসে-যাওয়া জাহাজ যেখানে-সেখানে ধাক্কা খেয়ে আর লাগিয়ে যে কোনও মুহূর্তে দারুণ ফ্যাসাদ বাধাতে পারে!
তখন গভীর রাত। সমস্ত মাঝিমাল্লাই বন্দরে বাঁধা জাহাজে কাজকর্মের দায় না থাকায় নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমোচ্ছ।
পিজারো আর তাঁর পিছনে কানডিয়াই শুধু শশব্যস্ত হয়ে জাহাজের হাল ধরবার টঙের দিকে ছুটে যান।
টঙ পর্যন্ত উঠতে হয় না। তার আগেই সিঁড়িতে থমকে দাঁড়াতে হয় পিজারো আর
তার পিছনে কানডিয়াকে।
পাইলটের টঙে কে একজন তাঁদের দিকে পিস্তল লক্ষ্য করে দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে পিস্তল, গলার স্বরে কিন্তু যেন হাসির আভাস।
শান্ত হয়ে আপনি একলা ওপরে ওঠে আসুন, সেনিয়র পিজারো। কোনও ভয় আপনার নেই। গোড়ায় না বুঝে একটা হ্যাঙ্গামা-ট্যাঙ্গামা পাছে করে বসেন এই জন্যে পিস্তলটা চোতে হয়েছে। সুবোধ ছেলের মতো ওপরে এসে সব শুনলেই বুঝবেন আজ আপনার কত বড় উপকার করেছি।
আমার উপকার করেছেন। আমার জাহাজ লুকিয়ে নোঙর তুলে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দিয়ে? পিজারো গর্জন করে ওঠেন, আপনাকে হাতে পেলে আমি টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ব—
না, কিছুই অমন করবেন না।অত্যন্ত শান্ত গলায় উত্তর আসে—বরং কী পুরস্কার দেবেন তাই ভেবে সারা হবেন।
পিজারোর এবার সন্দেহ হয় একটা দারুণ উন্মাদের হাতেই তাঁর জাহাজ পড়েছে।
কিন্তু আপনি কী করছেন তা জানেন! রাগের চেয়ে উদ্বেগই এবার পিজারোর গলায় বেশি প্রকাশ পায়—এই অন্ধকার কুয়াশায় জাহাজ যে বানচাল হয়ে যাবে এখুনি।
না, তা হবে না।—এবার উত্তরটা দৃঢ়স্বরে দেওয়া—সেভিলের তীর থেকে সমুদ্র পর্যন্ত এই গুয়াদালকুইভীর নদীর সমস্ত আটঘাট অন্ধিসন্ধি নিজের হাতের তেলোর মতো আমার জানা। মায়ের কোলে ছেলের মতো আপনার এ জাহাজকে আমি নদীর মোহনায় সান লকার-এর চড়া দেখতে দেখতে পার করে দেব।
সান স্যুকার-এর চড়া!
নামটা সবিস্ময়ে উচ্চারণ করেন পিজারো। তারপর বিমূঢ়ভাবে জিজ্ঞাসা করেন, সান লুকার-এর চড়া পার করে দেবার কথা বলছেন কেন?
বলছি, সেই মতলবেই বন্দর থেকে নিঃশব্দে নোঙর তুলে এ জাহাজের হাল ধরেছি!—লোকটি তার পিস্তলটা এবার সরিয়ে নিয়ে বলে।
পিজারো তাকে আক্রমণ করবার এ সুযোগ কিন্তু নেন না। বিস্ময়ের সঙ্গে একটু যেন সম্রমের সুরে জিজ্ঞাসা করেন, কে আপনি?
নাম শুনলে কি চিনতে পারবেন! আমার নাম কাপিন সানসেদো!
কাপিন সানসেদো! সত্যিই কথাটা পিজারোর পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন হয়। কাপিন সানসেদোর সঙ্গে সাক্ষাৎ পরিচয় তাঁর কখনও হয়নি। কিন্তু হিসপানিওলা ফার্নানদিনা থেকে নতুন মহাদেশের যে কোনও উপকূলে নিপুণতম নাবিক হিসাবে যাঁদের নাম উচ্চারিত হয় কাপিন সানসেদো তাঁদেরই একজন। সানসেদো নামটা তো অপরিচিত নয়ই, সম্প্রতি টোলেডো আর সেভিলে নানা জনের আলাপ-আলোচনায় মানুষটার নিদারুণ ভাগ্য বিপর্যয়ের কাহিনীও তাঁর কানে এসেছে। সানসেদো সম্রাটের ধনরত্ন চুরি করে যে ফেরারি তাও পিজারো জানেন।
এই মানুষটা তাঁর জাহাজে কোথা থেকে এসে উদয় হল? তাঁর জাহাজ নিয়ে এভাবে গোপনে ভেসে পড়ার উদ্দেশ্যই বা কী? সানসেদো কি নিজের পালাবার সুবিধের জন্যেই এ ফন্দি করেছেন? তা যদি করে থাকেন তা হলে তা তো নেহাত আহাম্মুকি ছাড়া কিছু নয়। শুধু ওই পিস্তলের জোরে জাহাজসুদ্ধ লোককে কতক্ষণ তিনি ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন! চরম দুর্ভাগ্যের চাপে এমন একটা মানুষের সত্যিই কি তা হলে মাথায় গোলমাল কিছু হয়েছে?
কথাগুলো এই ভেবেই একটু সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে পিজারো এবার সহজ শান্তভাবে জিজ্ঞাসা করেন, নদীর মোহনায় সান লকার-এর চড়া পার করে দেবেন বললেন। বললেন তাতে আমার এমন উপকার করছেন যার জন্যে আমি কৃতজ্ঞ হব। উপকারটা কী তা তো বুঝতে পারছি না!
এখনও বুঝতে পারছেন না! হেসে বলেন সানসেদো, আপনার ওই দৈত্যাকার সঙ্গীকে ফিরে যেতে হুকুম দিয়ে ওপরে উঠে আসুন, সব বুঝিয়ে বলছি। সব কথা না শুনে বুড়োর ওপর হামলা যে করবেন না এটুকু ভরসা আপনার ওপর বোধহয় রাখতে পারি। আসুন।
পিজারো সানসেদোর নির্দেশ মতোই কানডিয়াকে ফিরে যেতে বলে ওপরে গিয়ে ওঠেন। মনে মনে তখন তিনি স্থির করে নিয়েছেন যে সত্যি উন্মাদ বলে বুঝতে পারলে সানসেদোকে গায়ের জোরে বন্দি করতে তিনি দ্বিধা করবেন না।
সানসেদো তাঁর মনের কথা যেন কেমন করে টের পেয়ে বলেন, এখনও আমাকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে আপনি পারছেন না, জানি। আশা করি আমার কৈফিয়তটা শুনলে পারবেন। আপনার জাহাজ নিয়ে লুকিয়ে পালিয়ে সান লকার-এর চড়া পার করে দিয়ে আপনার এই উপকার করছি যে কাউন্সিল অফ ইন্ডিজ-এর কর্তারা এসে আপনার জাহাজ আর তদারক করতে পারবে না। ওরা যখন আসবে তখন আপনি ওদের নাগালের বাইরে মাঝদরিয়ায়।
কিন্তু তাতে আমার লাভ? হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞাসা করেন পিজারো।
লাভ ষোলো আনা। আপনার জাহাজে কতজন লশকর আপনি নিয়ে গেছেন ওদের গুণে দেখার কোনও উপায় নেই। ওরা যখন শুধু হিসেব নিতে আসার খবরই জানিয়েছিল, আপনাকে বন্দরে হাজির থাকার কোনও হুকুম পাঠায়নি তখন আপনার এভাবে চলে আসার কোনও দোষ ধরতে পারবে না। আপনার প্রতিনিধি হিসেবে আপনার ভাই হার্নারেমন্ডো যা বলবে তা মেনে নেওয়া ছাড়া ওদের উপায় নেই। লশকরদের গুনতিতে যা কম পড়বে সব আপনার জাহাজেই আগে চলে গেছে। জানাবে হার্নারেমন্ডো। সে হিসেব নিয়ে গোলমাল ওরা নিজেদের গলদ ঢাকতেই করবে বলে মনে হয় না। যে বিপদে আপনি পড়েছিলেন তা থেকে বাঁচবার এর চেয়ে ভাল। উপায় অন্তত আর কিছু নেই। এখন স্পেন ছেড়ে ক্যানারি দ্বীপাবলির গোমেরায় গিয়ে আপনি অপেক্ষা করুন। হার্নারেমন্ডো আর দুটি জাহাজ নিয়ে সেখানেই আপনার সঙ্গে মিলবে।
কিন্তু এসব কী করে সম্ভব? হতাশভাবে বলেন পিজারো, হার্নারেমন্ডোর এ ব্যবস্থার কথা জানা তো দরকার। আজ রাত্রে শেষ দেখা যখন আমাদের হয়েছে তখন এরকম ঘটনা আমাদের কল্পনার বাইরে।
কিচ্ছু ভাববেন না। জোরের সঙ্গে আশ্বাস দেন সানসেদো, কাল সকাল থেকে যা যা করতে হবে তার পুরো নির্দেশ হার্নারেমন্ডোকে আপনার নামেই পাঠিয়ে না দিয়ে আমরা আসিনি। আপনি তো লিখতে জানেন না, সুতরাং সকালে আপনার জাহাজ গায়েব হয়েছে দেখবার পর অন্যের হাতে লেখা সে নির্দেশ হার্নারেমন্ডো অমান্য করবে না।
নিরক্ষরতার খোঁচাটা হজম করে পিজারো সবিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করেন, নিজের বুদ্ধিতে এত কাণ্ড আপনি করেছেন একা?
না। হেসে বলেন সানসেদো, একা নয়, নিজের বুদ্ধিতেও না। আমার এক সঙ্গী সহায় এই জাহাজেই আছেন।