১২তম অধ্যায়
অশ্বপালকবেশে নকুলের প্রবেশ
বৈশম্পায়ন কহিলেন, অনন্তর নকুল দ্রুত পদসঞ্চারে মৎস্যরাজের নিকট গমন করিতে লাগিলেন। মহারাজ বিরাট ও অন্যান্য ব্যক্তি তাঁহাকে মেঘনির্মুক্ত সূৰ্য্যমণ্ডলের ন্যায় বোধ করিতে লাগিলেন। তিনি বাজিরাজি নিরীক্ষণ করিতে করিতে আগমন করিতেছেন দেখিয়া মৎস্যরাজ অনুচরগণকে কহিলেন, “এই অমরোপম পুরুষ কোথা হইতে আগমন করিতেছেন? ইনি যখন আমার অশ্বগণকে বিশেষরূপে নিরীক্ষণ করিতেছেন, তখন অবশ্যই একজন সুবিচক্ষণ হয়তত্ত্ববেত্তা হইবেন, সন্দেহ নাই। যাহা হউক, সত্বর উহাকে আমার সমীপে আনয়ন কর।”
এমন সময়ে নকুল রাজসন্নিধানে সমুপস্থিত হইয়া কহিলেন, “হে মহারাজ! আপনার জয় হউক, আমি নৃপতিগণের অভিপ্রেত হয়তত্ত্ববেত্তা; আপনার অশ্বপাল হইতে বাসনা করি।”
বিরাট কহিলেন, “আমি যান, ধন ও নিবেশন সমুদয় তোমাকে প্রদান করিতেছি; তুমি অশ্বপাল হইবার উপযুক্ত পাত্র। এক্ষণে তুমি কোথা হইতে কি প্রকারে আগমন করিতেছ, পূর্ব্বে কোথায় ছিলো, এবং কি কি শিল্পকর্ম্ম জান, তাহার পরিচয় প্রদান কর।”
নকুল কহিলেন, “মহারাজ! পূর্ব্বে পাণ্ডবজ্যেষ্ঠ রাজা যুধিষ্ঠির আমাকে অশ্বকাৰ্য্যে নিযুক্ত করিয়াছিলেন। আমি অশ্বগণের প্রকৃতি, শিক্ষা ও চিকিৎসা এবং দুষ্ট অশ্বের শাসন সবিশেষ অবগত আছি। আমার নিকটে কোন বাহন কাতর হইতে পায় না। এবং অশ্বের কথা দূরে থাকুক, আমার নিকটে বড়বা [দুষ্টা ঘোটকী] গণেরও দুষ্টতা সুদূরপরাহত হয়। রাজা যুধিষ্ঠির ও অন্যান্য ব্যক্তি আমাকে গ্ৰন্থিক বলিয়া আহ্বান করিতেন।”
বিরাট কহিলেন, “আমার যাবতীয় অশ্ব, অশ্বযোজক ও সারথিগণ অদ্যাবধি তোমার অধীন হউক। এক্ষণে যদি এই কাৰ্যই তোমার অভিলষিত হইল, তবে তোমাকে কিরূপ বেতন করিতে হইবে, বল। কিন্তু অশ্ববন্ধন তোমার উপযুক্ত কাৰ্য্য নয়; আমার মতে তুমি ভূপালের উপযুক্ত। তুমি রাজা যুধিষ্ঠিরের নিকটেও যেরূপ ছিলে, আমার নিকটেও সেইরূপ প্রিয়দর্শন হইয়া থাক। হায়! এক্ষণে রাজা ভৃত্যবিহীন হইয়া কিরূপে অরণ্যমধ্যে অবস্থিতি করিতেছেন!” গন্ধর্ব্বোপম নকুল এইরূপে বিরাটকর্ত্তৃক সমাদৃত হইয়া অন্যের অজ্ঞাতসারে বাস করিতে লাগিলেন।
হে রাজন! সসাগরা ধরাধীশ্বর পাণ্ডবগণ এইরূপে দুঃখিত হইয়াও প্রতিজ্ঞা-পূরণের নিমিত্ত বিরাট-নগরে অজ্ঞাতবাস সমাধান করিতে লাগিলেন।
পাণ্ডবপ্ৰবেশপর্ব্বাধ্যায় সমাপ্ত।