১২৭তম অধ্যায়
সোমক নৃপতিবৃত্তান্ত
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “হে বাগ্মিসত্তম! মহারাজ সোমক কিরূপ প্রভাবসম্পন্ন ছিলেন ও কি কর্ম্ম করিয়া বলবীৰ্য্য প্ৰকাশ করিয়াছিলেন, ইহা শুনিতে আমার সাতিশয় বাসনা হইতেছে।”
লোমশ কহিলেন, “হে যুধিষ্ঠির! সোমক নৃপতি অতি ধার্ম্মিক ছিলেন। তাহার একশত ভাৰ্য্যা ছিল। বহুকাল অতীত হইল, কিন্তু ভূপতি তাহাদের কাহারও গর্ভে অপত্যলাভ করিতে সমর্থ হইলেন না। পরিশেষে তাঁহার বৃদ্ধাবস্থায় বহু যত্নে সেই শতস্ত্রীর মধ্যে একজনের গর্ভে জন্তুনামে এক পুত্ৰ জন্মিল। মাতৃগণ কামভোগের প্রতি দৃষ্টিপাত না করিয়া সতত সেই পুত্রটির চতুর্দ্দিকে উপবিষ্ট থাকিতেন।
“একদা একটি পিপীলিকা জন্তুর কটিদেশে দংশন করিলে বালক অত্যন্ত ব্যথিত হইয়া ক্ৰন্দন করিতে লাগিল। তদর্শনে তাহার মাতৃগণ সাতিশয় দুঃখিতচিত্তে তাঁহার চতুর্দ্দিকে বসিয়া চীৎকারস্বরে রোদন করিতে লাগিলেন। মহারাজ সোমক সভামধ্যে ঋত্বিক ও অমাত্যগণ-সমভিব্যাহারে উপবিষ্ট ছিলেন, এমত সময়ে অকস্মাৎ অন্তঃপুর হইতে ক্ৰন্দনধ্বনি তাহার কর্ণকুহরে প্রবিষ্ট হইবামাত্র তিনি সেই বৃত্তান্তসকল অবগত হইবার নিমিত্ত দ্বৌবারিককে প্রেরণ করিলেন। দ্বৌবারিক যথাবৎ বৃত্তান্তসকল অবগত হইয়া রাজসমীপে নিবেদন করিলে তিনি তৎক্ষণাৎ মন্ত্রিগণসমভিব্যাহারে গাত্ৰোত্থানপূর্ব্বক অন্তঃপুরে প্রবেশ করিয়া পুত্রকে সান্ত্বনা করিলেন।
সোমকের শতপুত্র-কামনা
“কিয়ৎক্ষণ পরে মহারাজ সোমক ঋত্বিক ও অমাত্যগণসহ অন্তঃপুর হইতে বহির্গত হইয়া সভামণ্ডপে উপবেশনপূর্ব্বক কহিতে লাগিলেন, ‘হায়! এক পুত্র কি কষ্টদায়ক! উহা অপেক্ষা অপুত্র হওয়া উত্তম। একপুত্র চিররোগিতা অপেক্ষাও ক্লেশকর। আমি পুত্রলাভেচ্ছায় এই একশত পত্নীর পরীক্ষা করিয়া পাণিগ্রহণ করিয়াছি; কিন্তু কাহারও গর্ভে অপত্য উৎপন্ন হইল না; কেবল এই একমাত্ৰ জন্তু বহু-প্রযত্নে জন্মপরিগ্রহ করিয়াছে। হায়! ইহার পর দুঃখের বিষয় আর কি আছে? আমার ও পত্নীসমূদয়ের বয়ঃক্ৰম অতিক্রান্ত হইয়াছে, পুত্রলাভের আর সম্ভাবনা নাই। ঐ এক পুত্র আমাদিগের প্রাণ পৰ্য্যন্ত সমর্পিত হইয়াছে; অতএব হে দ্বিজোত্তম! যদি এমত কোন কর্ম্ম থাকে, যাহাতে শত পুত্র উৎপন্ন হইতে পারে, তাহা আদেশ করুন; ঐ কাৰ্য্য লঘু বা মহৎ, সুকর বা দুষ্কর হউক, অবশ্যই সম্পন্ন করিব।”
“ঋত্বিক কহিলেন, “হে মহারাজ! শত পুত্ৰ সমুৎপন্ন হইতে পারে, এমন কর্ম্ম আছে। যদি আপনি তাহার অনুষ্ঠান করিতে সমর্থ হয়েন, তবে আদেশ করি।” সোমক কহিলেন, “হে ভগবন! যদ্দ্বরা শত পুত্র সমুৎপন্ন হইতে পারে, এমন কোন কাৰ্য্য কর্ত্তব্য বা অকর্ত্তব্য হইলেও আমি তাহা অবশ্যই সম্পন্ন করিব, সন্দেহ নাই।”
অনন্তর ঋত্বিক কহিলেন, ‘হে রাজন! আমি আমার ভবনে এক যজ্ঞ করিব, সেই যজ্ঞে আপনাকে স্বীয় আত্মজ জন্তুর বসার [মেদ—চর্ব্বি] দ্বারা আহুতি প্ৰদান করিতে হইবে। সেই সময় আপনার পত্নীগণ আহুতিসমুত্থিত ধূম আঘ্রাণ করিলে তাঁহারা সকলেই এক এক মহাবলপরাক্রান্ত পুত্র প্রসব করিবেন, আর ঐ জন্তুও আপনার যে পত্নীর গর্ভে জন্মিয়াছে, পুনরায় তাঁহারই গর্ভে জন্মগ্রহণ করিবে, উহার বামপার্শ্বে এক অপূর্ব্ব সৌবর্ণ-চিহ্ন থাকিবে।”