১২৫তম অধ্যায়
মদাসুরভীত ইন্দ্রের চ্যবন শরণাগতি
লোমশ কহিলেন, “মহারাজ! দেবরাজ ইন্দ্ৰ সেই ভীষণানন জিঘাংসু অসুরকে সাক্ষাৎ কৃতান্তের ন্যায় মুখবাদানপূর্ব্বক ভক্ষণ করিতে ধাবমান অবলোকন করিয়া সৃক্কণী [অধরোষ্ঠের প্রান্তভাগ] পরিলেহনপূর্ব্বক ভয়বিহ্লচিত্তে চ্যবনকে কহিলেন, “হে বিপ্ৰ! আমি সত্য বলিতেছি, অদ্য প্রভৃতি অশ্বিনীকুমারযুগল সোমভাগী হইবেন; আর এই বিধি নির্দ্দিষ্ট হইল যে, আপনার সমারম্ভ কদাচ মিথ্যা হইবে না। আমি নিশ্চয় জানিলাম যে, আপনি অনর্থকর্ম্মে হস্তক্ষেপ করিবেন না, অদ্য আপনি যেমন অশ্বিনীকুমারকে সোমভাজন করিলেন, সেইরূপ আপনার অসাধারণ ক্ষমতাও সর্ব্বত্র প্রচারিত হইবে এবং সুকন্যাজনক শৰ্য্যাতির লোকাতিশায়িনী কীর্ত্তি জগতীতলে প্রথিত থাকিবে, এই নিমিত্তই আমি আপনার সহিত ঈদৃশ ব্যবহার করিয়াছি, এক্ষণে আপনি আমার প্রতি প্রীত হউন, আপনার যাহা ইচ্ছা হয় করুন।”
“দেবরাজের এবংবিধ বিনয়নম্র বাক্যশ্রবণে মহাত্মা ভাৰ্গবের ক্ৰোধানল অচিরাৎ উপশম হইলে, তিনি তাঁহাকে মন্দাসুর হইতে মুক্ত করিলেন। পরে সেই মদ স্ত্রীজাতি, পান, অক্ষত্ৰীড়া ও মৃগয়াতে বিভক্ত করিয়া দিলেন। অনন্তর মহর্ষি চ্যবন সোমরসদ্বারা ইন্দ্র এবং অশ্বিনীকুমার প্রভৃতি দেবতাদিগকে পরিতৃপ্ত করিয়া নৃপতি শৰ্য্যাতির যজ্ঞ সমাপন ও তদীয় প্রতিষ্ঠা সর্ব্বত্র প্রখ্যাপনপূর্ব্বক পতিপরায়ণা সুকন্যার সহিত অরণ্যে কালব্যাপন করিতে লাগিলেন।
পাণ্ডগণের চ্যবনসরোবরে স্নান
“মহারাজ! সেই মহর্ষি চ্যাবনের এই পবিত্র সরোবর শোভা পাইতেছে, ইহাতে আপনি সোদরগণের সহিত পিতৃলোক ও দেবালোকের তর্পণ করুন। পরে সিকতাক্ষ-তীৰ্থ দৰ্শন করিয়া সৈন্ধবারণ্যে গমনপূর্ব্বক কুল্যাসকল [কৃত্রিম জলাশয়] সন্দর্শন করিবেন; অনন্তর সমুদয় পুষ্করে অবগাহন করিয়া স্থাণুমন্ত্র জপ করিয়া সিদ্ধিলাভ করিবেন। হে নরশ্রেষ্ঠ! এই ত্রেতা ও দ্বাপরযুগের সন্ধিস্থান প্ৰত্যক্ষ হইতেছে, এখানে স্নান করিলে সমস্ত পাপ হইতে বিনির্মুক্ত হয়। এই আর্চ্চীক-পর্ব্বত অতি উত্তম স্থান; ইহাতে মনীষিগণ বাস করেন, এখানে সর্ব্বদাই উত্তমোত্তম ফল, মূল ও জল প্ৰাপ্ত হওয়া যায় এবং বিশুদ্ধ সমীরণও নিরন্তর প্রবহমাণ হইয়া থাকে। হে যুধিষ্ঠির! এই সকল বহুবিধ দেবচৈত্য সুশোভিত রহিয়াছে, এই চন্দ্ৰমাঃ-তীর্থ, বৈখানস ও বালখিল্য প্রভৃতি বায়ুভোজী ঋষিগণ এই তীর্থে বাস করেন। এই তিনটি পবিত্ৰ শৃঙ্গ এবং তিনটি প্রস্রবণ যথাক্রমে প্ৰদক্ষিণ করিয়া স্নান করুন। রাজা শান্তনু, শুনক, নর ও নারায়ণ ইহারা এই তীর্থে সনাতন-স্থান প্রাপ্ত হইয়াছেন। এই আচীক-পর্ব্বতে দেবতারা নিত্য শয়ান আছেন; পিতৃগণ এবং মহর্ষিগণ এই স্থানে চরুভোজন করিয়াছেন, আপনি তাঁহাদিগকে অৰ্চনা করুন।
“হে পাণ্ডবরাজ! এই স্রোতস্বতী যমুনাতে ভগবান কৃষ্ণ তপস্যা করিয়াছিলেন, এ স্থানে নকুল, সহদেব, ভীমসেন ও দ্রৌপদী প্রভৃতি আমরা সকলেই আপনার সহিত গমন করিব। হে মনুজেশ্বর! এই পবিত্র ইন্দ্রপ্রস্রবণ; যে স্থানে ধাতা, বিধাতা এবং বরুণ মহোন্নতি প্ৰাপ্ত হইয়াছেন, এই স্থানে সেই সকল ধার্ম্মিক ক্ষমাশীলেরা বাস করিয়াছিলেন। ঋজুবুদ্ধি মৈত্ৰগণের পরম শুভকর এই গিরিবর দৃষ্ট হইতেছে। মহারাজ! এই মহর্ষিগণসেবিত পাপভয়নিবারণী যমুনা; যে স্থানে রাজা সোমক, সাহদেবি ও মান্ধাতা যজ্ঞ করিয়াছিলেন।”