যুধিষ্ঠির রাজা অতি ব্যাকুলিত মনে।
সহদেবে কহিলেন মলিন বদনে।।
আমার বচন ভাই কর অবধান।
তিন জনে না দেখিয়া বাহিরায় প্রাণ।।
অস্থির আমার মন হয় কি কারণে।
কার সনে বনে যুদ্ধ করে তিন জনে।।
যাত সহদেব জল আনহ সত্বরে।
অন্বেষণ কর আর তিন সহোদরে।।
এত শুনি সহদেব চলেন সত্বর।
প্রবেশ করেন গিয়া কানন ভিতর।।
দেখিয়া বনের শোভা হরষিত মন।
চতুর্দ্দিকে দেখে বহু কুসুম-কানন।।
নির্ভয় শরীর বীর করিল গমন।
কত শত শোভা দেখে, কে করে গণন।।
জন্মেজয় রাজা বলে, কহ মুনিবর।
বিস্মিত হইল কিছু আমার অন্তর।।
ধর্ম্মপুত্র যুধিষ্ঠির বুদ্ধির সাগর।
পৃথিবীতে নাহি তাঁর তুল্য কোন নর।।
সসাগরা রাজ্য পালে যেই মহামতি।
বুদ্ধিতে নাহিক সম শুক্র বৃহস্পতি।।
বুদ্ধির সাগর রাজা বুদ্ধি গেল কোথা।
বিশেষ করিয়া মুনি কহ এই কথা।।
সহদেবে জিজ্ঞাসিত যদি নৃপমণি।
সকল কহিত তাঁরে ভবিষ্য-কাহিনী।।
সহদেব স্থানে সব পাইলে সংবাদ।
তবে না হইত মুনি এতেক প্রমাদ।।
মুনি বলে, অবধান কর মহামতি।
দৈব খণ্ডাইতে কারো নাহিক শকতি।।
মায়া করি ধর্ম্ম তাঁর বুদ্ধি নিল হরি।
এজন্য বলিল রাজা, আন গিয়া বারি।।
হেথা সহদেব রাজা, আন গিয়া বারি।।
হেথা সহদেব বীর বনের ভিতর।
মনের আনন্দে যান নির্ভয় অন্তর।।
বনমধ্যে তিন জনে করে অন্বেষণ।
ভ্রমণ করেন বহু গহন কানন।।
ভীমের দেখিল চিহ্ন অরণ্যেতে আছে।
পদাঘাতে গিরিশৃঙ্গ চূর্ণ করি গেছে।।
চিহ্ন দেখি সেই পথে যান মহাবীর।
মুহূর্ত্তেকে উত্তরিল সরোবর তীর।।
সরোবর দৃষ্টিমাত্র মাদ্রীর তনয়।
তৃষ্ণায় আকুল হইল ধর্ম্মের মায়ায়।।
জলপান করিবারে যান সরোবরে।
বকরূপী ধর্ম্মরাজ কহেন তাহারে।।
চারি প্রশ্ন পূরি তবে কর জলপান।
অগ্রে যদি পান কর, যাবে যমস্থান।।
ধর্ম্মবাক্য সহদেব না শুনি শ্রবণে।
তৃষ্ণায় আকুল হয়ে যান বারি পানে।।
বিধির নির্ব্বন্ধ কেবা খণ্ডিবারে পারে।
পরশ করিবামাত্র সহদেব মরে।।
সুন্দর কমল তুল্য ভাসিতে লাগিল।
হেথা যুধিষ্ঠির মনে চিন্তা উপজিল।।