লিডিয়া স্থির দৃষ্টিতে তার সামনে বসে থাকা মধ্যবয়স্ক মানুষটির দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর একটু ঝুঁকে পড়ে বলল, “তুমি এই সহজ কাজটা করতে পারলে না?”
“আমি আমার কাজ একেবারে নিখুঁত ভাবে করেছি। মেয়ের মায়ের গাড়ীর চাকা পাংচার করিয়ে গ্রোসারী স্টোরের পার্কিং লটে আটকে দিয়েছি। জন নামের শ্রবণ প্রতিবন্ধী ছেলের গাড়ীতে ইলেকট্রনিক ডিভাইস লাগিয়েছি, মেয়েটা ঠিক ঠিক জনের গাড়ীতে উঠেছে। জন যখন পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামছে তখন তার ব্রেক ওয়েল ফেলে দিয়ে ব্রেক অকেজো করেছি, কাজটা নিশ্চিত করার জন্যে ফুয়েল ইনজেকশানে বাড়তি ফুয়েল দিয়ে গাড়ীর স্পিড বাড়িয়ে দিয়েছি এর চাইতে নিখুঁত পরিকল্পনা করা আর সেই পরিকল্পনা কাজে লাগানো এই পৃথিবীর কারো পক্ষে সম্ভব না। এই গাড়ীটার প্যাসেঞ্জারদের কোনো ভাবে বেঁচে আসা সম্ভব না।”
লিডিয়া বলল, “কিন্তু গাড়ীটা খাদে পড়ে যায়নি। গাড়ীটা একেবারে ভালো আছে। ছেলে মেয়েগুলোকে হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত করেনি, ছেড়ে দিয়েছে।”
“আমি কেমন করে জানব ষোল বছরের একটা ছেলে এরকম স্টান্টম্যানের মতো গাড়ী চালায়? যে ভাবে সে গাড়ীটাকে ঘুরিয়ে থামিয়ে দিয়েছে সেই পদ্ধতিটা সিক্রেট এজেন্টের লোকেরা তাদের কমান্ডোদের শেখায়। গাড়ীর মোমেন্টাম আর এংগুলার মোমেন্টাম ব্যবহার করে গাড়ীকে থামানো, উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দিলে যে মোমেন্টাম পরিবর্তন হয় সেটা দিয়ে”
“আমি তোমার থেকে পদার্থ বিজ্ঞান শিখতে আসিনি।”
মধ্যবয়স্ক মানুষটি বলল, “আমার কাছে পুরোটার ভিডিও আছে। আমি পিছনে পিছনে ছিলাম, তুমি ভিডিওটা একবার দেখো তাহলে বুঝবে এই ছেলে কীভাবে গাড়ী চালায়। মাত্র ষোল বছর বয়স, কানে শুনতে পায়। কিন্তু গাড়ী চালানো দেখলে মনে হয় ইন্ডি ফাইভ হান্ড্রেডের ড্রাইভার।”
লিডিয়া বিরক্ত হয়ে বলল, “আমার ভিডিও দেখে মুগ্ধ হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আমার প্রয়োজন কাজ উদ্ধার করা। পনেরা ষোল বছরের একটা মেয়েকে শেষ করতে পার না।”
“একটা মানুষকে খরচা করতে আমার তিরিশ সেকেন্ড সময়ও লাগে না। কিন্তু তুমি বলেছ কাজটা ক্লিন হতে হবে। কেউ যেন বুঝতে না পারে এটা মার্ডার, যেন মনে হয় এটা একসিডেন্ট। সেজন্যেই তো এতো যন্ত্রণা।”
“কিন্তু এখন কী লাভ হল? সবাই জেনে গেল তাদেরকে তুমি মার্ডার করার চেষ্টা করেছ।”
মধ্যবয়স্ক মানুষটা মাথা নাড়ল, বলল, “না। কেউ জানে নাই। একসিডেন্টের পর অনেক মানুষের ভীড় ছিল আমি তার মাঝে গাড়ীর হুড খুলে ফুয়েল ইনজেকশান থেকে আমার ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস খুলে নিয়েছি। ছেলেটা বা মেয়েটা কিছু জানে না। পুলিশকে বলেছে গাড়ীর ব্রেক ওয়েল পড়ে ব্রেক ফেল করেছে। পুলিশ উল্টো ছেলেটাকে দোষ দিচ্ছে, তার ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করে দিতে পারে। কাজেই তুমি নিশ্চিন্ত থাক এই সুপার ড্রাইভার আমার প্রজেক্ট ফেল করিয়ে দিয়েছে কিন্তু এখনো কেউ কিছু জানে না।”
লিডিয়া মাথা নেড়ে বলল, “আমি যদি ঐ ছেলেটা কিংবা মেয়েটা হতাম তাহলে বুঝে যেতাম।”
“কিন্তু ঐ ছেলে আর মেয়ে তুমি না। তুমি হচ্ছ একটা রাক্ষুসি ওরা রাক্ষুসি না। ওরা সাধারণ ছেলে মেয়ে। ওরা তোমার মতো চিন্তা করে না। যদি করতো তাহলে পুলিশকে বলত। ওরা বলে নাই, আমি জানি। পুলিশকে আমরা কন্ট্রোল করি।”
লিডিয়া তার চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল, “ঠিক আছে। প্রথম বার তোমার প্রজেক্ট ফেল করেছে, দ্বিতীয়বার ফেল করতে পারবে না।”
“করবে না। তুমি নিশ্চিত থাক।”
“কখন করবে?”
“একটু সময় দিতে হবে। যদি এই মুহূর্তে আবার চেষ্টা করি তাহলে সবার সন্দেহ হবে।”
“কিন্তু আমার হাতে সময় নেই। এর মাঝে এক সপ্তাহ শেষ হয়ে গেছে।”
“কম পক্ষে দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে চেষ্টা করতে হবে, তা না হলে সন্দেহ করবে।”
“এক সপ্তাহ।”
মধ্যবয়স্ক মানুষটা খোঁচা খোঁচা দাড়িতে ঢাকা তার গালটা চুলকে বলল, “ঠিক আছে এক সপ্তাহ। তার মানে পরিকল্পনাটা আরো নিখুঁত করতে হবে। কোনো ফাঁক থাকতে পারবে না। সবচেয়ে ভাল হয় বুলেট দিয়ে একেবারে মাথায় গুলী করলে, কোনো ঝুঁকি থাকে না। স্কুলের একটা বাচ্চা মেয়ের মাথায় বুলেট দিয়ে গুলী করতে পারে শুধু মাথা খারাপ মানুষ। এই দেশে সেই রকম মানুষের অভাব নাই। দুইদিন পর পর কোনো না কোনো স্কুলে কলেজে ইউনিভার্সিটিতে মাথা খারাপ মানুষ এসে অটোমেটিক রাইফেল দিয়ে গুলী করে বাচ্চাদের মারছে। এরকম একজন নিয়ে আসতে হবে। তবে মাথা খারাপদের কন্ট্রোল করা একটু কঠিন–”
লিডিয়া হাত তুলে মানুষটাকে থামাল, বলল, “আমার ডিটেলস জানার দরকার নেই। কাজ হলেই আমি খুশী।”
মধ্যবয়স্ক মানুষটা দাঁত বের করে হেসে বলল, “আমি সেটা জানি। মেয়েটা মার্ডার হলেই যে তুমি খুশী হবে রাক্ষুসী লিডিয়া আমি সেটা জানি।”
লিডিয়া হিস হিস করে বলল, “তুমি মনে করো না আমাকে রাক্ষুসী ডেকে তুমি আমাকে অপমান করতে পারবে।”
মধ্যবয়স্ক মানুষটি হঠাৎ করে গম্ভীর হয়ে গেল, “আমি তোমাকে অপমান করার চেষ্টা করছি না, আমি সত্যি কথাটাই বলছি।” লিডিয়া শীতল দৃষ্টিতে মধ্যবয়স্ক মানুষটির দিকে তাকিয়ে রইল, কোনো উত্তর দিল না।