ব্ৰহ্মার সভাসৌন্দর্য্য-কথন
নারদ কহিলেন, হে ধর্ম্মরাজ! এক্ষণে পিতামহ ব্ৰহ্মার সভা বর্ণন করিতেছি, শ্রবণ করুন! ঐ সভার তুলনা নাই। পূর্ব্বকালে সত্যযুগে ভগবান আদিত্য মর্ত্যলোকদর্শনাথী হইয়া পরমসুখে ভূলোকে অবতীর্ণ হইবার নিমিত্ত নরকলেবর পরিগ্রহ করিয়া অপরিশ্রান্তচিত্তে ইতস্ততঃ সঞ্চরণ করিতে করিতে ব্ৰহ্মার মানসী সভা অবলোকন করেন। সভা দৰ্শন করিয়া তিনি আমাকে অকপটে কহিলেন, “হে নারদ! ব্রহ্মার মানসী সভা অনির্দেশ্য, অপ্রমেয় ও সর্ব্বভূত-মনোরম।” আমি আদিত্যমুখে ব্ৰহ্মসভার শোভাবর্ণন শ্রবণ করিয়া তৎক্ষণাৎ তদর্শনে একান্ত কুতুহলোক্রান্ত হইয়া তাঁহাকে কহিলাম, “ভগবান! এক্ষণে সর্ব্বপাপনাশিনী শুভা ব্রহ্মসভা সন্দর্শন করিতে আমার সাতিশয় অভিলাষ হইতেছে, অতএব আমি যেরূপ তপস্যা, ঔষধ, যোগ ও কর্ম্ম দ্বারা তাহা দেখিতে পাই, এমত বলিয়া দিউন।” দিবাকর এই কথা শুনিয়া বৰ্ষসহস্রাসাধ্য ব্রতের কথা উত্থাপন করিয়া কহিলেন, “হে তপোধন! তুমি একান্তমনে ব্ৰহ্মব্ৰত অনুষ্ঠান কর।”
অনন্তর আমি তদীয় আদেশে হিমালয়ের পৃষ্ঠদেশে ঐ মহাব্ৰত সাধন করিলাম। তৎপরে তাহার সমভিব্যাহারে ব্ৰহ্মসভায় উপনীত হইয়া দেখিলাম, দৃষ্টান্তপ্রদর্শনপূর্ব্বক ঐ অপূর্ব্বসভা নির্দেশ করা যায় না, ক্ষণে ক্ষণে উহা নানা রূপ ধারণ করে, পরিমাণ ও সংস্থানবিষয়ে উহার কেহই কিছুই অবধারণ করিতে পারে না। ফলতঃ আমি ঐরূপ অদৃষ্টপূর্ব্ব বস্তু কদাচ প্রত্যক্ষ করি নাই। ঐ সভা অতিশয় সুখপ্রদ ও নাতিশীতোষ্ণ, তন্মধ্যে প্রবিষ্ট হইলে লোকের ক্ষুৎপিপাসাজনিত ক্লেশ ও গ্লানিচ্ছেদ হয়, আপাততঃ দেখিলে প্ৰতীত হয়, যেন সভা নানাবিধ অতিভাস্বর মণিদ্বারা নির্মিত হইয়াছে। স্তম্ভ দ্বারা ঐ শাশ্বতী সভা অবলম্বিত নহে, তথাচ স্বস্থান হইতে বিচলিত হইতেছে না। তথায় নানাবিধ দিব্য ও অমিত প্ৰভ ভাবসমুদয় আবির্ভূত রহিয়াছে। ব্ৰাহ্মী সভার প্রভাপুঞ্জ চন্দ্ৰ, সূৰ্য্য, অগ্নি ও বিদ্যুৎকে উপহাস করিয়া নভোমণ্ডলে শোভা বিস্তার করিতেছে। তন্মধ্যে অদ্বিতীয় ভগবান সর্ব্বলোকপিতামহ ব্ৰহ্মা স্বয়ং দেবমায়া পরিগ্রহ করিয়া অধ্যাসীন হইয়া থাকেন। প্রজাপতিগণ তাঁহার উপাসনা করিতেছেন। আর দক্ষ, প্রচেতাঃ, আঙ্গিরাঃ, পুলহ, মরীচি, কশ্যপ, ভৃগু, অত্ৰি, বশিষ্ঠ, গৌতম, পুলস্ত্য, ক্রতু, প্ৰহ্লাদ, কর্দম, অথর্ব্ব আঙ্গিরস, বালখিল্য, মরীচিপ, মন, অন্তরীক্ষ, বিদ্যা, বায়ু, তেজ, জল, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ, প্রকৃতি, বিকৃতি, পৃথিবীর অন্যান্য কারণসমুদয়, মহাতেজাঃ অগস্ত্য, বীৰ্য্যবান মার্কণ্ডেয়, জমদগ্নি, ভরদ্বাজ, সংবৰ্ত্ত, চ্যবন, মহাভাগ দুর্ব্বাসা, পরম-ধাৰ্মিক ঋষ্যশৃঙ্গ, ভগবান, সনৎকুমার, মহাতপাঃ যোগাচাৰ্য্য অসিত, দেবল, তত্ত্ববিৎ জৈগীষব্য, জিতশত্রু, ঋষভ, মহাবীৰ্য্য মণি, অষ্টাঙ্গসম্পন্ন বিগ্ৰহধারী আয়ুর্ব্বেদ, নক্ষত্রগণপরিবৃত চন্দ্ৰ, সহস্রকর দিবাকর, বায়ু, ক্রতুগণ, সঙ্কল্প ও প্রাণ এই সমস্ত মহাব্ৰতপরায়ণ মূর্তিমান মহাত্মা ও অন্যান্য বহুসংখ্যক ব্যক্তিগণ ব্ৰহ্মার উপাসনা করিতেছেন। ধর্ম্ম, অর্থ, কাম, হর্ষ, দ্বেষ, তপস্যা ও সপ্তবিংশতি অন্সরগণ তথায় আগমন করিয়া থাকেন। লোকপালবৰ্গ, শুক্ৰ, বৃহস্পতি, অঙ্গারক, শনৈশ্চর, রাহু প্রভৃতি গ্রহসমস্ত, মন্ত্র, রথীন্তর, হরিমান, বসুমান, নামদ্বন্দ্বাদাহৃত, অধিরাজসহ আদিত্যগণ, মরুৎ সমুদয়, বিশ্বকর্ম্মা, বসুবৰ্গ, পিতৃগণ, সমস্ত হবিঃ, ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্ব্বেদ, অথর্ব্ববেদ, সর্ব্বশাস্ত্র, ইতিহাস, উপবেদ, বেদাঙ্গ সমুদয়, যজ্ঞ, সোম, দেবগণ, দুৰ্গতিরণী, সাবিত্রী, সপ্তবিধ বাণী, মেধা, ধূতি, স্মৃতি, প্রজ্ঞা, বুদ্ধি, যশ, ক্ষমা, সাম, স্তুতিশাস্ত্ৰ, বিবিধ গাথা, দেহসম্পন্ন তর্কযুক্ত ভাষ্য, নানাপ্রকার নাটক, বিবিধ প্রকার কাব্য, বহবিধ কথা, সমস্ত আখ্যায়িকা, সমুদয় কারিকা, এই সমস্ত পাবন ও অন্যান্য গুরুপূজকগণ তথায় অবস্থান করিয়া থাকেন। ক্ষণ, লব, মুহূর্ত, দিবা, রাত্রি, পক্ষ, মাস, ছয় ঋতু, সংবৎসর, পঞ্চযুগ, চতুর্বিধ অহোরাত্র, দিব্য নিত্য অক্ষয় অব্যয়, কালচক্র ও ধর্ম্মচক্ৰ ইহারাও প্রতিনিয়ত আসিয়া থাকেন। দিতি, অদিতি, দনু, সুরসা, বিনতা, ইরা, কালিকা, সুরভি, দেবী সরমা গৌতমী, প্রতা, কদ্রু, দেবমাতৃগণ, রুদ্রাণী, শ্ৰী, ভদ্রা, ষষ্ঠী, মূর্তিমতী দেবী পৃথিবী, হ্রী, স্বাহা, কীর্তি, সুরা দেবী, শচী, পুষ্টি, অরুন্ধতী, সংবৃত্তি, আশা, নিয়তি, সৃষ্টি, দেবী রতি ও অন্যান্য দেবীগণ ভগবান ব্ৰহ্মার উপাসনা করিয়া থাকেন। দ্বাদশ আদিত্য, অষ্টবসু, একাদশ রুদ্র, উনপঞ্চাসৎ মরুৎ ও অশ্বিনীকুমারযুগল, বিশ্বদেবীসমূহ, সাধ্যসার্থ মনোজব পিতৃগণ সকলে সভাসীন ব্ৰহ্মার উপাসনা করেন। হে পুরুষৰ্ষভ! ঐ পিতৃলোকদিগের সপ্তগণ, তন্মধ্যে চতুষ্টয় শরীরধারী ও ত্রয় অশরীরী। সকলেই বিরাট-প্রভাব, লোকবিশ্রুত ও চতুর্ব্বর্গপূজিত; প্রথম গণের নাম অগ্নিষ্বাত্ত, দ্বিতীয়ের নাম গর্হপত্য, তৃতীয়ের নাম নাকচার, চতুর্থের নাম সোমপ, পঞ্চমের নাম একশৃঙ্গ, ষষ্ঠের নাম চতুর্ব্বেদ, সপ্তমের নাম কলা। ইহারা প্রথমতঃ আপ্যায়িত হইলে সোম পরিতৃপ্ত হয়েন। রাক্ষসগণ, পিশাচবৰ্গ, দানবসমুদয়, গুহ্যকসকল, নাগসার্থ, সুপর্ণসমূহ ও পশুসমুদয় পিতামহ ব্ৰহ্মার আরাধনা করে। স্থাবর-জঙ্গমসকল, মহাভূত সমুদয়, দেবেন্দ্র পুরন্দর, বরুণ, কুবের, যম, ঊমাসহ মহাদেব তথায় সর্ব্বদা সমাগত হইয়া থাকেন। মহাসেন, দেব নারায়ণ, দেবর্ষিবর্গ, বালখিল্য ঋষিগণ, যোনিজ ও অযোনিজ ঋষি-সকল আর ত্ৰিভুবনে যে সমস্ত স্থাবর-জঙ্গম দেখিতে পাওয়া যায়, ইহারা সকলেই ব্ৰহ্মার উপাসনা করেন। হে নরাধিপ! আমি স্বয়ং তথায় উপস্থিত হইয়া এই সমস্ত স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করিয়াছি। অষ্টাশীতি সহস্ৰ ঊৰ্দ্ধরেতা ঋষি, প্ৰজাবান, পঞ্চাশৎ ঋষি ও অন্যান্য দেবতা সকলে ব্ৰহ্মাকে মনোবাঞ্ছা পূরণপূর্ব্বক দর্শন ও প্ৰণাম করিয়া স্ব স্ব স্থানে প্রস্থান করিয়া থাকেন।
সর্ব্বভুতদয়াবান ব্ৰহ্মা অভ্যাগত অতিথিগণ, দেব, দৈত্য, নাগ, দ্বিজ, যক্ষ, সুপর্ণ, কালেয়, অপ্সরা ও গন্ধর্ব্ব সকলেরই সমুচিত অভ্যর্থনা করিয়া থাকেন। তিনি যথাযোগ্য সমাদর প্রদর্শনপূর্ব্বক সাত্ত্বনাবাদ, সম্মান ও অর্থপ্ৰদান দ্বারা তাহাদিগের প্রীতি সম্পাদন করেন। এই সমস্ত আগন্তুকদিগের সমাগমে ও দগড়বাদ্যে সেই সুখপ্ৰদা সভা আকুল হইয়া উঠে। সর্ব্বতেজোময়ী, দিব্যা, ব্রহ্মর্ষিগণসেবিতা, শ্রমাপহারিণী, সেই সভা ব্রাহ্মী শ্ৰী দ্বারা দীপ্যমান হইয়া অদ্ভুত শোভা পাইয়া থাকে। হে রাজশাৰ্দূল! যাদৃশ তোমার এই সভা মনুষ্যলোকের দুর্লভ, তাদৃশ ত্ৰিলোকমধ্যে ব্ৰহ্মসভা দুষ্প্রাপ্য। হে ভারতবংশশ্রেষ্ঠ! আমি দেবলোকে এই সমস্ত সভা প্রত্যক্ষ করিয়াছি, এক্ষণে মনুষ্যলোকে সর্ব্বশ্রেষ্ঠতম তোমার এই সভা দৰ্শন করিলাম।
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “হে তপোধন! আপনি কহিলেন যে, প্ৰায় সমুদয় রাজলোক সমসভার অন্তর্গত রহিয়াছেন। বরুণদেবের সভায় নাগগণ, দৈত্যেন্দ্র সকল ও অনেকগনেক সরিৎ ও সাগর অবস্থিতি করিতেছেন। ধনপতি কুবেরের সভায় যক্ষ, রাক্ষস, গুহ্যক, গন্ধর্ব্ব ও অন্সরাগণ এবং ভগবান ভবানীপতি বিরাজিত রহিয়াছেন। ব্ৰহ্মার সভায় মহর্ষিগণ ও দেবসমূহ বাস করেন এবং তথায় সর্ব্বপ্রকার শাস্ত্রও বিদ্যমান রহিয়াছে। ত্ৰিদশাধিপতি ইন্দ্রের সভা কেবল দেবগণে অলঙ্কৃত এবং তাহার কোন কোন প্রদেশ গন্ধর্ব্ব ও মহর্ষিগণ কর্তৃক পরিসেবিত। সেই মহতী অমরাধিপতিসভায় কেবল একমাত্র রাজর্ষি হরিশ্চন্দ্র পরমসুখে বাস করিতেছেন। হে মুনিবর! রাজা হরিশ্চন্দ্ৰ কি প্রকার তপস্যা বা পুণ্যকর্মের অনুষ্ঠান করিয়াছেন যে, তিনি দেবরাজের সমকক্ষতা প্রাপ্ত হইলেন? আর পিতৃলোকগত মহাভাগ পিতা পাণ্ডুর সহিত আপনার কিরূপে সাক্ষাৎকার হইল এবং প্রত্যাগমনসময়ে সেই মহাপুরুষ আপনাকে কি কহিলেন, তাহা আনুপূর্বিক বর্ণন করুন। আপনার নিকট সবিস্তার শ্রবণ করিতে আমি একান্ত কৌতূহলাক্রান্ত হইয়াছি।”
রাজর্ষি হরিশ্চন্দ্রের রাজসূয় যশঃকীর্তন
তপোধন দেবর্ষি কহিলেন, “মহারাজ! যাহার বিষয় জানিবার নিমিত্ত এত ঔৎসুক্য প্রকাশ করিতেছেন, আমি আপনার নিকট সেই রাজর্ষি হরিশ্চন্দ্রের মাহাত্ম্য কীর্তন করি, শ্রবণ করুন।”
রাজা হরিশ্চন্দ্ৰ সসাগর সদ্বীপা বসুন্ধরার সম্রাট ছিলেন, পৃথিবীস্থ সমস্ত মহীপাল তাহার শাসনের অনুবর্তী হইয়া চলিতেন। তিনি জয়শীল সুবর্ণালঙ্কৃত এক রথে আরোহণ করিয়া অস্ত্রশস্ত্র প্রভাবে সপ্ত-দ্বীপ জয় করিয়া রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করেন। তাহার আজ্ঞা পাইবামাত্র রাজগণ ভূরি ভুরি ধন আনয়ন করিলেন এবং তাহারা ব্রাহ্মণদিগের পরিবেষ্টৃপদে নিযুক্ত হইলেন। সেই যজ্ঞে সমুপস্থিত যাজকেরা যত অর্থ প্রার্থনা করিলেন, রাজর্ষি প্রীতমনে তাঁহাদিগকে প্রার্থিত ধনের পঞ্চগুণ অধিক প্রদান করিলেন। নানা দিগদেশ হইতে ব্রাহ্মণগণ সমাগত হয়েন। মহারাজ হরিশ্চন্দ্র প্রত্যাগমনকালে বিবিধ রত্নসমূহ প্রদানপূর্ব্বক তাহাদিগকে পরিতৃপ্ত করিয়া বিদায় করিতেন। বিবিধ ভক্ষ্য, ভোজ্য ও রত্নসমূহে পরিতৃপ্ত দ্বিজগণ সন্তুষ্ট হইয়া রাজাকে ভুরি ভুরি আশীর্ব্বাদ করিতে লাগিলেন। রাজা যজ্ঞফলে এবং ব্ৰাহ্মণগণের আশীর্ব্বাদ-প্রভাবে সমস্ত রাজলোক অপেক্ষা সমধিক তেজস্বী ও যশস্বী হইয়া উঠিলেন। সেই প্ৰবল প্রতাপ রাজর্ষি মহাক্রতু-সমাপন্যান্তে সাম্রাজ্যে অভিষিক্ত হইয়া অনির্ব্বচনীয় শোভা পাইতে লাগিলেন। হে নরাধিপ! যে-সকল মহীপালেরা রাজসূয়যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন, তাঁহারা পরমাহ্লাদে ইন্দ্রের সহিত কালব্যাপন করিতে পারেন এবং যাহারা যুদ্ধে পলায়ন না করিয়া রণক্ষেত্রে পঞ্চত্বপ্রাপ্ত হয়েন, অথবা অতি কঠোর তপস্যা দ্বারা কলেবর পরিত্যাগ করেন, তাহারাও ইন্দ্ৰলোকে উত্তীর্ণ হইয়া অপূর্ব্ব শ্ৰীধারণপূর্ব্বক দীপ্তি পাইতে থাকেন।
নারদ-নিকটে পাণ্ডুর রাজসূয় নির্দেশশ্রবণ
হে কৌন্তেয়! আপনার পিতা পাণ্ডু রাজা হরিশ্চন্দ্রের লোকাতিশায়িনী শোভা সন্দর্শনে বিস্মিত হইয়া আমাকে মনুষ্যলোকে আসিতে দেখিয়া প্ৰণতিপূর্ব্বক নিবেদন করিলেন, ‘মহর্ষে! আপনি নরলোকে যাইতেছেন, যুধিষ্ঠিরকে কহিবেন, ভ্রাতৃগণ তাঁহার বশীভুত এবং তিনি সমুদয় পৃথিবী জয় করিতে সমর্থ; অতএব ক্রতুশ্রেষ্ঠ রাজসূয়-যজ্ঞের যেন অনুষ্ঠান করেন। তিনি যজ্ঞ সম্পন্ন করিলে আমিও রাজা হরিশ্চন্দ্রের ন্যায় বহু দিবস অবিচ্ছিন্ন সুখসম্ভোগ করিয়া ইন্দ্রের সহিত কালযাপন করিতে পারিব।” অনন্তর আমি আপনার পিতাকে কহিলাম, ‘মহারাজ! যদি আমি ভূলোকে গমন করি, অবশ্যই আপনার পুত্রকে ত্বদীয় প্রার্থনা জানাইব।” হে ভারতৰ্ষভ! এক্ষণে আপনি প্ৰযত্নাতিশয় সহকারে পিতার সঙ্কল্পসিদ্ধিবিষয়ে তৎপর হউন, তাহা হইলে পূর্ব্বপুরুষগণসমভিব্যাহারে মহেন্দ্ৰলোকে গমন করিবেন, সন্দেহ নাই। মহারাজ! রাজসূয় প্রধান যজ্ঞ বলিয়া পরিগণিত, কিন্তু ইহাতে অনেক বিঘ্ন উপস্থিত হয়। যজ্ঞহন্তা ব্ৰহ্মরােক্ষসেরা সতত ইহার ছিদ্রান্বেষণে তৎপর থাকে, ইহাতে ক্ষত্রিয়ান্তক ও পৃথিবীক্ষয়কারণ যুদ্ধ উপস্থিত হয়। ফলত কোন না কোন অনিষ্টপাত অবশ্যই ঘটিয়া থাকে; অতএব এই সমস্ত সম্যক পৰ্য্যালোচনা করিয়া যাহাতে ক্ষেমলাভ হয়, তাহার অনুষ্ঠান করুন। প্রতিদিন গাত্ৰোত্থানপূর্ব্বক অবহিত হইয়া চাতুর্ব্বর্ণ্যের রক্ষণাবেক্ষণ করিবেন এবং ধন দ্বারা যোগানুষ্ঠান, আমোদ-প্রমোদ ও দ্বিজাতিগণকে পরিতৃপ্ত করিবেন।
মহারাজ! যাহা জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, তৎসমুদয় সবিস্তুর কীর্তন করিলাম; এক্ষণে বিদায় হই, আদ্য দশার্হ নগরীতে গমন করিব। নারদ পাণ্ডবগণকে এই কথা বলিয়া সমভিব্যাহারী ঋষিগণে পরিবৃত হইয়া যাত্ৰা করিলেন। তিনি প্রস্থান করিলে পর রাজা যুথিষ্ঠরি অনুজগণের সহিত রাজসূয় যজ্ঞের পরামর্শ করিতে লাগিলেন।
লোকপালসভাখ্যানপৰ্ব্বাধ্যায় সমাপ্ত।