১১. ফ্লিকাস নিকি আর ত্রিপিকে ঘুম থেকে তুলল

ফ্লিকাস নিকি আর ত্রিপিকে ঘুম থেকে তুলল, উত্তেজিত গলায় বলল, এক্ষুণি উঠে যাও। সাংঘাতিক একটা ব্যাপার ঘটেছে।

কী ব্যাপার? নিকি চোখ কচলে বলল, আরো মানুষ চলে এসেছে?

না। তার থেকেও সাংঘাতিক ব্যাপার।

নিকি আর ত্রিপি তাদের বিছানায় উঠে বসল, কী সাংঘাতিক ব্যাপার?

বলছি, শোনো। ফ্লিকাস একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, তোমরা তো জান আমি পৃথিবীর সব মানুষকে একত্র করার চেষ্টা করছি। সে জন্যে আমি সারাক্ষণ নেটওয়ার্ক বলো, ডাটাবেস বলো, অর্কাইত বলো সবকিছু ঘেঁটে ঘেঁটে দেখছি। ঘাটতে ঘাটতে আমি কী পেয়েছি জানো?

কী?

তোমরা শুনলে বিশ্বাস করবে না।

নিকি আর ত্রিপি উত্তেজিত মুখে বলল, আমাদের বলো দেখি বিশ্বাস করি কী না!

মানুষের খনি!

মানুষের খনি?

হ্যাঁ।

মানুষের খনি কেমন করে হয়?

ফ্লিকাস চোখ বড় বড় করে বলল, পৃথিবীর মানুষ অসম্ভব বুদ্ধিমান। এরকম একটা ঘটনা ঘটতে পারে সেটা তারা অনুমান করেছিল। তাই তারা মাটির নীচে দুর্ভেদ্য একটা গহ্বরের মাঝে হিমঘরে অনেক মানুষকে শীতল করে রেখে দিয়েছে। যদি কখনো এরকম হয় যে পৃথিবীর সব মানুষ মরে গেছে তাহলে তাদের বাঁচিয়ে তোলা হবে।

সত্যি?

হ্যাঁ সত্যি। ফ্লিকাস সুন্দর করে হাসল।

অমিরা এখন এই মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে তুলব?

হ্যাঁ।

ত্রিপি ভয়ে ভয়ে বলল, তারা অন্যদের মতো মরে যাবে না তো?

ফ্লিকাস মাথা নাড়ল, না, মারা যাবে না। যে ভাইরাসের কারণে এটা ঘটেছে সেটা শেষ হয়ে গেছে। আর আসতে পারবে না। আমি খোঁজ নিয়েছি।

নিকি চোখ বড় বড় করে বলল, তাহলে আমরা একসাথে অনেক মানুষ পাব?

হ্যাঁ পাব?

সব কী বড় মানুষ?

না। তোমাদের মতো ছোট ছোট ছেলে মেয়েরাও আছে।

সত্যি? নিকি আনন্দে চিৎকার করে উঠল, সত্যি?

হুঁ, সত্যি।

আমরা কখন তাদের জাগিয়ে তুলব?

ফ্লিকাস বলল, আমার আর দেরি করার ইচ্ছে করছে না। আমরা এক্ষুণি যাব, এক্ষুণি জাগিয়ে তুলতে শুরু করব।

ত্রিপি হাত তালি দিয়ে বলল, কী মজা! কী মজা!

কিছুক্ষণের ভেতর তারা রওনা দিয়ে দেয়। ফ্লিকাস নিকি আর ত্রিপিকে তার নিজের বাইভার্বালে তুলে নিতে চাইছিল কিন্তু ক্রিনিটি তাদের আলাদা যেতে দিল না। ফ্লিকার প্রথমে একটু আপত্তি করতে চাইছিল তৃতীয় মাত্রার একটি রোবট দুজন মানবশিশুর দায়িত্ব নিচ্ছে সেটা সে ঠিক মেনে নিতে পারছিল না। কিন্তু নিকি আর ত্রিপি তাকে আশ্বস্ত করল, ক্রিনিটি তৃতীয় মাত্রার একটি রোবট হতে পারে কিন্তু তাদের কাছে ক্রিনিটি একটা আপনজনের মতো।

বাইভার্বালে করে তাদের দীর্ঘসময় যেতে হল। শেষ পর্যন্ত তারা একটা পাহাড়ের কাছাকাছি হাজির হল। বাইভার্বাল বেশ কিছু ঘোরাপথে উড়ে উপরে একটা পাথুরে জায়গায় হাজির হয় ফ্লিকাস বাইভার্বাল থেকে নেমে তার মনিটর পরীক্ষা করে হেঁটে হেঁটে একটা খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ে। সে নিচু হয়ে জায়গাটা পরীক্ষা করে, তারপর মাথা নেড়ে বলল, এটাই সেই জায়গা।

নিকি অবাক হয়ে বলল, কোথায়? কিছু তো নাই।

এখানে একটি গোপন দরজা আছে, এটি খুলতে হবে।

কোথায় গোপন দরজা?

এসো খুঁজে দেখি।

সবাই মিলে খুঁজতে খুঁজতে সত্যি তারা একটি ধাতব রিং খুঁজে পেয়ে যায়। উপর থেকে ধুলোবালি সরিয়ে রিংটা ধরে টান দিতেই ঘরঘর শব্দ করে চৌকোণা একটা জায়গা খুলে গেল। সেখানে আবছা অন্ধকার, দেখা যাচ্ছে। একটা সিঁড়ি নীচে নেমে গেছে।

ফ্লিকাস বলল, আমাদের এখন নিচে নামতে হবে। সাবধানে নেমো সবাই। আগে আমি নেমে যাই।

ফ্লিকাসের পিছু পিছু নিকি, নিকির পেছনে ত্রিপি আর সবার শেষে ক্রিনিটি সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে। সিঁড়িটা ঘুরে ঘুরে অনেক নীচে নেমে গেছে। আস্তে আস্তে জায়গাটা অন্ধকার এবং শীতল হয়ে আসে। যখন মনে হচ্ছিল নীচে নামা বুঝি কখনো শেষ হবে না তখন হঠাৎ করে তারা একটা ফাঁকা জায়গায় পৌঁছে গেল। নিচে পাথরের মেঝে এবং নিচু ছাদ। কান পেতে থাকলে একটা কম্পন অনুভব করা যায়, বোঝা যায় আশপাশে কোথাও গুমগুম করে একটি ইঞ্জিন চলছে।

ওরা কিছুক্ষণ নিঃশব্দে পঁড়িয়ে থাকে, তখন খুব ধীরে ধীরে সেখানে একটি ঘোলাটে আলো জ্বলে ওঠে। ভেতরে পাথরের কারুকাজ করা দেয়াল এবং সামনে মেঝে থেকে খানিকটা উঁচুতে একটি গোলাকার বেদী। হঠাৎ করে দেখা গেল সেখানে সাদা কাপড় পরা একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সবাই প্রথমে। চমকে ওঠে তারপর বুঝতে পারে মেয়েটি সত্যি নয় একটি হলোগ্রাফিক ছবি।

মেয়েটি চারদিকে একবার তাকাল, তারপর বলল, আমাদের এই ব্যালকনিতে কিছু দর্শকের উপস্থিতি অনুভব করে আমি তাদের কিছু তথ্য দেওয়ার জন্যে উপস্থিত হয়েছি। এটি একটি অত্যন্ত গোপন স্থাপনা, এখানে কোনোভাবেই কারো উপস্থিত হওয়ার কথা নয়। এটি অত্যন্ত দুর্ভেদ্য একটি স্থাপনা। নিউক্লিয়ার বোমা দিয়েও এটা ভেদ করা সম্ভব নয়। এখানে যে মানুষদের হিমঘরে শীতল করে রাখা হয়েছে তারা ঠিক সময়মতো হিমঘর থেকে বের হয়ে পৃথিবীতে আসবেন। বাইরের কোনো মানুষ প্রাণী বা যন্ত্রের এখানে এসে সেই প্রক্রিয়াটি প্রভাবান্বিত করার কথা নয়। তারপরও যারা নিজের দায়িত্বে এখানে উপস্থিত হয়েছে আমি তাদের বক্তব্য শুনতে আগ্রহী।

ফ্লিকাস বলল, পৃথিবীতে প্রায় সব মানুষ একটা ভাইরাসের কারণে মৃত্যুবরণ করেছে। যে অল্প কয়জন বেঁচে আছে তাদের বড় সংখ্যক হচ্ছে শিশু। তাদের যথাযথভাবে লালন করার জন্যে আমাদের এই মুহূর্তে কিছু বড় মানুষ প্রয়োজন।

এখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিস্টেম পৃথিবীর এই দুর্ভাগ্যজনিত পরিণতি সম্পর্কে অবহিত। হিমঘরের মানুষকে দ্রুত জাগিয়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

ফ্লিকাস জানতে চাইল, তারা কবে জেগে উঠবে? কবে বের হয়ে আসবে?

এখন থেকে তেত্রিশ দিন পর। তার পরের ব্যাচটি বাহান্ন দিন পর।

কোনোভাবেই কী জাগিয়ে তোলার প্রক্রিয়াটি আরেকটু ত্বরান্বিত করা। যায় না। আমাদের মানুষের খুব প্রয়োজন।

স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে করা সম্ভব নয়। যদি এর চাইতে তাড়াতাড়ি জাগিয়ে তুলতে হয় তাহলে সেটি ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে করতে হবে।

আমরা ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে এটি করতে প্রস্তুত।

এটি করতে পারবে শুধুমাত্র সত্যিকারের মানুষ। কোনো রোবট বা কোনো যন্ত্রকে এটি করতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না।

আমি তোমাকে আশ্বস্ত করে বলতে পারি আমাদের সাথে রোবট থাকলেও যারা মানুষ তারাই দায়িত্ব নেবে।

চমৎকার। মেয়েটি হাসি মুখে বলল, আমি এখন এখান থেকে চলে। যাচ্ছি। যে বা যারা ভেতরে যেতে চায় তাদের একে একে এখানে উপস্থিত হতে অনুরোধ করছি। বিদায়।

সাদা কাপড় পরা মেয়েটি যেভাবে এখানে হঠাৎ করে উপস্থিত হয়েছিল ঠিক সেভাবে সে অদৃশ্য হয়ে গেল।

নিকি ফ্লিকাসের দিকে তাকিয়ে বলল, ফ্লিকাস, তুমি এখন যাও।

ফ্লিকাস মাথা নাড়ল, বলল, না। তোমরা দুজন ভেতরে যাও।

নিকি অবাক হয়ে বলল, আমরা দুজন?

হ্যাঁ।

কেন?

বাইরে একজন পাহারা দেয়া দরকার।

বাইরে ক্রিনিটি পাহারা দিতে পারবে।

ফ্লিকাস কঠোর মুখে বলল, আমি কোনো রোবটকে বিশ্বাস করি না। আমি বাইরে পাহারা দিচ্ছি। তুমি আর ত্রিপি ভেতরে গিয়ে ভেতরের মানুষগুলোকে জাগিয়ে তুলো। মানুষগুলো জেগে উঠে আমাকে দেখে যতটুকু আনন্দ পাবে, তার চাইতে অনেক বেশি আনন্দ পাবে তোমাদের মতো দুজন ফুটফুটে শিশুকে দেখে।

নিকি অবাক হয়ে বলল, কিন্তু–কিন্তু—

কিন্তু কী?

ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে কিভাবে শীতল মানুষগুলোকে জাগিয়ে তুলতে হবে আমরা তার কিছুই জানি না।

ফ্লিকাস বলল, জানার প্রয়োজনও নেই। আমি কাজটি সহজ করার জন্যে কয়েকশ মাইক্রো মডিউল এনেছি। মডিউলগুলো প্রোগ্রাম করা আছে। মানুষগুলো একেকটা ক্যাপসুলের ভেতরে আছে। তোমরা এই মাইক্রো মডিউলগুলো একেকটা ক্যাপসুলের গায়ে লাগিয়ে দেবে। আর কিছু করতে হবে না?

আর কিছু করতে হবে না?

না। মাইক্রো মডিউলগুলো নিজে নিজে ক্যাপসুলগুলোকে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে জাগিয়ে তুলবে।

সত্যি?

হ্যাঁ।

তার মানে আমরা শুধু মাইক্রো মডিউলগুলো একটা একটা করে ক্যাপসুলের গায়ে লাগিয়ে দেব? আর কিছু না?

ফ্লিকাস হেসে বলল, হ্যাঁ, আর কিছু না।

এই মাইক্রো মডিউলগুলো ক্যাপসুলগুলোকে নিজে নিজে প্রোগ্রাম করে নেবে?

হ্যাঁ।

নিকি মাথা নেড়ে বলল, তাহলে ঠিক আছে। তাহলে আমরাই পারব। তাই না ত্রিপি?

ত্রিপি বলল, হ্যাঁ। অনেক মজা হবে। একটা একটা ক্যাপসুল থেকে যখন মানুষগুলো বের হয়ে আসবে তখন তারা আমাদের দেখে অবাক হয়ে যাবে।

নিকি বলল, আমরা বলব, আমাদের পথিবীতে স্বা-গ-ত-ম।

কিংবা সু-স্বা-গ-ত-ম!

ফ্লিকাস বলল, দেরি করো না। বেদীর ওপর দাঁড়িয়ে যাও। এই যে মাইক্রো মডিউলের প্যাকেট। সাথে রাখো।

নিকি আর ত্রিপি ফ্লিকাসের হাত থেকে মাইক্রো মডিউলের প্যাকেটটা হাতে নিয়ে বেদীর ওপর দাঁড়াল, প্রায় সাথে সাথেই উপর থেকে দুটি হেলমেট নেমে আসে। দুজনে হেলমেট দুটি মাথায় পরল প্রায় সাথে সাথেই তারা একটি ভেঁতী শব্দ শুনতে পায়। হঠাৎ করে তারা একধরনের কম্পন অনুভব করে এবং চোখের সামনে বিচিত্র একধরনের আলো খেলা করতে থাকে। নিকি অবাক হয়ে আবিষ্কার করে সেই শৈশবের কিছু স্মৃতি তার মনে পড়ে যায়, স্মৃতিগুলো আবার মিলিয়ে গিয়ে নতুন স্মৃতি ভেসে আসে। এভাবে কিছুক্ষণ চলতে থাকে তখন তারা হঠাৎ কেমন জানি বিষণ অনুভব করে। বিষণ্ণ অনুভূতিটি আস্তে আস্তে আনন্দে রূপ নেয় তারপর হঠাৎ করে তাদের মনটি ফাঁকা হয়ে যায়।

তখন দুজনেই স্পষ্ট শুনতে পেল কেউ তাদের বলছে, ট্রাইকিনিওলাল ইন্টারফেস দিয়ে তোমাদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করা হয়েছে। তোমরা মানব শিশু। তোমাদের মস্তিষ্কে মানবসমাজ নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্রমূলক বা ক্ষতিকর। পরিকল্পনা নেই। তোমাদের ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হল। দেয়ালের সবুজ বাতিটি স্পর্শ কর।

নিকি সবুজবাতিটি স্পর্শ করার সাথে সাথে ঘরঘর করে ভারি দেয়ালটি খুলে গেল। নিকি আর ত্রিপি সাবধানে ভেতরে পা দেয়, কয়েক পা অগ্রসর। হতেই পেছনের দরজাটি শব্দ করে বন্ধ হয়ে সামনের দরজাটি খুলে গেল। এভাবে কয়েকটি দরজা পার হয়ে তারা ভেতরে এসে ঢুকল। ভেতরে খুব ঠাণ্ডা, দুজনে হাত ঘষে একটু উষ্ণ হওয়ার চেষ্টা করে। সামনে বিশাল একটি হলঘর, সেখানে সারি সারি ক্যাপসুল সাজানো। ক্যাপসুলগুলোর ওপর বাতি জ্বলছে। মাথার কাছে ডায়াল সেখানে কিছু সংখ্যার পরিবর্তন হচ্ছে। ভেতরে একধরনের চাপা যান্ত্রিক গুঞ্জন।

নিকি ফিসফিস করে বলল, প্রত্যেকটির ভেতরে একজন মানুষ!

জীবন্ত মানুষ।

হ্যাঁ। নিকি ফিসফিস করে বলল, মানুষগুলো এক্ষুণি জেগে উঠবে, কী মজা।

ত্রিপি বলল, মাইক্রো মডিউলগুলো বের কর।

হ্যাঁ বের করছি। নিকি ব্যাগ খুলে ভেতরে হাত দিয়ে কয়েকটা মাইক্রো মডিউল বের করে নিয়ে সেগুলোর দিকে তাকায় এবং হঠাৎ করে তার সারা শরীর আতঙ্কে জমে যায়। ত্রিপি জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে নিকি?

নিকি বিস্ফারিত চোখে মাইক্রো মডিউলটির দিকে তাকিয়ে থাকে—এটি আসলে একটি বিস্ফোরক। জীবনরক্ষাকারী ব্যাগে অন্য অনেক যন্ত্রের সাথে ঠিক এরকম বিস্ফোরক ছিল, ক্রিনিটি তাকে এর ব্যবহার শেখাতে চায় নি। সে জোর করে শিখেছিল। জাতীয় গবেষণাগারে ত্রিপির ঘরে সে এরকম একটি বিস্ফোরক রেখে এসেছিল।

ত্রিপি আবার জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে নিকি? কথা বলছ না কেন?

নিকি ত্রিপির দিকে তাকিয়ে বলল, এগুলো মাইক্রো মডিউল নয়। এগুলো টাইমার দেওয়া বিস্ফোরক।

বিস্ফোরক? বিস্ফোরক কেন?

ফ্লিকাস আসলে সবগুলো মানুষকে মারতে চায়।

সবগুলো মানুষকে মারতে চায়? ফ্লিকাস?

নিকি মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ। দেখছ না সব ক্যাপসুলে একটা করে বিস্ফোরক লাগাতে বলেছে। বিস্ফোরকগুলো এক সাথে ফাটবে। একসাথে প্রত্যেকটা মানুষ মারা যাবে।

সর্বনাশ! ফ্লিকাস কেন সবগুলো মানুষকে মারতে চায়? মানুষ হয়ে। মানুষকে কেন মারতে চায়?

তার মানে ফ্লিকাস আসলে মানুষ না।

ক্লিকাস তাহলে কী?

মনে হয় পঞ্চম মাত্রার রোবট।

রোবট? ত্রিপি চোখ বড় বড় করে বলল, ফ্লিকাস একজন রোবট?

হ্যাঁ। দেখ নি সে নিজে ভেতরে ঢোকে নি। আমাদের পাঠিয়েছে। রোবটদের এখানে ঢোকা নিষিদ্ধ।।

ত্রিপি মাথা নাড়ল, বলল, কী সর্বনাশ! এখন কী করব?

প্রথমে এই বিস্ফোরকগুলোর টাইমার রিসেট করতে হবে যেন কিছুক্ষণ পর নিজে থেকে ফেটে না যায়।

ত্রিপি জিজ্ঞেস করল, তুমি জান কেমন করে করতে হয়?

জানি, খুব সোজা। পেছনে সবুজ বোতামটা টিপে ধর দেখবে সামনের সময়টা অদৃশ্য হয়ে যাবে। তার মানে টাইমার আর কাজ করছে না।

ঠিক আছে। তাহলে দাও একটা একটা করে সবগুলো টাইমার রিসেট করে ফেলি।

দুজনে মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে প্রত্যেকটা বিস্ফোরকের টাইমার রিসেট করে নিল। একটিও যদি রিসেট করতে ভুলে যায়, তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ওরা কয়েকবার করে দেখে নিশ্চিত হয়ে নেয়। সবগুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে নিকি উঠে দাঁড়ায়। ত্রিপি জিজ্ঞেস করল, এখন কী করব?

বের হয়ে যাই।

ফ্লিকাসকে কী বলব?

আমি জানি না।

আমার মনে হয় মিথ্যে কথা বলতে হবে। সত্যি কথা বললে আমাদের বিপদ হবে।

নিকি মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ। সত্যি কথা বলা যাবে না। কিন্তু কী বলব?

আমরা বলব যে আমরা ক্যাপসুলে মাইক্রো মডিউলগুলো লাগিয়ে দিয়েছি।

হ্যাঁ। ভাব দেখাব আমরা যেন বুঝতে পারি নি এগুলো মাইক্রো মডিউল, এগুলো আসলে বিস্ফোরক।।

হ্যাঁ। ত্রিপি মাথা নেড়ে বলল, আমরা বের হয়ে কোনো কথা না বলে সোজা বাইভার্বালে উঠে চলে যাব।

হ্যাঁ। আমরা ফ্লিকাসের সাথে কোনো কথা বলব না। নিকি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, এখন কী বের হব?

হ্যাঁ। ত্রিপি বলল, চল বের হই।

নিকি ফ্যাকাসে মুখে বলল, আমার ভয় করছে। ফ্লিকাস যদি এখানকার সব মানুষকে মেরে ফেলতে চায় তাহলে সে তো আমাদেরও মেরে ফেলতে চেষ্টা করবে।

ঠিকই বলেছ।

কিন্তু আমরা তো ভেতরে বসে থাকতে পারব না। আমাদের তো বের হতে হবে।

হ্যাঁ বের হতে হবে। নিকি কিছুক্ষণ চিন্তা করল তারপর নিচু হয়ে পকেট থেকে কয়েকটা বিস্ফোরক নিয়ে নিল।

ত্রিপি জিজ্ঞেস করল, তুমি কী করছ?

কয়েকটা বিস্ফোরক নিচ্ছি।

কেন?

জানি না। যদি কোনো কাজে লাগে সেজন্যে।

ত্রিপি ভীত চোখে নিকির দিকে তাকিয়ে রইল। নিকি কঠিন মুখে বলল, ফ্লিকাসকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দেব না।

নিকি আর ত্রিপি দরজা ঠেলে বের হয়ে দেখল, দরজার ঠিক সামনে ফ্লিকাস দাঁড়িয়ে আছে। তারা ভয়ে ভয়ে তার মুখের দিকে তাকাল। ফ্লিকাস ভুরু কুঁচকে বলল, তোমরা বের হয়ে এসেছ কেন?

নিকি কী বলবে বুঝতে পারল না, ইতস্তুত করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল হঠাৎ করে সে চমৎকার একটা উত্তর পেয়ে গেল, বলল, ভেতরে খুব ঠাণ্ডা। জমে যাচ্ছিলাম।

ফ্লিকাস বলল, হিমঘর তো ঠাণ্ডা হবেই।

সেজন্যে বাইরে এসেছি।

ত্রিপিও মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ। সেজন্যে বাইরে চলে এসেছি।

সগুলো মাইক্রো মডিউল ক্যাপসুলগুলোতে লাগিয়েছ?

হ্যাঁ লাগিয়েছি।

সবগুলোতে?

হ্যাঁ।

ফ্লিকার্সের মুখে একধরনের হাসি ফুটে ওঠে, নিকির মনে হলো হাসিটা খুব ভয়ঙ্কর। সে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল, তুমি হাসছ কেন?

আনন্দে।

কিসের আনন্দে?

মানুষের নাকি খুব বুদ্ধি! কেউ নাকি তাদের হারাতে পারে না। আমি হারিয়েছি।

ফ্লিকাস কী বলতে চাইছে দুজনেই বুঝে গেল, তারা দুজনেই হতবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল। ফ্লিকাস বলল, তোমরা হচ্ছ নিম্পাপ শিশু! আমি এই নিস্পাপ শিশুদের ব্যবহার করে মানুষের সবচেয়ে দুর্ভেদ্য ঘাটির প্রত্যেকটি মানুষকে হত্যা করার ব্যবস্থা করেছি।

ফ্লিকাস বলল, আমি জানি তোমরা বিষয়টি বুঝতে চাইছ। বিষয়টি খুবই সোজা। তোমরা ক্যাপসুলে যে মাইক্রো মডিউলগুলো লাগিয়ে আসলে তার প্রত্যেকটা হচ্ছে একটা করে টাইমার লাগানো বিস্ফোরক।

নিকি আর ত্রিপি একজন আরেকজনের দিকে তাকাল, কোনো কথা বলল না। ফ্লিকাস বলল, টাইমারে তিরিশ মিনিট সময় সেট করা আছে। আর ত্রিশ মিনিট পর ভেতরের প্রতিটি ক্যাপসুলে একটা করে বিস্ফোরণ হবে। একটি করে বিস্ফোরণের অর্থ একটি করে মানুষ। ফ্লিকাস হঠাৎ হা হা করে হেসে উঠল। নিষ্ঠুর ভয়ঙ্কর একধরনের হাসি।

ফ্লিকাস একটু এগিয়ে এসে অনেকটা আদরের ভঙ্গিতে নিকির চিবুক স্পর্শ। করে বলল, এখন রয়ে গেলে তোমরা দুজন। যাদের আমার খুঁজে বের করতে হয় নি যারা নিজেরা এসে আমার হাতে ধরা দিয়েছে। তোমরা মনে হয় এখন আমাকে আর বিশ্বাস করবে না কিন্তু আসলেই তোমাদের জন্য আমার একধরনের মায়া হয়েছে।

ত্রিপি জিজ্ঞেস করুল, তুমি আমাদের কী করবে?

অবশ্যই মেরে ফেলব। কিন্তু এখানে নয়। বাইরে। ফ্লিকস বলল, এই জায়গাটি আমার পছন্দ নয়। এখানে মানুষ মানুষ গন্ধ, মানুষের গন্ধ আমার একেবারে ভালো লাগে না।

একপাশে ক্রিনিটি দাঁড়িয়ে ছিল, সে এবারে এগিয়ে এসে বলল, আমি এদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছি। তুমি কিছুতেই এদের ক্ষতি করতে পারবে না। আমি কিছুতেই–

ক্রিনিটি কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে থেমে গেল, নিকি আর ত্রিপি দেখল, ক্রিনিটির সারা শরীরে অদম্য একটা খিচুনির মতো শুরু হয়েছে, সে কথা বলতে পারছে না এবং থরথর করে কাঁপছে। ফ্লিকাস হা হা করে হেসে বলল, তিন মাত্রার রোবট এসে আমাকে বলছে আমি কী করতে পারব আর কী করতে পারব না! এর চাইতে বড় রসিকতা কী হতে পারে? আমি মুহূর্তের মাঝে তার পুরো সিস্টেম ওভারলোড করে দিতে পারি। দেখেছ?

নিকি আর ত্রিপি কিছু বলল না। ফ্লিকাস বলল, চল আমরা বাইরে যাই। এই বন্ধ ঘর আর ভালো লাগছে না। আমি মানুষ নই, কিন্তু আমার অনেক কিছু মানুষের মতো। যখন আমরা পৃথিবীর শেষ মানুষটিকেও শেষ করে দেব তখন। আমাদের আর এই হাস্যকর মানুষের রূপ নিয়ে থাকতে হবে না। মানুষের। মতো ভাবতে হবে না। মানুষের মতো কথা বলতে হবে না।

নিকি অনেকক্ষণ পর এবারে কথা বলল, তুমি মানুষ না, তুমি পঞ্চম মাত্রার রোবট। তাই না?

সেটা তুমি এতোক্ষণে বুঝতে পেরেছ?

না। আমি আগেই বুঝেছি।

যথেষ্ট আগে বোঝো নি। তাহলে এতো সহজে আমার পরিকল্পনার অংশ হতে না। যাই হোক বাইরে চল। ভেতরে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।

সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে নিকি পকেটে হাত দিয়ে পকেটের টাইমারটিতে সময় সেট করে নিল। বিস্ফোরকটি এখন মিনিট পনেরোর মাঝে বিস্ফোরিত হবে। এই বিস্ফোরকটি এখন ফ্লিকাসের শরীরের কোথাও লাগিয়ে দিতে হবে। ফ্লিকাস ঢিলেঢালা একটি পোশাক পরেছে, সেখানে অনেকগুলো পকেট, কোনো একটি পকেটে রেখে দিতে পারলেই আর কোনো চিন্তা নেই। কাজটি সহজ নয় কিন্তু নিকি চেষ্টা করবে।

প্যাঁচানো সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে সে হঠাৎ ইচ্ছে করে পা পিছলে পড়ে গেল, সিঁড়ি দিয়ে যখন নীচে পড়ে যাচ্ছে তখন ফ্লিকাস তাকে থামাল। নিচু হয়ে তাকে ধরে যখন টেনে সোজা করছিল তখন সে হাত-পা ছুড়ে মুক্ত হবার অভিনয় করার সময় হাঁটুর কাছে পকেটে বিস্ফোরকটি রেখে দিল। নিকি ভেবেছিল ফ্লিকাস বুঝে ফেলবে কিন্তু ফ্লিকাস বুঝতে পারল না।

উপরে এসে ফ্লিকাস অলস পায়ে হেঁটে হেঁটে পাহাড়ের এক কিনারায় এসে দাঁড়িয়ে সামনে নীলাভ পাহাড়ের মাথায় সাদা বরফের চূড়োর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বলল, আমার আসলে সত্যিকার একটা প্রতিপক্ষের সাথে লড়াই করার ইচ্ছে করছে। তোমাদের মতোন অবুঝ দুটি শিশুকে খুন করার মাঝে কোনো গৌরব নেই, কোনো আনন্দ নেই। আমার মনে হচ্ছে আমি পা দিয়ে মাড়িয়ে দুটো ফড়িংকে পিষে ফেলছি।

নিকি বলল, তুমি আমাদের কখন মারবে?

ফ্লিকাস একটু অবাক হয়ে নিকির দিকে তাকাল, বলল, তোমার কণ্ঠস্বরে ভয় নেই কেন? কণ্ঠস্বরে একধরনের উপহাস। কেন?

নিকি ঠোঁট উল্টে বলল, তোমার বুদ্ধি মানুষ থেকে অনেক বেশি, তুমি বলো।

ফ্লিকাস বিড়বিড় করে বলল, একটু আগেও তোমার ভেতরে ভয় ছিল, আতঙ্ক ছিল, এখন নেই। কেন নেই? কী হয়েছে? বলো আমাকে?

নিকি বলল, ঠিক আছে, আমি বলব, কিন্তু তার আগে আমি ত্রিপির সাথে একটু কথা বলতে চাই।

ফ্লিকাস কিছুক্ষণ শীতল চোখে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, ঠিক আছে বলো।

আমি লুকিয়ে কথা বলতে চাই, তুমি যেন শুনতে না পার। দেখতে না

পার।

ঠিক আছে।

আমি আর ত্রিপি ঐ পাথরটার আড়ালে গিয়ে কথা বলতে পারি?

ফ্লিকাস কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করে বলল, ঠিক আছে যাও।

নিকি ত্রিপির হাত ধরে বড় একটা পাথরের আড়ালে নিয়ে গেল। ত্রিপি জিজ্ঞেস করল, তুমি আমাকে কী বলবে?

আমি কিছুই বলব না।

তাহলে এখানে কেন এনেছ?

আমি ফ্লিকাসের পকেটে একটি বিস্ফোরক রেখে এসেছি, সেটি এক্ষুণি ফাটবে। সেটি যখন ফাটবে তখন যে বিস্ফোরণ হবে সেটির ঝাঁপটা থেকে বাঁচার জন্যে এর পেছনে দাঁড়িয়েছি।

ত্রিপি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে নিকির দিকে তাকিয়ে রইল, বলল, সত্যি?

সত্যি।

এন্ড্রোমিডার কসম?

এন্ড্রোমিডার কসম।

মহাকালের কসম?

মহাকালের কসম।

আমরা আসলে মরব না?

আমরা আসলে মরব না। ফ্লিকাস এক্ষুণি উড়ে যাবে। ধ্বংস হয়ে যাবে।

নিকি আর ত্রিপি হঠাৎ করে ফ্লিকাসের গলার স্বর শুনতে পেল, তোমাদের কথা শেষ হয়েছে?

নিকি মাথা তুলে দাঁড়াল, পাথরের আড়াল থেকে বলল, হ্যাঁ শেষ হয়েছে।

এখন আমাকে বলবে, তোমার কণ্ঠস্বরে কোনো ভয় নেই কেন? মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে তোমার এতো সাহস কেন?

বলব?

ফ্লিকাস বলল, বল।

দুটি কারণ আছে। প্রথম কারণ হচ্ছে মাইক্রো মডিউল সে আসলে টাইমার লাগানো বিস্ফোরক আমরা সেটি জানতাম। তাই আমরা ভেতরে বসে। সবগুলো বিস্ফোরককে বিকল করে এসেছি। কোনো ক্যাপসুলে সেগুলো। লাগাই নি।

ফ্লিকাসের চোখ দুটি ধ্বক করে জ্বলে উঠল, বলল, কী বলছ তুমি?

হ্যাঁ। সত্যি বলছি। আমরা বিস্ফোরকগুলো ভেতরে রেখে এসেছি। সেগুলো নিজে থেকে ফাটবে না, তাই কোনো ভয় নেই। কিন্তু–

কিন্তু কী?

আমরা দুটি বিস্ফোরক নিয়ে এসেছি। একটিতে টাইম সেট করে সেটি তোমার পকেটে রাখা হয়েছে। মনে আছে একটু আগে আমি সিড়িতে গড়িয়ে পড়েছিলাম? আসলে সেটি ছিল অভিনয়। যখন হাত-পা ছুড়ছিলাম তখন এক ফাঁকে সেটি তোমার কোনো একটি পকেটে রাখা হয়েছে। তুমি ইচ্ছে করলে সেটি খুঁজে বের করতে পার। তুমি এটি খুঁজে বের করার আগেই সেটি ফাটবে। বিশ্বাস কর।

ফ্লিকাস অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে নিকির দিকে তাকিয়ে রইল। নিকি বলল, তুমি বল? পৃথিবীতে কে বেশি বুদ্ধিমান? মানুষ নাকি পঞ্চম মাত্রার রোবট? নিকি নাকি ফ্লিকাস? কে ফড়িংকে পিষে মারছে? তুমি নাকি আমি?

নিকির কথা শেষ হবার আগে একটি ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে ফ্লিকাস ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। তার আগেই নিকি পাথরের আড়ালে লুকিয়ে গেছে, সে অনুভব করল একটি বাতাসের ঝাঁপটা ফ্লিকাসের ছিন্নভিন্ন দেহ তাদের মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেছে। একমুহূর্ত পরে নিকি সাবধানে মাথা বের করল, এদিক-সেদিক তাকাল তারপর পাথরের আড়াল থেকে বের হয়ে এলো। বাতাসে। পোড়া একটা গন্ধ, যেখানে ফ্লিকাস দাঁড়িয়েছিল সেখানে কালো পোড়া বিস্ফোরণের চিহ্ন। চারদিকে ছিন্নভিন্ন যন্ত্রপাতির চিহ্ন—ফ্লিকাসের শরীরের অংশ।

হঠাৎ ত্রিপি চিৎকার করে উঠল, নিকি!

কী হয়েছ?

দেখ! ত্রিপি হাত তুলে দেখাল, নিকি সেদিকে তাকায়। ফ্লিকাসের পোড়া মাথাটি একটা পাথরে আটকে পড়ে আছে, সেটি এখনো নড়ছে। নিকি এগিয়ে গেল, পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সেটিকে নীচে ফেলে দিতেই ফ্লিকাস চোখ খুলে তাকাল। নিকি ভয় পেয়ে এক পা পিছিয়ে আসে। গলা থেকে কিছু তার টিউব বের হয়ে এসেছে। সেখান থেকে সাদা কষের মতো কিছু একটা ফোটা ফোটা করে পড়ছে। তার সোনালি চুল জায়গায় জায়গায় পুড়ে গেছে। মুখের চামড়া উঠে ভেতর থেকে ধাতব কাঠামো বের হয়ে আসছে। নিকি আর ত্রিপিকে দেখে সেই ছিন্ন মাথাটি খলখল করে হাসল, খসখসে গলায় বলল, তুই ভেবেছিস তুই আমার কাছ থেকে মুক্তি পাবি? পাবি না।।

নিকি সাবধানে এগিয়ে গেল। উবু হয়ে নিচে পড়ে থাকা মাখাটির দিকে তাকাল, বলল, কী বললে?

তোকে হত্যা করার জন্যে যদি আমার নরকেও যেতে হয়, আমি যাব!

তুমি? তোমার এই কাটা মাখা?

আমি পঞ্চম মাত্রার রোবট! তুই আমাকে এখনো চিনিস নি। তুই এখনো আমার ক্ষমতার পরিচয় পাস নি?

নিকি ত্রিপির মুখের দিকে তাকাল, বলল, ত্রিপি এই কাটা মাথাটা কী বলছে? সে আমাকে কেমন করে হত্যা করবে?

ত্রিপি মাথা নাড়ল, বলল, আমি জানি না।

নিকি বলল, আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি না। কিন্তু সত্যি সত্যি যেন। এই কাটা মাথা হয়েই তুমি আমাকে কামড়ে ধরতে না পার আমি তার ব্যবস্থা। করছি। নিকি তার পকেট থেকে দ্বিতীয় বিস্ফোরকটি বের করে বলল, এই যে বিস্ফোরকটি দেখছ আমি সেটি তোমার মুখের মাঝে ছেড়ে দেব। তিরিশ সেকেন্ডের মাঝে সেটি বিস্ফোরিত হবে। তোমার এই কাটা মাথাটা আর থাকবে না, সেটাও তখন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। আমি দেখি তখন তুমি কেমন করে। আমাকে ধরতে আস!

ফ্লিকাসের কাটা মাথাটি আবার খলখল করে হাসতে থাকে! নিকি তার মাঝে বিস্ফোরকটি তার মুখে গুঁজে দিয়ে ত্রিপিকে নিয়ে বড় একটা পাথরের আড়ালে লুকিয়ে গেল। কিছুক্ষণের মাঝে প্রচণ্ড একটি বিস্ফোরণে পুরো এলাকাটি কেঁপে ওঠে। ফ্লিকাসের খলখল করে হাসির শব্দ হঠাৎ করে থেমে। গেল। চারপাশে তখন অত্যন্ত বিচিত্র একটা নৈঃশব্দ।

নিকি ত্রিপির হাত ধরে বলল, চল এখন ক্রিনিটিকে নিয়ে আসি। এতোক্ষণে সে নিশ্চয়ই স্বাভাবিক হয়েছে।

ত্রিপি বলল, চল।