পিজারোর সেভিল-এর বন্দরে দেনার দায়ে বন্দি হওয়ার খবর সম্রাট পঞ্চম চার্লস-এর দরবারে সত্যি পৌঁছেছিল।
সংবাদের প্রধান বাহক মার্কুইস গঞ্জালেস দে সোলিস। তার আগে একটু-আধটু উড়ো খবর যা পাওয়া গেছল তা দরবারে যৎসামান্য আলোচনার ঢেউ তুললেও সম্রাটের কানে তোেলবার যোগ্য কেউ ভাবেনি। মার্কুইস বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়ে এ খবর বয়ে না নিয়ে গেলে পিজারোর মুক্তি কতদিনে হত কে জানে! না-ও হতে পারত বছরের পর বছর। তখনকার যুগে অনেক উঁচুদরের মানুষের গারখানার দেওয়ালের আড়ালে চিরকালের জন্যে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা বিরল ছিল না।
মার্কুইস গঞ্জালেস দে সোলিস-এর কাছে এ খবর পাবার পর সম্রাটের দরবার উত্তেজিত চঞ্চল হয়ে ওঠে।
পঞ্চম চার্লস তখন টোলেডোতে। পিজারো কে, কী জন্যে সে নতুন মহাদেশ থেকে এসেছে, আর এসেই কুড়ি বছরের পুরনো দেনার দায়ে কীভাবে কয়েদ হয়েছে সম্রাটের কানে যাওয়া মাত্র তিনি পিজারোকে মুক্ত করার হুকুম পাঠিয়ে দেন, সেই সঙ্গে রাজদরবারে তৎক্ষণাৎ পিজারোর আসার অনুমতি, যা নিমন্ত্রণেরই শামিল।
পিজারো যখন টোলেডোতে এসে পৌছোলেন তখন সম্রাটের সেখান থেকে ইটালিতে পাড়ি দেবার তোড়জোড় চলছে। জন্মগত উত্তরাধিকারসূত্রে স্পেনের সম্রাট হলে কী হবে, পঞ্চম চার্লস স্পেনে থাকা খুব পছন্দ করেন না। সময়টাও তখন তাঁর অত্যন্ত ভাল যাচ্ছে। তাঁর যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ফ্রান্সের রাজার মাথা তিনি হেঁট করতে পেরেছেন পাভিয়ার যুদ্ধে। জার্মানির সিংহাসন তাঁর দখলে। এ সব সৌভাগ্যে উৎফুল্ল হয়ে স্পেনের চেয়ে ইউরোপের বড় আসরে রাজাগিরির জাঁক দেখাবার আগ্রহ খুব অস্বাভাবিক নয়।
পিজারো টোলেডোতে এসেই বুঝলেন যে, তাঁর যা-কিছু আর্জি তাড়াতাড়ি মঞ্জুর না করাতে পারলে সব বরবাদ হয়ে যাবে। সম্রাট ক-দিন বাদেই ইটালিতে রোমান পন্টিফ-এর হাত থেকে রাজচক্রবর্তীর মুকুট নিতে যাচ্ছেন। একবার স্পেন ছেড়ে চলে গেলে পঞ্চম চার্লস-এর নাগাল পাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না।
পিজারোর ভাগ্য একটু ভাল যে, সম্রাট খুব সম্প্রতি সাগরপারের নতুন মহাদেশের আবিষ্কার অভিযান সম্বন্ধে একটু উৎসাহী হয়েছেন। প্রথম দিকে কাগজে কলমে বিরাট সব নতুন নতুন দেশ আবিষ্কার ও দখলের প্রমাণ পেলেও সেসব জায়গা থেকে এমন কিছু ভেট নজরানা খাজনা পাননি যাতে তাঁর মন ওঠে। নামে তালপুকুর, আসলে ঘটি ডোবে না গোছের নতুন রাজ্য সম্বন্ধে তাই তিনি তখন উদাসীনই ছিলেন।
হাওয়াটা বদলেছে কর্টেজ-এর মেক্সিকো বিজয়ের পর। মেক্সিকো থেকে সোনাদানা মণিরত্ন যা এসেছে তাঁর রাজকোষে, তাতে খুশি হয়ে নতুন মহাদেশের ব্যাপারে তিনি একটু মনোযোগ দিতে শুরু করেছেন।
পিজারো টোলেডোতে এসে সময় নষ্ট করেননি। সভাসদদের মধ্যে যারা হোমরা চোমরা তাদেরই নানা উপহার দিয়ে বশ করেছেন সবার আগে। তারপর পশ্চিম অজানা সমুদ্রের উপকূলের পরমাশ্চর্য সূর্য কাঁদলে সোনার দেশের বলতে গেলে চৌকাঠ থেকে তুলে আনা সম্পদের নমুনা সম্রাটের কাছে নিবেদন করেছেন।
সোনারুপোর তৈজসপত্র আর অলংকারের কারুকাজ আর প্রাচুর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছেন পঞ্চম চার্লস, মুগ্ধ হয়েছেন সে দেশের অদ্ভুত পশমের বস্ত্রে। কিন্তু তাতেও পিজারোর ওপর সেরকম সদয় তিনি হতেন কিনা সন্দেহ।
তাঁকে মনঃস্থির করতে যা সত্যিই সাহায্য করেছে তা হল সেই আজগুবি জানোয়ার, ক্লামা, সেভিল শহরে যা পিজায়োর দুর্ভাগ্যের প্রথম বিজ্ঞাপন হয়ে নগরবাসীদের সজাগ করে তুলেছিল।
পিজারোর ওপর সন্তুষ্ট হয়ে টোলেডডা ছেড়ে যাবার আগে সম্রাট তাঁকে যতখানি সম্ভব সাহায্য করবার হুকুম আমলাদের দিয়ে গেছেন।
সম্রাট তো হুকুম দিয়ে চলে গেলেন। কিন্তু সব দেশে সব যুগেই সরকারি ব্যবস্থার চাকা সমান গদাইলশকরি চালে ঘঘারে।
পিজারোর পুঁজি আর কতটুকু। দু-দুটো অভিযানের পর সর্বস্বান্ত হয়ে মহাজন আর হিতৈষীদের কাছে কুড়িয়ে বাড়িয়ে যা এনেছেন রাজদরবারে ধরনা দিতেই দিতেই তা প্রায় ফুরিয়ে এল। ফতুর হয়ে রাজদরবারে টেকা যায় না, আর যদি বা টিকে থাকেন, আকালে বীজ পর্যন্ত খেয়ে শেষ করা চাষির খেতে বৃষ্টির পশলার মতে। সম্রাটের অনুগ্রহ তো তখন উপহাস হয়ে দাঁড়াবে! সে অনুগ্রহ তো কোনও কাজেই লাগবে না আর।
মরিয়া হয়ে পিজারো সম্রাজ্ঞীর কাছেই এবার করুণ আর্জি জানালেন, আর তাতেই অঘটন ঘটে গেল। পিজারো রাজানুগ্রহ যা পেলেন তা তাঁর কল্পনাতীত।
সম্রাট টোলেডো ছেড়ে যাবার পর সম্রাজ্ঞীর ওপরই ছিল এ সব রাজকার্যের ভার। মেয়েছেলে এসব অভিযান আবিষ্কারের মর্ম আর কতটা বুঝবে এই ছিল পিজারোর ভাবনা। কিন্তু সম্রাটের বদলে সম্রাজ্ঞীর হাতে ভার পড়া পিজারোর কপালে শাপে বর হল। সম্রাজ্ঞী মেয়েছেলে বলেই অনুগ্রহ যা করলেন তা সব হিসেবের বাইরে।
এই অনুগ্রহ বিতরণের পাকাপাকি ব্যবস্থাপত্র সম্রাজ্ঞী দস্তখত করে দেন ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দের ছাব্বিশে জুলাই। সে ব্যবস্থাপত্র অনুসারে শুধু যে নতুন মুল্লুক আবিষ্কার ও জয় করবার অধিকার পিজারোকে দেওয়া হল তা নয়, তিনি সে প্রদেশের গভর্নর ও ক্যাপটেন জেনারেল হবেন বলেও সাব্যস্ত হল। তা ছাড়া তিনি, আসলে যা-ই হোক, গালভরা নামের আদেলানতাদো আর আলগাকুয়াথিল হবেন সারাজীবনের জন্যে। আর বেতন পাবেন বছরে সাত শো পঁচিশ হাজার মারাভেদি। মারাভেদি যে কোন মুদ্রা তা এখন সঠিক বলা কঠিন। স্পেনে মুরদের আমলের সোনার মুদ্রা একরকম দিনারকে বলত মারাভেদি। পিজারোকে সেই সোনার দিনার-এ মাইনে দেওয়ার কথা ব্যবস্থাপত্রে লেখা হয়েছিল কিনা বলা যায় না। স্পেনের মধ্যযুগের আর এক রুপোর মুদ্রা রিয়াল-এর ভাঙটার নামও ছিল, মারাভেদি। সোনার দিনার-এর বদলে রুপোর মারভেদি হলেই কিন্তু আমরা খুশি হই বোধহয় মনে মনে। সাড়ে চারশো বছর আগে চুকেবুকে গেলেও অমন বরাত দেখলে এখনও আমাদের যেন চোখ টাটায়।
আমাদেরই অবস্থা যখন এই তখন পিজারোর ওপর এই অনুগ্রহ বর্ষণের ঘটা দেখে টোলেডোর রাজসভায় ঈর্ষা যে অনেকের হয়েছিল সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু এ সৌভাগ্যের সিঁড়ির প্রথম ধাপেই যে জবর কাঁটার বেড়া একটা ছিল সেইটেই বোধহয় বড় কেউ খেয়াল করে দেখেননি।
সে কাঁটার বেড়া হল এই যে, ব্যবস্থাপত্র দস্তখতের তারিখ থেকে ছ-মাসের মধ্যে পিজারোকে অন্তত আড়াইশো জনের এক লশকর বাহিনী তার অভিযানের জন্যে জোগাড় করতে হবে। সে আড়াইশোর মধ্যে নতুন মহাদেশের উপনিবেশ থেকে একশো জন রংরুট নেওয়া চলবে অবশ্য।
শুধু এই নয়, এই লশকর বাহিনী জোগাড় করে পানামায় পৌঁছোবার দু-মাসের মধ্যে পিজারোকে অভিযানে রওনা হতে হবেই।
পিজারোর তখন যা নামডাক আর নতুন মহাদেশের সূর্য কাঁদলে সোনার রাজ্যের যা সব কিংবদন্তি তখন সারা এসপানিয়ায় ছড়িয়েছে তাতে এই সামান্য ক-টা লোক তুড়ি দিয়েই জোগাড় করা যাবে মনে হয়েছিল।
কিন্তু তা হয়নি। পিজারো টোলেডো থেকে তাঁর নিজের জন্মস্থান টুকসিলোয় গেছেন নিজের জানা এলাকায় লশকর সংগ্রহের সুবিধা হবে ভেবে। সেখানে তাঁর চার ভাই তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছে বটে কিন্তু তাঁর মুখের বিবরণ শুনে যত মোহিতই হোক, তাঁর জাহাজের লশকর সেনা হিসেবে নাম লেখাতে বেশি কেউ অগ্রসর হয়নি।
দেখতে দেখতে তাঁর বরাদ্দ ছ-মাস কেটে গেছে।
সেভিল-এর বন্দরে তিনটে জাহাজ তিনি অভিযানের জন্যে সাজিয়ে রেখেছেন বটে কিন্তু সেগুলির অবস্থা বিশেষ ভাল নয়। মাঝি-মাল্লা লশকরও তাঁর যা দরকার তা জোগাড় হয়নি।
ব্যবস্থাপত্রের শর্ত সময়মতো প্রাণপণে যখন পূরণ করবার চেষ্টা চলছে তখন রাজ-সরকার থেকে এক নির্দেশ এসে হাজির।
সম্রাজ্ঞীর দেওয়া ব্যবস্থাপত্রের সমস্ত শর্ত ঠিকমতো পূরণ করা হয়েছে কিনা পরীক্ষা করবার জন্যে সরকারি পরিদর্শক আসছেন।
পিজারো সত্যিই চোখে অন্ধকার দেখলেন। অজানা দূর সমুদ্রের কোনও রহস্যময় উপকূলে নয়—তাঁর নিজের দেশ এসপানিয়ার ঘাটেই এমন করে তাঁর ভাগ্যের ভরাড়ুবি হবে তিনি ভাবতে পারেননি।
পিজারোর ভাগ্য যদি অপ্রত্যাশিতভাবে খারাপ হয়ে থাকে তা হলে তাঁর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের দরুন হিসাবের ভুল তার জন্যে কিছুটা দায়ী। তিনি গালভরা সব পদবি আর কাঁড়ি কাঁড়ি মারাভেদি বেতনের আশ্বাসেই গলে গিয়েছিলেন। স্পেনের রাজ-সরকারের সব অনুগ্রহ যে মাছের তেলে মাছ ভাজা, সেটুকু আর তলিয়ে বোঝেননি।
অভিযাত্রীদের উৎসাহ দেবার জন্যে স্পেনের ব্যবস্থা বড় চমৎকার। নিজের রাজকোষ থেকে স্পেন একটি পয়সা খরচ করবে না। ধনপ্রাণ পণ করে যদি কেউ নতুন দেশ আবিষ্কার আর জয় করতে পারে সম্রাটের নামে তা হলে তারই সম্পদের ছিটেফোঁটা তাকে দেওয়া হবে অনুগ্রহ করে। সেই সঙ্গে গালভরা লম্বা লম্বা খেতাব বিলোতেও স্পেন সরকার মুক্তহস্ত।
পিজারোর বেলা ব্যাপারটা যদি গাছে না উঠতে এক কাঁদির স্বপ্ন হয়ে থাকে তা হলেও টোলেরেমন্ডোর রাজদরবারে পিজারোর খবর প্রথম পৌঁছে দেবার বাহাদুরি যে দেখিয়েছে সেই মার্কুইস গঞ্জালেস দে সোলিস-এর তো তা হবার কথা নয়।
পিজারোর ভাগ্যে যাই হয়ে থাক, মার্কুইস-এর বরাত তো ওই খবর পৌঁছে দেওয়া। থেকেই খুলে যাওয়া উচিত ছিল। আর কিছু না হোক, এই এক বাহাদুরির জোরেই টোলেডোর রাজদরবারে তার পেখম তুলে ঘুরে বেড়ানোর কথা।
আশ্চর্য কথা এই যে, টোলেডোতে পিজারোর সংবাদ সবিস্তারে স্বয়ং সম্রাটের কাছেই জানাবার পরদিন থেকেই মার্কুইসকে আর রাজদরবারের ত্রিসীমানায় দেখা যায়নি।
অথচ মার্কুইস-এর হঠাৎ এমন নিরুদ্দেশ হবার কোনও কারণই পাওয়া যায় না।
সম্রাট পঞ্চম চার্লস এ খবর শুনে কর্তব্যবুদ্ধি আর সুবিবেচনার জন্যে নিজের মুখে। মার্কুইসকে তারিফ করেছেন। সংশ্লিষ্ট রাজকর্মচারী খাতির করে মার্কুইসকে নিজেদের দফতরে ডেকে সেভিলের কোয়ালিতে পাঠাবার হুকুমনামা মুসাবিদা করেছেন তাকে শুনিয়েই।
সেই দফতর থেকে বার হবার মুখে এমন একজন তাকে দেখে একটু থমকে দাঁড়িয়ে তার সম্বন্ধে খোঁজ নিয়েছেন যাঁর কৌতূহলটুকুর দরুনই মার্কুইস-এর কৃতার্থ হওয়া উচিত।
খোঁজ যিনি নিয়েছেন তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং মেক্সিকো-বিজেতা হার্নারেমন্ডো কর্টেজ। তিনি তখন মেক্সিকো থেকে টেলেডোর রাজদরবারে তাঁর কিছু আর্জি আর অভিযোগ জানাতে কয়েকদিন আগে মাত্র এসেছেন।
ঘটনাচক্র নিয়ে যারা মাথা ঘামায় তারা স্পেনের টোলেডোতে একই সময়ে হার্নারেমন্ডো কর্টেজ আর ফ্রানসিসকো পিজারোর উপস্থিতির একটা তাৎপর্য খুঁজতে পারে।
হার্নারেমন্ডো কর্টেজ আতলান্তিক সাগর পারে উত্তর দিকের এক অসীম ঐশ্বর্যের দেশ জয় করে তখন তাঁর কীর্তির শিখরে পৌঁছেছেন।
আর ফ্রানসিসকো পিজারো তখনও দক্ষিণের আর এক আশ্চর্য সোনায় মোড়া দেশ আবিষ্কার ও জয় করবার শুধু স্বপ্নই দেখছেন।
এ দুজনের পরস্পরের মধ্যে আলাপ পরিচয় তখনও বোধহয় হয়নি। অন্তত টোলেডোতে নিশ্চয় নয়। হলে সে সাক্ষাৎ স্মরণীয় হয়ে থাকত।
হার্নারেমন্ডো কর্টেজ সেদিন মার্কুইসকে দেখে কিন্তু একটু চমকে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। মার্কুইসও দফতরখানা থেকে বেরিয়ে কর্টেজকে দেখেছিল নিশ্চয়ই। কিন্তু সে একবার দেখেই মুখ ফিরিয়ে হনহন করে যেভাবে বেরিয়ে চলে গেছল তাতে কর্টেজকে সে চেনে না বলেই মনে হয়েছে।
কটেজ-এর কিন্তু মার্কুইসকে সম্পূর্ণ অচেনা বোধহয় মনে হয়নি!
মার্কুইস চলে যাবার পর পাশের এক কর্মচারীকে তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন উনি কে, বলুন তো?
বাঃ, উনিই তো মাইস গঞ্জালেস দে সোলিস, বেশ একটু সম্ভ্রমের সঙ্গে জানিয়েছিল কর্মচারীটি।
মার্কুইস গঞ্জালেস দে সোলিস! নিজের মনে নামটা উচ্চারণ করতে করতে কর্টেজের ভ্রূ একটু কুঞ্চিত হয়েছিল। চেহারা আর নামটা যেন কিছুতেই তিনি স্মরণ করতে পারছেন না।
আর একবার রাজদরবারে দেখা হলে হয়তো পারতেন। কিন্তু সে সুযোগ আর মেলেনি।
পরের দিন থেকেই মার্কুইসকে টোলেডোতে আর দেখা যায়নি।
কর্তব্যটুকু করে সে যেন প্রাপ্য সম্মানটুকুর তোয়াক্কা না রেখে চলে গেছে।
শুধু ওই কর্তব্যটুকু সে করেনি। সেভিল থেকে টোলেডো রওনা হবার আগেই সৎ নাগরিকের আর একটি প্রয়োজনীয় কর্তব্য সে পালন করে এসেছিল।
পলাতক ক্রীতদাস হিসেবে ঘনরামের বিস্তারিত পরিচয় সেখানকার কোতোয়ালিতে জানিয়ে এসেছিল।
এর আগে কাপিন সানসেদোর বিরুদ্ধে সে হুলিয়া বার করবার ব্যবস্থা করিয়েছিল, এবার বার করিয়েছে ঘনরামের বিরুদ্ধে।
আশ্চর্য ব্যাপার এই যে, মার্কুইস-এর সেভিল ছাড়ার দু-দিন বাদেই এই দুটি ফেরারি অপরাধীই একসঙ্গে ধরা পড়েছে। ধরা পড়েছে সেভিল-এ নয়, সানসেদোর নিজের শহর মেদেলিন-এ।
একজন পলাতক রাজদ্রোহী আর একজন ফেরারি ক্রীতদাস। এদের দুজনের জন্যে এক ফোঁটা সহানুভূতি খরচ করতেও কেউ আসেনি। হাঘরে চোর বদমায়েশের সঙ্গে দু-জনকে নোংরা শুয়ারের খোঁয়াড়ের মতো কোন এক গারদে পুরে দেওয়া হয়েছে।