পরদিন সকালে বগা এক কপি দৈনিক মহব্বত নিয়ে হাজির হল। প্রথম পৃষ্ঠায় বড় বড় করে লেখা “আকাশে রহস্যময় মহাকাশযান। দিনভর নিরাপত্তা বাহিনীর গোপনীয় কর্মকাণ্ড।” নিচে আমাদের ফ্লাইং মেশিনের ঝাপসা একটা ছবি, নিচ থেকে ক্যামেরা দিয়ে কেউ ছবি তুলেছে, ভালো করে কিছু বোঝা যায় না। খবরে অনেক কিছু আজগুবি কথা বার্তা লেখা। কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের একজন প্রফেসরের বিশাল সাক্ষাতকার। ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা নানারকম স্পেসসিপের ছবি। রহস্যময় মহাকাশযান নিয়ে অনেক রকম বানানো গল্প।।
আমরা সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে দৈনিক মহব্বতটা পড়লাম। মিঠুন সাবধানে তার বুক পকেটে রাখা ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা রাখা শিশিটা ছুঁয়ে দেখে নিচু গলায় বলল, “জানাজানি হলে খুব ঝামেলা হয়ে যাবে।”
আমি বললাম, “ঝামেলার কী আছে? কর্নেল কায়েস আমাদের সব বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। সমস্যাটা কী?”
মিঠুন বড় মানুষের মত একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল, “আসলে সমস্যাটা অন্য জায়গায়।”
“কোন জায়গায়?”
ঠিক তখন আরো কয়েকজন চলে এল বলে মিঠুন আর কথাটা বলতে পারল না।
আমরা কথা বলতে বসলাম সেকেন্ড পিরিয়ডে। কোন ক্লাশে কে আছে কে নাই সেটা নিয়ে মহব্বতজান স্কুলে কেউ মাথা ঘামায় না তাই ক্লাশরুম থেকে বের হয়ে ল্যাবরেটরিতে একত্র হতে আমাদের কোনো সমস্যাই হল না।
আমরা ল্যাবরেটরি ঘরের একটা টেবিল ঘিরে বসলাম। মিঠুন পকেট থেকে ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা ভরা শিশিটা টেবিলের উপর রেখে ফোঁস করে একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলল। তারপর বলল, “আমি যখন প্রথম ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা তৈরী করেছিলাম তখন বুঝি নাই এটা নিয়ে এতো হই চই হবে। আরেকটু হলে আমাদের কোনো একজন মরে যেতাম।”
ঝুম্পা বলল, “মরি নাই। মরে যাওয়া এতো সোজা না।”
মিঠুন বলল, “অনেক সোজা। জামশেদ কতোগুলো গুলি করেছিল মনে আছে? যদি আমাদের কারো গায়ে লাগত?”
বগা বলল, “লাগে নাই তো।”
মিঠুন বলল, “জামশেদ কেন ব্ল্যাকহোলের বাচ্চার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল বুঝেছিস?”
বগা বলল, “বুঝেছি। এটা মিলওন ডলার দামী।”
মিঠুন বলল, “মিলিওন ডলার না। মিলিওন মিলিওন ডলার। সেটা কতো টাকা জানিস?”
ফারা মাথা নাড়ল, “জানি না। আমার বড় বড় গুণ করতে খুব বিরক্তি লাগে।”
মিঠুন বলল, “তোর বড় বড় গুণ করতে হবে না, শুধু জেনে রাখ এটা অনেক টাকা। কিন্তু বল দেখি কেন এতো টাকা?”
বগা বলল, “এটা আবার কোনো প্রশ্ন হল নাকি? এটা দিয়ে আকাশে উড়া যায়।”
মিঠুন বলল, “উহু আকাশে উড়ার জন্য না। এটা দিয়ে অস্ত্র বানানো যাবে–আর আলতু ফালতু অস্ত্র না। একেবারে খাটি—”
আমি বললাম, “নিউক্লিয়ার বোমা?”
“হ্যাঁ। আসলে তোরা বিশ্বাস করবি, আমি-” মিঠুন বুকে থাবা দিয়ে বলল, “আমি ইচ্ছা করলে এই ল্যাবরেটরি ঘরে একটা সত্যিকারের নিউক্লিয়ার বোমা বানিয়ে ফেলতে পারব?”
ঝুম্পা বলল, “তুই?”
“হ্যাঁ। কারণটা খুবই সোজা–”
ফারা কানে হাত দিয়ে বলল, “থাক থাক এখন বৈজ্ঞানিক কচকচানি শুরু করিস না। মাথা ধরে যাবে।”
মিঠুন মুখ শক্ত করে বলল, “মোটেও বৈজ্ঞানিক কচকচানি না। খুবই সোজা জিনিষ। ইবু প্রথম তার বাসার ছাদে দেখেছিল। ব্ল্যাকহোলের বাচ্চাকে ঘিরে ইলেকট্রিক ফিল্ড দিলে ভেতর থেকে এনার্জী বের হয়। এনার্জিটা আসে ভয় থেকে, ই ইকুয়েলস টু এম সি স্কয়ার হিসেবে। যেটা দিয়ে নিউক্লিয়ার এনার্জী হয়, নিউক্লিয়ার বোমা বানায়।।
ফারা হাল ছেড়ে দেয়ায় ভঙ্গী করে মাথা নাড়ল, আর মিঠুন একটা নিশ্বাস নিয়ে বলল, “ভরকে এতো সহজে শক্তিতে রূপান্তর করা যায় এটা কী কেউ কোনোদিন চিন্তা করতে পেরেছে? শুধু ইলেকট্রিক ফিল্ড দিলেই হয়, যত বেশি ফিল্ড তত শক্তি। শুধু কী করতে হবে জানিস?”
কিছু একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস না করলে মিঠুন হতাশ হবে, তাই কিছু বুঝব জানার পরেও জিজ্ঞেস করলাম, “কী করতে হবে?”
“খুব কম সময়ের জন্যে অনেক বড় একটা ইলেকট্রিক ফিল্ড দিতে হবে। মাইক্রোসেকেন্ড একটা পালস দিলে কাজ হয়ে যাবে। তার মানে বুঝেছিস?”
আমরা বিশেষ কিছু বুঝি নাই কিন্তু তারপরেও জোরে জোরে মাথা নাড়লাম যেন মিঠুন আবার এটাও বোঝাতে শুরু না করে, কিন্তু লাভ হল না সে বোঝাতে শুরু করল, “তার মানে আমি ছোট একটা সার্কিট দিয়ে কয়েক ঘণ্টায় মাঝে ডেটোনেটর বানাতে পারব।”।
মিঠুন হাত দিয়ে বাচ্চা ব্ল্যাকহোলের ভরা শিশিটা নিয়ে একটু নেড়ে বলল, “এখানে যে ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা আছে সেটার ওজন দশ গ্রামের মত। তার মানে হচ্ছে এটা দিয়ে আমি যদি একটা নিউক্লিয়ার বোমা বানাই তাহলে সেটা কতো শক্তিশালী বোমা হবে জানিস?”
আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কতো শক্তিশালী”?
“হিরোশিমায় যে বোমাটা ফেলেছিল তার থেকে দশগুণ বেশী শক্তিশালী?”।
হিরোশিমায় যে বোমাটা ফেলেছিল সেটা নিশ্চয়ই অনেক শক্তিশালী, তার থেকে দশগুণ বেশী শক্তিশালী বোমা নিশ্চয়ই সোজা কথা না তাই আমরা সবাই অবাক হবার ভঙ্গী করলাম, (শুধু ফারা হালকাভাবে হাই তুলল)।
মিঠুন গম্ভীর গলায় বলল, “এই জন্যে পৃথিবীর যত টেররিস্ট, যত জঙ্গী আছে তারা যদি কোনোভাবে এই ব্ল্যাকহোলের বাচ্চার খবর পায় তাহলে এটা নোর জন্যে পাগল হয়ে যাবে। এইজন্যে এটা মিলিওন মিলিওন ডলার দামী।”
বগা গলা খ্যাকারী দিয়ে বলল, “আমরা এখন এইটা বিক্রি করব?”
ঝুম্পা বলল, “কেমন করে বিক্রি করবি। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে বলবি, ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা মাত্র মিলিওন ডলার। ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা মাত্র মিলিওন ডলার আগে আসলে আগে পাবেন।
ঝুম্পার কথা শুনে আমরা সবাই হি হি করে হাসলাম। আমি বললাম, “সেভাবে বিক্রি করতে হবে না। কিন্তু কর্নেল কায়েস চাইলে কী গভমেন্টের কাছে বিক্রি করে ফেলতে পারবেন না? মিঠুন তাহলে বড়লোক হয়ে যাবেআমরা মিঠুনের সাথে থাকব।”
মিঠুন চশমার ভিতর দিয়ে আমার দিকে তাকাল, বলল, “তারপর যদি এইটা দিয়ে কেউ কোনোদিন একটা বোমা বানায় আর সেই বোমার কারণে কোনো মানুষ মারা যায়?”
“তাহলে কী?”
“তাহলে সেই মানুষটাকে মারার জন্যে আমি দায়ী হব।” মিঠুন মুখ শক্ত করে বলল, “আমি মানুষ মারার জন্য দায়ী হতে চাই না।”
ফারা এতক্ষণ পর সোজা হয়ে বসল, জিজ্ঞেস করল, “তাহলে কী করবি?”
“আমি ব্ল্যাকহোলের বাচ্চাটা কাউকে দিব না, এটাকে ধ্বংস করে ফেলব।”
ফারা কিছুক্ষণ মিঠুনের দিকে তাকিয়ে রইল তারপর মিঠুনের পিঠে জোরে একটা থাবা দিয়ে বলল, “সাবাশ! এই তো চাই!”
মিঠুন থাবা খেয়ে সোজা হয়ে বসল, “কী চাস?”
“তুই যেটা বলছিস! কোনো দিন কোনো মানুষ মারার যন্ত্র বানাব না”
আমি দুর্বল ভাবে বললাম, “তাহলে কাউকে বলবিও না?”
“না। কীভাবে বানিয়েছি সেটাও কাউকে বলব না। কেউ যেন জানতে না পারে।”
“কী ভাবে ব্ল্যাকহোলের বাচ্চাকে ধ্বংস করবি?”
“অনেক গুলো উপায় আছে। সবচেয়ে সোজা হচ্ছে একটা রকেটের মতো বানিয়ে ছেড়ে দিব, পৃথিবী ছাড়িয়ে মহাকাশে চলে যাবে।”
“রকেটের মত?”
“হ্যাঁ। শক্তি খরচ করতে করতে উপরে উঠে যাবে, একসময় সব শক্তি ফুরিয়ে গেলে মহাকাশের বাচ্চাটা শেষ হয়ে যাবে।”
“কতোদিন লাগবে তৈরী করতে?”
“একেবারেই সময় লাগবে না। ফ্লাইং মেশিন তৈরী করায় সময় এভাবেই তৈরি করলাম না?”
মিঠুন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “আমি জানি তোদের একটু একটু মন খারাপ হচ্ছে, আমরা ইচ্ছা করলেই অনেক বিখ্যাত হতে পারতাম অনেক বড়লোক হতে পারতাম, সেসব কিছু না করে ব্ল্যাকহোলের বাচ্চাটা ধ্বংস করে দিতে চাইছি। মন খারাপ হতেই পারে।”
আমি বললাম, “না মিঠুন। আমাদের একটুও মন খারাপ হচ্ছে না। তুই ঠিক কথাই বলেছিস”
ঝুম্পা বলল, “আর আকাশে উড়তে পারব না সেজন্যে একটু মন খারাপ হচ্ছে, কিন্তু কী আর করা। তুই অন্য একটা কিছু আবিষ্কার করতে পারবি না?
মিঠুন হাসল, বলল, “পারব।”
মিঠুন বগার দিকে তাকাল, বগা হাসার চেষ্টা করে বলল, “তোরা সবাই যেটা বলবি সেটাই ঠিক আছে। তবে—”
“তবে কী?”
“হাত খরচের জন্য কিছু টাকা থাকলে খারাপ হত না।”
বগার কথা শুনে আমরা সবাই হি হি করে হাসলাম।
স্কুলের মাঠ থেকে একদিন পর আমরা ব্ল্যাকহোলের বাচ্চাটাকে মহাকাশে ছেড়ে দিয়েছিলাম। রকেটের মত জিনিষটা মিঠুন ক্লাশে নিয়ে এসেছিল, সবাই জানতে চাইল এটা কী–মিঠুন বলল, রকেট। শুনে কেউ বেশি অবাক হল না। বিজ্ঞান মেলায় চ্যাম্পিওন হওয়ার পর সবাই ধরে নিয়েছে মিঠুন যে কোন যন্ত্র বানাতে পারে। খেলনা রকেট সবাই দেখেছে, সাইকেলের পাম্প দিয়ে পাম্প করে রকেট বানিয়ে বাচ্চাদের সেই রকেট ছুড়ে দেওয়া হয়। ধরেই নিয়েছে যে সেরকম কিছু।
বিজ্ঞান ক্লাশে মিঠুন কালাপাহাড় স্যারকে বলল, “স্যার, কিছুক্ষণের জন্যে ক্লাশ ছুটি দিবেন?”
আমরা কেউ বললে স্যার আমাদের ছাতু করে ফেলতেন কিন্তু মিঠুনকে স্যার শ্রদ্ধাভক্তি করেন। জিজ্ঞেস করলেন, “কী জন্যে?”
মিঠুন তার হাতের রকেটটা দেখিয়ে বলল, “এই যে রকেটটা বানিয়েছি এটা ছাড়ব। সবাই দেখবে।”
“রকেট কোথায় যাবে?”
“আকাশে।”
“কারো মাথায় এসে পড়বে না তো?”
“না স্যার।”
কালাপাহাড় স্যার ভুরু কুচকে বললেন, “যদি কারো মাথার উপর পড়ে তাহলে কিন্তু মামলা করে দেবে।”
“পড়বে না স্যার।”
“ঠিক আছে তাহলে।”
তখন কালাপাহাড় স্যার টেবিলে থাবা দিয়ে আমাদের ডাকলেন তারপর বললেন, “তোদের সবাইকে মিঠুন এখন রকেট ওড়ানো দেখাবে।”
পুরো ক্লাশ আনন্দের শব্দ করল। কালাপাহাড় স্যার বললেন, “কোনো গোলমাল করবি না, লাইন ধরে সব মাঠে যা!”
ছেলেমেয়েরা ভয়ংকর গোলমাল করে লাইন ধরায় কোনো চেষ্টা না করে ধাক্কাধাক্কি করে দৌড়াতে দৌড়াতে মাঠে হাজির হল। মাঠে গিয়ে দেখলাম মাঠের এক কোনায় অক্সব্রীজ স্কুলের সায়েন্স টিচার দাঁড়িয়ে আছেন, মিঠুনকে দেখে এগিয়ে এসে বললেন, “কী খবর মিঠুন? তুমি আমাকে আসতে বলছ, খুব জরুরী, কী হয়েছে?”
মিঠুন বলল, “স্যার মনে আছে, আপনারা আমাকে অক্সব্রীজ স্কুল থেকে বের করে দিয়েছিলেন?”
সায়েন্স স্যার একটু ইতস্তত করে বললেন, “হ্যাঁ। ইয়ে মানে ব্যাপারটা এখনো সবার কাছে রহস্যের মত। কী ঘটেছিল, তুমি কী করেছিলে?”
মিঠুন হাতের রকেটটা দেখিয়ে বলল, “আমি যে জিনিষটা তৈরী করেছিলাম সেটা এই রকেটটার ভিতরে আছে। জিনিষটা আমরা এই রকেটে করে পৃথিবীর বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
“পৃ-পৃ-পৃথিবীর বাইরে?”
“জী স্যার, পরে আপনাকে সব বলব, আমি চাচ্ছিলাম এখন আপনি এটা দেখেন, আমার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না।”
“কিন্তু–কিন্তু।“
“আপনাকে কিছু করতে হবে না শুধু দেখেন স্যার। প্লিজ।”
সায়েন্স স্যার ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। মিঠুন ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা সহ রকেটটা মাঠের মাঝখানে রাখল, সবাই কাছে চলে আসছিল, আমরা ঠেলে তাদের সরানোর চেষ্টা করছিলাম লাভ হল না তখন গুললু কনুই দিয়ে গুতো দিয়ে তাদের দশ হাত দূরে সরিয়ে দিল।
রকেটটাকে বসানোর জন্যে একটা ছোট প্লেটের মত আছে, সেই প্লেটে একটা সুইচ। মিঠুন সবার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি এই সুইচটা টিপে দেওয়ার দশ সেকেন্ড পর রকেটটা উড়বে। সবাই রেডি?”
সবাই চিৎকার করে বলল, “রেডি।”
মিঠুন সুইচটা টিপে সরে এল। ক্লাশের সবাই এক দুই তিন করে গুনতে লাগল। অক্সব্রীজ সায়েন্স টিচার তার পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে রকেটটার দিকে ধরে রেখেছেন, ছবি তুলছেন নাকী ভিডিও করছেন বুঝতে পারলাম না।
ঠিক দশ সেকেন্ড পর রকেট একটা ঝাঁকুনি দিয়ে উপরে উঠতে লাগল, ছোট রকেটের নিচে দিয়ে আগুনের মত কিছু একটা বের হচ্ছে আর দেখতে দেখতে রকেটটা উপরে উঠে যাচ্ছে। রকেটটা ঘিরে থাকা সব বাচ্চা আনন্দে হাত তালি দিচ্ছে। তারা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না কী অসাধারণ একটা জিনিষকে আসলে পৃথিবী থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আমি রকেটটার দিকে তাকিয়ে রইলাম, আস্তে আস্তে সেটা ছোট হতে হতে অদৃশ্য হয়ে গেল, আমি তবু তাকিয়েই রইলাম। ঠিক কী কারণ কে জানে আমার নিজের ভিতরে একটু দুঃখ দুঃখ লাগছিল। নিজের মনে ফিস ফিস করে বললাম, “বিদায় ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা। যেখানেই থাকিস ভালো থাক।”
সেদিন বিকেল বেলাতেই আমাদের স্কুল টেলিভিশন ক্যামেরা সাংবাদিক আর নান ধরণের গাড়ীতে ভরে গেল। হেড মাস্টার নিজে এসে আমাদের কয়েকজনকে ডেকে নিয়ে গেলেন, গিয়ে দেখি কর্নেল কায়েস অপেক্ষা করছেন। শত শত ক্যামেরার ফ্ল্যাশ এর মাঝখানে দিয়ে হেঁটে আমরা হেড স্যারের রুমে ঢুকলাম। কর্নেল কায়েস মিঠুনকে জিজ্ঞেস করলেন, “কী হয়েছে বলবে? একটা গুজব শুনছি তুমি ব্লাকহোলের বাচ্চা রকেটে করে পৃথিবীর বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছ। এটা কী সত্যি?”
“জী স্যার।” মিঠুন মাথা নাড়ল, “এটা সত্যি।”
“কেন?”
“এটা দিয়ে বোমা বানানো যেতো স্যার। আমরা চাই না কোনোদিন এটা দিয়ে বোমা বানানো হোক আর সেই বোমা দিয়ে কোনো মানুষ মারা যাক।”
কর্নেল কায়েস কিছুক্ষণ অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে রইলেন। খুব ধীরে ধীরে তার মুখটা কেমন যেন নরম হয়ে গেল, মুখের কোনায় বিচিত্র একটা হাসি ফুটে উঠল, ফিস ফিস করে বললেন, “সাবাস, বাঘের বাচ্চা।”
মিঠুন জিজ্ঞেস করল, “এতো মূল্যবান একটা জিনিস নষ্ট করেছি যে জন্যে আপনি কী রাগ হয়েছেন?”
কর্নেল কায়েস মাথা নাড়লেন বললেন, “না, আমি মোটেও রাগ হইনি। আমি তোমাদের দেখে অসম্ভব খুশী হয়েছি। আমি জানি যে দেশে তোমাদের মত ছেলেমেয়েরা থাকে সেই দেশের কোনো চিন্তা নেই। আই স্যালুট ইউ।”
কথা শেষ করে কর্নেল কায়েস সত্যি সত্যি একবারে মিলিটারী কায়দায় আমাদের স্যালুট করলেন। কেউ স্যালুট করলে কী করতে হয় আমরা জানি না, আমরাও চেষ্টা করলাম তার মত স্যালুট করতে।
কর্নেল কায়েস চলে যাবার পর সাংবাদিকেরা যা একটা কাণ্ড শুরু করল সেটা আর বলার মত না। এতোদিন যা বলতে পারিনি এবারে সবকিছু বলে দিলাম, ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা, ফ্লাইং মেশিন, জামশেদের কাজ কর্ম কিছুই বাকী রাখলাম না। শুনলে কেউ বিশ্বাস করবে না, আমাদের ছবি তোলার জন্যে সাংবাদিকেরা নিজেদের ভেতর এমন মারামারি করল যে সেটা পর্যন্ত একটা খবর হয়ে গেল।