খিলসূক্ত
আপাতদৃষ্টিতে বহু পরবর্তী সম্পূরক সূক্তসমূহের আরও একটি গুচ্ছ সংহিতার শেষভাগে সংস্থাপিত হয়ে ‘খিলসূক্ত’ রূপে পরিচিত হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে নিবিদ্, পুরোরুচ্, প্ৰৈষ এবং কুন্তাপ-সূক্ত-একত্রে এই সমগ্র সম্পূরক অংশ ঋকপরিশিষ্ট রূপে বিখ্যাত। শৌনকের রচনারূপে প্রচারিত ‘আৰ্ষানুক্ৰমণী’ ও ‘অনুবাকাক্রিমণী’ গ্রন্থেই ‘খিল’ নামটি সর্বপ্রথম পাওয়া যায়। যাস্ক খিলসূক্ত থেকে শ্লোক উদ্ধৃত করলেও তিনি তাদের ‘নিগম’’ ব’লেই উল্লেখ করেছেন। ম্যাক্সমুলার বত্রিশটি খিলসূক্ত গণনা করেছেন। কিন্তু আউফ্রেখ্ট-এর মতে এদের সংখ্যা সাতাশের বেশি নয়। স্পষ্টতই অনেক দেরিতে সংহিতার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ফলেই খিলসুক্তের চরিত্রে বিষমতা দেখা গেছে ; সংহিতার মূল ধারায় গৃহীত হওয়ার পরিবর্তে তাদের স্থান নির্দিষ্ট হয়েছে সম্পূরক অংশে। তবে এই বিলম্বিত অন্তর্ভুক্তি কিন্তু তাদের রচনাকালকে প্রতিফলিত করে নি কেননা এই সব সূক্তের বেশ কয়েকটি মন্ত্রই সংহিতার প্রধান মন্ত্রের চেযেও প্রাচীনতর। যাই হােক, খিলসূক্তগুলি যে পরবর্তীকালে সঙ্কলিত হয়েছে তার আরও একটি প্রমাণ হল মূল ঋগ্বেদ থেকে এগুলিতে শ্বাসাঘাতের চিহ্নের পার্থক্য।
বাস্কল শাখার পাঠে খিলসূক্তগুলিকে ঋগ্বেদের অংশরূপে গ্ৰহণ করা হয়েছিল বলেই মনে হয় ; যদিও এদের অধিকাংশই শাকল পাঠের পূর্ববতী। প্রখ্যাত পণ্ডিত কীথ্ মন্তব্য করেছেন যে খুব সম্ভবত খিলসূক্তগুলি ঋগ্বেদে সংহিতার সামান্য পরবর্তী। তবে সাম্প্রতিক রচনার সমকালীন বত্রিশটি সূক্তের মধ্যে সব খিলসূক্তগুলি হয়ত একই পর্যায়ে রচিত হয় নি। এই সব সম্পূরক সূক্তের মধ্যে প্রয়োগ যৎ -সামান্য ; কখনও কখনও যদিও বা সংযোগসূত্র দেখা গেছে, প্রকৃতপক্ষে তা অত্যন্ত ক্ষীণ।
অভিশাপ, জাদুবিদ্যা, স্বর্ণের আকাঙক্ষা, ধীশক্তিবর্ধনের কামনা, সপত্নীদলন, গবাদি পশুর কল্যাণ এবং উত্তম সঙ্কল্প ইত্যাদি ; এরা প্রায়শই খণ্ডিত, কখনও কখনও গূঢ়াৰ্থবহ এবং সংহিতার মূল অংশ থেকে প্রায়ই কিছু কিছু শ্লোক ঋণ হিসাবে গ্রহণ করে বলে বিষয়গত সামঞ্জস্য রক্ষিত হয় নি। খিলসূক্তগুলির মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত হল লক্ষ্মীসূক্ত ও শিবসঙ্কল্পসূক্ত দুটি।