১১. কলিংবেল টেপার পরে

১১.

কলিংবেল টেপার পরেই যে লোকটি এসে দরজা খুলে দিল, সার্জেন্ট ডোনোভান তাকে ঠিক চিনতে পারল, অথচ ডিটেকটিভ ডানকান চিনতে পারল না। ব্যাঙ্কে পার্কারের পাশে বসে এই লোকটিই কাজ করছিল। ডোনোভান জলদ স্বরে প্রশ্ন করল, মিঃ হল্যান্ড আপনি তাইনা? শুধু মাথা নাড়ল কে নিরুত্তরে। কেকে তীক্ষ্ণচোখে সবিশেষ নিরীক্ষণ করছিল পাশে দাঁড়িয়ে ডোনোভানের সঙ্গী ডিটেকটিভ ডানকান্। সে–ভঙ্গী করল কেনের চালচলন দেখে। লোকটা কেন আমাদের দিকে এমন অপরাধীর মত তাকিয়ে আছে নিজের মনেই সে ভাবল, কি ব্যাপার? যেন টাকা লুকিয়ে রেখেছে বাড়িতে, ব্যাঙ্ক ডাকাতি করে মনে হচ্ছে ওর চাহনী দেখে। ডোনোভান বলল, আমরা কয়েকটি কথা বলতে চাই আপনার সহকর্মী মিঃ পাকারের সঙ্গে দেখা করে। বলতে পারেন ওনার ঠিকানা কি? কেরে মুখ থেকে কোন কথা বেরোল না, যদিও সে উত্তর দেবার জন্য মুখ খুলল। উত্তর দিচ্ছেন না কেন? কি হল আপনার,বলুন পাকার কোথায় থাকেন? পুনরায় জানতে চাইল সার্জেন্ট ডোনোভান উচ্চস্বরে। ওঃ পার্কার, শুকনো হেসে টোক গিলে বলল কেন, এই পাশের রাস্তায় থাকেন উনি। কি যেন ইয়ে ১৪৫ মার্শাল, অ্যাভিনিউতে উনি থাকেন পকেট থেকে নোট বই বের করে মিঃ ডানকান। কেনের সামনেই ঠিকানাটা লিখে নিল টেলিফোন বুথ থেকে ওঁর স্ত্রীকে ফোন করবেন একথা কি আজ সকালে আপনাকে বলেছিলেন মিঃ পার্কার? আবার ডোনোভান বেশ চাপ দিয়ে প্রশ্ন করল। কৈ, নাতো, আমায় তো কিছুই বলেনি, কেমন ভড়কে গিয়ে জবাব দিল কে না মানে সে রকম কিছু না তো। একথা তো ঠিক, টেলিফোন বুথে ওকে আপনি ঢুকতে দেখেছিলেন? কে ঘাবড়ে গিয়ে জবাব দিল, ও হ্যাঁ বটে এখন মনে পড়েছে। মনে আছে তখন সময় কত? সে কথা তো মনে নেই কে বলল। ডানকানকে বলল ডোনোভান কেনের দিকে অগ্নি-দৃষ্টি বর্ষণ করে। কোন লাভ নেই এখানে শুধু শুধু সময় নষ্ট করে, চল যাই। তাঁরা দুজন গাড়িতে উঠল কেনের দিকে পিছন ফিরে। কেন্ নির্নিমেষে সেই দিকে চেয়ে রইল যতক্ষণ পর্যন্ত স্টার্ট দিয়ে গাড়িটা চোখের সামনে থেকে না মিলিয়ে গেল।

ঘরে এল কে সদর দরজা বন্ধ করে, দুহাতে চেপে ধরে ইজিচেয়ারের পেছন দিকটা, কিছুক্ষণ দাঁড়াল। কিছুক্ষণ আগে বুকের ভেতর যে ধড়ফড়ানি শুরু হয়েছিল, এই দুই পুলিস অফিসারকে দেখে তা এখনো থামেনি। তাঁর পা দুটো থরথর করে কাঁপছিল কে অনুভব করল।

মনে মনে বলল কে বড় জোর রক্ষা পেয়েছি। ওরা কি বুঝতে পেরেছে আমি ঘাবড়ে গেছি? নিজেকে একটু বশে আনতে হবে এবার থেকে। যদি কখনও আবার ওরা এসে হাজির হয় আগামী দিনে, তাহলেই ওরা সন্দেহ করবে আমি যদি এরকম থরথর করে কাঁপি।

তার মনে পড়ল হঠাৎ পার্কারের কথা। তার কাছ থেকে পার্কারের ঠিকানা নিয়ে গেছে ঐ দুই গোয়েন্দা অফিসার কিছুক্ষণ আগেই। সজাগ করে দিতে হবে পার্কারকে ওরা যাবার আগেই। কেন্ ডায়াল করল পাকারের টেলিফোন নম্বর, অপেক্ষা করতে হলনা বেশি সময়, উল্টোদিক থেকে ভেসে এল পার্কারের স্ত্রীর গলা। কে বলল, হ্যালো, আমি কে হল্যান্ড কথা বলছি, একটু ডেকে দিন তো ম্যাক্সকে? পাকারের স্ত্রী বলল,বাগানে দাঁড়িয়ে ম্যাঙ্গ কথা বলছে, দুজন ভদ্রলোক এসেছেন ওর সঙ্গে দেখা করতে। ঠিক আছে, ফোন রাখছি, হতাশ গলায় কে বলল। আমি ফোন করেছিলাম ওকে একটু বলে দেবেন।

কেন্ টলতে টলতে মদের আলমারীর কাছে গিয়ে দাঁড়াল রিসিভার রেখে দিয়ে। গলায় ঢেলে দিল গ্লাসে করে খানিকটা জল না মেশানো হুইস্কি।

ইতিমধ্যে পার্কারের কাছে পৌঁছে গেছে ওরা দুজন, তাঁর আর এখন কিছু করণীয় নেই। ইজিচেয়ারে এসে বসল কোনরকমে শ্রান্ত শরীর নিয়ে। এখন সে কি করবে ভাবতে লাগল একটা সিগারেট ধরিয়ে। তার সব চিন্তা এলোমেলো হয়ে যেতে লাগল যখনই মনে পড়ল, হয়তো। ডানকান আর ডোনোভান পার্কারের সঙ্গে এখন কথা বলছে। ওদের বলে দেবেনা তো পার্কার সত্যি কথাটা ফাঁদে পড়ে। পুলিস জেরা করে বের করে নেবেনা তো, যে কের টেলিফোন নম্বরটা পার্কারই তাকে দিয়েছিল। পার্কারের কি মনে আছে তার হালকা ধূসর রঙের স্যুটটার কথা? তার মাথায় এইসব উল্টোপাল্টা চিন্তা ঘুরপাক করতে লাগল। চেয়ার ছেড়ে কে উঠে দাঁড়াল। বসে থাকতে তার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিল। ইতস্ততঃ ভাবে তাকাতে লাগল সে সদর দরজা খুলে রাস্তায় বেরিয়ে এসে। পার্কারের বাড়ির সামনে পুলিসের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে কিনা দেখে আসবে ভাবল মোড়ের মাথায় গিয়ে।নিজেকে কে সংযত করল অতিকষ্টে, ভাবল গেলে যদি সে তাদের চোখে পড়ে যায় তখন? একটা কথা কেনের মুহূর্তের মধ্যে মনে পড়ে গেল, ফিরে এসে যখন সে দরজা বন্ধ করছিল, তার হাত পা পেটের ভেতর ঢুকে যাবার অবস্থা হল অতিরিক্ত ভয়ে। কে কার পার্কের অ্যাটেনডেন্টের খাতাটা চুরি করে এনেছিল সেই রাতে, যে রাতে কে কে খুন করা হয়। কিছুতেই তার এখন মনে পড়ছেনা। কোথায় তারপর সে খাতাটা রেখেছে।

এ বিষয়ে সে নিঃসন্দেহ যে, সেই স্যুটটার পকেটে খাতাটা ছিলনা, সে স্যুটটা ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে রেখে এসেছে, কারণ ও নিয়ে যাবার আগে সেই স্যুটটার পকেট নিখুঁত ভাবে খুঁজেছিল, দেখছিল কিছু ওর ভেতর আছে কিনা। কোথায় আছে তাহলে সেটা? পড়ে গেল নাকি রাস্তায়। একটা রক্তের হিমতে তার শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল, কথাটা মনে হতেই। ওটা নিশ্চয়ই পুলিসের হেফাজতে আছে, যদি রাস্তায় পড়ে গিয়ে থাকে। কেনের গাড়ির নম্বর ওতেই লেখা আছে এটাই সবচেয়ে বড় আতঙ্কের কারণ। ঐ খাতাটা নির্ভুল প্রমাণ যে কে ঐ রাত্রে ওখানে গাড়ি পার্ক করেছিল। কোনও ভাবে যদি খাতাটা গাড়ির ভেতরই পড়ে গিয়ে থাকে এমনটাও তো হতে পারে বই কি। গাড়িটা এখুনি একবার খুঁজে দেখা দরকার, কেন্ উঠে পড়ল কথাটা মনে হতেই। তার সদর দরজার দিকেই এগিয়ে আসছে পার্কার। বাগানের গেট খুলে, সদর দরজা খুলে গ্যারেজের দিকে এগিয়ে যেতেই কে দেখতে পেল। কেন্ আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করল, ম্যাক্স কি ব্যাপার। ক্লান্তি আর উত্তেজনার ছাপ চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে ম্যাক্স পার্কারের। পার্কার, থেমে থেমে বলল ভেতরে চল কথা আছে। দুটো গ্লাসে হুইস্কি ঢালল কেন, ফিরে এল বসার ঘরে পার্কারকে নিয়ে। একটা গ্লাস পার্কারকে দিয়ে বলল, এবার বল কি হয়েছে? আত্মপ্রত্যয়িত ভাবে পার্কার বলল, একটা কথাও ওরা আমার কাছ থেকে জানতে পারেনি। ভীষণ বদমাইশ সার্জেন্টটা কে কে নাকি আমিই সেদিন ফোন করেছিলাম একথা বলল। ও বার বার আমায় চেপে ধরে, যতই আমি অস্বীকার করি। একটাই নাকি ফোন করা হয়েছিল ব্যাঙ্ক থেকে দশটা নাগাদ।

শেষকালে জোর করে কথা আদায় করার জন্য বলল। মানছি মশাই আপনি খুন করেননি, কিন্তু অন্ততঃ তাদের নামগুলো বলে দিন যারা ঐ কে মেয়েটার কাছে আসত। আমিও বার বার বলছি, আমার স্ত্রীকে ছাড়া আমি আর কাউকেই ফোন করিনি। যাচাই করে দেখতে চাইল লোকটা শেষকালে, সে বলল আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ব্যাপারটা জেনে নেবে। সে কথামত সেই কাজই কর। আমি সেদিন ওকে দশটায় ফোন করেছি কিনা বাড়ির ভিতর ঢুকে মেইজিকে সত্যিই সে জিজ্ঞাসা করল। ওর কথা শুনে বিপদের গন্ধ পেল মেইজি কারণ সে বুদ্ধিমতী মেয়ে। সরাসরি বলে দিল সে যে ফোনটা সেই করেছিল। ওরা দুজনেই ক্ষমা চাইল আমার কাছে চলে যাবার সময়। ঘাম দিয়ে যেন জ্বর ছাড়ল কেনে, যাক শুনে স্বস্তি পেলাম। আরাম করে চেয়ারে বসে সে বলল। পার্কার গভীর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি কিন্তু মেইজিকে সবকথা প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছি। কে অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলল, এটা কি রকম হল? একথাও কি বলেছে যে তুমিও তার ওখানে যাওয়া আসা করতে? এছাড়া পথ ছিলনা,বলতেই হল, পার্কার বলল, ওরা দুজনে চলে যাবার পর মেইজি সমস্ত ব্যাপার পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে জানতে চাইল। ও ঠিক ধরে ফেলেছে আমি সার্জেন্ট ডোনোভানকে মিথ্যা কথা বলেছি। ব্যাপারটা কিন্তু ও খোলা মনে নিতে পারেনি, সব কথা শুনে মর্মাহত হয়েছে। হয়তো আমার পরিবারের শান্তি ব্যাহত হবে এর ফলে। তুমি সেদিন রাতে কের অ্যাপার্টমেন্টে গিয়েছিলে নাকি? বলতো কে সত্যি করে।

কেন্ উত্তেজিত হয়ে বলল,

আজেবাজে কথা বলছ কেন? কের অ্যাপার্টমেন্টে আমি সেদিন যাইনি, এখনও বলছি আগেও তোমায় বলেছি।

কেন্ তুমি আমায় মিথ্যা কথা বলছ, একথা আমার মনে হচ্ছে। পার্কার বলল, তোমার চেহারার সঙ্গে অবিকল মিলে যাচ্ছে, ওরা সন্দেহ ভাজন ব্যক্তির যে বর্ণনা দিল। কে আবার ধমকে উঠল, বাজে কথা বন্ধ কর পার্কার, কেন তোমার বিশ্বাস হচ্ছেনা যে সেদিন আমি ওখানে যাইনি, বারবার বলা সত্ত্বেও। কেন্, আইনের তাতে কিছু যায় আসেনা, আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি আর না করি, তবে একথা মনে রেখো, কখনই ওদের কাছে বোলোনা যে আমিই তোমায় ওর টেলিফোন নাম্বার দিয়েছিলাম, যে পরিস্থিতিই আসুক। এর মধ্যে আর আমায় জড়িয়ো না তোর্মায় মিনতি করছি। তুমি যদি মুখ খোলো তবে চাকরিটি আমি হারাব, তোমার জন্যই আমার বাড়ির শান্তি নষ্ট হয়েছে। আমায় আর কেউ তখন চাকরি দেবেনা, প্রতিটি খবরের কাগজে যদি আমার ছবি ছাপা হয়। পার্কার বলল। তখন যেন আমায় ফাঁসিয়ে দিয়োনা কেন, আজ হোক বা কাল তোমায় ঠিক গ্রেপ্তার করবে পুলিস। চুপ করবে তুমি দয়া করে, কে ক্রোধে আর উত্তেজনায় প্রায় ফেটে পড়ে বলল, আমার কথাটা একবারও ভাবছনা, শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত আছ। আমি কেন তা নিয়ে মাথা ঘামাব, তুমিই ভাববে তোমার কি করা উচিৎ, পার্কার বলল। কের কাছে যাবার জন্য তুমিই আমায় ইন্ধন দিয়েছিলে একথা ভুলে যেয়োনা পার্কার, কেন্ ক্রোধান্বিত চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে বলল, খুবই নির্বোধের কাজ করেছি তোমার কথা শুনে। আমি সেদিন কের কাছে গিয়েছিলাম স্বীকার করছি। কিন্তু তা বলে আমি ওকে খুন করিনি। ও শোবার ঘরে ঢুকেছিল আমায় বাইরের ঘরে বসিয়ে রেখে, তারপর

পার্কার চীৎকার করে উঠল, চুপ কর, তুমি আমাকেও ঐ খুনের চক্রে জড়াতে চাও এসব কথা বলে, তাইনা? আমার এসব শুনে লাভ নেই, কি ঘটেছিল বা তুমি কি করেছিলে, তোমায়। আমি ঐ একটা কথাই বলে দিচ্ছি। তুমি কখনই পুলিসের কাছে বলবেনা যে, আমি তোমায় ওর টেলিফোন নাম্বারটা দিয়েছিলাম। তোমায় আমি কোন কিছুতেই জড়াবো না, ভয় পেয়োনা, কে বলল, তবে একথাও তুমি অস্বীকার করতে পারনা যে নৈতিক দিক থেকে তুমিও কিছুটা দায়ী। আমি এই বিপদে পড়েছি তোমার কথা শুনেই। তুমি এবার চলে যাও।

পার্কার ঘর থেকে বিদায় নিল আর একটি কথাও না বলে। পার্কার চলে যাচ্ছে বাগানের ভিতর দিয়ে কেন্ জানালায় দাঁড়িয়ে দেখতে পেল।

কেন্ স্বগোতোক্তি করল পার্কার আমার থেকেও বেশি ভয় পেয়েছে। ও চুপ করে থাকবে সেজন্য, কারোর সঙ্গে আলোচনা করবে না ব্যাপারটা নিয়ে। কে কিন্তু বুঝতে পারল সে নিজে এক জটিল-আবর্তে জড়িয়ে গেছে। ঐ বাড়ি থেকে সেই রাত্রে তাকে বের হতে দেখেছে র‍্যাফায়েল সুইটি এবং আর একটি মহিলা। তাকে সন্দেহ করছে পার্কার খুনী হিসাবে, সে খুব অস্বস্তি বোধ করবে এখন পার্কারের কাছে বসে কাজ করতে। এবার তার দুঃস্বপ্নের সময় শুরু হল, কেন্ একথা বুঝতে পারল।

.

১২.

 ব্লু রোজ নাইট ক্লাবে ঢুকল লেফটেন্যান্ট অ্যাডামস, তারপর দেখা করল সেখানকার মালিক স্যাম ভার্সির সঙ্গে। কি করতে পারি আপনার জন্য, বলুন লেফটেন্যান্ট, স্যাম বলল। আপনার মতো লোকেরা ক্কচিৎকদাচিৎ এখানে পদার্পণ করেন। একটু ড্রিঙ্কস দেব, আপনার আতিথেয়তা কিভাবে করব, বলুন স্যার? আমি এখন ডিউটিতে আছি, স্যাম তোমায় ব্যস্ত হতে হবেনা। কয়েকটা প্রশ্ন তোমাকে গোপনে করতে চাই। ক্লদেৎ, স্যামের বউ একা বসে টাকা গুনছিল ভেতরের ঘরে, সেখানে স্যাম অ্যাডমস কে নিয়ে ঢুকল। টাকাপয়সা দেরাজে ঢুকিয়ে রেখে তাদের দেখে স্যামের বউ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। অ্যাডমস বলল স্যাম আমি কয়েকটা কথা জানতে এসেছি কে কার্সন সম্পর্কে। অবাক দৃষ্টিতে স্যাম তার দিকে তাকাল। সে অনুমান করতে পেরেছিল, অ্যাডমস তাকে এই প্রশ্নই করবে।

অ্যাডমস জানতে চাইল সার্জেন্ট ডোনাভান স্যামের কাছে এসেছিল কিনা? স্যাম উত্তর দিল, হ্যাঁ, কয়েক ঘণ্টা আগেই এসেছিলেন ডোনোভান। তোমার কাছে যে আমি এসেছিলাম একথা বোলোনা যদি আবার তোমার সঙ্গে ডোনোভানের দেখা হয়, বললেন লেফটেন্যান্ট অ্যাডমস। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এই খুনের তদন্তে নেমেছি। অ্যাডমস বলল, তদন্তের দিক দিয়ে সাবধানে থাকতে হবে। ব্যাপারটা ঘটার ফলে যতদূর মনে হয় রাজনৈতিক ঘোঁট পাকানো সুরু হবে। স্যাম বলল, নিশ্চিন্তে থাকুন স্যার আমার-আপনার মধ্যে আলোচনা কেউই জানতে পারবে না। বড়। রকম পরিবর্তন ঘটতে চলেছে এখানকার রাজনীতিতে। খুব বেশি হলে কয়েক মাস অথবা বছর খানেকের ভিতর। লিন্ডসে বার্ট, মনে হচ্ছে গদীয়ান হবে। অ্যাডমস বলল টলায়মান অবস্থা তাদের এখন যারা সরকারের সামনে আছে। তোমার এবং আমার দুজনেরই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ও তোমার কারবার অবশ্যই বন্ধ করে দিতে পারে গদীতে বসার পর, এটা স্যাম তোমার জেনে রাখা প্রয়োজন। হয়তো ও তোমায় নিয়ে টানা হেঁচড়া করতে নাও পারে, কৃতজ্ঞতা বশে যদি তুমি এখন থেকে ওর সঙ্গে সহযোগিতা কর।

লেফটেন্যান্ট আমি বুঝতে পারলাম।

আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার সঙ্গে কি কে কার্সনের সেদিন রাতে দেখা হয়েছিল ঠিক করে বল।

হা হয়েছিল, স্যাম বলল। ওর সঙ্গে কি কেউ ছিল? অ্যাডমস প্রশ্ন করল। ধূসর রঙের স্যুট পরা সুদর্শন দীর্ঘদেহী একজন লোক ছিল তাঁর সঙ্গে, স্যাম বলল। সেই নির্দিষ্ট ব্যক্তি বুঝতে পেরেছি, অ্যাডমস বলল, আগে কি কখনও তাকে দেখেছিলে?

স্যাম বলল, না।

কে-কি তোমায় লোকটির সম্বন্ধে কিছু তথ্য জানিয়েছিল? না, কে কিছু বলেনি, বলল স্যাম।

লোকটি কি ওর ব্যবসার খদ্দের না নিছক বন্ধু? অ্যাডমস জানতে চাইল।

বলতে পারছি না নিশ্চিতভাবে, স্যাম বলল। তবে ওদের দুজনেরই খুব খুশিয়াল ভাব ছিল এটা লক্ষ্য করেছিলাম। কোনদিনই কে কখনও এখানে ওর খদ্দের নিয়ে আসেনি।

তাহলে কি লোকটাকে তোমার মনে হয় ওর বন্ধু, অ্যাডমস বলল। সে সম্পর্কে ঠিক বলতে পারছি না লেফটেন্যান্ট, কারণ আমার সঙ্গে কে লোকটির পরিচয় করিয়ে দেয়নি। আমার এও জানা নেই আদৌ ওর কোন বন্ধু ছিল কিনা।

আচ্ছা তোমার কি একথা মনে হয় যে লোকটির পক্ষে কোন মেয়েকে বরফ কাটা গাইতি দিয়ে খুন করা সম্ভব। অ্যাডমস জিজ্ঞাসা করল।

উত্তর দিল স্যাম, না লেফটেন্যান্ট, খুনীর মত দেখতে লাগছেনা লোকটিকে। আমি এ সম্পর্কে নিঃসন্দেহ যেও খুনকরেনি।অ্যাডমস গম্ভীরমুখেবলল, তোমার কথাই হয়তো সত্যি। কিন্তু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে খুনের দায়টা ওর ঘাড়েই পড়ছে, এটাই তো মুস্কিলের ব্যাপার। ওকে কের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা গিয়েছিল কে মারা যাবার পর। এখন কথা হচ্ছে, ওর মোটিভ কি ছিল, যদি ওকে খুনী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আচ্ছা পরিস্কার করে বলত স্যাম কে কি রকম প্রকৃতির মেয়ে ছিল? লোকটি হয়তো ব্ল্যাকমেইলড় হচ্ছিল ওর দ্বারা এমনটাও কি অসম্ভব? স্যাম জোরের সঙ্গে বলল, কখনই তা হতে পারেনা। আদৌ ঐ শ্রেণীর মেয়ে ছিলনা কে, মিঃ অ্যাডমস। ওকে অসৎ পথে নামতে হয়েছিল হয়তো ভাগ্য আর সময়ের চক্রান্তে, কিন্তু ও তেমন মেয়ে ছিলনা যে অত নীচে নামবে। একেবারে অসম্ভব ওর পক্ষে কাউকে ব্ল্যাকমেইল করা।

কেন তাহলে লোকটা ওকে খুন করবে? আচ্ছা লোকটা অসুস্থ মস্তিষ্ক ছিল না কি?

চোখ-মুখের ভাষায়ই ধরা পড়ে যারা পাগল, স্যাম বলল, কিন্তু লোকটাকে দেখে আমার তা মনে হয়নি, উপরন্তু একথা ভেবেছিলাম, যে কের ধারে কাছে ঐ শ্রেণীর একটি লোকের ঘোরাঘুরি করা বরং দৃষ্টিকটু। স্যাম তোমার মতামত কি, আর কে পারে ওকে খুন করতে? লেফটেন্যান্ট, হয়তো আমার সিদ্ধান্ত ভুল হতে পারে, তবে গতকাল পাগলা গারদ থেকে ছাড়া পেয়েছে জনি ডোরম্যান। অনেকদিনের রাগ ছিল ওর কের ওপর, হয়ত ঐ হত্যা করেছে কে কে। নিশ্চয়ই আপনি জানেন জনির সমস্ত ইতিহাস। তাই নয় কি?

অ্যাডমস উচ্চারণ করল। জনি ডোরম্যান। তারপর নীচুস্বরে বলল, হয়তো ভুল নয় তোমার অনুমান স্যাম, তুমি আমায় জানিও জনির এখনকার ঠিকানাটা তল্লাসী চালিয়ে, পারবে তো? আচ্ছা জানাব নিশ্চয়ই একথা বলে স্যাম কেমন গড়িমসি করতে লাগল।

আর হ্যাঁ একটা কথা, অ্যাডমস বলল, আমি সে ব্যবস্থা করব যাতে এই কাজের জন্য কিছু পাওনা দেয় পুলিস থেকে।

স্যাম বলল, শীঘ্রই বিবাহ হবে ও’ব্রায়েনের সঙ্গে জনির বোন গিল্ডার।

.

১৩.

দরজার দিকে চেয়ার ছেড়ে এগিয়ে যেতে যেতে অ্যাডমস বলল-ব্যাপারটা তাহলে বেশ জট পাকাবে। কিন্তু এসব কথা কাউকে প্রকাশ করবে না। তাহলে, আমি চলি।

স্যাম বলল লেফটেন্যান্ট আর তৃতীয় কেউ জানবেনা আপনি আর আমি ছাড়া।

নদীর ধারে অপেক্ষারত জাহাজে উইলো পয়েন্টে গিয়ে উঠল গাড়ি থেকে সীন ও’ব্রায়েন, যদিও জাহাজটা দেখাশোনার দায়িত্ব টাক্স এর উপরে কিন্তু জাহাজের মালিক ও’ব্রায়েন স্বয়ং।

টাক্সই শুধু বেঁচে আছে, আর সবাই মারা গেছে যারা সীন-ও’ব্রায়েনের মাদক চোরাচালান কারি দলের পুরোনো লোক, টাক্স তাদেরই এই জাহাজে এনে আশ্রয় দেয় যদি কেউ ঝামেলায় পড়ে, তার অন্ধকার জগতের বন্ধুরা। সে পিস্তল, ছোরা, আর রিভলভার চালনায় ওস্তাদ। দুহাত ভরে টাকা পায় সে ও’ব্রায়েনের কাছ থেকে। যতই বিপদজনক অথবা কঠিন কাজ হোক টাক্স সে কাজ সম্পন্ন করবেই।

জাহাজের নীচের ডেকে চলে এল টাক্স ও’ব্রায়েনকে সঙ্গে নিয়ে। একটা বন্ধ দরজা পাশেই, দরজা খুলল টাক্স পকেট থেকে চাবি বের করে। বাঙ্কের উপর শুয়ে আছে জনি গুটিশুটি হয়ে ও’ব্রায়েন দেখতে পেল টাক্সের সঙ্গে ভিতরে ঢুকেই, বাঙ্কের বাহিরে তার একটা পা ঝুলছে।

অবিকল গিল্ডার মত মুখটা জনির, ওইরকম তার চোখানাক ও মুখ, তারও চোখের মণি সবুজ।

সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে ও’ব্রায়েন বলল, কেমন আছ জনি, এখন তোমার মাথা সম্পূর্ণ সুস্থ, অবশ্য ডাক্তারদের মতে। কেন তাহলে গতরাত্রে খুন করলে কে কার্সনকে। অবাক হয়ে জনি তার মুখের দিকে তাকাল বলল আজেবাজে কথা কি বলছ, কে কার্সনকে আমি কেন খুন করতে যাবো। তোমার সঙ্গে তো আমি ছিলাম গতকাল রাত্রে। ও’ব্রায়েন বলল ওসব মিথ্যে গল্পে কোন কাজ হবেনা জনি, আমি পার্টিতে ছিলাম গতকাল রাত্রে, খুন করলে ওকে কেন বল।

আমি ওকে খুন করেছি, কে বলল? মনে পড়ে, তুমি ওকে শাসিয়েছিলে খুন করবে বলে পাগলাগারদে যাবার আগে? ঠিক কাল রাতেই কে খুন হল, আর কালই তুমি সেখান থেকে ছাড়া পেয়েছে। তুমি কি ভাবছ পুলিস তোমায় ছেড়ে দেবে।

আচ্ছা ঠিক আছে, জনি বলল, আমি স্বীকার করছি আমিই না হয় ওকে খুন করেছি। আর আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ওখানে যাবার আগে যে ওকে খুন করব একথা তুমি ঠিকই বলেছ। কিন্তু একটা কথা থেকে যাচ্ছে। আমার কি লাভ বলত, তোমার মত রাজনীতি করলেওয়ালা ভগিনীপতি থেকে। যদি দু-একটা নোংরা মেয়েকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে, ধরা পড়ে যাই। তুমি সহজেই ঐ লোকটার ওপর দোষ চাপাতে পার, কারণ কাল রাতে কের সঙ্গে সেই লোকটাই ছিল। তোমার কথায় পুলিশ কমিশনার চলেন, আর তুমি তাকে বাঁদরের মত নাচাচ্ছ। তোমার কথামত উনি নিশ্চয়ই কাজ করবেন।

যদি আমি তোমার কথামত না কাজ করি, ও’ব্রায়েন বলল, উল্টোটাই যদি হয় খুনের দায় যদি পুলিস কমিশনারকে বলে তোমার ঘাড়ে চাপাই, তাহলে কেমন হবে? ওরকম, হঠকারীকাজ তুমি করবেনা সীন আমি নিশ্চিত, তোমার লোকসানই হবেলাভ কিছু হবেনা যদি আমি খুনী হিসেবে ধরা পড়ি। তার প্রধান কারণ, তুমি আর তখন সাহস পাবেনা গিল্ডাকে বিয়ে করতে। তুমি নিজেকে আড়ালে রাখতে চাও তখন থেকে যখন থেকে তুমি এ শহরের রাজনীতি-প্রশাসনকে করায়ত্ব করেছো।সীন, আমায় তুমি বোকা বানাবার চেষ্টা কোরোনা, তোমার জীবনে এমন অনেক ব্যাপার আছে যা পর্দার আড়ালে থাকাই ভাল, একথা আমি জানি। তুমি আত্মপ্রচার চাওনা ঠিক সেই কারণেই। তাকে দেখতে লাগল ও’ব্রায়েন মুখের রেখার অদলবদল না ঘটিয়ে। তার ভেতরে এক অদ্ভুত ইচ্ছা কাজ করতে শুরু করেছে সে বুঝতে পারল, যেটা হল সুস্থ মস্তিষ্কে জনিকে খুন করা। কিন্তু সে কিছুতেই বুঝতে দিলনা কথাটা তাঁর চালচলনে। স্থির কণ্ঠে বলল, ও’ব্রায়েন, এখন ভাবতে হচ্ছে সত্যিই, তুমিই ওর খুনী কিনা?

কোন প্রয়োজন নেই তোমার, আমাকে বিশ্বাস কর তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। জনি বলল, ব্যাপারটা খুবইনক্কারজনক।একটা বাড়তি চাবিএঁকে মেয়েছেলেটা রেখেদিত সিঁড়িরম্যাটেরনীচে দরজা খোলবার জন্য। আমি প্রথমে চাবিটা খুঁজে বের করি ওর বাড়িতে গিয়ে, তারপর লুকিয়ে পড়ি দরজা খোলার পর ওর শোবার ঘরে ঢুকে। ওই লোকটাকে নিয়ে ও ঘরে ঢোকে কিছুক্ষণ পরে।

তৈরীই হয়েছিলাম আমি বরফকাটা গাঁইতি নিয়ে। ও চীৎকার করার সময়ই পায়নি, এমন জোরে ওকে আমি আঘাত করেছিলাম। ওর লোকটা পাশের ঘরে চীৎকার করছিল ওর দেরী হচ্ছে দেখে। চুপিসাড়ে আমি বাইরে বেরিয়ে পড়ি ঘরের ফিউজ বন্ধ করে দিয়ে। ও’ব্রায়েন জানতে চাইল, কেউ কি তোমায়, ওর অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতে দেখেছিল? কেউ দেখতে পায়নি, জনি বলল, আর আমি তো বুদ্ধ নই, যে দেখা দিয়ে আসব। তুমি যে এই শহরেই আছ একথা গিল্ডা ছাড়া আর কেউ কি জানে? জনি বলল না। তুমি কের ঠিকানা কোথা থেকে পেলে? বলল ও’ব্রায়েন। আমি জানতাম, যে ও রোজ রু-বোজ ক্লাবে যেত। সেদিন ওর পাশে আগে থেকেই ঘোরাঘুরি করছিলাম। কে একটা লোকের হাত ধরে ভেতরে ঢুকল, হঠাৎ দেখতে পেলাম। আমি গোপনে ওদের অনুসরণ করলাম ওরা যখন বেরিয়ে এল।

তুমি ফের মিথ্যা কথা বলছ, ও’ব্রায়েন প্রচণ্ড চীৎকার করে উঠল। তুমি নাকি চাবি নিয়ে দূরজা খুলে ভেতরে বসেছিলে ওরা বাড়িতে ঢোকার আগেই, এক্ষুণি একথা তুমি বললে! ওদের, অনুসরণ করেছিলে এখন আবার বলছ, কোনটা তোমার সত্য কথা? জনি হাসতে হাসতে বলল, ও সত্যি তুমি পুলিসী জেরা করা শুরু করলে, আচ্ছা এবারে সত্যি কথা বলছি শোন, তুমি যখন জানতে চাও। কের ঠিকানা আমাকে দিয়েছিল প্যারাডাইস লুই।

তুমি কে’র অনুসন্ধান করে বেড়াচ্ছ একথা তাহলে লুই জানে? ও’ব্রায়েন আবার গর্জন করে উঠল, পাঁচ কান না করেই ছাড়বে না ব্যাপারটা ওর মত একটা বদমাইশ লোক, তুমি কি একথাটা ভেবেছ? জনি অবহেলার ভঙ্গীতে বলল, তোমার ওপর সে ভার দিয়ে দিলাম, লুইকে তুমিই শাসিয়ে রেখ। ব্যাপারটা যেন ও পাঁচকান না করে ওকে সেটা বলে দিয়ে।

ও’ব্রায়েন মাটিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে কিছু একটা ভাবতে লাগল, জনির কথার উত্তর দিলনা। ওকে আমি কখনই খুন করতাম না, যদি আমি এ সম্পর্কে নিশ্চিত না হতাম যে আমায় তুমি বাঁচাতে পারবে। জনি বলল, বড্ড খারাপ এই কেবিনটা, তোমার বাকে নিয়ে যাও আমায় এখান থেকে বের করে। আমি নিউইয়র্ক চলে যাব, আমায় যদি কিছু মোটা টাকা তুলে দাও তোমার ব্যাঙ্ক থেকে।

ও’ব্রায়েন ধমক দিয়ে বলল, জনিঅনভিজ্ঞদের মত কাজ করোনা। অনেকদূর ব্যাপারটা গড়িয়ে গেছেইতিমধ্যেই।টাক্সের দিকে তাকাল ও’ব্রায়েন কথা শেষ করেই। বলল, এখানে জনিকে আটকে রাখবেযতক্ষণনা আমি ছাড়ার নির্দেশ দিই। জনি পালিয়ে গেলে দায়ী থাকবেতুমি সম্পূর্ণভাবে ওর জন্য। এমন শিক্ষা দেবেযদিও পালাবার চেষ্টা করে, তাহলে আর দ্বিতীয়বার করতে সাহস পাবেনা। মাথা ফাটিয়ে দেবে অবাধ্যতা করলেই। টাক্স নিষ্ঠুর হেসে বলল, তোমার কথাই শিরোধার্য বস্।

জনি চীৎকার করে বলল, আমার সঙ্গে যদি ওরূপ আচরণ কর তার ফল কিন্তু খুবই খারাপ হবে। মনে রেখো তোমায় উচিৎ শিক্ষা দেবো, যদি আমায় ছেড়ে না দাও।

ও’ব্রায়েন ধমকে উঠল, হতভাগা, নির্বোধ ছাগল একটা, একদম চুপ কর। ততদিন তোকে এখানেই থাকতে হবে যতদিন আমি বলব। টার এগিয়ে গিয়ে কেবিনের দরজা খুলে দিল, তাকে ইশারা করতেই। ও’ব্রায়েনের দিকে তাড়া করে এল জনি পরমুহূর্তেই, এবং মেঝেয় ছিটকে পড়ল টাক্সের হাতের জোরদার এক ঘুষি খেয়ে।

ও’ব্রায়েন টাক্সকে বলল, ওকে একটু রগড়ে দাও, কিন্তু বেশি ক্ষতি যেন কোরোনা। ও’ব্রায়েন জাহাজ থেকে নামার সিঁড়িতে পা রাখল, তার আগে একবার দেখে নিল, মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা জনিরদেহটাকে।

.

১৪.

 গিল্ডা উঠে পড়ে এগিয়ে এল। যখন দরজায় টোকা পড়ল। তাকে বিরক্ত করতে এল কে? এখানে ক্যাসিনোতে। নিশ্চয়ই ও’ব্রায়েন নয়, গিল্ডা ভাল করেই জানে সে এত তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেনা। মুখে শয়তানী হাসি নিয়ে তাঁর সামনে দাঁড়াল প্যারাডাইস লুই, দরজা খুলেই গিল্ডা দেখতে পেল। গিল্ডা অহঙ্কারী চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলল, কি মনে করে এখানে। লুই উত্তর দিল, গতকাল আমার সঙ্গে জনির দেখা হয়েছিল, আমার কাছে হয়তো তুমি এ ব্যাপারে কিছু জানতে চাইবে ভেবে এলাম। গিল্ডার চোখ-মুখের গর্বিত ভাব হঠাৎ অন্তর্হিত হল। তার মুখে জনির নাম শুনে, প্রথম ধাপেই লুই সফল হল। কি আর কথা বলবে এ ব্যাপারে, কিছুটা থমকে গিয়ে গিল্ডা বলল। লুই ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বলল, বোকামেয়ে, অবশ্যই কিছু কথা আছে, তোমায় বন্ধুর মত কয়েকটা কথা বলে যাই, তুমি বোস।

কোন কথা বলতে চাইনা আমি তোমার সঙ্গে, গিল্ডা গম্ভীর হয়ে বলল, কেই বা তোমায় অনুমতি দিয়েছে এখানে আসার, এক্ষুণি চলে যাও বলছি, বেরোও। আরে শোনো, অত উত্তেজিত হচ্ছ কেন? কোন লক্ষণই দেখা গেলনা লুইয়ের নিষ্ক্রান্ত হওয়ার। বরং আরাম করে বসে বলতে আরম্ভ করল, আমার সঙ্গে জনি গতকাল দেখা করতে এসেছিল, ও কের ঠিকানা জানত চাইল। আমি ওকে ঠিকানাটা বোকার মত দিয়ে দিলাম, আর মারাত্মক ভুল হল সেটাই, আমার দিক দিয়ে। ওকে কখনই ঠিকানা জানাতাম না যদি জানতাম ওর মনে কে কে খুন করার অভিসন্ধি আছে। আমি এখন টানাপোড়েন অবস্থায় পড়লাম। ভাবলাম তোমার সঙ্গে একবার দেখা করে আসি, যদি পুলিসের কাছে বিবৃতি দিতে হয়। প্রস্তরবৎ বসে রইল গিল্ডা। তার দুচোখ জ্বালা করছে মুখের রঙ বিবর্ণ হয়ে গেছে, জনি ওকে খুন করেনি, সে লুইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বলল। গিল্ডা-পুলিস কিন্তু একথা বিশ্বাস করবেনা, লুই বলল, ওরা কিন্তু জনিকেই গ্রেপ্তার করবে আসামী হিসাবে, যখন ও বিশদভাবে সব জানতে পারবে। গিল্ডা লুইকে প্রশ্ন করল দুহাতে মুষ্টিবদ্ধ করে, তোমার কত চাই। লুই সপ্রশংস সুরে বলল, বাঃ সোনামেয়ে এই তো আসল কথা বলেছে? কিন্তু চালাক মেয়ে গিল্ডা আবার বলল, কত চাই তোমার?

কে টাকা চায় তোমার কাছে, লুই ব্যক্তভাবে বলে উঠল তোমার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ঘুরে আসার ইচ্ছা হল, আজকের রাতটা বড় সুন্দর, আরে বাবা আমি তো নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছিনা, পরে টাকা পয়সার কথা ভাবা যাবে। তোমার সঙ্গে বেশ কাটবে আজকের রাতটা, ভেবেছিলাম।

গিল্ডা, আশ্চর্য হয়ে গেল, প্রশ্ন করল, টাকা চাইনা তোমার? টাকা আমার আছে অঢেল, লুই বলল, কিন্তু একটা জিনিস নেই, তা হচ্ছ তুমি। আর আমার টাকার কথা অবশ্যই ভাবতে হবে। যদি আমার পরিকল্পনা মত কাজ না হয় একটা সিগারেট ধরিয়ে গিল্ডা ধোঁওয়া ছেড়ে বলল, আমায় একটু ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে সময় দাও লুই।

ঠিক আছে ভাবো, লুই বলল, কোন অসুবিধা নেই, হাতে আমার সময় বেশি নেই, যা কিছু হবার হবে আজ রাতেই, তাই একটু তাড়াতাড়ি ভাবনাটা সেরে ফেলল।

গিল্ডা বলল, যদি তোমার কথা অনুযায়ী চলি, তবে কারো কাছে প্রকাশ করবে না তো জনির ঐ ব্যাপারটা?

লুই হাসতে হাসতে বলল, পাগল, কোন দুঃখে অন্য কারও কাছে মুখ খুলব। গিল্ডা বলল আচ্ছা আমায় একটু ভাবতে সময় দাও। গিল্ডা মুখের ওপর সজোরে দরজা বন্ধ করে দিল, লুইকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলনা। ও’ব্রায়েনকে তারপর সঙ্গে সঙ্গে ফোন করল। ও’ব্রায়েন এই সময় ক্লাবে থাকে গিল্ডা জানে।

ও’ব্রায়েনকে ফোনে পেল মিনিট খানেক পর। গিল্ডা বলল, আমি খুব বিপদে পড়েছি সীন। গিল্ডা, একটু শ্বাস নিয়ে বলল, লুই এসেছিল, কাল রাতে ও জনিকে কের ঠিকানা দিয়েছিল ও আমায় ব্ল্যাকমেইল করতে চাইছে সেই অজুহাতে। আমায় নিয়ে ও ফুর্তি করবেবলছে আজ রাতে, ও জানিয়ে দেবে পুলিসকে যে কে-কে জনি খুন করেছে যদি ওর প্রস্তাবে রাজি না হই। উচ্চৈঃস্বরে

হেসে উঠে ও’ব্রায়েন বলল, এই ব্যাপার, লক্ষ্মী মেয়ে তুমি এ ব্যাপারে ধৈৰ্য্য হারিয়ো না, বিপদ তোমার নয়, লুই নিজেই জালে পড়েছে। আমি ওকে এক্ষুণি উচিৎ শিক্ষা দিয়ে দিচ্ছি।

সীন, ওকে তুমি মারধোর করবে নাকি গিল্ডা উৎকণ্ঠাভরে প্রশ্ন করল, ভুলে যেয়োনা ও খুব বিপজ্জনক লোক। একবার যদি পুলিসকে জানিয়ে দেয়

তুমি একদম চিন্তা করোনা আমি কি করব তা নিয়ে, সব ঠিক হয়ে যাবে, একটু পরেই আমি আসছি, এইকথা বলে সে ফোন নামিয়ে রাখল।

আরও কিছু সময় পার হয়ে গেল। গিল্ডা দরজা বন্ধ করে রেখেছে।

.

১৫.

 সানন্দচিত্তে লুই বারান্দায় পায়চারী করছে। হঠাৎ পেছনে পায়ের শব্দ পেয়ে ঘুরে তাকিয়ে সে দেখতে পেল বেঁটে খাটো টাক্স এগিয়ে আসছে তার দিকে কোটের পকেটে দুহাত গুঁজে, যে নাকি ও’ব্রায়েনের সহকারী। টাক্স বলল, কি ব্যাপার লুই নাকি? তুই এখানে কি অভিসন্ধি নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছিস? লুই বলল–আমি অপেক্ষা করছি একটা মেয়েমানুষের জন্য। একটা কুর হাসি ফুটে উঠল টাক্সের মুখে, লুইয়ের একেবারেই ভাল লাগল না সেই হাসিটা।

মনে হচ্ছে গিল্ডা ডোরম্যানের পিছু নিয়েছে বলল টাক্স। তেমনি নিষ্ঠুর হেসে। দুপকেটে হাত খুঁজেই, পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছে লুই-এর দিকে।

লুইয়ের গলা যদিও কাঁপছে তবুও সে বলল, কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে। তুই এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিস কেন? বন্ধু, কারণ অবশ্যই আছে, ডান পকেট থেকে হাত বের করল টাক্স এই কথা বলেই, টাক্সের ডানহাতে ছোট নলওয়ালা একটা পিস্তল ধরা ছিল। লুই বিস্ফারিত চোখে তা দেখতে পেল। টাক্স বলল, বন্ধু তুমি কি জানতে না গিল্ডা মিঃ ও’ব্রায়েনের সম্পত্তি। বিবর্ণ হয়ে গেল লুইয়ের মুখাবয়ব, ঐ পিস্তল দেখিয়েই টাক্স তাকে স্তব্ধ করে ফেলেছে, এইরকম মনোভাব নিয়ে সে টাক্সের দিকে তাকাল। টাক্স বলল, আমার সঙ্গে চলে এসেছে, মনে রেখো তুমি বিস্ফোরক পদার্থ নিয়ে খেলা করছ। লুই, গলাটা জিভের জলে ভিজিয়ে নিয়ে তোতলামির মত করে বলল আ আমি বুঝতে পারিনি কখনই, যে গিল্ডার অধীশ্বর ও’ব্রায়েন কেন আমায় গিল্ডা সে কথা জানাল না।

ও তোমায় জবাবদিহী করতে যাবে কেন? এই কথা বলে টাক্স এগিয়ে এল। পিস্তলের নল লুইয়ের পাঁজরে ঠেকিয়ে বলল, চল আমার সঙ্গে। লুই বাইরে বেরিয়ে এল টাক্সকে অনুসরণ করে পালিত কুকুরের মত। গাড়ি দাঁড় করানোই ছিল সামনে, হুইটি ও’ব্রায়েনের আরেক চ্যালা বসেছিল ড্রাইভারের সীটে,আরেলুই, যেহুইটি হেসেবলল লুইকে দেখে।ইয়ার, অনেকদিন পরে তোর সঙ্গে দেখা হল, চল নেমন্তন্নে যাবি চল, ওঠ গাড়িতে। পেছনের সীটে বসাল টাক্স লুইকে, তার পাশে সে নিজে বসল। সে তখনো পিস্তলের নলটা লুইয়ের পাঁজরে ঠেকিয়ে রেখেছে। গাড়ি স্টার্ট দিল। টাক্স তুমি কোথায় নিয়ে যাচ্ছ আমায়? ভীতস্বরে লুই জানতে চাইল। বাড়িতে পৌঁছে দেব তোমায় টাক্স বলল, আর হুইটি হয়তো নেমন্তন্ন খাওয়াবে তোমায়। লুই আতঙ্কে গোঙানো স্বরে বলল, আমার বাড়ির রাস্তা তো এটানয়, অনুনয় করে বলল, গিল্ডা যে ও’ব্রায়েনের জিনিস, বিশ্বাস কর টাক্স আমি, তা জানতাম না। টাক্স বলল, আমরা ঘানা খেলে কিছুই শিখিনা, আগে বল ব্যাপারটা কি, জনি কেন। কাল রাতে তোর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল?কথাটা এমনি কথা, সত্যনয়,কান্না ভেজা গলায় লুই বলল, একটু ভয় দেখিয়ে মজা করতে চেয়েছিলাম গিল্ডার সঙ্গে। এটা বসের একেবারেই অপছন্দ যে তোর মত একটা, নোংরা লোক গিল্ডাকে ভয় দেখিয়ে যাবে, বলেই হুইটির দিকে তাকাল টাক্স। আমরা গন্তব্যে পৌঁছে গেছি, গাড়ি এখানেই রাখো হুইটি।

সামনে কিছুটা পোডড়া জমি, তার পাশে নদী, সভয়ে দেখল লুই, পিস্তল পকেটে খুঁজে রেখে গাড়ি থেকে নেমে, টাক্স লুইকে সম্বোধন করে বলল নেমে আয়। গাড়ি থেমে নেমে এল লুই কাঁপতে কাঁপতে। হুইটিও ইতিমধ্যে নেমে এসেছে গাড়ি থেকে। লুইয়ের দিকে এগিয়ে আসতে। লাগল টাক্স আর হুইটি, দুটো সাইকেলের চেন হাতে নিয়ে দুজনে ঘোরাতে ঘোরাতে। টাক্স বলল, আমি তোকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, বস আবার এসব অপছন্দ করেন। তাই আজ একটু অল্প সামলে দিচ্ছি তোকে। এবার তাহলে আর প্রাণে বাঁচবি না যদি কের ব্যাপারে পুলিসের কাছে যাস, বা গিল্ডাকে উত্যক্ত করিস। লুইয়ের পা গুলো তখন কাঁপছে থরথর করে। সে চীৎকার করতে লাগল, হুঁশিয়ার আমার গায়ে যেন হাত না পড়ে, দুহাত দিয়ে সে মাথা আড়াল করে রেখেছে। লকলকে দুটো চেন তীরের বেগে এসে তার মুখে আঘাত করল পর মুহূর্তেই।