ঋগ্বেদে ব্যষ্টিস্বার্থের আবির্ভাব
ঋগ্বেদের রচনাকাল অত্যন্ত সুদীর্ঘ এবং এ-কথা মনে করবার নিশ্চয়ই কোনো কারণ নেই যে, এই সুদীর্ঘ যুগ ধরে বৈদিক মানুষদের সমাজ-জীবন অপরিবর্তিত ছিলো। ঋগ্বেদ সংহিতায় কী ভাবে প্রাচীন সাম্য-সমাজের স্মৃতিচিহ্ন দেখতে পাওয়া সম্ভব তার আলোচনা আমরা ইতিপূর্বে করেছি; এবার সে-সমাজে ভাঙন ধরবার আভাস ঋগ্বেদ-সংহিতার মধ্যেই কী ভাবে দেখতে পাওয়া যায় তার একটি দৃষ্টান্ত উদ্ধৃত করবো।
ঋষভং মা সমানানং সপত্নানাং বিষাসহিম্।
হন্তারং শত্রুণাং কৃধি বিরাজং গোপতিং গবাম্।।
অর্থাৎ, —(হে ইন্দ্র) আমাকে সমানদিগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কর, শত্রুদিগের পরাজয়িতা কর, শত্রুদিগের হন্তা এবং গরুদিগের মধ্যে গোপতি কর।। ঋগ্বেদ : ১০.১৬৬.১৷৷
অভিভূরহমাগমং বিশ্বকৰ্মেন ধাম্না।
আ বশ্চিত্তম বোব্রতম বোহহং সমিতিং দদে।।
অর্থাৎ, আমি সর্বকর্মকারী শক্তির দ্বারা তোমাদিগকে (শত্রুদিগকে) অভিভূত করিতে আসিয়াছি; তোমাদের সমস্ত চিত্ত, কর্ম এবং সমিতিকে আমি অপহরণ করিলাম।। ঋগ্বেদ : ১০.১৬৬.৪৷৷
যোগক্ষেমং ব আদায়াহং ভূয়াসমুত্তম আ বো মূর্ধানক্রমীম্।
অধস্পদান্ম উধদত মণ্ডুকাইবোদকান্মণ্ডূকা উদকাদিব।।
অর্থাৎ,–তোমাদিগের (সপত্মদিগের) প্রাপ্ত ধনের অধিকারী হইয়া এবং আত্মসাৎ করিয়া আমি শ্রেষ্ঠ হইয়াছি এবং তোমাদের মস্তকে উঠিয়াছি; পদতল হইতে তোমরা চিংকার করিতেছ, ভেকের ন্যায়। ঋগ্বেদ : ১০.১৬৬.৫ ৷
এখানে শুধুই যে শক্ৰদের পদদলিত করবার কামনা ফুটে উঠেছে তাই নয়,—‘আমাদের’ কথাকে পদদলিত করে ‘আমাকে’, সামগ্রিক স্বার্থকে ধূলিসাৎ করে, ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্খাকে চূড়ান্ত মর্যাদা দেওয়ার পরিচয়ও অস্পষ্ট নয়। কেননা, শত্রুজয় এবং শত্রুধন অপহরণ করবার প্রসঙ্গ ঋগ্বেদে বিরল নয়; কিন্তু, আমরা ইতিপূর্বে দেখেছি, যেখানে প্রাচীন পর্যায়ের সমান-জীবনের স্মৃতি ম্লান হয়নি সেখানে ইন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে, অগ্নিকে উদ্দেশ্য করে সেই জিত-ধনের অংশ বণ্টন করে দেবার কামনাই জানানো হয়েছে।