রুখ উঁচু একটা বিছানায় শুয়ে আছে। তাকে ঘিরে কয়েকটি বুদ্ধিমান এনরয়েড দাঁড়িয়ে আছে। তার বুকের কাছাকাছি কিছু যন্ত্র। রুখের হাত এবং পা স্টেনলেস স্টিলের রিং দিয়ে আটকানো। শরীর থেকে নানা আকারের কিছু টিউব বের হয়ে আছে। দেহের কাছাকাছি অসংখ্য মনিটর।
একটা বড় মনিটরের সামনে রয়েড দাঁড়িয়ে আছে, তার চেহারায় দুশ্চিন্তার চিহ্ন। ক্রীনা জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে রয়েড।
এটি রুখ নয়।
ক্রীনা আতঙ্কে শিউরে উঠল, চাপা গলায় বলল, কী বলছ তুমি?
হ্যাঁ। এটি মানুষ নয়।
মানুষ নয়?
না। তার ডি.এন. এ.–তে আরো নতুন বারো জোড়া বেস পেয়ার জুড়ে দেওয়া আছে।
তার মানে কী?
ডি, এন, এ হচ্ছে মানুষের ব্লু প্রিন্ট। তার ভিতরে একজন মানুষের সব তথ্য সাজানো থাকে। এর মাঝে ডি, এন. এ.–তে নতুন বেস পেয়ার এসেছে, নতুন তথ্য এসেছে। সেই নতুন তথ্যের পরিমাণ অচিন্তনীয়।
তার মানে কী?
তার মানে এটি মানুষ নয়।
তা হলে এ–এ–কে?
মহাজাগতিক প্রাণীর একটি ডিকয়।
না! ক্রীনা চাপা গলায় আর্তনাদ করে বলল, না–এটা হতে পারে না। এ হচ্ছে রুখ। নিশ্চয়ই রুখ।
রুখ মানুষ ছিল। এটি মানুষ নয়। মানুষের ডি, এন, এ ডাবল হেলিক্স, এখানে ছয় জোড়া হেলিক্সই আছে। আরো নতুন বারো জোড়া বেস পেয়ার।
এখন কী হবে?
এই ডিকয়টিকে বিশ্লেষণ করতে হবে।
বিশ্লেষণ?
হ্যাঁ। কেটে দেখতে হবে, শরীরের অংশ বুঝতে হবে। নতুন তথ্য জানতে হবে।
কিন্তু রুখের কী হবে?
রুখ? রুখ বলে এখানে কেউ নেই
রয়েড এক পা সামনে এগিয়ে গিয়ে এনরয়েডদের সাথে কথা বলে, বিজাতীয় যান্ত্রিক ভাষার দ্রুত লয়ের কথা–ক্রীনা তা ধরতে পারে না। ক্রীনা ভীত মুখে তাকিয়ে থাকে। আতঙ্কিত হয়ে দেখে উপর থেকে একটা যন্ত্র নেমে আসছে, নিচে ধারালো স্ক্যালপেল ঘুরছে। তার রুখকে এরা মেরে ফেলবে। ক্রীনা ছুটে গিয়ে রয়েডের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। রয়েডের যান্ত্রিক শক্তিশালী দেহ এক ঝটকায় তাকে দূরে ছুঁড়ে দেয়। দুটি প্রতিরক্ষা রোবট ক্রীনাকে ধরে ফেলে শক্ত হাতে আটকে রাখল। ক্রীনা অসহায় আতঙ্কে তাকিয়ে থাকে, উপর থেকে ধারালো স্ক্যালপেল নিচে নেমে আসছে আর একমুহূর্ত পরে সেটি রুখের পাজর কেটে ভিতরে বসে যাবে। ক্রীনা আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল।
সাথে সাথে স্ক্যালপেলটি থেমে গেল। ক্রীনা অবাক হয়ে দেখল সেটি আবার উপরে উঠে যাচ্ছে। রয়েড হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে থাকে। এনরয়েডগুলো ইতস্তত কিছু সুইচ স্পর্শ করে, হঠাৎ করে তারা সকল যন্ত্রপাতির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে।
কী হচ্ছে এখানে?
মূল প্রসেসর কাজ করছে না।
কেন?
নতুন সিগনাল আসছে।
কোথা থেকে আসছে?
এই প্রাণীটি থেকে।
ক্রীনা অবাক হয়ে রয়েড এবং বুদ্ধিমান এনরয়েডগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল—তারা নিজেদের ভাষায় কথা বলছে, সে কিছু বুঝতে পারছে না কিন্তু তবুও তাদের বিপর্যস্ত ভাবটুকু ধরতে পারছে। কিন্তু একটা বড় ধরনের সমস্যা হয়েছে। যন্ত্রপাতির নিয়ন্ত্রণটুকু তারা হারিয়ে ফেলেছে।
রয়েড তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে রুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, এই প্রাণীটি কেমন করে সিগনাল পাঠাচ্ছে?
শরীরের মাঝে চার্জকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। চার্জকে ইচ্ছেমতো কম্পন করিয়ে বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ পাঠাচ্ছে। নিখুঁত কম্পন। যখন যত দরকার।
কিন্তু আমাদের প্রতিরক্ষা সিস্টেম?
উপেক্ষা করে চলছে।
অসম্ভব।
আমি আমার কপোট্রনে কম্পন অনুভব করছি। আমাকেও নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি।
সরে যাও। সবাই সরে যাও।
সরে যাচ্ছি।
ফ্যারাডে কেজ বাড়িয়ে দাও।
দিয়েছি।
দ্বিতীয় মাত্রার প্রতিরক্ষা সিস্টেম চালু করতে হবে।
আমার কপোট্রনের কোমল প্রতিরক্ষা আক্রান্ত হয়েছে।
সরে যাও। সবাই সরে যাও। দ্বিতীয় মাত্রার প্রতিরক্ষার আড়ালে চলে যাও।
এই মেয়েটি? এই মেয়েটিকে কী করব?
সাথে নিয়ে এস।
ক্রীনা হঠাৎ দেখল সবাই ঘর ছেড়ে সরে যাচ্ছে, প্রতিরক্ষা রোবট তাকে শক্ত করে ধরে টেনে নিতে থাকল। ক্রীনা চিৎকার করে বলল, ছেড়ে দাও আমাকে। ছেড়ে দাও!
কিন্তু তুচ্ছ মানুষের আর্তচিৎকারে কেউ কান দিল না।
ক্রীনাকে নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে গিয়ে বুদ্ধিমান এনরয়েডরা একটা ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। হলোগ্রাফিক স্ক্রিনে রুখকে লক্ষ করা হচ্ছে। শান্ত ভঙ্গিতে সে শক্ত বিছানায় শুয়ে আছে–তার দৃষ্টিতে কোনো উত্তেজনা নেই, এক ধরনের বিচিত্র আত্মসমর্পণের ভাব।
রয়েড যান্ত্রিক ভাষায় অন্যান্য এনরয়েডদের সাথে কথা বলতে শুরু করে। এই মুহূর্তে রুখ কী করছে জানতে চাইল। একজন এনরয়েড উত্তর দিল। অবিশ্বাস্য ব্যাপার। সে মূল তথ্যকেন্দ্রে তথ্য পাঠাতে শুরু করেছে।
সর্বনাশ! এটি খুব বিপজ্জনক ব্যাপার।
হ্যাঁ। মূল তথ্যকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া আর মেতসিসের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া একই ব্যাপার।
তাকে থামাতে হবে।
আমরা কোনো উপায় দেখছি না। এটি একজন সাধারণ মানুষ নয়। এটি মহাজাগতিক প্রাণীর একটি ডিকয়।
ক্রীনা নামে মেয়েটিকে দেখিয়ে ভয় দেখানো যেতে পারে। বলা যেতে পারে তাকে মেরে ফেলব।
চেষ্টা করে দেখি।
একটি বুদ্ধিমান এনরয়েড রুখের সাথে যোগাযোগ করে তাকে জানাল সে যদি এই মুহূর্তে মূল তথ্যকেন্দ্রে তথ্য পাঠানো বন্ধ না করে তা হলে ক্রীনাকে হত্যা করা হবে। রুখকে কেমন জানি ভ্রিান্ত দেখায়, সে ছটফট করে ওঠে এবং হঠাৎ কয়েকটি ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে পুরো মেতসিস কেঁপে উঠল। ঘরের ওপরে বসানো মূল মনিটরে তারা অবাক হয়ে দেখল তথ্যকেন্দ্রের মূল করিডোরে হঠাৎ করে একটি বিশাল রোবট কোথা থেকে জানি উদয় হয়েছে। রোবটটি মানুষের অনুকরণে তৈরি কিন্তু পুরোপুরি মানুষের মতো নয়। মুখমণ্ডলে এক ধরনের ভয়ঙ্কর নৃশংসতার চিহ্ন, দুটি হাত এক ধরনের সর্পিল ভঙ্গিতে নড়ছে, দেহে উচ্চচাপের বিদ্যুৎপ্রবাহ, সেখান থেকে কর্কশ শব্দে নীলাভ স্ফুলিঙ্গ বের হচ্ছে। রোবটটি তার শক্তিশালী হাতে ভয়ঙ্কর একটি অস্ত্র নিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে শুরু করেছে।
নিরাপত্তা রোবটগুলো অতিকায় রোবটটিকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে কিন্তু সেটি তার দেহের আকারের তুলনায় অত্যন্ত ক্ষিপ্র। তার ভয়ঙ্কর মুখমণ্ডলে এক ধরনের যান্ত্রিক নৃশংসতা খেলা করতে থাকে। সেটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে একটি একটি করে নিরাপত্তা রোবটকে ভস্মীভূত করে দেয়। নিরাপত্তা রোবটগুলো তাদের ভস্মীভূত পোড়া দেহের ধ্বংসাবশেষ নিয়ে করিডোরে ইতস্তত দাঁড়িয়ে থাকে, পুরো এলাকাটি পোড়া গন্ধ এবং ধোঁয়ায় ভরে যায়। রোবটটি এক ধরনের বিজাতীয় গর্জন করতে করতে অতিকায় দানবের মতো এগিয়ে আসছে, বড় মনিটরে সেই দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ক্রীনা এক ধরনের আতঙ্ক অনুভব করতে থাকে। সে কাঁপা গলায় বলল, রয়েড। এটি কী? কোথা থেকে এসেছে?
আমরা জানি না। মনে হয়
মনে হয়?
মনে হয় তোমার বন্ধু রুখ এটি তৈরি করেছে।
রুখ তৈরি করেছে? ক্রীনা চিৎকার করে জলল, কী বলছ তুমি?
ঠিকই বলছি। মূল তথ্যকেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করেছে। কেন্দ্রীয় কারিগরি প্লান্টে নমুনা পাঠিয়ে তৈরি করে এনেছে
কী বলছ তুমি!
হ্যাঁ। অত্যন্ত চমৎকার ডিজাইন। আমাদের পক্ষে এরকম কিছু তৈরি সম্ভব নয়। অবিশ্বাস্য।
কিন্তু
তোমার বন্ধু রুখ আসলে এখন রুখ নয়। সে মহাজাগতিক প্রাণীর ডিকয়। আমরা ভেবেছিলাম সে আমাদের সাথে সহযোগিতা করবে। কিন্তু করছে না।
তোমরা এখন কী করবে?
আমরা অবশ্যই আত্মরক্ষার চেষ্টা করব। বুদ্ধিমান প্রাণীমাত্রই নিজেদের আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করে।
ক্রীনা সবিস্ময়ে মনিটরটির দিকে তাকিয়ে থাকে। অতিকায় ভয়ঙ্করদর্শন একটি রোবট ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। হাতে ভয়াবহ একটি অস্ত্র আলগোছে ধরে রেখেছে। রয়েড মনিটরে লক্ষ করে কোনো একটি সুইচ স্পর্শ করল, সাথে সাথে ভয়ঙ্কর একটি বিস্ফোরণ অতিকায় রোবটটিকে আঘাত করল, সেটি প্রায় উড়ে গিয়ে করিডোরের এক কোনায় আছড়ে পড়ল কিন্তু প্রায় সাথে সাথেই সেটি উঠে দাঁড়ায়, উদ্যত অস্ত্রে আবার দ্বিগুণ নৃশংসতায় গুলিবর্ষণ করতে শুরু করে। প্রচণ্ড শব্দ, আগুন এবং ধোঁয়ায় পুরো এলাকাটি নারকীয় হয়ে ওঠে।
ক্রীনা চিৎকার করে বলল, রয়েড।
কী হয়েছে?
আমার মনে হয় তোমাদের প্রচলিত অস্ত্র এর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
আমারও তাই মনে হয়।
এটাকে আঘাত করার চেষ্টা করাটাই মনে হয় বিপজ্জনক।
আমারও তাই ধারণা। কিন্তু এর উদ্দেশ্য অত্যন্ত ভয়ানক।
এর কী উদ্দেশ্য?
আমাদের এনরয়েডদের এক জন এক জন করে ধ্বংস করা।
ক্রীনা অবাক হয়ে রয়েডের দিকে তাকাল, বলল, তুমি কেমন করে জান?
আমরা জানি, কারণ এটি আমাদের নিজস্ব কোডে সেটি বলছে। আমরা বুঝতে পারছি।
আর কী বলছে?
আর বলছে– রয়েডকে হঠাৎ কেমন যেন বিপর্যস্ত দেখাল।
কী বলছে?
বলছে, তোমাকে কোনোভাবে স্পর্শ করা হলে সে পুরো নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র ধ্বংস করে দেবে।
ক্রীনা সবিস্ময়ে কিছুক্ষণ রয়েডের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, তাই যদি সত্যি হয় তা হলে আমাকে বের হতে দাও। আমাকে দেখলে নিশ্চয়ই এটি শান্ত হবে।
রয়েড মাথা নাড়ল। বলল, আমারও তাই ধারণা।
দেখা যাক চেষ্টা করে। ক্রীনা কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে একটু সাহস সঞ্চয় করে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। দরজা স্পর্শ করামাত্র সেটি নিঃশব্দে খুলে যায়। সামনে একটি দীর্ঘ করিডোর, করিডোরের শেষপ্রান্তে বিশাল ভয়ঙ্করদর্শন রোবটটি দাঁড়িয়ে আছে। রোবটটি তার অস্ত্র ক্রীনার দিকে উদ্মত করতেই ক্রীনা হাত তুলে চিৎকার করে বলল, আমি ক্রীনা।
ক্রীনার কথাটিতে প্রায় মন্ত্রের মতো কাজ হল। রোবটটি থেমে যায়, তার নৃশংস–মুখে এক ধরনের কোমলতা ফিরে আসে। রোবটটি হাতের অস্ত্রটি নামিয়ে নেয় এবং হঠাৎ করে ঘুরে দীর্ঘ করিডোর ধরে হেঁটে ফিরে যেতে শুরু করে। কিছুক্ষণ আগে যে এই পুরো এলাকাটিতে এক ভয়ঙ্কর নারকীয় তাণ্ডব ঘটে গেছে সেটি আর বিশ্বাস হতে চায় না। খোলা দরজা দিয়ে প্রথমে রয়েড এবং তার পিছু পিছু বুদ্ধিমান এনরয়েডগুলো বের হয়ে আসে। ক্রীনা রয়েডের দিকে তাকিয়ে বলল, রয়েড।
বল।
আমার মনে হয় তোমরা রুখকে যেতে দাও।
এই মুহূর্তে এ ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।
একটা স্কাউটশিপে করে আমাদের দুজনকে তোমরা মানুষের বসতিতে পৌঁছে দাও।
বেশ। কিন্তু একটা জিনিস মনে রেখো–
কী জিনিস?
তুমি যাকে মানুষের বসতিতে নিয়ে যাচ্ছ সে তোমার বন্ধু রুখ নয়।
ক্রীনা একমুহূর্ত রয়েডের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, হয়তো তোমার কথা সত্যি। কিন্তু
কিন্তু কী?
তার ভিতরে নিশ্চয়ই রুখ লুকিয়ে আছে। আমি তাকে খুঁজে বের করব।
আমি তোমার সৌভাগ্য কামনা করছি না। তবে জেনে রেখো
কী?
মেতসিসের নিয়ন্ত্রণ এখন আর আমাদের হাতে নেই।
.
রুখের হাত–পায়ের বাধন খুলে দেওয়ামাত্র সে ধড়মড় করে উঠে বসে ক্রীনার হাত আঁকড়ে ধরে কাতর গলায় বলল–
ক্রীনা!
ক্রীনা সবিস্ময়ে রুখের দিকে তাকিয়ে রইল, নরম গলায় বলল, রুখ! তুমি আমাকে চিনতে পারছ?
চিনতে পারব না কেন? কী বলছ তুমি?
না, মানে–
এখানে কী হচ্ছে ক্রীনা? আমাকে এরকম করে বেঁধে রেখেছিল কেন? আর একটু আগে কী বলছিল আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তথ্যকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে না দিলে তোমাকে হত্যা করবে–এর কী অর্থ? কেন বলছে এসব?
ক্রীনা একদৃষ্টে রুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। সে কি কিছুই জানে না?
ক্রীনা! রুখ কাতর গলায় বলল, তুমি এরকমভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছ কেন? কী হচ্ছে এখানে?
কিছু হচ্ছে না রুখ। মনে কর পুরো ব্যাপারটুকু একটা দুঃস্বপ্ন।
দুঃস্বপ্ন?
হ্যাঁ। ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন। এখন তুমি চল।
কোথায়?
আমরা মানুষের বসতিতে ফিরে যাব।
রুখ চোখ বড় বড় করে ক্রীনার দিকে তাকিয়ে বলল, বুদ্ধিমান এনরয়েডরা আমাদের যেতে দেবে?
হ্যাঁ। যেতে দেবে।
সত্যি?
সত্যি।
রুখ বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়, সে টলে পড়ে যাচ্ছিল, ক্রীনাকে ধরে কোনোভাবে নিজেকে সামলে নেয়। ক্রীনা তাকে ধরে রেখে বলল, চল যাই।
চল। রুখ একমুহূর্ত থেমে বলল, ক্রীনা।
কী হল?
একটা কথা বলি? তুমি হাসবে না তো?
না। হাসব না।
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমি একা নই। আমার সাথে আরো কেউ আছে। আরো কোনো কিছু।
ক্রীনার সারা শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে, কিন্তু সে শান্ত গলায় বলল, তোমার মনের ভুল রুখ। তোমার সাথে কেউ নেই।