১১. আমরা দক্ষিণ দিকে হাঁটছি

আমরা দক্ষিণ দিকে হাঁটছি গত তিন সপ্তাহ থেকে। বাই ভার্বালে করে এলে অনেক তাড়াতাড়ি আসা যেত কিন্তু আমরা সেভাবে আসতে চাই নি। আমরা হেঁটে হেঁটে আসছি, বহুঁকাল আগে মানুষ যেভাবে নূতন দেশের খোঁজে যেত, সেভাবে।

আমরা এখনো দক্ষিণের সেই অঞ্চলটিতে পৌঁছাই নি কিন্তু সবাই জানি তার খুব কাছাকাছি এসে গেছি। হঠাৎ হঠাৎ আমরা সেটি অনুভব করতে পারি, মুখে শীতল হাওয়ার ঝাঁপটা এসে লাগে। মাটিতে চোখ বুলালে চোখে পড়ে ছোট গাছের কুঁড়ি, সবুজ গাছের পাতা। গত রাতে একটা নিশিজাগা পাখি ডেকে ডেকে উড়ে গেছে আকাশ দিয়ে। বাতাসে এক ধরনের সজীব প্রাণের ঘ্রাণ, ঠিক জানি না কেন সেটি বুককে উতলা করে দেয়।

আমার পাশাপাশি হাঁটছে ইশি। তার ঘাড়ে একটি ছোট দুরন্ত শিশু। আমাদের পিছনে রাইনুক আর নাইনা। একটু পিছনে লিয়ানা। দীর্ঘদিন সিলাকিত হয়েছিল বলে একটু শুকিয়ে গিয়ে তাকে দেখাচ্ছে একটা বাচ্চা মেয়ের মতো। আমার চোখে চোখ পড়তেই সে হাসল মিষ্টি করে। লিয়ানার পিছনে একটি ভাবুক তরুণ, তার পিছনে দুটি চঞ্চল তরুণী, তাদের পিছনে আরো অনেকে। কত জন আসছে আমাদের সাথে কে জানে। কত তাড়াতাড়িই না গ্রুস্টানকে ভুলে গেছে সবাই আর নূতন এই জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে কী অনায়াসে।

আমি একটা বড় পাথরের পাশে দাঁড়ালাম, একটা খুঁয়োপোকা গুটি গুটি হেঁটে যাচ্ছে। আমি সাবধানে সেটাকে হাতে তুলে নেই। হাত বেয়ে যেতে থাকে পোকাটি। কী বিচিত্র একটি অনুভূতি।

হঠাৎ টিয়ারা ছুটে এল কোথা থেকে, মাথার চুল পিছনে টেনে একটুকরা রঙিন কাপড় বেঁধেছে শক্ত করে। আমাকে দেখে অকারণে হেসে ফেলল সে। আমি বললাম, দেখেছ এটা কী?

কী?

শুঁয়োপোকা।

এতগুলো পা নিয়ে এত আস্তে আস্তে হাঁটে?

আমি হেসে বললাম, হ্যাঁ। আর কয়দিন অপেক্ষা কর দেখবে সে কী সুন্দর প্রজাপতি হয়ে উড়ে যাবে আকাশে।

সত্যি?

সত্যি।

আমি টিয়ারার চোখের দিকে তাকালাম, ঝকঝকে কালো দুটি চোখ যেন দুটি অতলান্ত হ্রদ। যেরকম একটি হ্রদের দিকে আমরা হেঁটে যাচ্ছি বহুদিন থেকে। যেই হ্রদে থাকবে টলটলে নীল পানি। যেই পানিতে থাকবে রুপালি মাছ। যার তীরে থাকবে সবুজ গাছ। গাছে থাকবে লাল ফুল। যার আকাশে থাকবে সাদা মেঘ, যে মেঘে উড়ে বেড়াবে রঙিন পাখি।

আমি জানি আজ হোক কাল হোক আমরা পৌঁছাব সেই হ্রদের কাছে।