১১. আজ শেফার বিয়ে

আজ শেফার বিয়ে। বেশ ধুমধাম করেই বিয়ে হচ্ছে। শেফার মা জটিল প্যাঁচ খেলেছেন। সেই প্যাচে ধরাশায়ী হয়েছেন শেফার বাবা। বিয়ে হচ্ছে রফিকের সঙ্গেই।

শেফাকে খুব যে আনন্দিত মনে হচ্ছে তা না। সে চোখে-মুখে বিরক্তি নিয়ে বসে আছে। শেফার মা বললেন, কিরে তোর মুখটা এ রকম কেন?

শেফা বলল, কি রকম?

রাগী-রাগী মুখ।

রাগ লাগছে এই জন্যে মুখ রাগী-রাগী।

রাগ লাগার কি আছে। পছন্দের মানুষের সঙ্গেই তো বিয়ে।

শেফা ফিক করে হেসে ফেলে বলল, অভিনয় করে মুখটা রাগী-রাগী করেছি। আসলে এত খুশি লাগছে যে নিজেরই লজ্জা লাগছে।

বিশ হাজার এক টাকা কাবিনে শেফার বিয়ে হয়ে গেল। শেফা কেঁদে বাড়ি ভেঙে ফেলার জোগাড় করল। কান্নার এক ফঁাকে সে মাকে ফিসফিস করে বলল, কান্না দেখে ভয় পেও না মা। অভিনয়ের কান্না। খুশি চেপে রাখার জন্যে বেশি-বেশি চোখের পানি ফেলছি।

বাসর রাতে রফিক সামান্য অসুস্থ হয়ে পড়ল। বিয়ের উত্তেজনায় প্রচণ্ড মাথা ধরেছে। গায়ে সামান্য জ্বর। তা ছাড়া গরমটাও পড়েছে অস্বাভাবিক। ভাদ্র মাসের তালপাকা গরম।

শেফা স্বামীর মাথার পাশে ঘঘামটা দিয়ে বসে আছে। ঘোমটার ভেতর থেকে সে ফিসফিস করে বলল—এই যে ভদ্রলোক। মাথা বেশি ধরেছে? মাথা বেশি ধরলেও টিপে দিতে পারব না। সবাই বেড়ার ফাঁকফোক দিয়ে তাকিয়ে আছে। বাসর রাতে স্বামীর মাথা টিপতে দেখলে আমাকে নির্লজ্জ বলবে।

রফিক বলল, মাথা টিপতে হবে না। বাতি নিভিয়ে দাও চোখে আলো লাগছে।

শেফা বলল, সর্বনাশ বাতি তো নিভানোই যাবে না? তাহলে সবাই ভয়ংকর কিছু ভাববে।

রফিকের মাথার প্রচণ্ড যন্ত্ৰণা হঠাৎ কমে গেল। সে পরিষ্কার শুনল তার মাথার ভেতর কে যেন বলছে—অভিনন্দন।

রফিক মনে মনে বলল, কে…কে? কে কথা বলে?

মাথার ভেতরে আবারো কথা বলে উঠল, ওমেগা পয়েন্ট থেকে বলছি। আমাদের পরীক্ষা সফল হয়েছে।

ওমেগা পয়েন্ট কি?

মানুষ যাত্রা শুরু করে ওমেগা পয়েন্ট থেকে। যাত্রা শেষও করে ওমেগা পয়েন্টে।

এর মানে কি?

বিশ্ব ব্ৰহ্মাণ্ডে কোন কিছুরই কোন মানে নেই। তোমাকে এবং তোমার স্ত্রীকে অভিনন্দন। তোমাদের দুজনের জন্যে সামান্য উপহার পাঠাচ্ছি।

কি উপহার?

আজকের রাতটাকে ঝড়-বৃষ্টির রাত করে দিচ্ছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝড়বৃষ্টি শুরু হবে। হারিকেন যাবে নিভে। কিছুতেই সেই হারিকেন আর জ্বালাননা যাবে না। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাবে। বিদ্যুতের নীল আলোয় দুজন কিছুক্ষণের জন্যে দুজনকে দেখবে। উপহারটা কেমন?

রফিক বিড়বিড় করে বলল, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কিন্তু উপহারটা ভাল।

রফিকের কথা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই শীতল ঝোড়ো-বাতাস বইতে শুরু করল। দেখতে দেখতে বাতাসের বেগ বাড়ল। অনেক দূরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ছুটে আসছে মেঘমালা। শেফা বলল, এই যা হারিকেন নিভে গেছে!