।। ১১।।
অশোক সাহানি দরজা খুলে আমাদের দেখে একেবারে অবাক, একটু যেন বিরক্তও।
“কী ব্যাপার, আপনারা এত রাত্রে?”
কথাটা শুনেই একেনবাবু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন, “ওই যাঃ স্যার, এত যে রাত হয়েছে, সেটা তো একদম খেয়াল হয়নি। না স্যার, আপনাকে এখন আর ডিস্টার্ব করা উচিত হবে না।”
ইতিমধ্যেই অরুণও দেখলাম অশোকের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন।
“কী ব্যাপার?” অরুণ আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করলেন।
“নাথিং দ্যাট আর্জেন্ট স্যার,” একেনবাবু একেবারে হাত দুটো জোড়া করে বললেন। “দোষটা সম্পূর্ণ আমার। আমরা যদি একটু খেয়াল করতাম যে, এগারোটা বেজে গেছে, তাহলে কখনোই ডোর বেলটা বাজাতাম না, নেভার স্যার! যাক, যা হওয়ার হয়ে গেছে। উই মাস্ট লিভ রাইট নাউ। আপনারা স্যার নিশ্চিন্ত মনে শুয়ে পড়ুন। দেয়ার ইজ অলওয়েজ টুমরো।”
এই কথার পর অত্যন্ত নির্লজ্জ না হলে কেউ বলবে না যে, ঠিক আছে,কাল দেখা হবে।
অশোক বললেন, “ভেতরে আসুন। উই মাস্ট হ্যাভ সামথিং ইমপর্ট্যান্ট টু সে।”
“আপনি শিওর স্যার? আই মিন ইট ইজ নট টু লেট?”
“ডাজ’ন্ট ম্যাটার, আসুন।”
“থাঙ্ক ইউ স্যার, থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ।”
.
আবার আমরা সাহানি ম্যানসনের ফ্যামিলি রুমে গিয়ে বসলাম। ওঁদের গেস্টরা দেখলাম চলে গেছেন। কফির কাপগুলো তখনও ইতস্তত ছড়িয়ে আছে। সেগুলো দেখে প্লাস টেনশনে –আমার বেশ কফির পিপাসা পাচ্ছিল। কিন্তু এবার আর কেউ চা- কফির জন্য আপ্যায়ন করলেন না। অরুণ ‘আমি একটু আসছি’ বলে ভেতরে চলে গেলেন। আর অশোকও আমাদের সামনে বসলেন না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফায়ার প্লেসের কাঠগুলোকে খোঁচাতে খোঁচাতে প্রশ্ন করলেন, “বলুন মিস্টার সেন, হাউ ক্যান উই হেল্প ইউ?”
প্রশ্নটা একেনবাবুর কানে ঢুকল কিনা জানি না, কারণ উনি মুগ্ধ দৃষ্টিতে ফায়ার প্লেসটা দেখছেন। বললেন, “যাই বলুন স্যার, এই ফায়ার প্লেস জিনিসটা কিন্তু একেবারে মার্ভেলাস। হ্যাঁ বাড়িতে আপনাদের সেন্ট্রাল হিট আরও কীসব আছে জানি ঠিকই, কিন্তু এই উড বার্নিং ফায়ার প্লেসের আগুনের গরম স্যার, একেবারে আউট অফ দ্য ওয়ার্লর্ড! আমি আবার স্যার ঠান্ডায় বড় কাবু হই! এই যে আপনার এখানে বসে আমি গনগনে তাপ পোয়াচ্ছি –ইট ইজ জাস্ট…!”
একেনবাবুর বকবকানি শুরু করতেই দেখলাম অশোকের ভুরু দুটো একটু একটু করে কুঁচকোচ্ছে। বলতে কী আমারও অস্বস্তি লাগছিল, রাত দুপুরে উনি এই খেজুরে আলাপ শুরু করেছেন দেখে!
“প্লিজ,” একেনবাবুকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে অশোক বললেন, “এটা বলার জন্য নিশ্চয়ই এত রাত্রে আসেননি!”
“ইউ আর রাইট স্যার। সত্যি কথা বলতে কী স্যার, আমি গরমের কোনো কথাই ভাবছিলাম না, বরং তার উল্টোটাই ভাবছিলাম। আমার মাথায় আপনাদের ফ্রিজার নিয়ে একটা প্রশ্ন ঘুরছিল।”
“ফ্রিজার!”
“হ্যাঁ স্যার। আপনাদের বেসমেন্টে বোধহয় একটা ফ্রিজার আছে। আসলে স্যার, আমি ফ্রিজার-টিজার ঠিক চিনি না। তবে কিনা শ্যামলবাবুর বাড়িতে ক’দিন আগে একটা ফ্রিজার দেখেছিলাম। আপনাদের বেসমেন্টে যে বক্সটা আছে, সেটাও হুবহু এক সাইজ,
এক চেহারা। তাই মনে হল ফ্রিজারই নিশ্চয়ই হবে!”
“আই অ্যাম নট সারপ্রাইজড। আই ডু হ্যাভ এ ফ্রিজার ইন মাই বেসমেন্ট।”
বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল না যে, অশোক তার বিরক্তিটা প্রাণপণে চাপার চেষ্টা করছেন।
“ইজ ইট ওয়ার্কিং স্যার?”
“ইয়েস।”
“আমি তো শুনেছিলাম ওটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।” একেনবাবু মাথা চুলকোতে চুলকোতে বললেন।
এত রাত্রে কারোর বাড়িতে এসে কেউ যে এরকম ননসেন্স প্রশ্ন করে যেতে পারে, সেটা বোধহয় অশোক কল্পনাও করতে পারেননি। কিন্তু অন্যপক্ষে উনি আমাদের একেনবাবুকে চেনেন না!
“কার কাছে শুনলেন?”
“মিস্টার শিকদার স্যার…।”
“ও এবার বুঝেছি!” অশোক একেনবাবুর কনফিউশনের সূত্রটা ফাইনালি ধরতে পারলেন। “ইয়েস, ওটা খারাপ হয়েছিল কয়েকদিনের জন্য। ঠিক খারাপ নয়। জাস্ট এ সার্কিট ব্রেকার প্রব্লেম। কোনো কারণে ওভারলোড হয়ে গিয়ে বোধহয় ট্রিপ করেছিল। অরুণ তখন সেটা বোঝেনি। তাই সবজিগুলো মিস্টার শিকদারকে সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে এসেছিল, নষ্ট না হয়ে যাতে পুজোর ভোগে লাগে।”
“নাউ ইট ইজ ক্লিয়ার স্যার। অ্যান্ড ইট মেকস সেন্স। আমি স্যার অস্বীকার করব না, আগের দিন আপনাদের বেসমেন্টে গিয়ে আমি একটু কনফিউজডই হয়ে গিয়েছিলাম! আই নো ইট ইজ নান অফ মাই বিজনেস স্যার, কিন্তু হঠাৎ কী খেয়াল হল, আমি আপনাদের ফ্রিজারের ডোরটা একটু খুলেছিলাম। আর খোলামাত্র বুঝলাম যে, ভেতরটা একেবারে আইস কোল্ড! অথচ মিস্টার শিকদার বলেছিলেন যে, ফ্রিজার খারাপ হয়ে গেছে বলে আপনারা সরস্বতী পুজোর ভেজিটেবলগুলো পাঁচ দিন আগে ডেলিভারি করেছেন! কিন্তু এখন ব্যাপারটা বুঝতে পারছি। আসলে আপনাদের ফ্রিজারটা সত্যি খারাপ হয়নি!”
“ইউ আর রাইট।” কথাটা বললেন অরুণ। কোন ফাঁকে উনি যে ঘরে ঢুকেছেন আমি খেয়ালও করিনি!
একেনবাবু ঘাড়টা ঘষতে ঘষতে বললেন, “বাট দ্যাট ব্রিংস অ্যানাদার কোয়েশ্চেন স্যার। আমি সেদিন খেয়াল করেছিলাম যে, আপনাদের ফ্রিজারটা একেবারে ফাঁকা। এবং আজও যখন ডায়রিটা খুঁজতে নীচে গিয়েছিলাম, দেখলাম ওটা ফাঁকা পড়ে আছে!”
দাদা আর ভাই এক পলকের জন্য চোখাচোখি করলেন। অশোক বললেন, “ওয়েল কারণ আমরা ফ্রিজারটা বিক্রি করে একটা নতুন ফ্রিজার কিনব ঠিক করেছি।”
“মাই গড স্যার! আমার তো মনে হল ফ্রিজারটা প্রায় ব্র্যান্ড নিউ!”
“ইট ইজ নট ওল্ড,” অশোক স্বীকার করলেন, “তবে বুঝলেন তো, একবার যখন ব্রেকার ট্রিপ করেছে, তখন গন্ডগোল কিছু নিশ্চয়ই আছে।”
“এবার বুঝলাম স্যার। আমি এতক্ষণ খালি ভাবছিলাম, কিংসে জলের দরে ফ্রোজেন ভেজিটেবল বিক্রি হয়ে গেল, অথচ আপনারা সেগুলো কিনলেন না কেন! এদিকে শ্যামলবাবু বলছিলেন আপনারা দু’জনে এত হিসেব করে চলেন। আই মিন ভাল সেন্সেই বলছিলেন। শুধু শ্যামলবাবু কেন, আমি নিজেই তো সেদিন দেখলাম স্যার, খাবার পর লেফট ওভারগুলো কেমন যত্ন করে আপনারা তুলে রাখছেন। ভেরি গুড হ্যাবিট স্যার, ভেরি গুড হ্যাবিট। এনিওয়ে, আই ওয়াজ ভেরি কনফিউসড! কিংসে এরকম বার্গেন পেয়েও আপনারা তার সদ্ব্যবহার করলেন না। আসলে বুঝলেন কি না, আমার সমস্যা হচ্ছে…”
একেনবাবু বোধহয় একটা দীর্ঘ বক্তৃতার প্ল্যান করছিলেন, কিন্তু অরুণ সেটা থামিয়ে দিলেন।
“মিস্টার সেন, আমার দাদার অসম্ভব ধৈর্য, বাট আই ডোন্ট হ্যাভ দ্যাট। আপনার কি আর কিছু বলার আছে?”
“আছে স্যার।”
“দেন সে ইট, বাট ডু হারি, ইট ইজ গেটিং লেট!”
“হ্যাঁ স্যার।” বলে একেনবাবু পকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে ধরাতে গিয়ে কী ভেবে থেমে বললেন, “সিগারেট খেলে আপনাদের অসুবিধা হবে না তো? মানে যদি কোন অসুবিধা হয়, তাহলে…।”
“না হবে না,” অরুণ বেশ রূঢ়ভাবেই বললেন, “জাস্ট গেট গোইং।”
“না, থাক স্যার। বড় ব্যাড হ্যাঁবিড়!” ‘মিস্টার সেন, আই অ্যাম রানিং আউট অফ পেশেন্স! আপনার বক্তব্যটা তাড়াতাড়ি বলে ফেলুন!” অরুণ অসহিষ্ণু ভাবে বললেন।
“আসলে আমি বলতে চাচ্ছিলাম স্যার, গোভিন্দ জসনানির মৃত্যুটা আমার কাছে একটু মিস্টিরিয়াস?”
“তার মানে?” অশোক প্রশ্নটা করলেন।
“মানে ওঁর হঠাৎ এই ব্রিফকেস নিয়ে অদৃশ্য হওয়াটা, আর তার এক হপ্তা বাদে ওঁর মৃতদেহটা ব্রিফকেস সমেত প্রায় অক্ষত অবস্থায় ট্যাপান জি ব্রিজের কাছেপাওয়াটা। সামথিং ইজ নট কোয়ায়েট রাইট স্যার। “
“হোয়াটস রং দেয়ার?” এবার অরুণ প্রশ্নটা করলেন। “আমার তো ধারণা, ইন্সপেক্টর লান্ডির বিশ্বাস যে, সামবডি ফার্স্ট রবড় হিম অফ অল দ্য মানি। তারপর ওঁকে ধাক্কা দিয়ে হাইওয়ে থেকে নীচে ফেলে সে অদৃশ্য হয়।”
“এটা মন্দ বলেননি স্যার। কিন্তু ঘটনাটা হচ্ছে, উনি মারা যান হার্ট অ্যাটাকে। যদি মনে করি স্যার, ওঁর হার্ট অ্যাটাকটা হয়েছিল রাস্তা থেকে ওকে ফেলে দেবার পর, তা হলে কিন্তু ব্যাপারটা গোলমেলে হয়ে যায়!”
“গোলমেলে হয়ে যায়?” এবার অরুণ প্রশ্নটা করলেন।
“হয়ে যায় না স্যার?” যেলোকটা অতগুলো টাকা কেড়ে নিল, সে কেন তার ভিক্টিমকে। জীবিত অবস্থায় ওভাবে ফেলে রেখে চলে যাবে! বুঝতে পারছেন স্যার আমি কী বলছি? মিস্টার জসনানি তো সেক্ষেত্রে পরে পুলিশের সামনে লোকটাকে আইডেন্টিফাই করতে পারতেন!
“হু নোজ, তার মুখে হয়তো মুখোশ ছিল।” অরুণ বললেন। “সুতরাং আইডেন্টিফাই করার প্রশ্নই ওঠে না।”
“ঠিক, সেটা অবশ্যই একটা পসিবিলিটি স্যার।” স্বীকার করলেন একেনবাবু।
“তাহলে? এ ছাড়াও অনেক পসিবিলিটি আছে মিস্টার সেন,” এবার অশোক বললেন। “আমি ধরে নিচ্ছি যে, গোভিন্দ আঙ্কল কারও কাছ থেকে গাড়িতে রাইড নিচ্ছিলেন। সে লোকটা যখন আঁচ পায় যে, আঙ্কলের ব্রিফকেসে এত টাকা আছে। হি স্টপড দ্য কার এবং ব্যাগটা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এরকম একটা ফিজিক্যালি স্ট্রেসফুল সিচুয়েশনের মধ্যে পড়ে গোভিন্দ আঙ্কল হার্ট অ্যাটাকে কোলান্স করেন। দ্য রেস্ট ইজ সিম্পল। হি ডাম্পড দ্য বডি। আফটার অল, এ ডেড ম্যান উইল নেভার বি এবল টু আইডেন্টিফাই, তাই না?”
“আমিও ঠিক এটাই ভেবেছিলাম স্যার। তবে কিনা একটা ব্যাপার তাতে ক্লিয়ার হয় না।”
“হোয়াট ডু ইউ মিন?”
“ব্রিফকেসের লকটা একেবারে পারফেক্ট অবস্থায় পাওয়া গেছে! আমি নিজেই দেখেছি স্যার। আমি তো ভেবেছিলাম লকটা ভাঙা অবস্থায় পাওয়া যাবে। না স্যার, তা নয় –দ্য লক ওয়াজ স্পটলেসলি ক্লিন, অ্যান্ড কমপ্লিটলি ইনট্যাক্ট!”
অশোক ভুরু কুঁচকে কয়েক সেকেন্ড ভেবে বললেন, “পারহ্যাপস, লোকটা পিস্তল দেখিয়ে গোভিন্দ আঙ্কলকে দিয়েই ব্রিফকেসটা খুলিয়েছিল।”
“ট্রুলি অ্যামেজিং স্যার! বিশ্বাস করুন আমিও তাই ভেবেছিলাম! কিন্তু তখন আমার মনে পড়ল স্যার, ব্রিফকেসটা তো আপনাদের বাড়ির। লকের কম্বিনেশনটা জানেন আপনারা, আর আপনাদের কাছ থেকে জেনেছিলেন শ্যাম মিরচন্দানি। মিস্টার জসনানির তো সেটা জানার কথা নয়! কারণ, যখন ব্রিফকেসটা আপনাদের কাছ থেকে মিস্টার মিরচন্দানি ধার নেন, তখন মিস্টার জসনানি ওয়াজ আউট অফ দ্য হাউস। তাই না?”
“আমি হয়তো অন্য কোনো সময় ওঁকে কম্বিনেশনটা বলেছিলাম,” অরুণ বললেন। “ইন ফ্যাক্ট, আমার এখন মনে পড়ছে, আই ডিড টেল হিম।”
“কিন্তু আরেকটা সম্ভবনা আছে স্যার।”
“সেটা কি?” দু’জনেই প্রায় একসঙ্গে প্রশ্নটা করলেন।
“ধরুন স্যার, আপনাদের দু’জনের মধ্যেই কেউ টাকাটা ব্রিফকেস থেকে সরিয়েছেন!”
“বি কেয়ারফুল মিস্টার সেন, কী যা তা বলছেন আপনি!”
“এখানে স্যার সম্ভবনার কথা হচ্ছে। হতে তো পারে যেমন আপনাদের মধ্যে একজন। বা দু’জন মিলেই টাকাগুলো আত্মসাৎ করে, শুক্রবার রাত্রে মিস্টার জেসনানির বডিটা হাইওয়ের পাশে ডাম্প করে এসেছেন!”
“দিস ইজ আটারলি ননসেন্স!” অশোক বেশ কড়া গলায় বললেন, “টাকার কথা ছাড়ন। শুধু শুধু আমরা বাড়ির গেস্টের ডেডবডি বাইরে ওভাবে ডাম্প করতে যাব কেন? ইউ আর নট ইমপ্লায়িং দ্যাট উই কিলড হিম!”
“নো স্যার, অ্যাবসলুটলি নট। ওঁর মৃত্যু পুরোপুরো স্বাভাবিক।”
“তাহলে?”
“সেটাই ছিল আমার পাজল স্যার। অস্বীকার করব না, পাজল হিসাবে এটা ছিল অতি মোক্ষম! আমি স্যার পুরোপুরি কনফিউজড হয়ে গিয়েছিলাম। আপনারা যদি সত্যি খুন না করে থাকেন, তাহলে ওভাবে ডেড বডিটা ডাম্প করতে যাবেন কেন? আর তখনই চিন্তাটা আমার মাথায় এল স্যার –আমার মন বলল, আপনারা কিছু একটা ঢাকার চেষ্টা করছেন। হঠাৎ আমার মনে পড়ল এরকম একটা কেসের কথা আমি কোথাও পড়েছি। এমনকি সিনেমাতেও বোধহয় দেখেছি।”
.
একেনবাবু যে কী বলতে চাচ্ছেন, আমি তখনও বুঝতে পারছি না! কিন্তু অশোক আর অরুণ বোধহয় কিছুটা আঁচ করতে পারছিলেন। কারণ ওঁদের চোখে-মুখে বিস্ময়ের বদলে একটা চাপা আতঙ্ক ফুটে বেরোচ্ছে! অরুণ দেখলাম দেওয়াল-আলমারিটার দিকে আস্তে আস্তে এগোচ্ছেন।
একেনবাবু সেটা লক্ষ্য করে অরুণকে বললেন, “স্যার, ইন্সপেক্টর লান্ডি কিন্তু বাইরে তাঁর লোকজন নিয়ে অপেক্ষা করছেন। পাপের বোঝা আর বাড়াবেন না!”
কথাটা শোনামাত্র ম্যাজিকের মত কাজ হল! অরুণ দাঁড়িয়ে পড়লেন।
“আমি বুঝতে পারছি না, আপনি কী বলছেন! শুকনো গলায় অরুণ বললেন।”
“আমি শ্যাম মিরচন্দানির খুন হওয়ার কথাটা বলছি!”
“হোয়াট!” এবার আর সাহানি ব্রাদার্স নয়, আমার মুখ দিয়েই কথাটা বেরিয়ে গেল।
“হ্যাঁ স্যার।” আমার দিকে তাকিয়ে একেনবাবু বললেন।
“শ্যাম মিরচন্দানি যখন নিউ ইয়র্কে ওঁর কাস্টমারদের কাছ থেকে পাওনা-গন্ডা আদায় করছেন, সেই সময়ে এখানে এই বাড়িতে এঁদের দু’জনের সামনেই মিস্টার জসনানি হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। এই দু’ভাই জানতেন যে, মিস্টার মিরচন্দানি সেদিন প্রায় মিলিয়ন ডলার ক্যাশ নিয়ে বাড়িতে ফিরবেন। তখনই বোধহয় স্যার, ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়াটা এঁদের মাথায় আসে। ইট ইজ এ কমপ্লিকেটেড প্ল্যান। কিন্তু ঠিক মত এগজিকিউট করতে পারলে, দে উইল বি এ মিলিয়ন ডলার্স রিচার! যেটা করতে হবে, সেটা হচ্ছে একটা মার্ডার, তারপর এ সুইচ বিটুইন টু ডেড বডিজ।
“ওঁদের পরিচিত ডাক্তার যখন মিস্টার জসনানিকে দেখতে বাড়িতে এলেন, তখন তাঁকে এঁরা মিথ্যে করে পেশেন্টের নাম বলেন শ্যাম মিরচন্দানি। নাউ হাউ উইল দ্য ডক্টর নো! তিনি কোনো রকম সন্দেহ না করে স্যার, শ্যাম মিরচন্দানির নামে ডেথ সাটিফিকেট লিখে চলে গেলেন। তারপর যখন শ্যাম মিরচন্দানি বাড়িতে ফিরলেন, এই দু’ভাই মিলে তাকে হত্যা করলেন। হয় বিষ খাইয়ে, নয় গলা টিপে। ঠিক কী করে সেটা শুধু ওঁরাই জানেন। নাউ দে হ্যাভ মিরচন্দানিস ডেডবডি অ্যান্ড এ ভ্যালিড ডেথ সার্টিফিকেট! দাহ করার সময় ফিউনারেল হোম বা লোকাল অথরিটির সন্দেহ করার কোনো কারণ থাকবে না।
“নেক্সট স্টেপ স্যার, মিস্টার জসনানির বডিটাকে পাচার করা, কারণ আদারওয়াইজ দেয়ার উইল বি ওয়ান ডেডবডি টু মেনি! কিন্তু এখানে একটা সমস্যা আছে স্যার। দ্বিতীয় ডেড বডিটা যদি খুব তাড়াতাড়ি পুলিশের নজরে আসে, তাহলে একটু ঘোঁট পাকতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি বডিটা আট-দশ দিন পরে খুঁজে পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে কারও কোনো সন্দেহ জাগবে না। ওয়েদার যদি ঠান্ডা থাকত তাহলে এই সময়ের জন্য বডিটা ওঁদের ব্যাক ইয়ার্ডেই লুকিয়ে রাখতে পারতেন। কিন্তু মনে আছে স্যার, ক’দিন হঠাৎ কীরকম আনইউজুয়াল গরম পড়েছিল! তখনই ওঁরা ঠিক করলেন যে, বডিটা ফ্রিজারে রেখে দেবেন।
“তার পরের সব খবর আপনি জানেন। বাঙালি ক্লাব হঠাৎ এক ফ্রিজার ভেজিটেবল পেল, পুলিশে খবর গেল জসনানি ব্রিফকেস নিয়ে অদৃশ্য হয়েছেন! শ্যাম মিরচন্দানিকে যোগ্য সমারোহের সঙ্গে দাহ করা হল, যাতে কারও মনে কোনো সন্দেহ না জাগে! তারপর গত শুক্রবার যখন বরফ পড়তে শুরু করল, তখন এঁরা জসনানির বডিটা ফ্রিজার থেকে বের করে হাইওয়ের পাশে নিয়ে গিয়ে ডাম্প করে এলেন। সেই সঙ্গে ফাঁকা ব্রিফকেসটা, যাতে জসনানি যে টাকা চুরি করে পালিয়েছেন, সেই থিওরিটা প্রমাণিত হয়। ওঁরা ভেবেছিলেন যে, জসনানির মৃত্যুটা নিয়ে খুব একটা তদন্ত হবে না, কারণ ইট ইজ নট এ মার্ডার। কী স্যার, আমি ভুল বলছি?” অরুণ আর অশোকের দিকে তাকিয়ে একেনবাবু প্রশ্ন করলেন।
“ইউ হ্যাভ নো প্রুফ,” অরুণ মনে হল আত্মরক্ষার শেষ চেষ্টা করছেন। “অল ইউ সেইড ইজ জাস্ট ইয়োর ইমাজিনেশন।”
“অন দ্য কনট্রারি স্যার, আই ক্যান গেট অল দ্য প্রুফ আই ওয়ান্ট। আপনাদের ডাক্তারকে মিস্টার জসনানির ফটোটা দেখালেই উনি সাক্ষী দেবেন যে, ওঁর ডেথ সাটিফিকেটই উনি লিখেছিলেন। ইন্সপেক্টর লান্ডি আপনাদের ফ্রিজারটা ফরেন্সিক এক্সপার্টের কাছে নিয়ে যাবেন। বিলিভ মি স্যার। এদেশের ফরেন্সিক সায়েন্স হচ্ছে ট্রলি অ্যামেজিং! কী থেকে যে এরা কী বের করে…।”
বাইরে এদিকে ইন্সপেক্টর লান্ডি দরজায় বেল বাজাচ্ছেন ঘরে ঢোকার জন্য।