১১.
অফিসের কাজে অ্যানসন প্রু টাউনে এসেছিল। কাজ সারতে বেলা গড়ালো। সেদিন সে মার্লবোরো হোটেলেই রাতটা কাটাবে বলে ঠিক করল।
এখনও দু-একটা কাজ বাকি। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ফিরে এলেই মেগকে মনে করিয়ে দিতে হবে বারলোকে দেওয়া সেই পাঁচ হাজারের পলিসি দুটো সে যেন নষ্ট করে ফেলে।
হুঁ হুঁ বাবা, কোন দিক থেকে এতটুকু ভুল কেউ পাবেনা। একেবারে ছবির মতো কাজ। ম্যাডক্স তো কোন্ ছার, ভগবানও আমাকে কজা করতে পারবে না।
বেচারা জেনস এবং তার সাঙ্গোপাঙ্গো এখনও হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে সেই টাক মাথা উন্মাদটাকে।
সবই ভালো। সব দিকই একেবারে নিখুঁত। শুধু একটা ব্যাপারে মনটা একটু খচখচকরে, মেগ এর সম্বন্ধে কি এমন রিপোর্ট ওরা পেল।
এরপর অ্যানসন হারমাসের সঙ্গে দেখা করতে গেল। হারমাস বলল মিঃ অ্যানসন এদিকে জল অনেক দূর গড়িয়েছে। বীমার ব্যাপারটা একেবারে ধাপ্পা, মিসেস বারলো তার প্রেমিকের সাহায্যে বারলোকে খুন করেছেন। উন্মাদের ঘটনাটা একটা ধোঁকা।
অ্যানসন ভাবলেশহীন চোখে হারমাসের দিকে তাকালো। যথার্থ লোকটার মাথা আছে বলতে হবে, ভেবে ভেবে ঠিক বের করেছে দেখছি। কিন্তু ভুলটা আমার কোথায় হল। যাই হোক কায়দা করে যুক্তি-তর্কের অপব্যবহার না করে ওকে অন্যরকম বোঝাতে হবে।
অ্যানসন স্থির চোখে হারমাসের দিকে তাকিয়ে বলল না মিঃ হারমাস, আপনার যুক্তিটা বড় কষ্ট কল্পিত। ম্যাডক্স-এর মতো আপনিও দেখছি অন্ধকার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন। আপনি বললেই ত আর হবে না।
মিঃ অ্যানসন, কল্পনা শক্তি আমার একটু চিরকালই বেশি। মিসেস মেগ বারলোর অতীত ইতিহাস পড়লে আপনিও বুঝতেন মিঃ অ্যানসন।
অ্যানসন নড়েচড়ে বলল কি সেই ইতিহাস।
অতীব বিচিত্র সেই ইতিহাস। অতীত জীবনে উনি বেশ্যাবৃত্তি করতেন। ওর একজন প্রাণের নাগর ছিল তার জন্য উনি অনেক কিছুই করেছেন, অবশ্য নাগরটি কে জানি না। শেষমেষ চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন। এবং তারপর জেল হয় ছমাস। জেল থেকে বেরিয়ে দেখেন নাগর বেপাত্তা। মনের দুঃখে শেষে বারলোকে বিয়ে করলেন। তারপর একদিন আবার সেই নাগরের সঙ্গে দেখা হল। দুজনে মিলে শুরু হল শলা-পরামর্শ। বারলোকে দিয়ে ইনসিওর করিয়ে তাকে খুন করে টাকা হাতাবার মতলব করলেন দুজনে।
অ্যানসন মৃদু হেসে বলল বাঃ চমৎকার। গল্পটা শুনে মনে হল সিনেমা দেখছি। এর একটি ঘটনাও আপনি প্রমাণ করতে পারবেন?
যদি বলি পারবো।
পারলেও কোন ফল হবে না, আদালত এসব মেনে নেবে না। টাকা আপনারা দেবেন কিনা সে আপনাদের নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু না দিলে আমার বদনাম। ভবিষ্যতে যেই যাবো কারোর বীমা করাতে অমনি সে বলবে লোকটা অপয়া, এর হাতে বীমা করিয়ে লাভ নেই, টাকা পাওয়া যাবেনা।
সবই মানলাম, কিন্তু জেনেশুনে ভুয়ো দাবী কিভাবে মেটাবো বলুন মিঃ অ্যানসন।
এটা যে ভুয়ো তার প্রমাণ মিসেস বারলো অনেক মিথ্যে কথা বলেছেন। প্রথমতঃ উনি বলেছেন যে মিঃ বারলো ওকে জেসনস্ প্লেনে নিয়ে গেছিলেন। আসলে তা নয়। উনিই নিয়ে যেতে বাধ্য করেছিলেন। দ্বিতীয়তঃ ওরা স্বামী স্ত্রীর মতো এক ঘরে থাকতেন না।
অ্যানসন সিগারেটটা ঘন ঘন টান দিতে লাগলো।
হারমাস বললেন গ্লেন-এ গিয়ে টেলিফোন বুথের সামনে আমি গাড়ির চাকার দাগ দেখেছি। একই দাগ ঘটনাস্থলেও পাওয়া গেছে। ঐ দাগের সঙ্গে যার চাকার দাগ মিলবে সেই ওর প্রেমিক ও খুনী।
কিন্তু চাকার দাগও অন্য কারোর হতে পারে মিঃ হারমাস।
তা পারে কিন্তু দাগ ছাড়াও আরও কিছু আছে মিঃ অ্যানসন। আপনি জানেন কিনা জানিনা বারলো ছিলেন পিস্তল চালনায় ওস্তাদ। তার দুটো ৩৮ বোরের পিস্তল ছিল। একটাও কিন্তু আমরা তার বাড়িতে খুঁজে পাইনি। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার যে বারলো তার নিজের পিস্তলের গুলিতেই মরেছেন। এছাড়া ঐ একই পিস্তলের গুলিতে পেট্রোল পাম্পের পুলিস টম স্যাঙ্কুয়িস্টও মরেছে।
অ্যানসনের মুখের রং ফ্যাকাশে হয়ে গেল, চোখে আতঙ্কের ছাপ। সে বলল মিঃ হারমাস আপনি দেখছি এসবের জন্য খুব পরিশ্রম করছেন। তা আপনি কি মনে করেন বারলেই প্রিমিয়ামের টাকা দেওয়ার জন্য পেট্রোল পাম্পে ডাকাতি করেছে।
হতে পারে।
আচ্ছা মিসেস বারলোর প্রেমিকটি কে জানেন নাকি?
এখনও জানিনা তবে খোঁজ খবর চলছে। জেনে যাবো।
অ্যানসন বলল তবে আপনাদের সব কথাই তখন মানবো যখন প্রমাণ পাবো। আজ চলি পরে আবার দেখা হবে।
অ্যানসন চলে যাবার পর, হারমাস ব্রেকফাস্ট শেষ করে সবে কাগজখানা চোখের সামনে মেলে ধরেছেন, জেনস এসে তার ঘরে ঢুকলেন।
জেনসন বলল বুঝলে হারমাস তোমার মতলবটা ভালই কাজ দিয়েছে। সারা বাড়ি চষে আমরা দুরকমের হাতের ছাপ পেয়েছি। একটা গেলার হেগান-এর সঙ্গে মিলে গেছে। আমাদের খাতায় তার নাম আছে। সে অতীতে লস এঞ্জেলসে থাকতো, মিসেস বারলোও অতীতে সেখানে থাকতেন। অতএব গেলারই মিসেস বারলোর সেই নাগর। কিন্তু আর একটা ছাপ নিয়েই যত, মুশকিল। সে ছাপের সঙ্গে আমাদের খাতায় কোন ছাপ মিলছে না।
পিস্তলের বাক্সে কোন ছাপ পেয়েছে কি?
পেয়েছি। তবে গেলারের নয় অন্য ব্যক্তিটির। আমি গেলারের কাছে যাবো, তুমি যাবে নাকি?
.
গেলার চেয়ারে শরীর এলিয়ে বললো। আপনারা মিথ্যে সময় নষ্ট করছেন লেফটেন্যান্ট। এখানে আপনাদের সুবিধে হবে না।
জেনসন দাঁতে দাঁত ঘষে বললেন গত একুশে সেপ্টেম্বর রাত্তিরে তুমি কোথায় ছিলে?
মনে নেই।
ভালো করে ভেবে বলল।
একটু ভেবে বলল আমি সেদিন ছিলাম ল্যাম্ভীলে, জো ডানকান-এর সঙ্গেই সারাটা দিন ছিলাম।
রাত্রিবেলায় একটা মেয়ের সঙ্গে ছিলাম তার নাম কিট লিটম্যান।
তিরিশে সেপ্টেম্বর কোথায় ছিলে?
জুয়ো খেলছিলাম, আরো চারজন বন্ধু সাক্ষী আছে।
মিসেস বারলোর সঙ্গে তোমার কতদিনের পরিচয়?
মিসেস বারলো! সে আবার কে?
বারলোর বাড়িতেও তুমি কোনোদিন যাওনি তাই না?
বাড়িতে কেন! সেখানে আমি যেতে যাবোই বা কেন?
কেন যাবে বা গেছে, তুমিই জানো। তোমার হাতের ছাপ বাড়ির সব জায়গায় পাওয়া গেছে।
সত্যি কথা বলো মেগের সঙ্গে তোমার পরিচয় কত দিনের?
অনেক দিনের, বারলো মারা গেছে আর ঢাকবার কোন মানেই হয় না। বিয়ের আগে থেকেই পরিচয় ছিল। তা মেগ হঠাৎ করে বারলোকে বিয়ে করে বসলো। মাঝে আর সাক্ষাৎ ছিল না। কমাস আগে আবার দেখা। টেনে বাড়িতে নিয়ে গেলো। এরপর সময় পেলে মাঝে মাঝে যেতাম, বারলোকে লুকিয়েই যেতাম। বোঝেনই তো পুরোনো প্রেম।
বাড়িতে আর একটা লোকের হাতের ছাপ পাওয়া গেছে, জানোলোকটা কে?
না, আমি তো জানতাম আমি একাই নাগর। আরও কেউ ছিল নাকি?
তোমার গাড়িটা কোথায়?
বাইরে ঘন নীল রং দেখলেই চিনতে পারবেন।
.
অ্যানসন শেল সার্ভিস স্টেশনে গাড়ি থেকে নামলো। অফিস ঘরে জ্যাক হর্নবি বসে আছে।
অ্যানসন বলল জ্যাক গাড়ির টায়ারগুলো পাল্টে চারটে ফায়ার স্টোন লাগিয়ে দাও। কতক্ষণ লাগবে পাল্টে দিতে?
কত আর, ঘন্টা খানেক।
বেশ তাহলে আমি বসছি। কাজ শেষ হলে তবে যাবো।
.
ব্যাঙ্কের ম্যানেজার মেরিওয়েদারের মুখোমুখি একটা চেয়ারে বসে হারমাস বলল শুনলাম মিঃ ফিলিপ বারলো আপনাদের ব্যাঙ্কেই টাকা পয়সা রাখতেন। তা বীমার ব্যাপারে উনি কি আপনার সঙ্গে কিছু আলোচনা করেছিলেন। শুনলাম ব্যাঙ্কের কাছে পলিসি বন্দুক রেখে টাকা ধার করার জন্যই উনি বীমা করিয়েছিলেন।
হ্যাঁ আমাকে উনি সেই রকমই বলেছিলেন।
ওর কত টাকা ধার নেওয়ার দরকার ছিল এ ব্যাপারে আপনি কিছু জানেন?
হ্যাঁ তিন হাজার ডলার। আমি দেবও বলেছিলাম।
কিন্তু আমি শুনেছিলাম যে ওর আরও বেশি টাকার দরকার ছিল।
দরকার থাকলেই তো হবে না পাঁচ হাজারের পলিসিতে আর কত টাকা ধার দেওয়া যায়।
পাঁচ হাজার না তো, উনি তো পঞ্চাশ হাজারের বীমা করিয়েছিলেন।
আপনি ভুল করছেন মিঃ হারমাস। মিঃ বারলো পাঁচ হাজারের পলিসি করিয়েছিলেন তার জন্য উনি নগদে প্রিমিয়াম দেবেন বললেন কারণ নগদে প্রিমিয়াম দিলে আপনারা পাঁচ শতাংশ ছাড় দেন।
কিন্তু আমরা তো কোনো ছাড় দিই না।
কিন্তু বারলো নিজে আমাকে বলেছেন যে কি যেন নাম আপনাদের কোম্পানীর সেলম্যানের ও হ্যাঁ মিঃ অ্যানসন তিনিই নাকি ছাড়ের কথা বলেছেন।
আচ্ছা বারলো সেদিন কত ডলার তুলেছিলেন।
দেড়শো ডলার।
আশ্চৰ্য্য! পাঁচ হাজার ডলারের প্রিমিয়াম ঠিক দেড়শো ডলার।
হারমাসের কপালে চিন্তার রেখা ফুটছিল। সে মেরিওয়েদারকে ধন্যবাদ জানিয়ে হোটেলে ফিরে এলো। ঘরের চাবি নিয়ে এগোতে যাবেন হারমাস, রিসেপশনিস্ট টম নডলি বললো আপনার সঙ্গে এক মহিলা দেখা করতে চান।
মহিলা, কে? কি নাম তার?
ফে ললি। মেয়েটা ভালো না।
সে কোথায়?
পানশালায় বসিয়ে রেখেছি।
হারমাস পানশালায় ঢুকে দেখলেন এক কোণে একটা মেয়ে বসে আছে।
হারমাস বললেন আমার সাথে কি দরকার।
আমি ফেললি, আপনি তো ন্যাশনাল ফাইডেলিটির লোক। আমি আপনাকে কিছু খবর দিতে পারি।
হ্যাঁ বলুন কি খবর। খবর শুনতে আমি সব সময়েই আগ্রহী। বলুন কত দামের খবর।
না না দাম টাম লাগবে না। শুধু মনটাকে একটু হালকা করতে চাই।
আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
আমি ঐ আপনাদের কোম্পানীর সেলসম্যান শঠ, প্রতারক ঐ জন অ্যানসন সম্বন্ধে তদন্ত করতে চাই।
বলুন আপনার কি বক্তব্য।
ললির চোখদুটো জ্বলে উঠলো। সে টেবিলের ওপর হাত মুড়ে সামনে ঝুঁকে পড়লো। তারপর ফিসফিস করে কথা শুরু করল।