১১৮তম অধ্যায়
অবশিষ্ট অশ্বসংগ্রহে গরুড়ের যুক্তি
নারদ বলিলেন, “তখন বিনতানন্দন গরুড় সম্বোধন করিয়া সহাস্যবদনে কহিলেন, “হে গালব! আজি কি সৌভাগ্য! আমি তোমাকে কৃতকৃত্য অবলোকন করিলাম।”
“গালব তাঁহার বাক্য শ্রবণ করিয়া কহিলেন, “হে বৈনতেয়! যত অশ্ব আহরণ করিতে হইবে, অদ্যাপি তাহার চতুর্থ অংশ অবশিষ্ট আছে; অতএব এক্ষণে কর্ত্তব্য কি বল?”
“বাগ্নিশ্রেষ্ঠ [প্রধান বক্তা] বৈনতেয় কহিলেন, “হে গালব! অবশিষ্ট অশ্ব আহরণের নিমিত্ত আর যত্ন করিবার প্রয়োজন নাই; আর তাহা প্রাপ্ত হইবার উপায়ও দেখি না। পূর্ব্বে রাজা ঋচীক কান্যকুব্জদেশাধিপতি গাধিরাজের [বিশ্বামিত্রের] নিকট সত্যবতী নামী তাঁহার কন্যাকে পরিণয়াৰ্থ প্রার্থনা করিলে, তিনি তাঁহাকে কহিলেন, “ভগবান! আপনি আমাকে চন্দ্রের ন্যায় শুভ্ৰবৰ্ণ শ্যামৈককৰ্ণ সহস্ৰ অশ্ব প্রদান করুন; তাহা হইলে আমি আপনাকে সত্যবতী সম্প্রদান করিব।”
“ঋচীক ‘তথাস্তু’ বলিয়া বরুণালয়ে গমনপূর্ব্বক তত্ৰত্য অশ্বতীর্থ হইতে গাধিরাজের অভিলষিত একসহস্ৰ অশ্ব আনয়ন করিয়া তাঁহাকে প্রদান করিলেন। গাধিরাজ পুণ্ডরীক যজ্ঞ করিয়া সেই সমস্ত অশ্ব দ্বিজাতিগণকে প্ৰদান করিলেন। আপনি যে তিনজন রাজার নিকট হইতে ছয়শত অশ্ব আহরণ করিয়াছেন, তাঁহারা ঐ সকল দ্বিজাতির নিকট হইতে প্রত্যেকে দুইশত করিয়া ক্রয় করিয়াছিলেন। অবশিষ্ট চারিশত অশ্ব বিতস্তানদী পার হইবার সময় সলিলে নিমগ্ন হইয়াছিল। আপনি সেইসকল দুর্লভ অশ্ব কোনকালেই লাভ করিতে সমর্থ হইবেন না; অতএব বিশ্বামিত্ৰকে অবশিষ্ট দুইশত অশ্বের পরিবর্তে এই কন্যা ও পূর্ব্বাহৃত [পূর্ব্বের সংগৃহীত] ছয়শত অশ্ব প্রদান করুন। তাহা হইলে আপনি গতসম্মোহ [বিগতমোহ-শান্ত] ও কৃতকৃত্য হইবেন।”
গালবের গুরুদক্ষিণাদানানন্তর অরণ্যে প্ৰবেশ
“মহর্ষি গালব বৈনতোয়ের এই বাক্য অঙ্গীকার করিয়া তাঁহার সমভিব্যাহারে সেই অশ্বগণ ও সেই কন্যাকে গ্রহণপূর্ব্বক বিশ্বামিত্র সমীপে সমুপস্থিত হইয়া কহিলেন, “ভগবন! আপনার আটশত অশ্বের মধ্যে এই ছয়শত অশ্ব ও অবশিষ্ট দুইশত অশ্বের পরিবর্তে এই কন্যাকে গ্ৰহণ করুন। তিনজন রাজর্ষি ইহার গর্ভে পরম ধার্মিক তিনটি সন্তান উৎপাদন করিয়াছেন এক্ষণে আপনিও একটি পুত্র লাভ করুন।”
“বিশ্বামিত্ৰ বৈনতেয়, গালব ও সেই বরবর্ণিনী মাধবীকে অবলোকন করিয়া কহিলেন, “হে গালব! তুমি কি নিমিত্ত প্রথমেই আমাকে এই কন্যা প্ৰদান কর নাই? তাহা হইলে আমিই ইহার গর্ভে কুলপাবন চারিপুত্র লাভ করিতে পরিতাম। সে যাহা হউক, এক্ষণে একমাত্র পুত্রলাভের নিমিত্ত ইহাকে গ্রহণ করিতেছি। আর ঐ অশ্বসকল আমার আশ্রমে ইতস্ততঃ বিচরণ করুক।” মহাদুৰ্গতি বিশ্বামিত্র এইরূপে মাধবীকে পরিগ্রহ [গ্রহণ] করিয়া কালক্রমে তাহার গর্ভে অষ্টকনামে এক পুত্ৰ সমূৎপাদন করিলেন। পুত্ৰ জন্মিবামাত্র মহামুনি বিশ্বামিত্র তাঁহাকে ধর্ম্ম, অর্থ ও সেইসমুদয় অশ্ব প্রদান এবং গালবের হস্তে মাধবীকে সমর্পণ করিয়া অরণ্যে গমন করিলেন। তখন অষ্টক সোমপুরসদৃশ [চন্দ্রপুরীতুল্য] স্বীয় নগরে প্রবেশ করিলেন।
“মহর্ষি গালব বিনতানন্দন গরুড়ের সহিত এইরূপে গুরুকে দক্ষিণা দান করিয়া প্রীতিপ্ৰফুল্লচিত্তে মাধবীকে কহিলেন, “হে বরারোহে! তোমার একজন দানপরায়ণ, একজন শৌৰ্য্যশালী, একজন ধর্ম্ম ও সত্যপরায়ণ ও একজন যাগশীল-এই চারিপুত্ৰ সমুৎপন্ন হইয়াছে; তুমি এই সমস্ত পুত্রদ্বারা পিতা, চারিজন রাজা ও আমাকে পরিত্রাণ করিয়াছ; এক্ষণে পিতার নিকট গমন কর।” এই বলিয়া তপোধন গালব সেই কন্যাকে তাহার পিতার হস্তে প্রত্যাৰ্পণ ও বিনতানন্দনকে গমনে অনুমতি করিয়া অরণ্যমধ্যে প্ৰবেশ করিলেন।”