১১৭. যুধিষ্ঠিরের পরীক্ষার্থে ধর্ম্মের মায়া-সরোবর সৃজন ও ভীমের জল অন্বেষণে গমন

জিজ্ঞাসেন জন্মেজয়, কহ অতঃপর।
কি কি কর্ম্ম করিলেন পঞ্চ সহোদর।।
রহস্য শুনহ বলি, কহে মুনিবর।
তৃষ্ণায় পীড়িত হয়ে পঞ্চ সহোদর।।
বৃক্ষতলে বসি রাজা বলেন ভীমেরে।
জল কোথা আছে ভীম আনহ সত্বরে।।
আজ্ঞামাত্র বৃকোদর করেন গমন।
সে বনে না পায় জল করে অন্বেষণ।।
কোথায় পাইব জল চিন্তে মহামতি।
পবননন্দন যায় পবনের গতি।।
কতদূরে দেখে এক কুসুম কানন।
নানাবিধ ফল ফুলে অতি সুশোভন।।
অশোক কিংশুক জাতি টগর মল্লিকা।
চম্পক মাধবী কুরু ঝাঁটি শেফালিকা।।
পলাশ কাঞ্চন ইন্দ্রমণি নানা ফুল।
মধুলোভে উড়ে বসে মত্ত অলিকুল।।
খঞ্জন খঞ্জণী নাচে আপনার সুখে।
ময়ূর ময়ূরী নাচে পরম কৌতুকে।।
তথা হৈতে যায় বীর অতি মনোদুঃখে।
কোথায় পাইব জল, যাব কোন্ মুখে।।
চিন্তাকুল বৃকোদর করিছে গমন।
হেনকালে শুন রাজা অপূর্ব্ব কথন।।
জানিতে পুত্রের ধর্ম্ম, আসি ধর্ম্মরায়।
দিব্য এক সরোবর সৃজেন তথায়।।
আপনি মায়ায় বকপক্ষি রূপ ধরি।
রহিলেন সেই স্থানে ছদ্মবেশ করি।।
পাইয়া জলের তত্ত্ব বীর বৃকোদর।
ত্বরিতে আসেন তথা হরিষ অন্তর।।
জল দেখি তুষ্ট হয়ে পবননন্দন।
পান করিবারে বীর নামিল তখন।।
মায়াপক্ষী বলে, শুন ওহে মতিমান।
সমস্যা পূরণ করি কর জলপান।।
নতুবা তোমার মৃত্যু হবে জলপানে।
সমস্যা পূরণ কর আমার বচনে।।
মহাভারতের কথা সুধা হৈতে সুধা।
কাশীদাস কহে, পানে খন্ডে ভব ক্ষুধা।।

প্রশ্নে-,শ্লোকঃ
‘‘কা চ বার্ত্তা কিমাশ্চর্য্যাং কঃ পন্থাঃ কশ্চ মোদতে
মমৈতাংশ্চতুরঃ প্রশ্নান্ কথয়িত্বা জলং পিব।।’’

অস্যার্থঃ।
কিবা বার্ত্তা, কি আশ্চর্য্য, পথ বলি কারে।
কোন্ জন সুখী হয় এই চরাচরে।।
পাণ্ডুপুত্র আমার যে এই প্রশ্ন চারি।
উত্তর করিয়া তুমি পান কর বারি।।
ক্রোধে ভীম বলে, আগে করি জলপান।
পশ্চাতে করিব তব উত্তর প্রদান।।
তৃষ্ণায় আকুল ভীম, অহঙ্কার মনে।
জলস্পর্শ মাত্র বীর মরে সেইক্ষণে।।