১১৭তম অধ্যায়
পরশুরামের পৃথিবী-নিঃক্ষত্রিয়করণ
রাম কহিলেন, “হা তাত! কার্ত্তবীৰ্য্য-পুত্রেরা মুখ ও ক্ষুদ্রাশয়, তাহারা মৎকৃত অপরাধে জাতক্ৰোধ হইয়া অরণ্যমধ্যে নিশিত শরপ্ৰহারে মৃগের ন্যায় আপনার প্রাণসংহার করিয়াছে; আপনি নিরপরাধ, ধর্ম্মজ্ঞ ও সৎপথাবলম্বী; আপনার পক্ষে এবংবিধ মৃত্যু নিতান্ত বিসদৃশ হইয়াছে। আপনি তপোনিরত বৃদ্ধা বলিয়া যুদ্ধে একান্ত পরাঙ্মুখ ছিলেন, এই অবসরে শত্ৰুগণ শাণিত শরশতদ্বারা আপনার প্রাণনাশ করিয়া প্রচুর পাপসঞ্চয় করিয়াছে সন্দেহ নাই। সেই নির্লজ্জেরা সমর-পরাঙ্মুখে তপস্বী ব্যক্তিকে বিনাশ করিয়া সচিব ও সজ্জন-সমক্ষে কি বলিবে?”
পরশুরাম এইরূপ নানাপ্রকার বিলাপ ও পরিতাপ করিয়া পরিশেষে পিতার প্ৰেতকাৰ্য্য সম্পন্ন করিলেন। তিনি প্রজ্জ্বলিত অনলমধ্যে তদীয় মৃতদেহ দাহ করিয়া ক্ষত্ৰিয়কুল নির্মূল করিবার নিমিত্ত প্ৰতিজ্ঞারাঢ় হইলেন এবং একাকী শস্ত্রগ্রহণপূর্ব্বক করাল কৃতান্তের ন্যায় ক্ৰোধাভরে রণস্থলে কার্ত্তবীৰ্য্য-পুত্রদিগের প্ৰাণসংহার করিলেন; তৎপরে তাহাদিগের অনুগত ক্ষত্ৰিয়গণকে বিনাশ করিতে লাগিলেন। ভৃগুকুলতিলক রাম এইরূপে ক্রমশঃ পৃথিবীকে একবিংশতিবার নিঃক্ষত্রিয়া করিয়া সমস্তপঞ্চক-তীর্থে রুধিরময় পঞ্চহ্রদ প্রস্তুত করিয়া তথায় পিতৃলোকের তর্পণ করিলেন। ইত্যবসরে তদীয় পূর্ব্বপিতামহ ঋচীক তথায় আবির্ভূত হইয়া রামকে অভিলষিত বর প্রদান করিলেন। তৎপরে তিনি যজ্ঞদ্বারা দেবরাজ ইন্দ্রের তৃপ্তিসাধনপূর্ব্বক ঋত্বিকগণকে ভূমিদান করিতে লাগিলেন এবং মহর্ষি কশ্যপকে দশ-ব্যাম-আয়তা ও নয়ব্যাম-উচ্ছ্রিতা এক সুবৰ্ণময়ী বেদী প্ৰদান করিলেন। ব্রাহ্মণগণ কশ্যপের আদেশানুসারে ঐ বেদীকে খণ্ড খণ্ড করিয়া গ্ৰহণ করিলেন; এই নিমিত্ত তদবধি তাঁহারা খাণ্ডবায়ননামে বিখ্যাত হইলেন। এক্ষণে পরশুরাম মহর্ষি কশ্যপকে ভূমিদান করিয়া শৈলেন্দ্ৰ মহেন্দ্ৰ-পৰ্ব্বতে বাস করিতেছেন। হে মহারাজ! ক্ষত্ৰিয়গণের সহিত রামের এইরূপে বৈরভাব জন্মে ও তিনি এইরূপেই পৃথিবী জয় করিয়াছিলেন।
অনন্তর পরশুরাম পূর্ব্বকৃত নিয়মানুসারে চতুর্দ্দশীতে বিপ্ৰগণ ও সানুজ ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠিরের সহিত সাক্ষাৎ করিলেন। রাজা যুধিষ্ঠির ভ্রাতৃগণ-সমভিব্যাহারে তাঁহার অর্চনা করিয়া ব্রাহ্মণগণের সৎকার করিতে লাগিলেন। তৎপরে রামকর্ত্তৃক প্ৰপূজিত হইয়া তদীয় নির্দেশানুসারে মহেন্দ্ৰ-পর্ব্বতে একরাত্রি বাস করিয়া দক্ষিণাভিমুখে যাত্ৰা করিলেন।