যোড়শাধিকশততম অধ্যায়
দুর্য্যোধন-ভগিনী দুঃশলার জন্ম
জনমেজয় কহিলেন, হে মহর্ষে! ধৃতরাষ্ট্রের পুৎত্রগণের জন্মবৃত্তান্ত সবিশেষ শ্রবণ করিলাম, কিন্তু আপনি কহিলেন, গান্ধারীর গর্ভে শত পুৎত্র ও এক কন্যা জন্মে; তন্মধ্যে শত পুৎত্র মহর্ষি বেদব্যাসের বরে জন্মিল। কিন্তু কন্যাটি কিরূপে জন্মিল, বিশেষ কহিলেন না। অমিততেজাঃ মহর্ষি গান্ধারী-প্রসূত মাংসপেশী শতখণ্ডে বিভক্ত করিয়াছিলেন এবং গান্ধারীও আর কখন গর্ভধারণ করেন নাই, তবে কি প্রকারে দুঃশলা-নাম্নী শতাধিকা কন্যার জন্ম হইল? শ্রবণার্থ অতিশয় কৌতুক জন্মিয়াছে, মহাশয়! বর্ণনা করুন।
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! উত্তম প্রশ্ন করিয়াছেন, শ্রবণ করুন। মহাতপাঃ ভগবান্ ব্যাস শীতল জলসেচন দ্বারা সেই মাংসপেশীকে এক এক ভাগ করিলেন। ধাত্রী সেই সকল ভাগ লইয়া একে একে এক এক ঘৃতকুম্ভমধ্যে রাখিতে লাগিল। সেই সময়ে গান্ধারী মনে মনে চিন্তা করিলেন, ”মহর্ষিবাক্য কখনই মিথ্যা হইবার নহে, অবশ্যই আমার একশত পুৎত্র হইবে। কিন্তু যদি আমার এক কন্যা জন্মিত, তাহা হইলে পরম পরিতোষের বিষয় হইত, আমার প্রতি দৌহিত্রজনিত লোক প্রাপ্ত হইতেন, আমিও পুৎত্র ও দৌহিত্র লইয়া সুখ-স্বচ্ছন্দে সংসারযাত্রা নির্ব্বাহ করিয়া কৃতকৃত্য হইতাম। আমি যদি কখন তপস্যা, দান, হোম বা গুরুজনসেবা করিয়া থাকি, তাহা হইলে সেই পুণ্যবলে যেন আমার এক কন্যা হয়।” গান্ধারী এইরূপ চিন্তা করিতেছেন, এমত সময়ে মহর্ষি ব্যাস তাঁহার আন্তরিক ভাব বুঝিয়া সেই সকল ভাগ গণনা করিয়া দেখিলেন, শতাপেক্ষায় এক ভাগ অধিক হইয়াছে। তখন তিনি গান্ধারীকে কহিলেন, বৎস! এই শত ভাগ তোমার শত পুৎত্ররূপে পরিণত হইবে; আর এই যে এক ভাগ অবশিষ্ট রহিল, ইহাতে তুমি এক কন্যাও উৎপন্ন দেখিবে এবং তাহার গর্ভে যে পুৎত্র জন্মিবে, তদ্দ্বারা তোমাদের দৌহিত্রজনিত-লোক-প্রাপ্তি হইবে।” এই বলিয়া মহর্ষি আর এক ঘৃতপুর্ণ কুম্ভ আনাইয়া তন্মধ্যে সেই কন্যা-ভাগ রক্ষা করিলেন। হে মহারাজ! এই দুঃশলার জন্মবৃত্তান্ত কথিত হইল, কি বর্ণন করিতে হইবে বলুন।