১১৬তম অধ্যায়
দিবোদাসের নিকট দ্বিশত অশ্বসংগ্ৰহ
“মহর্ষি গালব পথিমধ্যে মাধবীকে কহিলেন, “ভদ্রে! মহাবীর ভীমসেনানন্দন দিবোদাস কাশীর অধীশ্বর; আমরা তাঁহারই নিকট গমন করিতেছি; অতএব শোক পরিত্যাগ করিয়া মন্দ মন্দ [ধীরে ধীরে] আগমন কর। রাজা দিবোদাস অতি ধার্মিক, সংযমী ও সত্যপরায়ণ।” দ্বিজশ্রেষ্ঠ গালব এই কহিয়া কাশীরাজ দিবোদাসসমীপে সমুপস্থিত হইলেন এবং তথায় ন্যায়ানুসারে সৎকারলাভ করিয়া পূর্ব্ববৎ পুত্রোৎপত্তির নিমিত্ত মাধবীকে পরিগ্রহ করিতে তাঁহাকে অনুরোধ করিলেন।
“দিবোদাস কহিলেন, “হে দ্বিজা! আপনার অধিক বলিবার আবশ্যকতা নাই; আমি ইহা পূর্ব্বেই শ্রবণ করিয়াছি এবং ইহাকে লাভ করিবার নিমিত্ত সমুৎসুক হইয়াছি। আমার ইহা অত্যন্ত সম্মানের বিষয় যে, আপনি অন্যান্য রাজাকে পরিত্যাগ করিয়া আমার নিকটে সমাগত হইয়াছেন, ইহা ভবিতব্যতার [অবশ্যম্ভবনীয়তার] কর্ম্ম সন্দেহ নাই। আমার আপনার অভিলষিত দুইশত অশ্বের সম্পত্তি আছে; অতএব আমিও ইহার গর্ভে একমাত্ৰ অপত্য উৎপাদনা করিব।” দ্বিজশ্রেষ্ঠ গালব ‘তথাস্তু’ বলিয়া তাঁহাকে সেই কন্যা প্ৰদান করিলেন।
“রাজা দিবোদাসও বিধিপূর্ব্বক মাধবীকে পরিগ্রহ করিলেন। যেমন প্রভাকর প্রভাবতীর, হুতাশন স্বাহার, পুরন্দর ইন্দ্রণীর, চন্দ্র রোহিণীর, যমরাজ ঊর্মিলার, বরুণদেব গৌরীর, ধনেশ্বর ঋদ্ধির, নারায়ণ লক্ষ্মীর, সাগর জাহ্নবীর, রুদ্র রুদ্রাণীর, ব্ৰহ্মা ব্ৰহ্মাণীর, বশিষ্ট অদৃশ্যন্তীর, বশিষ্ট [ইনি স্বনামখ্যাত বশিষ্ঠ নহেন-অন্য বশিষ্ঠ] অক্ষমালার, চ্যবন সুকন্যার, পুলস্ত্য সন্ধ্যার, অগস্ত্য বৈদভীর, সত্যবান সাবিত্রীর, ভৃগু পুলোমার, কশ্যপ অদিতির, আর্চীক রেণুকার, কৌশিক হৈমবতীর, বৃহস্পতি তারার, শুক্ৰ শতপর্ব্বর, ভূমিপতি ভূমির, পুরুরবা উর্ব্বশীর, ঋচীক সত্যবতীর, মনু সরস্বতীর, দুষ্মন্ত শকুন্তলার, সনাতন ধর্ম্মধৃতির, নল দময়ন্তীর, নারদ সত্যবতীর, জরৎকারু জরৎকারুর, পুলস্ত্য প্রতীচীর, ঊর্ণায়ু মেনকার, তুম্বুরু রম্ভার, বাসুকি শতশীর্ষকার, ধনঞ্জয় কুমারীর, রামচন্দ্র জানকীর ও জনাৰ্দন রুক্সিণীর সহিত প্ৰণয়বন্ধন করিয়াছিলেন, সেইরূপ রাজা দিবোদাস মাধবীর প্রতি অনুরক্ত হইয়া তাহার গর্ভে প্রতর্দননামে এক পুত্র উৎপাদন করিলেন।
“অনন্তর ভগবান গালব যথাসময়ে রাজা দিবোদাসের সমীপে আগমন করিয়া কহিলেন, “মহারাজ! এক্ষণে মাধবীকে প্রত্যপণ করুন এবং যতদিন শুক্লার্থী হইয়া আমাকে অন্যত্র গমন করিতে হয়, ততদিন তুরঙ্গসকল আপনার নিকট ন্যস্ত থাকুক।”
“তখন সত্যবাদী ধর্ম্মাত্মা দিবোদাস গালবের হস্তে মাধবীকে প্ৰত্যপণ করিলেন [মাধবী প্রত্যপণের কথা আছে, অশ্বদানের স্পষ্ট উক্তি নাই; কিন্তু অশ্বদানের প্রতিশ্রুতির পর সত্যবাদী বিশেষণ থাকায় বুঝিতে হইবে, অশ্ব দিয়াছিলেন]।”