১১৫তম অধ্যায়
রাজ্যের উন্নতিকারক নীতি
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “পিতামহ! আপনি বহুদর্শী ও আমাদিগের কুলের উন্নতিসাধক। আপনি দুরাত্মাদিগের দুৰ্ব্বাক্য-দোষসমুদয় কীৰ্ত্তন করিলেন। এক্ষণে আর কয়েকটি বিষয়ে আমার যে সন্দেহ আছে, তাহাও আপনাকে ভঞ্জন করিতে হইবে। কিরূপে পুত্র পৌত্রগণের সন্তোষ ও রাজ্যের উন্নতিসাধন, বংশের সুখবৃদ্ধি, ভবিষ্যৎ ও বর্ত্তমানে মঙ্গললাভ এবং অন্নপানাদি দ্বারা শরীরের স্বাস্থ্যসাধন করা যায়? নরপতি রাজ্যে অভিষিক্ত ও মিত্রগণে পরিবেষ্টিত হইয়া কিরূপে প্রজাবর্গের মনোরঞ্জন করিবেন? যিক্তি অজিতেন্দ্রিয়তা ও অনুরাগবশতঃ অসজ্জনের সেবায় অনুরক্ত হইয়া কুলক্রমাগত ভৃত্যগণকে প্রকোপিত করেন তিনি সুখলাভে সমর্থ হয়েন কি না? আর ভৃত্যবিহীন হইয়া একাকী কখন রাজ্যশাসন করিতে পারেন না; অতএব কিরূপে কুলশীলসম্পন্ন ভৃত্যগণকে লইয়া রাজকাৰ্য্য নির্ব্বাহ করিতে হইবে? হে পিতামহ! আপনি বৃহস্পতি সদৃশ ধীশক্তিসম্পন্ন; অতএব দুৰ্জ্জেয় রাজধৰ্ম্মকীৰ্ত্তন দ্বারা আমার এই সকল সন্দেহ ভঞ্জন করুন। আপনি আমাদিগের বংশের হিতসাধনে তৎপর ও ধর্ম্মোপদেষ্টা; মহাত্মা বিদুরও সতত আমাদিগকে ধর্ম্মোপদেশ প্রদান করিয়া থাকেন। এক্ষণে আপনার নিকট বংশ ও রাজ্যের হিতকর কথা শ্রবণে পরিতৃপ্ত হইয়া চিরকাল পরমসুখে নিদ্রানুভব করিতে পারিব।”।
ভীষ্ম কহিলেন, “ধৰ্ম্মরাজ! রাজা একাকী কখন রাজ্যশাসন করিতে সমর্থ হয়েন না। সহায়বল ভিন্ন কোন ব্যক্তিই অর্থলাভ করিতে পারেন না। যদিও কথঞ্চিৎ অর্থলাভ করিতে পারেন, তাহা হইলে তাহা রক্ষা করা তাঁহার পক্ষে নিতান্ত সুকঠিন হয়। যাঁহার ভৃত্যগণ জ্ঞানবৃদ্ধ, হিতৈষী, সৎকুলসম্ভূত ও স্নিগ্ধস্বভাব, যাঁহার অমাত্যগণ সর্ব্বদা নিকটে অবস্থান, সদুপদেশ প্রদান, কালাকাল বিবেচনা ও ভাবী বিষয়ের সংঘটন করে এবং অতীত বিষয়ের জন্য অনুতাপিত ও উৎকোচাদি দ্বারা অন্যের বশীভূত না হয়, যাঁহার সহায়গণ সমসুখদুঃখ, সত্যবাদী, হিতকারী ও অর্থ-চিন্তায় তৎপর এবং যাঁহার জনপদমধ্যে প্রজাগণ নীচাশয়ত্ব পরিত্যাগ ও সৎপথাবলম্বনপূৰ্ব্বক পরমসুখে কালযাপন করে, তিনিই যথার্থ রাজ্যসুখসম্ভোগ করিতে পারেন। যাঁহার ধনাগার ও ধান্যাদিরক্ষার স্থান সতত কোষবর্দ্ধনতৎপর বিশ্বস্ত লোককর্ত্তৃক সুরক্ষিত হয়, তিনি অচিরাৎ সমৃদ্ধিশালী হয়েন। যাঁহার নগরে অর্থিপ্রত্যর্থীর [সকল শ্রেণীর প্রার্থীর] বিচার যথার্থরূপে হইয়া থাকে এবং যিনি রাজধৰ্ম্মে পারদর্শিতা লাভ ও মানবগণকে আপনার বশে আনয়নপূৰ্ব্বক সন্ধিবিগ্রহাদি ষড়্বর্গের অনুষ্ঠান করেন, তাঁহারই ধৰ্ম্মফলভোগ হইয়া থাকে।”