চতুর্দ্দশাধিকশততম অধ্যায়
পাণ্ডুর বনবিহার
বৈশম্পায়ন কহিলেন,পাণ্ডু হস্তিনাপুরে গমন করিয়া স্ববাহুবলবিজিত ধন দ্বারা ভীষ্ম, সত্যবতী, মাতা কৌশল্যা ও বিদুরকে সন্তুষ্ট করিলেন। ইন্দ্রাণী যেমন জয়ন্তকে আলিঙ্গন করিয়া আহ্লাদিত হন, কৌশল্যা অপ্রতিমতেজাঃ পুৎত্র পাণ্ডুকে আলিঙ্গন করিয়া ততোধিক আনন্দিত হইল। রাজা ধৃতরাষ্ট্র মহাবীর পাণ্ডুর প্রভাবে বহুদক্ষিণ শত শত অশ্বমেধযজ্ঞ নির্ব্বাহ করিলেন।
কিয়দ্দিন অতীত হইলে মহারাজ পাণ্ডু সুরম্য হর্ম্ম্য ও বিচিত্র শয়নীয় সমুদয় ত্যাগ করিয়া পত্নীদ্বয় সঙ্গে বনবিহার-বাসনায় বনপ্রস্থান করিলেন, তথায় সর্ব্বদা মৃগয়ানুষ্ঠান করিয়া প্রিয়তমাদের সহিত পরমসুখে কালযাপন করিতে লাগিলেন। কখন হিমালয়ের দক্ষিণপার্শ্ববর্ত্তী উপত্যকায় [পর্ব্বতের নিম্নদেশ] গমন করিতেন, কখন গিরিপৃষ্ঠে সুখসঞ্চার করিয়া পরিতৃপ্ত হইতেন, কখন কখন বা মহাশালবনে অবস্থিতি করিতেন। করেণু [হস্তিনী] দ্বয়ের মধ্যবর্ত্তী হইলে গজরাজ ঐরাবত যেরূপ শোভিত হয়, পত্নীদ্বয় সঙ্গে থাকায় বনচর নৃপবর পাণ্ডু সেইরূপ শোভিত হইয়াছিলেন। বনবাসিগণ ভার্য্যাদ্বয়-সমবেত, খড়্গহস্ত, ধনুর্ব্বাণধারী, বিচিত্র-কবচযুক্ত, অস্ত্রকোবিদ [অস্ত্রবিদ্যায় নিপুণ] পাণ্ডুকে দেবতা বলিয়া জ্ঞান করিত। তাঁহার যখন যাহা আবশ্যক হইত, ধৃতরাষ্ট্র-প্রেরিত ভৃত্যগণ তৎক্ষণাৎ তাহা সম্পাদন করিত। এইরূপে পাণ্ডু-মহীপাল প্রণয়িনীদ্বয়-সমভিব্যাহারে পরম-সুখে কাননমধ্যে বাস করিতে লাগিলেন।
এদিকে শান্তনুনন্দন ভীষ্ম মহীপতি দেবকের পরমসুন্দরী যুবতী পারশবী তনয়াকে আনয়নপূর্ব্বক বিদুরের সহিত বিবাহ দিলেন। বিদুর তাঁহার গর্ভে স্বসদৃশ বিনয়সম্পন্ন পুৎত্রগণ উৎপাদন করিলেন।