১১৩তম অধ্যায়
বিনয়-নম্রের নিরাপত্তা—বেত্র-নদীসাগরকথা
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “পিতামহ! সহায়হীন রাজা দুর্ল্লভ রাজ্য লাভ করিয়া প্রবল শত্রুর সহিত কিরূপ ব্যবহার করিবেন, তাহা কীৰ্ত্তন করুন।”
ভীষ্ম কহিলেন, “ধৰ্ম্মরাজ! আমি এই উপলক্ষে সাগর ও নদীগণের সংবাদনামক পুরাতন ইতিহাস কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর। পূৰ্ব্বকালে দানবগণের আশ্রয়ভূত নদীনাথ সমুদ্র সংশয়যুক্ত হইয়া নদীগণকে কহিয়াছিলেন, ‘হে স্রোতস্বতীগণ! তোমরা প্রবাহদ্বারা অসংখ্য বৃহৎ বৃহৎ বৃক্ষকে মূল শাখার সহিত উন্মূলিত করিয়া আনয়ন করিতেছ, কিন্তু তোমাদিগকে কদাপি একটিও বেতস আনয়ন করিতে দেখি নাই, ইহার কারণ কি? তোমাদিগের কূলসম্ভূত বেতসসকল অসার ও অল্পাকার বলিয়া কি তোমরা ঐ সমুদয়কে অবজ্ঞা কর অথবা উহারা তোমাদিগের কোন কাৰ্য্যসাধন করে বলিয়া উহাদের উন্মূলনে বিরত হও? যাহা হউক, এক্ষণে তোমরা কি নিমিত্ত একবারও বেতস আনয়ন কর না, তাহা আমার নিকটে প্রকাশ কর। তখন ভাগীরথী সদর্থসম্পন্ন যুক্তিসঙ্গত বাক্যে সাগরকে কহিলেন, নাথ! অন্যান্য পাদপগণ এক স্থানে স্তব্ধভাবে থাকিয়া আমাদিগের প্রতিকূলতাচরণ করে, কিন্তু বেতসেরা সেরূপ নহে। তাহারা নদীবেগ সমাগত দেখিবামাত্র অবনত হয় এবং প্রবাহ অতিক্রম হইলেই স্বস্থানে অবস্থান করিয়া থাকে। আমরা উহাদিগকে কালজ্ঞ, সঙ্কেতজ্ঞ, বশ্য, অনুদ্ধত ও অনুকূল বলিয়া উন্মূলিত করি না। ফলতঃ যে সকল ওষধি, পাদপ ও গুল্ম বায়ু বা জলের বেগে অবনত হয়, তাহাদিগকে উন্মূলিত হইতে হয় না।’
“হে ধৰ্ম্মরাজ! যে ব্যক্তি ঐরূপ প্রবল শত্রুর তেজোহ্রাস হইবার সময় পৰ্য্যন্ত অপেক্ষা না করিয়া উহা অসহ্য জ্ঞান করে, তাহার অচিরাৎ বিনাশলাভ হইয়া থাকে। প্রাজ্ঞ লোকেরা আপনাদিগের ও শত্রুগণের সার, অসার ও বলবীৰ্য্য বিবেচনা করিয়া কাৰ্য্য করেন বলিয়াই তাঁহাদিগকে অবসন্ন হইতে হয় না। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পণ্ডিত ব্যক্তিরা শত্রুকে পরাক্রান্ত দেখিলেই তাঁহার নিকট বেতসের ন্যায় নম্র হইবেন।”