চেঁচিয়ে উঠল মুসা।
ছুটে এল ব্রড। কি হয়েছে? চেঁচাও কেন?
ব্যাগটা সাপটার ওপর ছুঁড়ে মারল কিশোর। বলল, সাপ!
কি?
সাপ ঢুকিয়ে দিয়েছে আমার ব্যাগে।
ঝনঝন আওয়াজটা শুনতে পাচ্ছে ব্রড। তাড়াতাড়ি একটা লাঠি কুড়িয়ে এনে ব্যাগ তুলে সাপটাকে মারতে লাগল। তারপর জিজ্ঞেস করল, ঢুকল কি করে?
কি হয়েছে? এত চেঁচামেচি কিসের? ঘোড়াগুলোকে যেখানে বাঁধা হয়েছে, সেখানে শুয়েছিল লুক, পাহারা দেয়ার জন্যে। দৌড়ে এল।
কিশোরের স্লীপিং ব্যাগে সাপ।
অবাক মনে হলো লুককে। সাপ? কে ঢোকাল? এটা কি ধরনের রসিকতা?
যেন দোষটা কিশোরেরই, সে-ই ঢুকিয়েছে। কে ঢুকিয়েছে কি করে বলব? ব্যাগটা সরিয়ে নিয়েছে, তারপর সাপ ঢুকিয়ে ওখানে ফেলে রেখেছে।
অসম্ভব…
আর একটা মিনিটও আমি থাকছি না এখানে! পেছন থেকে বলে উঠল মিসেস ব্যানার। র্যাঞ্চে ফিরে যাব।
এত রাতে? লুক বলল, কে নিয়ে যাবে?
তার আমি কি জানি? আমি থাকব না। তুমি র্যাঞ্চের ফোরম্যান, মেহমানদের দেখাশোনা করা তোমার দায়িত্ব। আমি কোন কথা শুনতে চাই না, এই জঙ্গল। থেকে বেরোতে চাই।
বেশ, লুক বলল, যেতে আপত্তি নেই আমার। তবে যে ভয়ে আপনি যেতে চাইছেন, বনের ভেতর দিয়ে এখন যাওয়ার সময় এরকম ভয় অনেক পড়বে পথে। আরও বড় বড় ভয়ও আছে। পুরো দুটো ঘণ্টা লাগবে বন থেকে বেরোতেই। ভেবে দেখুন, থাকবেন, না যাবেন?
ঢোক গিলল মিসেস ব্যানার। ভয়ে ভয়ে তাকাল চারপাশের বনের দিকে। চাঁদের আলো আছে বটে, কিন্তু গাছপালার ভেতরে প্রচুর ছায়া। বোধহয় ভূতের ভয়েই গায়ে কাটা দিল তার। কাঁপা গলায় বলল, ঠিক আছে, কষ্ট আর দিলাম না তোমাকে। থেকেই যাই।
অনেকেই উঠে এসেছে। সবাইকে বলল লুক, আবার ব্যাগে ঢোকার আগে। ভাল করে দেখে নেবেন। একটা যখন ঢুকছে আরও ঢুকতে পারে।
টর্চ জ্বেলে ভাল করে যার যার ব্যাগ দেখে নিতে লাগল সবাই। কারও ব্যাগেই কিছু নেই। থাকবে কি, এইমাত্র বেরিয়ে এসেছে ওরা ভেতর থেকে।
রবিন আর কিশোরের মাঝখানে শুয়ে চোখ মুদল কিশোর। ঘুমানোর চেষ্টা করল। কিন্তু আসতে চাইছে না ঘুম। মাথার মধ্যে ঘুরছে অসংখ্য প্রশ্ন। কে রাখল সাপটা? ব্রড? নাকি বেনি? এত লোকের চোখ এড়িয়ে কিভাবে রাখল? কখন?
.
পরদিন সকালে আর নতুন কিছু ঘটল না। নাস্তা সেরে র্যাঞ্চে ফিরে চলল দলটা।
মুসা, রবিন আর কিশোর ঘোড়া নিয়ে কাছাকাছি রইল। মুসা বলল, নদীটায় গোসল করার ইচ্ছে ছিল। চলো না, ফিরেই যাই। একাই র্যাঞ্চে ফিরতে পারব। আমরা।
কিশোর বলল, পরে। অনেক সময় পাবে গোসলের। আগে ইউনিকর্নকে খুঁজে বের করতে হবে। মনে হচ্ছে, সমস্ত চাবিকাঠি রয়েছে ব্রডের কাছে।
র্যাঞ্চে ফিরে ঘোড়া রেখে ঘরে ফিরে এল তিন গোয়েন্দা, গোসল করে পরিষ্কার হওয়ার জন্যে। হারনি পাইকের ব্যাপারে খোঁজ নিতে যেতে চায় কিশোর, বলল সেকথা। রবিন বলল, তাহলে সে-ও যাবে শহরে। লাইব্রেরিটা দেখার জন্যে।
মুসাও ওদের সঙ্গে যেতে চাইল। কিন্তু কেরোলিনের অনুরোধে তাকে সাহায্য করার জন্যে থেকে যেতে হল ওকে।
লিলির পিকআপটা চেয়ে নিল কিশোর। ভয়ে ভয়ে গাড়িতে উঠল সে আর রবিন। তবে এবার আর কোন অসুবিধে হলো না। গাড়িটাকে নষ্ট করার জন্যে কোন কৌশল করে রাখেনি কেউ।
ছোট শহরের প্রধান রাস্তাটার পাশেই পাকা বাড়িটা। সামনের পার্কিং লটে গাড়ি রাখল কিশোর।
রবিন বলল, আমি ভেবেছিলাম হারনি পাইকের ওপর থেকে সন্দেহ চলে গেছে তোমার।
শিওর হয়ে নিতে তো আপত্তি নেই, গাড়ির চাবি পকেটে রাখতে রাখতে বলল কিশোর। আমার ধারণা, ব্রড কোনভাবে জড়িত আছেই। আরও অনেকে থাকতে পারে, আর পাইকের যেহেতু মোটিভ আছে, তারও থাকার সম্ভাবনাটা উড়িয়ে দেয়া যায় না। লুকের ভাবসাব দেখে তো তাকেও সন্দেহ হয়। তবে তার কোন মোটিভ খুঁজে পাই না।
এয়ার কণ্ডিশন করা লাইব্রেরি। পুরানো সংবাদপত্র আর মাইক্রোফিল্ম করা খবর ঘেঁটে ঘেঁটে পাইকের সম্পর্কে অনেক কথা জানতে পারল ওরা। বেশ কয়েকটা আর্টিকেল করা হয়েছে তাকে নিয়ে। মনটানার উন্নতি কিভাবে করতে চায় সে, সে কথা ফলাও করে লেখা হয়েছে যতভাবে সম্ভব। তবে পড়েটড়ে মনে হল লোকটা মোটামুটি পরিষ্কার। বদনাম নেই। কিছু লোকে অবশ্য পছন্দ করে না, এটা ঠিক।
আবার সেই দেয়াল, চোখের নিচে ডলতে ডলতে বলল রবিন। এগোনোর পথ বন্ধ।
মনে তো হচ্ছে, কিশোর বলল। তবে নিজে গিয়ে কিছু না করলেও টাকা খাইয়ে অন্যকে দিয়ে করাতে পারে। ইউনিকর্নকে চুরি করাতে পারে, গাড়িটা উড়িয়ে দিতে পারে, আমার ব্যাগে সাপ ঢুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে পারে।
ব্রডকে দিয়ে?
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। কিংবা ওরকম অন্য কেউ। তবে দুজনকে একসাথে দেখিনি একবারও, সেজন্যেই ঠিক মেলাতে পারছি না। ধাতব ফাইল কেবিনেটে মাইক্রোফিলুগুলো আবার রেখে দিল সে। চিন্তাগুলো জট পাকিয়ে রয়েছে মাথায়, ছাড়াতে পারছে না। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল একবার। পাইককে বাদ দিয়ে দিলে নিরেককেও দিতে হয়। তাহলে বাকি থাকে ব্রড আর বেনি।
ওরা দুজন একসাথে করছে এসব ভাবছ?
করতেই পারে। দুটো বইয়ের তাকের মাঝখান দিয়ে এগোতে এগোতে থমকে দাঁড়াল কিশোর। এক মিনিট, বলে এস লেখা একটা ভলিউম টেনে বের করল।
কি চাইছ?
কাল রাতের সাপটার কথা মনে নেই? পাতা ওল্টাতে লাগল কিশোর।
সে কি আর ভুলি নাকি?
ওটার ব্যাপারেই খচখচ করছে মনে।
রবিনও তাকাল বইটার দিকে।
র্যাটল স্নেক খুঁজে বের করল কিশোর। অনেক জাতের রয়েছে, বিড়বিড় করে পড়ল সে, ডায়মণ্ড ব্যাক, টিম্বার স্নেক, সাইডউইণ্ডার। একই প্রজাতির সাপের মধ্যেও আবার পুব অঞ্চল আর পশ্চিম অঞ্চলের সাপে তফাত রয়েছে।
যাই হোক, রবিন বলল, আমাদের ইনি এসেছিলেন একটা রাজ পরিবার থেকে।
চকচক করছে কিশোরের চোখের তারা। দুদিকে চাপ দিয়ে ঝটাৎ করে বন্ধ করল বইটা। বুঝলাম!
বলে ফেলো, শুনি?
আমাদের সাপটা এই অঞ্চলের নয়, রবিন। মনে পড়ে, কিভাবে পাশে লাফ দিয়ে দিয়ে চলছিল? ওটা মরুভূমির সাপ! রবিনের চোখে চোখে তাকাল কিশোর, মিস্টি ক্যানিয়নে মরুভূমি নেই।
ভুরু ওপরে উঠে গেল রবিনের। বেশ, ধরলাম এটা একটা সূত্র। কিন্তু তাতে কি?
এখুনি কিছু বলতে পারছি না। তবে জবাবটা বের করতে হবে। লাইব্রেরির শীতল পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসতেই গায়ে ঝাঁপটা মারল যেন গরম। গাড়িতে উঠল ওরা। ঠিক মিলছে না, বুঝলে। ঘোড়ার ওপর যথেষ্ট মায়া ব্রডের। সে জেনেশুনে ইউনিকর্ন কিংবা হারিকেনের ক্ষতি করবে, এটা বিশ্বাস হয় না।
ফিরে চলল দুজনে। একটা মোড়ের কাছে এসে ডাবল সির দিকে না গিয়ে আরেক দিকে ঘুরল কিশোর।
এই, কোথায় যাচ্ছ? রবিনের প্রশ্ন।
বেনি কুপারের সঙ্গে কথা বলতে।
বলবে?
দেখাই যাক না। না গেলে জানব কি করে?
ডাবল সির সঙ্গে কুপার র্যাঞ্চের অনেক পার্থক্য। প্রথমটা রাত হলে এটা দিন, এতটাই অন্য রকম। সমস্ত বাড়ি নতুন রঙ করা। মূল বাড়িটা ধবধবে সাদা, অন্যগুলো রেডউড কাঠের রঙ। বিকেলের রোদে ঝলমল করছে। থাম আর জানালার খড়খড়ি সব সবুজ রঙের।
জায়গা বটে, মৃদু শিস দিতে লাগল রবিন।
চত্বরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক গাছ। ওগুলোর ছায়ায় কাজ করছে। শ্রমিকেরা। মেহমানরা ঘোরাফেরা করছে। বাচ্চারা খেলছে, হাসছে। মুরগীর রোস্টের গন্ধে খিদের কথা মনে পড়ে গেল কিশোরের।
বাপরে বাপ! গাড়ি থেকে নামতে নামতে রবিন বলল, এরকম জায়গা ছেড়ে লিলির ফকিরা র্যাঞ্চে কেন থাকতে যাবে লোকে?
মূল বাড়ির সদর দরজায় গিয়ে বেল বাজাল কিশোর। খুলে দিল রুক্ষ হচেহারার ধূসরচুল এক পঞ্চাশ বছর বয়েসী মহিলা। নিজের পরিচয় দিল এলিনা কুপার বলে, বেনির ফুফু। দরজা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে। জিজ্ঞেস করল, কি চাই?
বেনির সঙ্গে কথা বলব, কিশোর বলল।
ওর বন্ধু, নাকি ভক্ত?
আসলে, আমরা ডাবল সির মেহমান। ইউনিকর্নকে খুঁজে বের করতে আমাদের অনুরোধ করেছে লিলি।
ঘোড়াটা পালিয়েছে শুনছি, ঠোঁট বাঁকাল মহিলা। হবেই এরকম। ওরকম একটা পাগলা ঘোড়া কি আর আটকে থাকে বেশিদিন। কিন্তু বেনিকে কেন? ও তো কিছু জানে না। ঘড়ি দেখল এলিনা। চলে আসবে।
কোথায় গেছে?
তীক্ষ দৃষ্টিতে কিশোরের মুখের দিকে তাকাল মহিলা। প্র্যাকটিস করতে। আলাদা নিরালা জায়গায় গিয়ে করে সে। র্যাঞ্চের গণ্ডগোল পছন্দ করে না। ইচ্ছে নেই তবু যেন জোর করেই বলল, চাইলে ভেতরে বসতে পারো?
বেনির আব্বার সঙ্গে কথা বলা যাবে?
ভ্রূকুটি করল এলিনা। শহরে গিয়েছিল, এল কিনা বলতে পারছি না। এক কাজ কর। অনেক হ্যাণ্ড আছে, ওদের কারও কাছে খোঁজ নাও।
থ্যাংকস, বলে কিশোর সরে আসার আগেই তার মুখের ওপর দরজাটা লাগিয়ে দিল মহিলা।
অল্প বয়েসী একটা স্ট্যাবল বয়কে ধরল দুই গোয়েন্দা। বেড়া মেরামত করছে। বেনির আব্বার কথা কিশোর জিজ্ঞেস করলে সে হাত তুলে লম্বা, নিচু চালাওয়ালা। একটা বাড়ি দেখিয়ে বলল, চিড়িয়াখানায় আছে।
চিড়িয়াখানা? রবিনের প্রশ্ন।
হ্যাঁ, সাপখোপ পোষে তো, ছেলেটা বলল। তোমরা শোনোনি? যেতে চাইলে যাও, তবে বাইরে থাকবে। আজ যেন কেউ না ঢোকে মানা করে দিয়েছেন। মিস্টার কুপার।
চট করে রবিনের দিকে তাকাল কিশোর। আবার ছেলেটার দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করল, কেন?
হাত ওল্টাল ছেলেটা, জানি না। ফোরম্যান আমাদেরকে জানিয়ে দিল, শুনলাম, ব্যস। তোমরা ঘরে গিয়ে বস। মিস্টার কুপার বেরোলে আমি বলব।
আচ্ছা।
রবিনকে নিয়ে র্যাঞ্চ হাউসে ফিরে যাওয়ার ভান করল কিশোর। যেই ছেলেটা আরেক দিকে ফিরল অমনি লুকিয়ে পড়ল একটা বাড়ির আড়ালে। তারপর বেড়ার আড়ালে আড়ালে দুজনে এগিয়ে চলল চিড়িয়াখানার দিকে।
মরুভূমির র্যাটলম্নেক নিশ্চয় রাখে না এখানে, কি বলো? রবিনের দিকে তাকিয়ে বলল বটে কিশোর, কিন্তু প্রশ্নটা করেছে নিজেকেই।
চলো, গেলেই দেখতে পাব।
আস্তে করে ঠেলা দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ল কিশোর। পেছনে রবিন। এগিয়ে চলল কাচের বাক্সগুলোর পাশ দিয়ে। বিচিত্র সব প্রাণী ওগুলোর ভেতরে। সাপ, শিংওয়ালা ব্যাঙ, গিরগিটি, কচ্ছপ আর মরুভূমির কয়েক ধরনের ইঁদুর জাতীয় জীব। পেছনে আচমকা হিসহিস শব্দ হতেই থমকে দাঁড়িয়ে গেল কিশোর। দেখল, ছোট একটা গিলা মনস্টার তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে।
এই, দেখে যাও, হাত তুলে ডাকল রবিন। একটা কাচের বাক্স দেখাল। খালি। ভেতরে কে বাস করত নেমপ্লেট দেখেই বোঝা যায়। মরুভূমির একটা র্যাটলম্নেক।
খুলে গেল দরজা। দড়াম করে গিয়ে বাড়ি লাগল দেয়ালে। রেগে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন কুপার, যাও, ভাগ! লাল হয়ে গেছে মুখ। কে ঢুকতে বলেছে? একটা সাপ ছুটে গেছে, কখন কামড়ে দেয়…
আমি জানি, শান্তকণ্ঠে জবাব দিল কিশোর। কাল রাতে আমার স্লীপিং ব্যাগের ভেতরে পেয়েছি ওটাকে।
হাঁ হয়ে গেলেন কুপার। এই সময় কিশোরের নজরে পড়ল তার কোমরের বেল্টে রূপার বাকলস, হারিকেনের স্টলের বাইরে যে জিনিস দিয়ে বাড়ি মারা হয়েছিল তাকে, সে রকম। জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় পেয়েছ?
ক্যাম্পিঙে গিয়ে কিভাবে সাপটাকে পেয়েছে কিশোর, সব খুলে বলল, কেবল বাদ রাখল ব্রডের সঙ্গে বেনির গোপন সাক্ষাৎকারের কথাটা।
চুপ করে সব শুনলেন কুপার। সন্দেহ যাচ্ছে না। জিজ্ঞেস করলেন, সত্যিই পেয়েছ? রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছলেন তিনি।
পেয়েছি।
ঘাড় লাল হয়ে গেছে কুপারের। তোমার ব্যাগে গেল কি করে?
নিশ্চয় কেউ নিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এমন কেউ, সাপ নাড়াচাড়া করার অভ্যাস আছে যার।
দ্বিধায় পড়ে গেলেন কুপার। জবাব দিতে অস্বস্তি বোধ করছেন। তাহলে আর কে হবে? আমার র্যাঞ্চের অনেকেই সাপ নাড়াচাড়া করে। কিন্তু প্রতিটা লোককে চোখ বুজে বিশ্বাস করতে পারি আমি। ব্রড় যাওয়ার পর থেকে সামান্যতম গোলমালও হয়নি আর।
ব্রড জেসনের কথা বলছেন?
শক্ত হয়ে গেল কুপারের চোয়াল। ওটা একটা ক্রিমিন্যাল। চাকরি থেকে বের করে দিয়েছিলাম তো, প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ খুঁজছে। আমার যাতে দোষ হয়, সেজন্যে নিয়ে গিয়ে সাপ ঢুকিয়ে দিয়েছে ডাবল সির মেহমানের ব্যাগে।
অনেকেই তাহলে সাপ নাড়াচাড়া করে এখানে? কুপারের চোখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে রবিন।
করেই তো। সাপে কামড়ালে কি করতে হয় তা-ও জানে। জানতে হয়, কারণ র্যাটলের বিষ মারাত্মক।
কয়েক দিনের মধ্যে এখানে ঢুকেছিল ব্রড? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
মাথা খারাপ! কালো হয়ে গেল কুপারের মুখ। এখানে আর তাকে পা রাখতে দিই আমি। নিলে চুরি করে নিয়েছে।
শুনেছি আপনার মেয়ে বেনির সঙ্গে তার খাতির ছিল। এখনও আছে?
আরে দূর! যখনই বুঝে গেছে ব্যাটা একটা চোর, অমনি সরে এসেছে। ব্রডটা। তো ওর সঙ্গে খাতির করেছে সম্পত্তির লোভে, জানে তো, সবই একদিন বেনির হবে। লাভ হল না। ওরকম একটা চোরের জন্যে কোন দুর্বলতা থাকতে পারে না। বেনির। তাছাড়া এখন ওসব মন দেয়ানেয়ার সময়ও নেই ওর। রোডিও নিয়ে। ব্যস্ত। জিততে পারলে অনেক সুবিধে। বিজ্ঞাপন এমনকি ছবিতে অভিনয় করারও সুযোগ পাবে, একটা জাতীয় রোডিও সফরে যেতে পারবে।
তার মানে জেতাটা তার জন্যে খুব জরুরী, বিড়বিড় করল কিশোর।
খুবই। ওর জীবনই বদলে দেবে এটা, গর্বের সাথে বললেন কুপার। রবিন আর কিশোরকে নিয়ে চললেন বাইরে। পশ্চিমের পাহাড়ের ওপরে যেন ঝুলে রয়েছে সূর্যটা, তাকালেন সেদিকে। ভাবছি, এখনই যাব ডাবল সিতে। সাপের দাম চাইতে। দেখি, লুক বোলান কি বলে?
কিছু বলল না রবিন কিংবা কিশোর। সাপের দাম চাইবেন কি চাইবেন না সেটা কুপারের সমস্যা। ওরা এগোল পিকআপের দিকে।
তাহলে বোঝা যাচ্ছে ব্রডই আমাদের লোক, নিচু স্বরে বলল রবিন।
হয়তো।
গাড়িতে উঠে ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে রওনা হলো কিশোর। খোয়া বিছানো পথ থেকে বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, এক বোতল কোক খেলে কেমন হয়?
চমৎকার।
গলা শুকিয়ে গেছে দুজনেরই। কাজেই ডেরিক লংম্যানের দোকানে এসে দুই বোতল কোক কিনল। গলা ভিজিয়ে নিয়ে ফিরে চলল ডাবল সিতে।
কিশোর বলল, ব্রড যদি সত্যিই বেনিকে চায়, তাহলে জিততে সাহায্য করবে। কেন? জিতলে তো চলে যাবে বেনি, হারাবে তাকে ব্রড।
তাতে কি? মনের মিল থাকলেই হয়। ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে পড়বে ব্রডও, চলে যাবে বেনির সাথে। ভালই হবে। কুপারের আওতা থেকে সরে যেতে পারবে। এমনও হতে পারে, বেনি গিয়ে তার সাহায্য চেয়েছে। ব্যস, সাহায্য করছে সে। কিশোরের দিকে তাকাল রবিন, হয় না এরকম?
হাসল কিশোর, হয়।
ডাবল সিতে ঢোকার মুখে কুপারের গাড়িটা বেরোতে দেখল ওরা। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হাত নাড়লেন তিনি। তবে হাসি নেই, মুখ কাল করে রেখেছেন।
নিশ্চয় ভাল কিছু হয়নি? রবিনের প্রশ্ন।
মনে তো হচ্ছে না, সামনের রাস্তার দিকে তাকিয়ে জবাব দিল কিশোর। সে ও গাড়িটা পার্ক করল, ডিনারের ঘন্টাও বাজল।
উফ, খিদে যে পেয়েছে বুঝতেই পারিনি, রবিন বলল।
আমিও না।
র্যাঞ্চ হাউসের দিকে এগোল দুজনে। সিঁড়ি দিয়ে উঠছে এই সময় দরজা খুলে ছুটে বেরোল মুসা। রক্ত সরে গেছে মুখ থেকে। চেঁচিয়ে উঠল, তোমরা এলে! ইউনিকর্ন! ইউনিকর্ন!