সকাল নটাতেই পুলিশ এসে হাজির। ডেপুটি কমিশনার অশেষ দত্ত সিদ্ধার্থকে দেখে বললেন, আপনাকে আগে কোথায় দেখেছি বলুন তো? চেনা চেনা লাগছে!
সিদ্ধার্থ বলল, কাকাবাবুর বাড়িতে দেখেছেন। সেখানে একদিন আপনার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল।
অশেষ দত্ত বললেন, দ্যাটস রাইট। কাকাবাবু আপনার খুব প্রংশসা করেছিলেন। একবার কাশ্মীরে আপনি খুব সাহায্য করেছিলেন ওঁকে। কাকাবাবু কোথায়? তিনি খবর পাননি?
সিদ্ধার্থ বলল, আগে আমরা ওঁকে কিছু বলিনি। আজই একটু আগে ফোন করতে গিয়ে জানা গেল, উনি কলকাতায় নেই। কোথায় গিয়েছেন, কেউ জানে না।
অশেষ দত্ত বললেন, আপনারা পুলিশেও তো আগে খবর দেননি।
অমিতাভ বললেন, ওরা বারণ করেছে। ওরা ভয় দেখিয়েছে যে, পুলিশকে জানালে বিল্টুর ক্ষতি হবে। আচ্ছা মিস্টার দত্ত, এখন কী হবে বলুন তো?
অশেষ দত্ত বললেন, অনেক কিডন্যাপিং কেসের কথা জানি। কিন্তু আপনাদের মতো এমন পিকিউলিয়ার কেসের কথা কখনও শুনিনি!
অমিতাভ বললেন, ছেলেটাকে চুরি করে নিয়ে গিয়ে টাকা চাইল। অত টাকা! আমাদের পক্ষে জোগাড় করা কি সহজ কথা? যাই হোক, যথাসর্বস্ব খুইয়ে তো টাকাটা জোগাড় করা হল। ওদের কথামতো দিয়েও দেওয়া হল। কিন্তু আমার ছেলেকে ফেরত পাওয়া গেল না।
সিদ্ধার্থ বলল, তার বদলে পেলাম অন্য একটা ছেলেকে!
অশেষ দত্ত বললেন, এ ছেলেটির বাবা খুব বড়লোক। ছেলেকে ফেরত পাওয়ার পর সব কথা শুনে হয়তো আপনাদের টাকাটা দিয়ে দেবেন।
অমিতাভ জোর দিয়ে বলে উঠলেন, সে টাকা পেয়েই বা আমাদের লাভ কী? আমরা বিন্দুকে ফেরত পাব কী করে?
অশেষ দত্ত বললেন, আমাদের দিক থেকে আমরা তাকে উদ্ধার করার যথাসাধ্য চেষ্টা করব। যদি পশ্চিমবঙ্গের বাইরে কোথাও লুকিয়ে রেখে থাকে, তা হলে খুঁজে বের করতে একটু মুশকিল হবে। আমরা সব স্টেটকেই জানিয়ে দিচ্ছি। ওরা আর ফোনটোন করেনি?
সিদ্ধার্থ বলল, নাঃ, কোনও সাড়াশব্দ নেই!
অশেষ দত্ত বললেন, চলুন, একবার পরমজিৎকে দেখি।
পরমজিৎ রিনির ঘরে বসে ছবি আঁকা শিখছে। তার ছবি আঁকার একেবারেই হাত নেই।
রিনি মাত্র কয়েকটা টানে এক-একজন মানুষের মুখ এঁকে ফেলছে দেখে সে খুব অবাক! রিনি পরমজিতেরও একটা সুন্দর ছবি এঁকে দিয়েছে।
অশেষ দত্ত একটুক্ষণ দাঁড়িয়ে সেই সব ছবি দেখে বললেন, বাঃ! তোমার ভাই ছবি এঁকে অল ইন্ডিয়া ফার্স্ট প্রাইজ পেয়েছে শুনলাম। তোমরা ভাইবোন দুজনেই ছবি আঁকো?
রিনি বলল, আমার মা-ও ছবি আঁকতে পারেন।
অশেষ দত্ত বললেন, আর্টিস্ট ফ্যামিলি!
রিনি জিজ্ঞেস করল, আপনি আমার ভাইকে এনে দিতে পারবেন তো? এই শনিবার তাকে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার কথা।
অশেষ দত্ত বললেন, আই শ্যাল ট্রাই মাই বেস্ট। নাউ মাস্টার সিংহ, লেট আস গো।
পরমজিৎ জিজ্ঞেস করল, হোয়্যার?
অশেষ দত্ত বললেন, পুলিশ স্টেশন। বড় থানায়।
পরমজিৎ বলল, কেন, আমি থানায় যাব কেন?
অশেষ দত্ত বললেন, তোমার বাবা আসবেন, থানা থেকে তোমায় নিয়ে যাবেন। উনি বিকেলের মধ্যেই এসে পড়বেন প্লেনে।
পরমজিৎ বলল, আমি থানায় যাব না। আমি এখানে থাকব।
রিনি বলল, আমার ভাইকে ফেরত না পেলে আমরাও ওকে ছাড়ব না!
অশেষ দত্ত বললেন, এ তো বড় মুশকিল হল!
রিনি বলল, কেন, আমি অন্যায় কিছু বলেছি?
অশেষ দত্ত বললেন, না, তুমি অন্যায় কিছু বলোনি। কিন্তু পুলিশের নিয়ম হচ্ছে, হারিয়ে যাওয়া কারও খবর পেলেই তাকে নিজেদের কাছে নিয়ে রাখতে হয়।
সিদ্ধার্থ বলল, থানায় চোর-ডাকাতদের মধ্যে বসিয়ে রাখার চেয়ে আমাদের এখানে ওর থাকাটাই কি ভাল নয়? ও নিজেও তো তাই। চাইছে।
অশেষ দত্ত চিন্তিতভাবে বললেন, না, চোর-ডাকাতদের সঙ্গে নয়। আমার ঘরেই ওকে বসিয়ে রাখতে পারি। অবশ্য, আমার ঘরে অতক্ষণ একটা ছোট ছেলের ভাল লাগবে কেন? আপনাদের এখানে থাকলে…যদি কেউ এখান থেকে ওকে আবার চুরি করে নিয়ে যায়? তখন ওর বাবার কাছে কী কৈফিয়ত দেব?
সিদ্ধার্থ বলল, বাড়ির মধ্যে ঢুকে কে চুরি করে নিয়ে যাবে?
অশেষ দত্ত বললেন, বলা যায় না। ঠিক আছে, ছেলেটা এখানেই থাক। বাড়ির সামনে দুজন পুলিশকে পাহারায় রেখে যাচ্ছি। ছেলেটাকে নিয়ে একদম বাইরে যাবেন না। ওর বাবা এসে পৌঁছোন, তারপর অন্য ব্যবস্থা করা যাবে।
সিদ্ধার্থ বলল, এর মধ্যে যদি ওরা ফোন করে? যদি বলে, পরমজিৎকে কোনও একটা জায়গায় রেখে এলে ওরা বিলুকে ফেরত দেবে? তখন আমরা কী করব?
অশেষ দত্ত বললেন, তখনই আমাদের জানাবেন।
সিদ্ধার্থ বলল, যদি ওরা বিন্দুকে মেরে ফেলার ভয় দেখায়?
রিনি বলল, আমরা বিন্দুকে চাই। কিন্তু পরমজিৎকেও কোনও বিপদের মুখে ফেলতে চাই না। তা হলে কী করা যায় বলুন?
অশেষ দত্ত বললেন, এখনই কিছু বলতে পারছি না। ওরা ফোন করে কী বলে, আগে সেটা দেখা যাক। যদি বিল্টুর বদলে পরমজিৎকে ফেরত চায়, তা হলে খানিকটা সময় চেয়ে নেবেন। বলবেন, দিনের বেলা তো পুলিশের সামনে দিয়ে পরমজিৎকে বের করা যাবে না। বরং ভোর রাতে…
একটু থেমে গিয়ে অশেষ দত্ত বললেন, ইস, এই সময় যদি কাকাবাবুর সাহায্য পাওয়া যেত! তিনি নিশ্চয়ই একটা উপায় বের করতেন!