১০. শ্রীরাধিকা বলিতেছেন,—কৃষ্ণ আমার স্বয়ং ভগবান

শ্রীরাধিকা বলিতেছেন,—কৃষ্ণ আমার স্বয়ং ভগবান

শুনি বাণী, কমলিনী, কোমল বাক্যে কন।
ননদিনি ! ব্রহ্ম তিনি, তোর পক্ষে নন । ৯০
আমার, শ্যাম যদি সামান্য হবে, কেন তার বংশিরবে,
কুলবতী রইতে নারে ঘরে ।
উৰ্দ্ধমুখে ধেনু রয়, যমুনা উজান বয়,
কেন তার বাঁশের বাঁশীর স্বরে । ৯১
করি, শিশুকালে স্তনপান, পূতনার বধে প্রাণ,
ব্যক্ত গুণ ত্রিভুবনে জানে।
কালীয় করি দমন, রাখালের রাখে জীবন,
কালী-দহে বিষজল-পানে । ৯২
ননদি ! মোর কৃষ্ণধন, করে ধরি গোবৰ্দ্ধন,
সব বৃন্দাবন বাঁচাইল । *
কে তারে চিনিতে পারে, মায়া করি যশোদারে,
বদনে ব্রহ্মাও দেখাইল । ৯৩
বলিলে, গোধন চরায়, রাখালের উচ্ছিষ্ট খায়
শ্ৰেষ্ঠ তায় বল মাত্র মিছে !
ওগো ননদি । সে ভগবান, তার কাছে মান অপমান,
সুখ দুঃখ তুল্য তার কাছে । ৯৪
চিনবে কি শ্যাম কালো-রূপে, পড়েছ মায়া-অন্ধকূপে
লোমকূপে ত্রিভুবন যার ।
রাজ্যপদ গোচারণ, কিবা পঙ্ক কি চন্দন,
বৈকুণ্ঠ পাতাল তুল্য তাঁর । ৯৫
সে যে সংসারের সার, সংসার সকলি তাঁর,
সুখ দুঃখ সব তাঁর সৃষ্টি ।
করে আমার প্রাণকৃষ্ণ, আপন হইতে শ্রেষ্ঠ,
ননদি গো ! যারে কৃপাদৃষ্টি । ৯৬
সে যারে দিয়াছে মান, সেই ধন্য মান্যমান,
তার মানে মান্য হয় বিধি ।
এ কথা নয় অপ্রমাণ, কৃষ্ণের বাড়াবে মান,
এত মান কার আছে, ননদি । ৯৭ ৷
করিল ভক্তের দায়, নন্দের বাধা মাথায়,
কর তায় এইজন্য সন্দ।
ননদি গো ! তোরে বলি, ভক্তিতে বাঁধিল বলি,
ভক্তাধীন আমার গোবিন্দ। ৯৮
গোলোকপুরী পরিহরি, গোকুলে বিছরে হরি,
চিন্তামণি সকলে চিনিলে।
ননদি ! তোর একি কৰ্ম্ম, ধিক্ ধিক্ ধিক্ জন্ম !
হাতে রত্ব পেয়ে স্থারাইলে ॥ ৯৯
———————

ঝিঁঝিট খাম্বাজ – যৎ !

ওগো ননদি ! তুই কেবল চিন্‌লিনে আমার কৃষ্ণধন।
কিন্তু জগজ্জনে জানে, কৃষ্ণ জগতের জীবন ॥
ননদি ! তোমার প্রতি, বিমুখ কৈকুণ্ঠপতি,
সমুদ্রে বাস ক’রে কি তোর, পিপাসায় মরণ ।
সাধে ষায় শঙ্কর বিধি, ননদি ! মোর কৃষ্ণনিধি,
দুস্তর ভবজলধি,–নিস্তার-কারণ ॥ (চ )

————–
* সব বৃন্দাবন—পাঠান্তর,—রস-বৃন্দাবন।