শমিতা বাড়ি থেকে বের হয়ে কিছুদূর হাঁটতেই একটা ট্যাক্সি পেয়ে গেল। তখন রাত প্রায় দশটা।
ট্যাক্সিওয়ালা শুধায়, কিধার যায়গা মাঈজী?
গড়িয়া চল। শমিতা বললে।
ট্যাক্সিতে উঠেই মনে পড়েছিল বান্ধবী সর্বাণীর কথা। কলেজজীবনে অনেক মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছিল শমিতার, কিন্তু ঘনিষ্ঠতা বলতে বা সত্যিকারের বন্ধুত্ব বলতে একজনের সঙ্গেই গড়ে উঠেছিল–সর্বাণী।
এম, এ ফিফথ ইয়ারে পড়তে পড়তেই সর্বাণীর বিবাহ হয়ে গিয়েছিল।
সর্বাণীর স্বামী শিশিরাংশু একজন অধ্যাপক। শান্তশিষ্ট গোবেচারা মানুষটি। বেঁটেখাটো বোগা। ছোটবেলায় মা-বাপকে হারিয়ে শিশিরাংশু মামা-মামীর কাছেই মানুষ।
দুটো সাবজেক্টে এম. এ পাস। দুটোতেই প্রথম শ্রেণী। কাজেই একটা অধ্যাপনার কাজ জুটিয়ে নিতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি তার।
অধ্যাপনার সঙ্গে সঙ্গে ডক্টরেটের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল শিশিরাংশু।
কম ভাড়ায় বেশ ভোলামেলা চার কামরার ভালো একটা দোতলা বাড়ির একতলাটা গড়িয়ায় পেয়ে শিশিরাংশু সেখানেই উঠে গিয়েছিল ভবানীপুরের ঘিঞ্জি ছোট ঘোট দুটো ঘর ছেড়ে দিয়ে।
দুটি বাচ্চা–একটি ছেলে, একটি মেয়ে।
কলেজ, ক্লাব, পাটি, নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে করতে হঠাৎ এক-আধদিন যখন একটা ক্লান্তি আসতো শমিতার–সে চলে যেত সর্বাণীর ওখানে। তিন-চার ঘণ্টা সেখানে কাটিয়ে আসত।
সর্বাণী বলেছে, কি রে, হঠাৎ সূর্য কোন দিকে উঠল?
শমিতা হাসতে হাসতে বলেছে, সূর্যোদয় আজ পর্যন্ত জীবনে কখনও দেখবার সৌভাগ্য হয়েছে বলে মনে পড়ে না, কাজেই আজ যদি অন্য দিকে সূর্য উঠেও থাকে জানতে পারিনি।
তা এভাবে ছুটোছুটি না করে একটা বিয়ে কর না! সর্বাণী বলেছে।
কাকে রে? পাত্র হাতে আছে নাকি তোর? শমিতা বলেছে।
কি রকমটা চাই বল? এখুনি খুঁজে এনে দেব। তোর জন্য আবার পাত্রের অভাব?
বলিস কি? আজকাল কি তুই তাহলে ঘটকীর প্রফেশন নিয়েছিস?
নেব ভাবছি–অন্ততঃ তোর জন্য। সর্বাণী জবাবে বলেছে।
আহা রে–মরে যাই! এমনি না হলে বন্ধু!
তারপর বিবাহের পর একদিন নয়, চার–পাঁচদিন গিয়েছিল শমিতা অমলেন্দুকে নিয়েই সর্বাণীর ওখানে।
সর্বাণী জিজ্ঞাসা করেছে, কেমন লাগছে?
নো থ্রিল। তোর কথা শুনে মধ্যে মধ্যে ভেবেছি, না জানি কি একটা থ্রিল আছে বিবাহিত জীবনের মধ্যে!
বলিস কি?
সত্যি। আমি তো বুঝতে পারি না তোরা কি করে মশগুল হয়ে আছিস!
ন্যাকা!
না ভাই, একবর্ণও মিথ্যে বলছি না।
তাই বুঝি দেখা দিস না?
আগেই বা দেখা কত ঘন ঘন দিতুম যে আজ বিরলা হয়ে উঠেছি!
তারপরই হঠাৎ একদিন সর্বাণী জানতে পেরেছিল শমিতাদের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে। জানতে পেরেছিল সর্বাণী শমিতার একটা চিঠিতেই। শমিতাই লিখেছিল তাকে–
সর্বাণী, ডিভোর্স হয়ে গেল অমলেন্দুর সঙ্গে। দাদার এখানে ফিরে এসেছি। চাকরির একটা সন্ধান করছি। কি রে, চিঠিটা পড়ে তোর খুব অবাক লাগছে তো!
কিন্তু তুই বিশ্বাস করবি কিনা জানি না, সাত-আট মাস বিয়ের পরে যেতে-না-যেতেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম ঐ শাসন আর বিধিনিয়মের বন্ধনের চৌহদ্দির মধ্যে বিশ্রী ক্লান্তিকর একটা একঘেয়েমির মধ্যে থাকা আর যার পক্ষেই সম্ভব হোক আমার পক্ষে সম্ভবপর হবে না। শুধু কি তাই, সর্বক্ষণই যেন একটা সন্দেহের কাঁটা কি কি করে বিঁধছে। তাই ও পাট চুকিয়ে দিলাম। দেখা হলে সবিস্তারে তোকে বলতেই হবে–তখনই শুনিস। এই পত্রে আর লিখলাম না। শুধু সংবাদটা দিলাম–ইতি তোদের
শমিতা সান্যাল
স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল সর্বাণী শমিতার চিঠিটা পড়ে। কোন জবাব দেয়নি সে চিঠির।
তারপর আরও দুটো বছর কেটে গিয়েছে। এই দু বছরে কিন্তু একদিনও দেখা–সাক্ষাৎ আর হয়নি ওদের।
চলন্ত গাড়ির মধ্যে বসে বসে ভাবছিল শমিতা–সেই চিঠির কোন জবাব দেয়নি সবণিী!
সেও অবিশ্যি আর কোন চিঠি দেয়নি। যায়ওনি এই দু বছরের মধ্যে একটি দিনের জন্যে সর্বাণীদের ওখানে।
সর্বাণীদের ওখানে তো সে চলেছে! সর্বাণী তাকে কেমন ভাবে গ্রহণ করবে কে জানে! বিশেষ করে দুই বৎসরেরও অধিক সময় পরে হঠাৎ আজ রাত্রে যাই সে করুক একটা রাত্রির মত আশ্রয় কি সে তাকে দেবে না! দেবে নিশ্চয়ই। কাল সে যা হোক একটা থাকবার ব্যবস্থা করে নিতে পারবে যেখানেই থোক।
প্রায় দশটা চল্লিশ নাগাদ শমিতার ট্যাক্সিটা এসে সর্বাণীদের বাড়ির দরজায় থামল। রাত্রের আহারাদি সর্বাণীদের তখনও হয়নি। শিশিরাংশু তখনও বাইরের ঘরে বসে তার কাগজপত্র নিয়ে কি সব লিখছিল, সর্বাণী ভিতরের ঘরে ছিল।
ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে সুটকেসটা হাতে ঝুলিয়ে কলিং বেলটা টিপতেই কলিং-বেলের শব্দে সর্বাণীই এসে দরজা খুলে দেয়, এবং বলাই বাহুল্য অত রাত্রে এত দিন পরে একটা সুটকেস হাতে দরজার সামনে আবছা আলো-আঁধারিতে হঠাৎ শমিতাকে দেখে সে প্রথমটায় ঠিক চিনে উঠতে পারে না তাকে।
বলে, কে? কণ্ঠে সর্বাণীর একটা সংশয়।
সর্বাণী, আমি শমিতা–বললে শমিতা।
শমিতা! কি ব্যাপার? এত রাত্রে! সর্বাণী যেন কেমন একটু দ্বিধাগ্রস্ত ভাবেই বলে।
সুটকেসটা হাতে ঝুলিয়েই ঘরের মধ্যে পা দিল শমিতা।
কি ব্যাপার? শমিতার দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ের সঙ্গে প্রশ্ন করে সর্বাণী। হাতে সুটকেস, কোথা থেকে আসছিস?
ইতিমধ্যে পাশের ঘর থেকে শিশিরাংশুও উঠে এসেছিল, কে, সবি!
কিন্তু পরক্ষণেই ঘরের আলোয় শমিতাকে দেখে শিশিরাংশুও চিনতে পারে তাকে। বলে, একি শমিতা দেবী, এত রাত্রে?
হ্যাঁ। যাক চিনতে পেরেছেন তাহলে আপনি আমায়! আমার বান্ধবী তো চিনতেই পারেনি। বলতে বলতে শমিতা হাতের সুটকেসটা একপাশে নামিয়ে রেখে একটা বেতের সোফার উপর বসে পড়ে বলে, শোন্ সর্বাণী, আজ রাতটা তোর এখানে আমি থাকতে চাই।
শিশিরাংশু বলে ওঠে, নিশ্চয়ই থাকবেন। আজকের রাতই বা কেন–যত দিন খুশি থাকুন না।
শিশিরাংশু উচ্ছ্বসিত অভ্যর্থনা জানালেও সর্বাণী যেন কেমন স্তব্ধ হয়ে শমিতার মুখের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়েছিল। সে কোন কথাই বলে না। তার চোখে-মুখে অভ্যর্থনার কোন
আনন্দই নেই যেন। শমিতার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ব্যাপারটা এড়ায় না।
তাই সে একটু হেসে সর্বাণীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে, আজকের রাতটা ভাই, কাল সকালেই চলে যাব।
শিশিরাংশুই আবার বলে, আপনি এত কিন্তু-কিন্তু করছেন কেন শমিতা দেবী?
কিন্তু বেশী কিছু আর বলতে পারে না শিশিরাংশু, হঠাৎ তার স্ত্রীর মুখের দিকে নজর পড়ায়। একটু যেন বিব্রতই বোধ করে–বলে,সবি, ওকে তোমার ঘরে নিয়ে যাও। আমার সামান্য দেরি আছে।
শিশিরাংশু ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
শমিতা বললে, আমি বোধ হয় হঠাৎ এভাবে এই রাত্রে তোর এখানে এসে পড়ে তোকে একটু বিব্রত করলাম সর্বাণী, তাই না?
কোথা থেকে আসছিস? এতক্ষণে সর্বাণী আবার কথা বলে।
দাদার বাড়ি থেকে চলে এলাম।
চলে এলি মানে?
সে-সব অনেক কথা। দু’কথায় শেষ হবে না। দাদার ওখান থেকে বের হয়ে কোথায় যাই এত রাত্রে ভাবতে গিয়ে তোর কথাই মনে পড়ল তাই সোজা তোর এখানেই চলে এলাম।
অবিশ্যি কাল সকালেই চলে যাব।
চল ঐ ঘরে। বলে শমিতাকে নিয়ে পাশের ঘরে এসে সর্বাণী ঢুকল।
একটা আরাম–কেদারায় শমিতা বসল।
দাদার সঙ্গে ঝগড়া করেছিস? সর্বাণী আবার জিজ্ঞেস করে।
না রে।
তবে?
প্লীজ সর্বাণী, এখন কোন কথা নয়। পরে তোকে সব বলব।
সর্বাণী আর কোন প্রশ্ন করে না। কেমন যেন একটু অন্যমনস্ক ভাবে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে।
একজন সোফায় বসে, অন্যজন অল্প দূরে দাঁড়িয়ে। কারো মুখেই আর যেন কথা নেই। ওদের দেখে মনে হয় কেউ যেন আর বলার মত কিছু খুঁজে পাচ্ছে না।
যদিও দুজনেই মনে মনে চাইছিল একজন কেউ বলুক যা দুজনেই শুনতে চায়। অথচ দুজনের মধ্যে কি গভীর বন্ধুত্বই না ছিল একসময়!
মাত্র মাঝখানে দুটো বছরের অদর্শন। সময়টা কি এতই দীর্ঘ যে তাদের উভয়কে ঘিরে যে উত্তাপটা দুজনের মনের মধ্যে একসময় ছিল সেটা একেবারেই মিইয়ে গিয়েছে!
সর্বাণী।
স্তব্ধতা ভঙ্গ করে ডাকল শমিতাই অবশেষে, কারণ সে সত্যিই যেন বেশ অস্বস্তি বোধ করছিল।
কিছু বলছিলি? সর্বাণী বান্ধবীর দিকে মুখ তুলে তাকাল।
মনে হচ্ছে তোকে খুব অসুবিধায় ফেললাম, তাই না রে! কথাটা বলে সর্বাণীর মুখের দিকে চেয়ে শমিতা হাসবার চেষ্টা করে।
না, অসুবিধা কি? কথাটা যেন নেহাৎ সৌজন্যের খাতিরেই বলার মত করে বললে সর্বাণী।
তা ফেলেছি বৈকি। সত্যি, আমি ভেবেছিলাম–যাক গে, শুধু আজকে রাতটা তোদের বাইরের ঘরে সোফাটার উপরে বসেই আমি কাটিয়ে দিতে পারব। আমি ঐ ঘরেই যাচ্ছি, বুঝলি?
শমিতা উঠে দাঁড়াল সুটকেসটা হাতে নিয়ে এবং ধীরে ধীরে সত্যি–সত্যিই একটু আগে যে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছিল সেই ঘরের দিকেই পা বাড়াল।
তোকে ব্যস্ত হতে হবে না শমিতা। এক রাত্রের জন্য ব্যবস্থা হয়েই যাবে একটা। তুই বস।
শমিতা সর্বাণীর দিকে ফিরে তাকিয়ে বললে, না রে, কিছু অসুবিধা হবে না আমার সত্যিই। তুই ব্যস্ত হোস না।
শমিতা পাশের ঘরটার মধ্যে চলে গেল। ঘরটার মধ্যে তখনও আলো জ্বলছিল। শমিতা একটু আগে যে সোফাটার উপর বসেছিল সেই সোফাটার উপরেই এসে বসল দরজাটা টেনে দিয়ে।
সর্বাণী তখনও পাশের ঘরে দাঁড়িয়ে আছে।
রটা ঘোট। একধারে একটি ডাইনিং টেবিল–তার পাশে ছোট একটা ফ্রিজ।
খানচারেক চেয়ার আর ক্যাম্বিসের একটা আরামকেদারা। ঐ ঘরেরই সংলগ্ন একদিকে বাথরুম, অন্যদিকে কিচেন।
সামনে পাশাপাশি দুটো শোবার ঘর। একটাতে সর্বাণী তার মেয়েছেলেদের নিয়ে শোয়, অন্যটায় শিশিরাংশু শোয়।
খুশি হয়নি আদৌ সর্বাণী অত রাত্রে শমিতার আকস্মিক আবির্ভাবে। তার কারণও ছিল। শমিতা কথা বলছিল আর মুখ থেকে যে গন্ধটা বেরুচ্ছিল সেটা যে মদের গন্ধ সর্বাণীর সেটা বুঝতে দেরি হয়নি।
দুই বন্ধুর মধ্যে দেখাশুনা না হলেও ইদানীং দুই বৎসর সর্বাণী মধ্যে মধ্যে শমিতার বর্তমান উচ্ছল জীবনের খবর পেত এর-ওর মুখ থেকে। এবং শমিতা যে ক্লাবে ও হোটেলে গিয়ে পুরুষ-বন্ধুদের নিয়ে হৈচৈ করে মদ্যপান করে–খবরটা দিয়েছিল কিছুদিন আগে তারই আর এক বান্ধবী রমলা।
রমলা ঐ শ্রেণীর মেয়ে না হলেও, তার বড় চাকুরে স্বামী ও তার বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মধ্যে মধ্যে হোটেলে যেত ডিনার খেতে।
সে-ই দেখেছিল শমিতাকে।
বলেছিল, লেখাপড়ায় অত ভাল মেয়েটা, তার যে এতদূর অধঃপতন ঘটেছে ভাবতে পারিনি সর্বাণী। যেমন বিশ্রী পোশাক তেমনি নোংরা চালচলন। বরাবরই ও অবিশ্যি একটু চপল ও উচ্ছল প্রকৃতির ছিল।
সত্যি বলছিস? সর্বাণী শুধিয়েছিল। নিজের চোখেই যে দেখলাম রে! তাছাড়া কি এক ক্লাব করেছে মরালী সঙ্ঘ না কি–সেখানে শুনেছি একগাদা পুরুষ-মেয়ে জুটে মাঝরাত্তির পর্যন্ত বেলেল্লাপনা করে। আমার স্বামী সুহৃদ কি বলছিল জানিস?
কি?
ও একটা বেশ্যা। তা সত্যিই তো, বেশ্যা ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে! এককালে তো তোর সঙ্গে গলায় গলায় ভাব ছিল, আসে না এখানে?
না।
ছিঃ ছিঃ, ডিভোর্স করে স্বামীটাকে ছেড়ে এসে একটা স্বৈরিণীর জীবনযাপন করছে! ঐজন্যই বোধ হয় ডিভোর্স করেছে!
সর্বাণী কোন কথা বলেনি।
রমলার কথাগুলোই মনে পড়েছিল সর্বাণীর ঐ মুহূর্তে।
হঠাৎ শিশিরাংশুর কণ্ঠস্বরে সর্বাণীর চমক ভাঙে, কই, তোমার বান্ধবী কোথায় সবি? এক কাজ কর। আমার ঘরটায় ওঁর থাকবার ব্যবস্থা করে দাও বরং। খেয়েদেয়ে এসেছেন কিনা জিজ্ঞাসা করেছিলে?
না।
দেখ যদি না খেয়েদেয়ে এসে থাকেন–কিন্তু কোথায় তিনি?
বাইরের ঘরে।
যাও। দেখ খেয়ে এসেছেন কিনা।
ধীরে ধীরে কিছুটা চাপা গলায় সর্বাণী বললে, বোধ হয় খেয়েদেয়েই এসেছে।
তাহলেও একবার জিজ্ঞাসাটা করা দরকার। যাও।
ভাবছিলাম এক কাজ করলে হয় না? অন্য কথা পাড়ল সর্বাণী স্বামীর কথার জবাব না দিয়ে।
কি?
যে ফোলডিং ক্যাম্প-খাটটা আছে সেটাই বাইরের ঘরে পেতে ওকে শোয়ার ব্যবস্থা করে দিলে হয় না?
না, না–সেটা ভাল দেখাবে না।
কেন? ভাল দেখাবে না কেন?
হাজার হোক তোমার সহপাঠিনী—বান্ধবী।
তাতে কি হয়েছে? কবে কলেজে কটা দিন একসঙ্গে পড়েছিলাম! এমন কি সম্পর্ক–যে কথাটা স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়েই বোধ হয় শেষ করতে পারল না সর্বাণী।
কিন্তু তার গলায় যে চাপা উষ্মটা প্রকাশ পেল সেটা সেই মুহূর্তে শিশিরাংশুর মত লোককেও যেন বিস্মিত করে দিয়েছিল।
সে বলে, আঃ সর্বাণী, কি বলছ তুমি?
ঠিকই বলছি।
আঃ, চুপ কর। থামিয়ে দেয় শিশিরাংশু স্ত্রীকে। যাও, দেখ উনি কি করছেন।
স্বামীর কথায় সর্বাণীও যেন এতক্ষণে খানিকটা সংবিৎ ফিরে পায়। নিজের রূঢ় আচরণে খানিকটা থমকে যায়।
সর্বাণী ভেজানো দরজাটা ঠেলে পাশের ঘরে পা দেয়।