১০. লালাজী
সামারিয়া ঘাট থেকে এসে পৌঁছতে যাত্রীবাহী স্টীমারের দেরি হয়েছিল। ঘাটে দাঁড়িয়ে আমি দেখছিলুম যাত্রীরা নেমে তাড়াতাড়ি ঢালু পাড় বেয়ে বড় লাইনের গাড়িতে উঠেছে। তাদের জন্যে ওটাকে কয়েক মিনিট আটকে রাখবার ব্যবস্থা করেছিলুম।
স্টীমার থেকে সবশেষে নামল একজন রোগা লোক। তার চোখদুটো গভীরভাবে কোটরে বসে গিয়েছে। তার পরনে একপ্রস্থ পোশাক, যা বহুকাল আগে সাদা ছিল, আর হাতে একটি ছোট পুঁটলি,–সেটা রঙিন গামছায় বাঁধা। দেহভার রাখবার জন্যে স্টীমার থেকে নামবার সিঁড়ির রেলিং আঁকড়ে ধরে সে কোনোরকমে ঘাড়ে এসে পড়ল। কিন্তু ঢালু পাড়ের কাছে এসেই সে ফিরে, ধীর দুর্বল পায়ে নদীর ধারে গিয়ে বারবার ভীষণ বমি করতে লাগল।
তারপর, মুখ ধোয়ার জন্যে ঝুঁকে পড়ে সে তার পুঁটলিটা খুলে একখানা চাদর বের করে সেটাকে খুলে বিছিয়ে তার উপর শুয়ে পড়ল। তার পায়ের পাতায় গঙ্গার জল ছলাৎছলাৎ করে লাগতে থাকল। স্পষ্টই বোঝা গেল যে তার গাড়ি ধরবার মতলব নেই, কেননা হুঁশিয়ারি ঘণ্টা বাজল, ইঞ্জিনও শিস দিল, তবু সে নড়ল না, তেমনি চিত হয়ে শুয়ে রইল। আমি যখন তাকে বললুম যে তার ট্রেন চলে গেল, তখন সে বসে-যাওয়া চোখদুটি খুলে আমার দিকে তুলে বললে, ‘সাহেব, আমার আর ট্রেনের দরকার নেই, আমি মরতে বসেছি।’
তখন আমের সময়, বছরের সবচেয়ে গরমের সময় তখন। এই সময়েই কলেরা সবচেয়ে বেশি হয়। নামবার সিঁড়িটার নিচের মাথায় লোকটি যখন আমার পাশ দিয়ে যায়, তখনই আমার সন্দেহ হয়েছিল যে সে কলেরায় ভুগছে। তারপর তাকে সাংঘাতিকভাবে বমি করতে দেখে সে সন্দেহ দৃঢ় হয়েছিল। আমার প্রশ্নের উত্তরে সে বললে যে সে একলাই এসেছে, আর মোকামা ঘাটে তার কেউ নেই।
আমি তাকে দাঁড়াতে সাহায্য করলুম। তারপর গঙ্গা থেকে দুশো গজ দুরে আমার বাংলোতে ধরে-ধরে নিয়ে গেলুম। সেখানে আমার পাঙ্খ-কুলির ঘরে তাকে নিয়ে গিয়ে তার আরামের ব্যবস্থা করে দিলুম। ঘরখানা খালি ছিল, চাকরদের থাকবার ঘরগুলো থেকে একটু তফাতেও ছিল।
আমি তখন দশ বছর হল মোকামা ঘাটে আছি, মস্ত একদল কুলি খাটাই। এদের মধ্যে অনেকে আমার তদারকিতে আমারই দেওয়া বাড়িতে থাকত, আর বাকি সবাই আশপাশের গ্রামে বাস করত। আমি আমার নিজের লোকদের এবং গ্রামবাসীদের মধ্যে যথেষ্ট কলেরা দেখেছি বলে আমার প্রার্থনা ছিল যে আমার যদি কখনও এই ঘৃণিত ও বিশ্রী রোগ হয়, তাহলে যেন কোনো সৎ পরোপকারী ব্যক্তি আমার মাথায় একটি গুলি করেন কিংবা আমাকে বেশি করে আফিম খাইয়ে দেন।
খুব কম লোকই আমার এ কথা মানবে যে প্রতি বছর যে অসংখ্য নোক কলেরায় মারা যায় বলে খবর পাওয়া যায়, তার অন্তত অর্ধেক মরে কলেরায় নয়–ভয়ে।
যারা দীর্ঘকাল বা অল্পকালের জন্যে ভারতে আসেন, তাদের কথা বলছি না, কিন্তু আমরা যারা ভারতে বাস করি, আমরা সবাই অদৃষ্টবাদী। আমরা বিশ্বাস করি যে, কপালে-লেখা মেয়াদ না ফুরোলে কেউ মরে না। তার অর্থ কিন্তু এ নয় যে আমরা বহু ব্যাপক রোগগুলো সম্বন্ধে উদাসীন। কলেরাকে এ দেশে বেজায় ভয়। যখন এ মহামারী রূপে দেখা দেয় তখন যত লোক সত্যিকার রোগে মরে, তত লোকই দারুণ ভয়েও মরে।
আমার পাঙ্খ-কুলির ঘরের লোকটি যে খারাপ রকমের কলেরায় ভুগছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যদি তাকে বাঁচাতে হয়, তাহলে তাকে রক্ষা করতে পারে এক তার মনের জোর, আর দুই, আমার হাতুড়ে চিকিৎসা। কয়েক মাইলের মধ্যে চিকিৎসা-ব্যাপারে সাহায্য পাওয়া যেতে পারত মোটে একটি ডাক্তারের কাছেই।
সে লোকটা হল একটা পশু যেমন হৃদয়হীন তেমনি আনাড়ী। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই যে একদিন না একদিন তার মোটা তেল-চুকচুকে গলাটি কাটবার আনন্দ আমাকেই পেতে হত, যদি না অল্পবয়সী একজন অবেক্ষাধীন কেরানী আমার কাছে কাজ শিখতে এসে সকলের ঘৃণিত এই ডাক্তারটাকে সরিয়ে দেবার একটা কম-নোংরা উপায় বের করত।
আমাদের ভরসাস্থল এই ছোকরা সেই ডাক্তার আর তার স্ত্রীর বিশ্বাসভাজন হয়ে উঠেছিল। স্বামী স্ত্রী দু-জনেই ছিল বেজায় দুশ্চিরিত্র। তারা কেরানীটিকে বিশ্বাস করে বলেছিল যে মোকামা ঘাটে আসবার আগে তারা কত ফুর্তি করত, সেসব সুখের অভাব এখানে তাদের বড়ই মনে লাগে। খবরটি পেয়ে কেরানীটি ভাবতে লাগল।
কয়েক রাত্রি পরে, যখন প্যাসেঞ্জার স্টীমার সামারিয়া ঘাটে যাবার জন্যে ছাড়বার কথা তার একটু আগে, ডাক্তারকে একখানা চিঠি দেওয়া হল। সেটা পড়ে সে তার স্ত্রীকে বলল যে একটা জরুরী কেস-এর জন্যে তার সামারিয়া ঘাটে যাবার ডাক এসেছে, সারারাত সে বাড়িতে থাকবে না। বাড়ি থেকে বেরোবার আগে সে ফিটফাট হয়ে নিল।
বাইরে কেরানীটি তার সঙ্গে দেখা করে খুব গোপনে তাকে একসারি বাড়ির একপ্রান্তে একটা খালি ঘরে নিয়ে গেল। কয়েক রাত্রি আগে আমার একজন পয়েন্টসম্যান সেই ঘরটাতে গ্যাসের বিষক্রিয়ার ফলে মারা গিয়েছিল।
ডাক্তারটা কিছুক্ষণ ওখানে অপেক্ষা করবার পর দরজা খুলে গেল। ঘরটিতে একটিই নিচের দরজা, আর একটিমাত্র গরাদ-দেওয়া জানলা ছিল। ভাল করে ঘোমটা দেওয়া একটি মূর্তি দরজা খুলে ঘরে ঢুকতেই কে যেন দরজাটা টেনে বন্ধ করে বাইরের দিকে তালা লাগিয়ে দিল।
সেই রাত্রে আমি দেরিতে মাল-গুদামগুলোর ভিতর দিয়ে আসতে আসতে শুনতে পেলাম যে সেই কেরানীটি রাত্রের ডিউটি বদল করতে এসে যার ডিউটি ফুরোল তার সঙ্গে উত্তেজিতভাবে কথা বলছে।
পরদিন সকালে কাজে যাবার সময় মৃত পয়েন্টম্যানের ঘরের সামনে লোকের ভিড় দেখতে পেলুম। একজন নিতান্ত নিরীহ-দর্শন দর্শকের কাছে শুনলুম যে, ঘরের ভিতর লোক আছে বলে মনে হচ্ছে, অথচ দরজাটাতে বাইরে থেকে তালা লাগানো রয়েছে। আমার সংবাদদাতাকে একটা হাতুড়ি নিয়ে এসে তালাটা ভেঙে ফেলতে বলে আমি তাড়াতাড়ি নিজের নিয়মিত কাজ করতে চলে গেলুম। দরজা ভেঙে খোলা হলে ডাক্তার আর তার বউয়ের যে হেনস্তটা হবে তা হওয়াটা যতই উচিত হ’ক না কেন, আমার সেটা দেখবার ইচ্ছে ছিল না।
আমার সেদিনকার ডায়েরিতে তিনটি কথা লিপিবদ্ধ হয়েছিল : (১) ডাক্তার আর তার স্ত্রী জরুরী ব্যক্তিগত কারণে চলে গেল; (২) অবেক্ষাধীন শিউদেবকে কুড়ি টাকা মাইনেতে টালি ক্লার্ক পদে বহাল করা হল; (৩) প্রকাশ যে, পয়েন্টস্-এর তালার উপর দিয়ে ইঞ্জিন চলে গিয়েছে–সেটার বদলে নতুন তালা দেওয়া হল। একটি সম্মানিত বৃত্তির কলঙ্ক-স্বরূপ এই লোকটাকে মোকামা ঘাটে আর দেখা যায় নি।
রোগা লোকটার শুশ্রূষার জন্যে আমি বেশি সময় দিতে পারি নি, কারণ আমার হাতে এর মধ্যেই তিনটি কলেরা রোগী এসে গিয়েছিল। চাকরদের থেকে সাহায্য পাবার আশা ছিল না।
কারণ একে তো তারা রোগীটির থেকে ভিন্ন জাতের লোক, তার উপর আবার কলেরার ছোঁয়াচ লাগবার ঝুঁকির মধ্যে তাদের টেনে আনা যুক্তিযুক্ত হত না। যাই হক, তাতে কিছু এসে যাচ্ছিল না। রোগীটির মনে এই বিশ্বাস ঢুকিয়ে দিতে পারলেই হত যে আমার চিকিৎসায় সে ভাল হবেই। সেই উদ্দেশ্যে আমি তাকে খুব স্পষ্ট করে বলে দিলুম যে, মরবে বলে আমি তাকে আমার বাড়ির হাতার ভিতরে নিয়ে আসি নি। তাকে নিয়ে এসেছি কষ্ট করে পোড়াবার জন্যে নয়, তাকে সারিয়ে তোলবার জন্যে। আর, সেটা হতে পারে কেবলমাত্র তার সহযোগিতা পাওয়া গেলেই।
প্রথম রাত্রিতে আশঙ্কা হয়েছিল যে আমার এত চেষ্টা সত্ত্বেও সে বুঝি মারা যাবে। কিন্তু সকালের দিকে সে সামলে উঠল, আর তার পর থেকেই তার অবস্থার উন্নতি হতে লাগল। বাকি রইল তার দেহে একটু জোর ফিরে আসা। কলেরা রোগটা অন্য সব রোগের চাইতে তাড়াতাড়ি মানুষের দেহ থেকে শক্তি শুষে নেয়। এক সপ্তাহ বাদে সে আমাকে তার কাহিনী বলতে পারল।
সে একজন লালা। ব্যবসা করত। এক সময়ে তার বেশ জমজমাট একটি শস্যের কারবার ছিল। তারপর সে ভুল করে সম্পূর্ণ অজানা একজন লোককে অংশীদার করে নেয়।
কয়েক বছর ব্যবসায় উন্নতি হতে লাগল, সবই ভাল চলল কিন্তু একবার সে অনেক ঘুরে-টুরে ফিরে এসে দেখল দোকান খালি, তার অংশীদারও পালিয়েছে। সামান্য যে টাকা তার সঙ্গে ছিল তাতে তার ব্যক্তিগত দেনাই শুধু মিটল।
সুনাম নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাকে চাকরি খুঁজতে হল। তার সঙ্গে কারবার ছিল এমন একজন ব্যবসায়ীর কাছে সে চাকরি পেল। তার কাছে সে দশ বছর ধরে সাত টাকা মাইনেতে কাজ করে আসছে। তাতে তার আর তার ছেলের কোনো রকম চলে যায়–অংশীদারের প্রবঞ্চনার অল্পদিন পরেই তার স্ত্রী মারা গিয়েছিল। মনিবের কাজে সে মজফফরপুর থেকে গয়া যাচ্ছিল, পথে ট্রেনেই তার অসুখ হয়ে পড়ে। ফেরি-স্টিমারে উঠে তার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ে। তাই সে পবিত্র গঙ্গাতীরে মরবে বলে কোনোরকমে ডাঙায় নেমে এসেছিল।
লালাজী ছাড়া তার আর কোনো নাম আমি জানতুম না। লালাজী আমার কাছে প্রায় এক মাস রইল। তারপর একদিন সে গয়া চলে যাবে বলে আমার অনুমতি চাইল। তখন আমরা গুদামগুলির মধ্য দিয়ে হাঁটছিলুম। লালাজী ততদিনে যতটা শক্তি পেয়েছিল তাতে আমি কাজে রওনা হলে সে রোজ সকালবেলা আমার সঙ্গে-সঙ্গে খানিকটা হেঁটে যেত।
আমি জিগ্যেস করলুম যে গয়া পৌঁছে যদি সে দেখে যে তার মনিব তার জায়গায় অন্য লোককে নিয়েছে, তখন সে কি করবে। সে বলল যে অন্য চাকরি খুঁজবে।
আমি বললুম, ‘তোমাকে আবার ব্যবসা শুরু করতে সাহায্য করবে, এমন কাউকে দেখ না!’
সে বললে, ‘সাহেব, আবার ব্যবসায়ী হব, আমার ছেলেকে লেখাপড়া শেখাতে পারব, এ ভাবনা আমার মাথায় দিনরাত জ্বলছে। কিন্তু যে সাত টাকা মাইনের একজন চাকর, আর যার জামিন রাখবার কিছু নেই, এমন লোককে নতুন ব্যবসা শুরু করবার জন্যে যে পাঁচশো টাকা দরকার তা ধার দেবে, দুনিয়ায় এমন কেউ নেই।‘
গয়ার গাড়ি ছাড়ত রাত আটটায়। সেদিন সন্ধেবেলা আটটার কিছু আগেই আমি বাংলোয় ফিরে এলুম। দেখি যে লালাজী সদ্য-ধোয়া কাপড়-চোপড় পরে, আর যত বড় পুটলি নিয়ে সে এসেছিল তার চাইতে একটু বড় একটি পুঁটলি হাতে করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে আমার থেকে বিদায় নিয়ে যাবে বলে।
আমি তার হাতে গয়ার একখানা টিকিট আর পাঁচখানা একশো টাকার নোট দিলুম। সেই কয়লার গুঁড়োর ভরা মুখখানার মত এরও মুখে আর রা সরল না। অতি কষ্টে সে একবার তার হাতের নোটগুলোর দিকে, আর একবার আমার মুখের দিকে তাকাবার চেষ্টা সংবরণ করতে লাগল। শেষে যে-ঘন্টা বাজিয়ে জানানো হয় যে ট্রেন পাঁচ মিনিট বাদেই ছাড়বে, সেই ঘণ্টা বেজে উঠল। তখন সে আমার পায়ে তার মাথাটি রেখে বলল, এক বছরের মধ্যে আপনার এই দাস এই টাকা ফিরিয়ে দিয়ে যাবে।’
এইভাবে লালাজী আমার সঞ্চয়ের বেশির ভাগ সঙ্গে নিয়ে আমাকে ছেড়ে চলে গেল। তাকে যে আবার দেখতে পাব এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না, কারণ ভারতের গরিবরা দয়া পেলে তা কখনও ভোলে না। কিন্তু আমার নিশ্চিত ধারণা হল যে, লালাজী যে-প্রতিজ্ঞা করে গেল সেটা রক্ষা করা তার সাধ্যাতীত। কিন্তু এখানে আমার ভুল হয়েছিল।
একদিন সন্ধ্যেবেলা দেরি করে বাড়ি ফিরে এসে দেখি যে ধবধবে সাদা জামাকাপড় পরা একজন লোক বারান্দায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঘরের আলো তার পিছন থেকে এসে আমার চোখে পড়ছিল বলে সে কথা না বলা পর্যন্ত তাকে আমি চিনতে পারি নি।
সে হল লালাজী–নিজে যে মেয়াদ নির্দিষ্ট করে গিয়েছিল তার কয়েকদিন আগেই সে এসেছে। সেই রাত্রে আমার চেয়ারের কাছে মেঝেয় বসে সে তার ব্যবসার বেচা-কেনার কথা আর তার ফলে সাফল্যলাভের কথা আমাকে বলল। কয়েক বস্তা শস্য নিয়ে এবং বস্তা পিছু চার আনা লাভে সন্তুষ্ট থেকে সে কারবার শুরু করে আস্তে-আস্তে, ব্যবসা গড়ে তুলতে থাকে। শেষে সে টন-পিছু তিন টাকা লাভে এক-একবারে ত্রিশ টন পর্যন্ত মালের চালান দিতে থাকে।
তার ছেলে এখন ভাল একটি স্কুলে পড়ছে। এখন তার একটা বউ পুষবার ক্ষমতা হয়েছে বলে সে পাটনার এক ধনী ব্যবসায়ীর মেয়েকে বিয়ে করেছে। এত সব কাণ্ড করতে তার লেগেছে বার মাসের চাইতেও কম সময়। তার ট্রেনের সময় যখন হয়ে এল, তখন সে পাঁচখানা একশো টাকার নোট আমার হাঁটুর উপর রাখল। তারপর পকেট থেকে একটি থলি বের করে সেটা আমার দিকে বাড়িয়ে ধরে সে বললে, ‘আপনি আমাকে যে টাকা ধার দিয়েছিলেন, এটা হল শতকরা পঁচিশ টাকা হিসেবে তার সুদ। এই সাক্ষাৎ থেকে সে যতটা আনন্দ পাবে বলে এসেছিল, আমার বন্ধুদের থেকে সুদ নিই না শুনে সে সেই আনন্দের অর্ধেকটা থেকে বঞ্চিত হল বলেই আমি বিশ্বাস করি।
চলে যাবার আগে লালাজী বললে, ‘যে এক মাস আমি আপনার এখানে ছিলুম, তখন আমি আপনার চাকর-বাকরের আর আপনার কুলিমজুরদের সঙ্গে কথাবার্তায় জেনেছিলুম যে এমন সময় একটা এসেছিল যখন আপনার খাওয়া এসে ঠেকেছিল একখানা চাপাটি আর একটুখানি ডালেতে। পরমেশ্বর না করুন, এমন যদি আবার আসে তাহলে আপনার এই কেনা চাকরের যা কিছু আছে তা সে আপনার পায়ে এনে রাখবে।
এর একুশ বছর বাদে আমি মোকামা ঘাট ছেড়ে চলে আসি। ততদিন ধরে প্রত্যেক বছর আমি লালাজির বাগান থেকে মস্ত এক ঝুড়ি বাছাই করা আম পেতুম। ব্যবসায়ী হবার উচ্চাকাঙ্ক্ষা তার পূর্ণ হয়েছিল তার অংশীদার যখন তাকে ঠকিয়ে যায় তখন সে তার যে-বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিল, আবার তাতে ফিরে গিয়েছিল।