১০. লকেটটার দিকে তাকিয়ে

লকেটটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকমে জিমের মুখের চেহারা অবিশ্বাস্য রকমের বদলে গেল। সে দ্রুত মাথা নাড়তে লাগল, জানি না। জানি না।

তুমি মিথ্যে কথা বলছ।

নো। মিথ্যে বলছি না। তারপর জিম খুব জোরে মাথা নেড়ে বলল, বসকে একটা ফোন করলেই জানতে পারব।

তুমি তোমার বসকে বলবে না আমি এখানে আছি।

ঠিক আছে।

পকেট থেকে ছোট্ট রিসিভার বের করে নাম্বার ডায়াল করল জিম। কয়েক সেকেন্ড বাদে বলল, আমি জিম। বস-এর সঙ্গে কথা বলতে চাই।

ওপাশ থেকে বোধ হয় নেতিবাচক কিছু বলা হয়েছিল, জিম রেগে গেল, ইউ পিপল ডোন্ট নো হোয়াট ইজ হোয়াট। দিস ইজ মি হু গেভ ইনফরমেশন দ্যাট দ্য লকেট হ্যাজ অ্যারাইভড অ্যাট লাস্ট অ্যাট ইউ এস এ। ড়ু ইউ নো? ও, থ্যাঙ্ক ইউ! হ্যালো, ও বস, দিস ইজ জিয়। ডিড ইউ ফাইন্ড জিম? নো! আই হার্ড সামথিং, অ্যাঁ, আই অ্যাম টকিং ফ্রম এ কাফে! ছোঁ মেরে ওর হাত থেকে যন্ত্রটা কেড়ে নিয়ে অফ করে দিল অর্জুন, এমন কথা ছিল না।

মহিলা বললেন, হা, জিম, এখানকার ঠিকানা বসকে না বলার কথা ছিল।

অর্জুন উঠে দাঁড়াল, আমি তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছিলাম, তুমি বিশ্বাসঘাতকতা করার চেষ্টায় ছিলে। এর জন্যে তুমি ঠিক সময়ে শাস্তি পাবে। অর্জুন জামার তলা থেকে লকেট বের করে দেখাল।

সঙ্গে-সঙ্গে টেবিলের ওপর শুয়ে পড়ল জিম, ওঃ নো। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করো। সাপের দেবী আমাকে মেরে ফেলবে। উনি তোমার বুকে আছেন, তোমার কথা শুনবেন।

তা হলে আমাকে সাহায্য করো। লকেটটাকে আবার জামার তলায় ঢুকিয়ে দিল অর্জুন।

কী সাহায্য চাও?

তোমার বুসকে আবার ফোন করে জিজ্ঞেস করো আমার খবর সে পেয়েছে কিনা?

বস নিশ্চয়ই খেপে গেছে। আগেরবার কথা বলতে দাওনি তুমি!

একটা কিছু বানিয়ে বলবে। যন্ত্রটা ফেরত দিল অর্জুন।

আবার জিম নাম্বার টিপল। তার পরের কথাবার্তা এইরকম, হেলো। যা, জিম বলছি। সরি বস। একটা বাজে লোক সামনে এসে গিয়েছিল। হা, সেই লোকটার খবর পেয়েছেন? ওঃ। না তবে শুনলাম আফ্রিকার কোনও একটা ব্যাপার নিয়ে মাডার হবে আজকালের মধ্যে। না, না। আমার কোনও দরকার নেই। আমি কথা বলছি রাস্তা থেকে। এই সময় কাকের ম্যানেজার অথবা মালিক এগিয়ে এসে বললেন, ইয়েস লেডি অ্যান্ড জেন্টলম্যান, আপনাদের কী ড্রিঙ্ক দেব তা যদি অনুগ্রহ করে বলেন?

জিম চট করে অফ করে দিল যন্ত্রটা। তারপর চিৎকার করে বলল, তুমি আর এখানে আসার সময় পেলে না গাধা? এর কথা শুনে বল বুঝে যাবে আমি মিথ্যে কথা বলছি। আর গলা যদি চিনতে পারে! উঃ। এখনই ঠিক খবর নিয়ে নেবে কোত্থেকে ফোন করেছি। চলো কেটে পড়ি। এখানে থাকলে মারা পড়ব আমি। মহিলাকে নিয়ে উঠে দাঁড়াল জিম। তারপর মালিক অথবা ম্যানেজারকে বলল, এই যে, কেউ যদি এসে তোমাকে প্রশ্ন করে জিম এসেছিল কিনা তা হলে বলবে এক মাস দ্যাখোনি। ড়ু ইউ অ্যান্ডারস্ট্যান্ড? ওকে বয়। নইলে মরার আগে তোমাকে মারব।

অর্জুন ওদের পেছন পেছন কাকের বাইরে চলে এল। মেজর আর মিস্টার আলাম্বাও বেরিয়ে এলেন। অর্জুনকে দেখে জিম বিরক্ত হল, আঃ, তুমি কোথায় যাচ্ছ?

তোমার সঙ্গে?

কেন?

তোমার বসকে জিজ্ঞেসু করব কেন আমাদের খুন করার চেষ্টা হয়েছে?

ওঃ। বস এখনও তোমার সন্ধান পায়নি। হয়তো অন্য কাউকে মারতে গিয়ে, বুঝতেই পারছ, অ্যাকসিডেন্টালি—! আমাদের ছেড়ে দাও।

তুমি কোথায় থাকো? আমি তোমার ক্ষতি করব না, প্রমিস।

ক্ষতি তুমি ইচ্ছে করলেই করতে পারো।

এই সময় মেজর একটা ট্যাক্সি ডাকলেন, অর্জুন, এবার বাড়ি যাব।

অর্জুন জিমকে বলল, তুমি, তোমরা আমাদের সঙ্গে যেতে পারো।

জিম মহিলার দিকে তাকাতেই মহিলা তাঁর ব্যাগ খুলে একটা কার্ড বের করে এগিয়ে দিল অর্জুনকে, এটা আমার ঠিকানা। আমাকে ফোন করলেই আপনি জিমের খবর পেয়ে যাবেন। ও ওর বসকে ভয় পাচ্ছে। আমাদের আলাদা যাওয়াই উচিত।

কার্ড নিয়ে অর্জুন ট্যাক্সিতে উঠল। গাড়িটা সামান্য গতি নিয়েছে কি নেয়নি, পেছনে গুলির আওয়াজ হল। অর্জুন দেখল জিম মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে, মহিলা হতভম্ব। রাজপথ শূন্য। দৃশ্যটা চোখের আড়ালে চলে গেল ট্যাক্সি বাঁক নিতেই।

মেজর বললেন, কী হল?

মিস্টার আলাম্বা ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন কোনও গাড়ি অনুসরণ করছে কিনা! নিঃসন্দেহ হয়ে তিনি বললেন, আমরা প্রধান দরজা দিয়ে বাড়িতে ঢুকব না!

তা হলে? মেজর অবাক হলেন।

পেছনের দরজাটা দিয়ে দোতলায় আসা যায়। ওখানে লিটু, ওঃ, ওখানে আবার লিট থামে না। দোতলা থেকে তিনতলায় ওঠার সিঁড়িও নেই। কী হবে?

আপনি চিন্তা করবেন না। আমি আছি।

কিছু মনে করবেন না মেজর, এই সময়টুকু যদি দয়া করে না ঘুমোন।

ঠিক আছে, ঠিক আছে।

একেবারে বাড়ির দরজায় এসে ট্যাক্সি ছেড়ে দেওয়া হল। এই মুহূর্তে যে-কোনও দিক থেকে গুলি ছুটে আসতে পারে এমন সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে ওরা দ্রুত চলে এল বাড়িটির সিঁড়িতে। অর্জুন দেখল, আগে মিস্টার আলাদা, তাঁর পেছনে মেজর, ভূতে তাড়া করলে মানুষ যেভাবে ছোটে বলে গল্পে পাওয়া যায়, সেইভাবে ছুটছেন। কাচের দরজা ঠেলে লিটের সামনে পৌঁছে মেজর একটু ধাতস্থ হলেন চেনা পরিমণ্ডল পেয়ে, হ্যাঁ, কত রাত হল? উঁঃ অনেক হয়েছে। অ্যাদ্দিন কোনও চার্ম ছিল না লাইফে। বুঝলে অর্জুন? মাংসের ঝোল উইদাউট সল্ট! ওহে, সর্ষে ইলিশটা দারুণ ছিল হে। তা আজ রাত্রে বেশ জমকালো ব্যাপার ঘটল। লোকটা মরে গেল নাকি?

কোন লোকটা?

ওই যে কাফের ভেতর যার সঙ্গে কথা বললে। বেরিয়ে এসেও–।

বুঝতে পারছি না। লিফট এসে গেল। মেজর বললেন, চলো, যতক্ষণ ঘুম না আসছে এ নিয়ে গল্প করা যাক?

কিন্তু নিজের ফ্লোরে লিফট দাঁড়ানোমাত্র মিস্টার আলাম্বা অর্জুনের হাত চেপে ধরলেন, প্লিজ, আমার সঙ্গে এসো। আমি একা থাকতে সাহস পাচ্ছি না।

মেজর বললেন, এখানে কে আসতে সাহস পাবে?

পেতে কতক্ষণ? ওরা কী করে জানল আপনার গাড়িতে আমি বসে আছি?

তা অবশ্য। কিন্তু এ বাড়ির সিকিউরিটি, লিফটে উঠবে কী করে কার্ড পাঞ্চ না করলে? তবু বলছেন যখন, আচ্ছা, অর্জুন গুড নাইট। মেজর নিষ্প্রভ গলায় বললেন।

অর্জুন বলল, আপনিও আসতে পারেন মেজর।

না, না। আমার অত ভয়ডর নেই। সেবার একদল ম্যানইটারের সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টা একা ছিলাম। ড়ু ইউ নো? তা ছাড়া যার ফ্ল্যাট তিনি না বললে যাই কী করে?

তা ঠিক। আচ্ছা, গুড নাইট। অর্জুন লিফট থেকে নেমে দাঁড়াতেই লিফট ওপরে চলে গেল। মিস্টার আলাম্বা জিজ্ঞেস করলেন গলা নামিয়ে, সঙ্গে অস্ত্র আছে?

না নেই। কেন?

আমার সঙ্গে আছে। কিন্তু উত্তেজিত হলেই আমি নার্ভাস হয়ে পড়ি, হাত কাঁপে? ডান দিক বাঁ দিক হয়ে যায়। পকেট থেকে একটা ছোট পিস্তল বের করে অর্জুনকে দিলেন তিনি, আমার ভয় হচ্ছে, ওরা আগেভাগে ফ্লাটে ঢুকে আমার জন্যে অপেক্ষা করছে। তুমি কি ভারতবর্ষে জেমস বন্ডের কোনও ছবি দেখেছ?।

দেখেছি। অর্জুন হাসল।

ফলো হিম। জেমস যেমন করে সতর্ক ভঙ্গিতে ঘরে ঢুকত ঠিক তেমনিভাবে তুমি ঘরে যাও। পরীক্ষা করো কেউ আছে কি না। মিস্টার আলাম্বা দরজা নিঃশব্দে চাবি ঘুরিয়ে খুলে দিলেন।

কোথাও কোনও শব্দ নেই। অর্জুনের মনে হচ্ছিল মিস্টার আলাম্বার সন্দেহ করা নিরর্থক নয়। দেওয়াল ঘেঁষে ভেতরে ঢুকে সে যখন আলো জ্বালতে পারল তখন কয়েক মিনিট চলে গিয়েছে। ফ্ল্যাটে নেউ নেই। দরজা ভাল করে বন্ধ করে মিস্টার আলাম্বা বললেন, আর কোনওদিক থেকে খুনি এখানে ঢুকতে পারবে না, শুধু বাথরুমের ওই জানলাটা ছাড়া। বড্ড পলকা, জোরে ধাক্কা দিলেই ভেঙে যাবে।

অর্জুন সেদিকে উঁকি মেরে দেখল অনেক নীচে রাস্তা। অর্থাৎ এদিক দিয়ে ওপরে উঠে আসার কোনও পথ নেই। মিস্টার আলাম্বাকে আশ্বস্ত করল সে।

বাইরের ঘরের সোফায় শুয়ে পড়া পছন্দ করল অর্জুন। মিস্টার আলাম্বার এতে আপত্তি ছিল। শেষ পর্যন্ত তর্ক না করে বালিশ চাদর এনে ব্যবস্থা করে দিলেন। তারপর গুডনাইট বলার আগে পিস্তল ফেরত চাইলেন, আসলে ওটা বালিশের নীচে না নিয়ে আমি ঘুমোতে পারছি না।

আলো নিভিয়ে নিজের ঘরে মিস্টার আলাম্বা ফিরে গেলেন। এই ফ্ল্যাটের সর্বত্র আফ্রিকার শিল্পনিদর্শন ছড়ানো। অন্ধকারেও মনে হচ্ছিল সে আজ আফ্রিকাতেই আছে। অর্জুনের খেয়াল হল মিস্টার আলাম্বা অনেকক্ষণ আর লকেট নিয়ে কোনও কথা বলছেন না। এটা চাইবার সময় ওঁর মধ্যে যে আকৃতি দেখতে পেয়েছিল তা উধাও হয়ে যাবে এত সহজে? হয়তো এই ভয় পাওয়ার কারণে তাকে এখানে শুতে বলা এটার পেছনে ওই লকেট-প্রাপ্তির আকাঙক্ষা কাজ করছে? কোনও বিশেষ কিছু সংগ্রহ করা যাদের নেশা তারা খুব খ্যাপাটে হয়। না-হলে রাজার চারমাথাওয়ালা একটা কয়েন ভুল করে মিন্ট থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল আর সেটির দর উঠেছিল এক কোটি পাউন্ড?

অর্জুন লকেটটাকে গলা থেকে খুলে বের করল। অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে টেবিলের একপাশে দাঁড় করানো কাঠখোদাই করা একটি আফ্রিকান কলসির মধ্যে সেটা ঢুকিয়ে রাখল। গলা থেকে সেটাকে খুলতেই কীরকম অস্বস্তি আরম্ভ হল। অর্জুন হেসে ফেলল, তার মধ্যেও ওই আদিম ভাবনাচিন্তা ঢুকে পড়েছে নাকি লকেট পরার পর? সোফায় শুয়ে তার মনে পড়ল জিমের কথা। লোকটা মরে গেল নাকি? এত তাড়াতাড়ি ওকে বিশ্বাসঘাতক চিহ্নিত করে খুঁজে পেয়ে গেল ওরা? কী এফিশিয়েন্ট অর্গানাইজেশন। জিম এই লকেটটাকে প্রবল ভক্তি করেছে। ওর বান্ধবী সাদা মেয়ে, তার মধ্যে ওসব ভক্তিটক্তি দেখা যায়নি। কিন্তু এই আমেরিকার কিছু মানুষ যে লকেটটার ব্যাপারে ক্রমশ উন্মাদ হয়ে উঠছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এখন কী করা যায়? সুধামাসিকে পোঁছে দিতে এসেছিল সে। এখনও হাসপাতালে গিয়ে ওঁর জামাইয়ের সঙ্গে দেখা করা হয়নি। খুব অভদ্রতা হয়েছে এটা। সুধামাসিকে সময় না দিয়ে এসব গোলমালে না জড়িয়ে পড়ে লকেটটাকে নিউ ইয়র্কে মিউজিয়ামে জমা দিয়ে দেওয়াই ভাল।

হঠাৎ নিশ্বাসের কষ্ট হতে আরম্ভ করল। বাতাস ভারী হয়ে গেছে খুব। এ-ঘরের ভেন্টিলেশন কি এত খারাপ? অর্জুন ওঠার চেষ্টা করতে লাগল। তীব্র একটা গন্ধ নাকে ঢুকছে। কীসের গন্ধ। তার মাথা ঘুরতে লাগল। অন্ধকারে চারপাশে তাকিয়ে সে কিছুই দেখতে পেল না। এবং এই দেখার সক্রিয় ভাবনাটাও আচমকা মাথা থেকে বেরিয়ে গেল। অর্জুন শুয়ে পড়ল। সোফায়। তার জ্ঞান ছিল না।

 

টেলিফোনের আওয়াজে ঘুম ভাঙল। ভাঙল বটে, কিন্তু সমস্ত শরীরে তীব্র আলস্য এবং মাথায় টিপটিপে যন্ত্রণা অর্জুনকে কাহিল করে দিচ্ছিল। সে উঠে গিয়ে রিসিভার তুলতেই অজানা অচেনা ভাষায় একটি নারীকণ্ঠ কিছু বলল। একবর্ণ না বুঝতে পেরে অর্জুন ইংরেজিতে বলল, আপনি কাকে চাইছেন?

এবার মেয়েটি জানতে চাইল, এটা মিস্টার আলাম্বার ফ্ল্যাট, আশা করি।

হ্যাঁ।

ওঁকে বলুন সিম্বা এসেছে।

অর্জুন টেলিফোন রেখে ভেতরের ঘরে গেল। দুটো ঘর। একটি ঘরে শিল্পসংগ্রহের প্রদর্শনী, অন্যটিতে মিস্টার আলাদা থাকেন। তাঁর দরজায়

দাঁড়িয়ে সে বলল, মিস্টার আলাম্বা, ফোন আছে আপনার?

ফোন? অসম্ভব। আমাকে কেউ ফোন করবে না।

মেয়েটি বলছে ওর নাম সিম্বা।

ও, সিম্বা। সিম্বা আমার মেয়ে। ও বোধহয় নীচ থেকে ফোন করছে। দেখছি আমি। মিস্টার আলাম্বাকে খুশি-খুশি দেখাল।

কেউ নীচের গেটে এসে নির্দিষ্ট ফ্ল্যাটের বোতাম টিপলেই রিসিভার আওয়াজ করে। তখন ফোনে নিজের পরিচয় দিলে যার কাছে এসেছে সে রিমোট টিপলে নীচের দরজা খুলে যায়। লিফট চালু হয়। দ্বিতীয়বার বোতাম টিপলে যে-ফ্লোরে লিফট দাঁড়াবে তার দরজা খোলে। কত সহজে ঝামেলা এড়িয়ে যেতে পারছে ওরা। আমাদের দেশে হলে বলতে হত, দ্যাখ তো কে বেল বাজাচ্ছে। অর্জুন ভাবল, বেশিদিন নেই, এব্যবস্থা চালু হল বলে!

মিস্টার আলাম্বাই দরজা খুললেন। প্রায় অর্জুনের মাথায় লম্বা ছিপছিপে একটি কালো মেয়ে ঘরে ঢুকল। তার কাঁধে দুটো স্ট্র্যাপ দেওয়া ব্যাগ, পরনে জি। বাবা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আদর করলেন। মেয়ে ঘুরে তাকাল, আপনি আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন?

অর্জুন মাথা নাড়ল, হ্যাঁ।

মিস্টার আলাম্বা মেয়ের সঙ্গে অর্জুনের পরিচয় করিয়ে দিলেন।

সিম্বা জিজ্ঞেস করল, কীরকম লাগল বাবার ফ্ল্যাট?

ভাল। বেশ ভাল।

রাত্রে ঘুম হয়েছিল?

হ্যাঁ। কিন্তু–!

কিন্তু? মনে হয়নি ওইসব আফ্রিকান মূর্তিগুলো জীবন্ত হয়ে আপনাকে ঘিরে ফেলছে। বিশেষ করে ওই সাপটা—? সিম্বা চোখ বড় করল।

না। তা হয়নি। কারণ শোয়ার কিছুক্ষণ পরেই একটা তীব্র গন্ধে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। অর্জুন হাসল।

জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন? সিম্বা অবাক, গন্ধে?

হ্যাঁ।

তা হলে এটা বাবার কীর্তি। আফ্রিকার জঙ্গলের অনেক কিছু বাবার সংগ্রহে আছে, মাঝে-মাঝে বাবা সেগুলো ঠিক আছে কিনা যাচাই করেন। আমি হস্টেলে থাকি। এখানে থাকলে পাগল হয়ে যেতাম। ব্যাগ টেবিলে রেখে ভেতরে চলে গেল সিম্বা।

অর্জুন জিজ্ঞেস করল, তা হলে আপনি পরীক্ষা করেছিলেন কাল রাত্রে?

ঠিক পরীক্ষা নয়। একটা গাঙ্কে কাঠ কিছুক্ষণ ঘষলে গন্ধ বের হয়। অনেকটা চন্দনের মতো গন্ধ, কিন্তু হাতিকেও অজ্ঞান করে ফেলে। কেনিয়াতে পাওয়া যেত আগে। কাল ভাবলাম দেখি, ওগুলো কেমন আছে?

আপনি নাকে মাস্ক পরে নিয়েছিলেন নিশ্চয়ই?

হ্যাঁ!

আর আমার কথা ভুলে গিয়েছিলেন, তাই তো?

একদম ঠিক।

আর তারপর যখন দেখলেন আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছি তখন আমার বুক থেকে লকেটটা খুলে নিতে কোনও অসুবিধে হয়নি, তাই না?

না। ভুল হল।

তার মানে?

তোমার গলায় লকেটটা ছিল না।

সে কী!

হ্যাঁ ছিল না। হয় তুমি খুলে রেখেছ, নয় কোথাও পড়ে গেছে।

খুলে কোথায় রাখতে পারি? আমি তো আপনার সঙ্গেই এসেছি।

হ্যাঁ। তাই খুব অবাক হয়ে গিয়েছি আমি। কিন্তু বিশ্বাস করো তোমাকে অজ্ঞান করে লকেট নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা আমার ছিল না। আর কাঠ আমি ঘষেছিলাম পাশের ঘরে। এখানে ওটা করলে তুমি মারা যেতে।

অনেক ধন্যবাদ মিস্টার আলাম্বা। আমি একটা ফোন করতে পারি?

নিশ্চয়ই।

অর্জুন কার্ড বের করে নাম্বার টিপল। সেকেন্ড চল্লিশেক বাদে একটি নারীকণ্ঠ জানান দিল, ইয়েস।

মিসেস স্মিথ?

ইয়েস।

কাল রাত্রে কাফেতে আলাপ হয়েছিল। জিম কেমন আছে?

ওঃ। ও মারা গিয়েছে। আপনি কোথায়? আমার খুব দরকার। আপনি একবার আসতে পারবেন?এক্ষুনি? মহিলা কাতর গলায় বললেন।