১০. রিপোর্টটা নিয়ে অনেক আলোচনা

১০.

হারমাস সেদিন সন্ধ্যের একটু আগেই প্রু টাউনে ফিরে এলো। সকালে ঘণ্টা দুয়েক ম্যাডক্স এর ঘরে কাটিয়ে এসেছেন। সেই রিপোর্টটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কি করতে হবে, কিভাবে কোন পথে এগোতে হবে, এ বিষয়ে ম্যাডক্স কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। সুতরাং আর কালক্ষেপ না করে হারমাস ফিরে এসেছে প্রু টাউনে।

হোটেলে তার নির্দিষ্ট কামরায় এসে হাতের ব্যাগটা রেখে তিনি আবার বেরোলেন। সোজা এলেন কোর্ট রোড হাউস রেস্তোরাঁয়।

শহর থেকে মাইল তিনেক দূরের এই রেস্তোরাঁ, আধুনিক সাজ-সজ্জায় কেতাদুরস্ত। শহরের অভিজাত শ্রেণীর লোকেরা এখানে নিয়মিত যাতায়াত করে। খাবার-দাবার খুব একটা আহামরি নয়। বরং খাবার আন্দাজে দাম বেশী।

হারমাস রেস্তোরাঁ সংলগ্ন পানশালায় এসে বসলেন। পানশালাটি প্রায় ফাঁকা তখনও ভিড় জমতে শুরু করেনি। হাতের ইশারায় পানশালার একমাত্র নিগ্রো ওয়েটারকে ডেকে হুইস্কির অর্ডার দিলেন তিনি। বললেন, রেস্তোরাঁয় যেন তারজন্য একটি টেবিল আগে থেকেই সংরক্ষিত করে রাখার ব্যবস্থা হয়।

ওয়েটার চলে যেতে টেবিলের ওপর থেকে সেদিনের প্রু টাউন গেজেটের সান্ধ্য সংস্করণখানি তুলে চোখের সামনে মেলে ধরলেন হারমাস। প্রথম পৃষ্ঠায় বারলো খুন সম্পর্কিত হাজারো খুঁটিনাটি খবর। পঞ্চাশ হাজার ডলার ইনসুরেন্সের খবরটাও বেশ ফলাও করে ছাপা হয়েছে।

ওয়েটার পানীয় নিয়ে ফিরে এল। হারমাস কাগজে চোখ বোলাতে বোলাতে খানিকটা আত্মগতভাবেই বললেন ওঃ কি সাংঘাতিক। নিশ্চিন্তে কোথাও যে বেড়াতে যাবো আজকাল তারও উপায় নেই।

 টেবিলে গেলাস এবং বোতল সাজাতে সাজাতে ওয়েটারটা মাথা নাড়লো, তা যা বলেছেন। ওরা যখন ঘটনার আগে এখানে বসে হুইস্কি খাচ্ছিলেন তখন কি একবারও ভেবেছি…

কারা? তুমি কাদের কথা বলছে?

 কাদের আবার, এ বারলো আর তার বউ। দুজন তো ঘটনার রাতে এখানে এসেছিলেন।

তাই নাকি আশ্চর্য! গেলাস তুলে হারমাস ছোট চুমুক দিলেন। কি দুঃখের ব্যাপার। তা যাবি যা, জেসন গ্লেন-এর মতো অমন নির্জন জায়গায় কেন? আরও তো কত ভাল ভাল ঘোরবার জায়গা আছে।

বেচারা স্বামীটি ঠিক এই কথাই সেদিন বলেছিলেন তিনি কিছুতেই যাবেন না। স্ত্রীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হল। এক নাগাড়ে বিশ মিনিট ধরে তর্ক চলল। তারপর তিনি অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাজী হলেন। অমন সুন্দরী বউ একবার বললে হাজার দশেক কানমলা খেতেও আপত্তি হবার কথা না।

তাহলে জেসনস গ্লেন-এ যাবার তেমন কিছু ইচ্ছে বারলোর ছিল না, তাই তো?—

তা কথাবার্তা শুনে তো আমার সেরকমই মনে হলো, রেস্তোরাঁয় ডিনার সেরে দুজনে এখানে এলেন হুইস্কি খেতে। রাত তখন সাড়ে নটার মতো হবে। কথায় কথায় দুজনের শুরু হলো তক্ক। দুজনেই গলা তুলে চেঁচামেচি শুরু করে দিলেন। আমি তো ভয়ে অস্থির, শেষ অবধি হাতাহাতি শুরু হয়। তা ততদূর আর গড়ালো না। বারলো শেষে নিমরাজী গোছের হলেন। মিসেস বারলো তাকে বসিয়ে রেখে গেলেন মেয়েদের বাথরুমে। মিনিট দশেক পর সেখান থেকে তিনি বেরিয়ে এলেন। তারপর দুজন হাত ধরাধরি করে গাড়িতে গিয়ে উঠলেন।

ইস! মিসেস বারলো যদি স্বামীর কথা একবারও শুনতেন। মেয়েদের এই জন্যই লাই দিয়ে মাথায় তুলতে নেই। তুললেই বিপদ, কেউ বাঁচাতে পারবে না। গেলাসের অবশিষ্ট পানীয়টুকু এক চুমুকে শেষ করে হারমাস উঠে বলল যাই, খাওয়ার পাটটা চুকিয়ে আসি। বেশি রাত করে কি লাভ? বিল মিটিয়ে বড় বড় পা ফেলে তিনি রেস্তোরাঁর দিকে গেলেন।

খাবার টেবিলের দিকে না গিয়ে রেস্তোরাঁর দিকের দরজা পথে তিনি মেয়েদের বাথরুমের দিকে এগোলেন। একজন নিগ্রো পাহারাদার তাকে বাধা দিলো।

পকেট থেকে মানিব্যাগ বার করে পাঁচ ডলারের একখানা নোট বের করলেন হারমাস, চোখ তুলে তাকিয়ে বললেন, টেলিফোন বুথটা কোথায়?

সে ছোঁ মেরে নোটখানা নিয়ে পকেটে পুরলো, দাঁত বের করে হেসে বলল পাশেই স্যার।

ডায়াল ঘোরালে লাইন পাওয়া যায় না অপারেটরকে বলতে হয়।

অপারেটরের সঙ্গে আমার একবার দেখা করিয়ে দিতে পারো? হারমাস পকেট থেকে নিজের কার্ড বের করে তার হাতে দিলেন। একখানা পাঁচ ডলারের নোটও সেই সঙ্গে দিলেন, এটা কিন্তু তোমার নয় ওর। ওর সঙ্গে কয়েকটা কথা বলার খুব দরকার।

 ঠিক আছে স্যার। কার্ডখানায় চোখ বুলিয়ে সে মুখ তুললো, আমি এখুনি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমার সঙ্গে আসুন। একটু এগিয়ে একটি ছোট ঘরের দরজা ঠেলে সে ভেতরে ঢুকলো। তার পেছনে পেছনে হারমাসও ঢুকলেন।

 টাইপ মেসিনের সামনে তন্বী এক যুবতী বসে আছে। হাতের নাগালের মধ্যে তার টেলিফোনের সুইচবোর্ড। চুলের রং তামাটে, নিখুঁত সুন্দর মুখ। ওরা দুজন ঘরে ঢুকতে সে মুখ তুলে তাকাল। নিগ্রোটি এগিয়ে এসে হাতে কার্ড এবং পাঁচ ডলারের নোটখানা দিয়ে কি যেন বলল মিস মে কে। তারপর হারমাসের দিকে তাকিয়ে বলল আমাদের মিস মে খুব ভাল মেয়ে, আপনারা কথা বলুন স্যার, আমার একটু কাজ আছে, আমি যাই। সে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

এগিয়ে গিয়ে একখানা চেয়ার টেনে বসল হারমাস। একটা সিগারেট ধরালেন। তারপর চোখ তুলে তাকালেন। মিস মে বিশেষ কিছু নয়, একটা ছোট্ট খবরের জন্য আপনার কাছে এসেছি। আচ্ছা বুথ থেকে যে সব ফোন বোজ বাইরে যায়, তার কোনো বিবরণ কি আপনি রাখেন?

বিবরণ, মানে?

মানে এই ধরুন কি কি নম্বর আপনার কাছে চাওয়া হল, কতক্ষণ কথা বললো, লাইন পেল কিনা ইত্যাদি।

রাখি, কিন্তু ব্যাপারটা কি, পুলিসের ঝঞ্জাট নাকি? না না, সে সব কোন ঝামেলা নেই। আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। খবরটা খুবই সাধারণ, গত ত্রিশে সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে নটা নাগাদ এক মহিলা এখান থেকে একটা ফোন করেছিলেন। সেই ফোনের বিবরণটুকু আমার চাই।

হাত বাড়িয়ে সুইচ বোর্ডের পাশের তাক থেকে একটা ছোট্ট নোটবই নিয়ে এলো সে। পাতা উলটে ত্রিশে সেপ্টেম্বরের পৃষ্ঠাটি বের করল। আগাগোড়া পৃষ্ঠাটায় চোখ বুলিয়ে সে মুখ তুললো, ই পেয়েছি মনে হচ্ছে। এটাই সেটা। মেয়েছেলের গলার ফোন বলে এখনো মনে আছে। তাছাড়া সে রাতে তেমন একটা ব্যস্ত ছিলাম না। সন্ধ্যে থেকে মাত্র চারটে লাইন চাওয়া হয়েছিল। প্রথম তিনটে সাতটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে, চতুর্থটা নটা চল্লিশ নাগাদ। নম্বরটা হল–কিন্তু পাঁচ ডলারে তো এতো কথা বলা যায় না।

মানি ব্যাগ খুলে আর একখানা পাঁচ ডলারের নোট এগিয়ে দিলেন হারমাস। মে নোটটা নিয়ে ব্যাগে পুরলো। মৃদু হাসল তারপর বলল নম্বরটা হলো, এমউড ৬৮০০৯।

আচ্ছা এক কাজ করুন এটা ছাড়া বাকি নম্বর তিনটেও আমাকে একটা ছোট কাগজে টুকে দিন।

মে টুকে দিলো। কাগজটা নিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে হারমাস ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। খাওয়া শেষ হলে রাস্তায় বেরিয়ে একটা ওষুধের দোকান থেকে ফোন করলেন তিনি জেনসনকে।

জেনসন ঘরে নেই ফোন ধরল একজন সার্জেন্ট। নিজের পরিচয় দিয়ে হারমাস তাকে বললো, আচ্ছা এমউড ৬৮০০৯ এই নাম্বারের ফোন যেখানে আছে তার ঠিকানাটা চাই।

সার্জেন্ট বলল এক মিনিট দেখে বলছি।

কিছুক্ষণ পরে ওপাশ থেকে সাড়া মিললো ফোনটা একটা টেলিফোন বুথের। ৫৭ নং হাইওয়ের পাশেই বুথটা।

ঠিক আছে। ধন্যবাদ, রাখছি। হারমাস ফোন নামিয়ে রেখে দিলো।

রাত দশটা নাগাদ হারমাস জেনস-এর অফিসে গেলেন। জেনসন তখন ফোনে কার সঙ্গে যেন কথা বলছিলেন। হারমাসকে দেখে সংক্ষিপ্ত দু-চার কথার কথা শেষ করে ফোন নামিয়ে রেখে তিনি মুখ তুললেন, বলো কি খবর?

ম্যাডক্স-এর সঙ্গে কথা বলে এলাম। আমাকে সহযোগিতার জন্যে তিনি তোমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এখন বলল এদিকের সমাচার কি?

অত্যাধিক পরিশ্রম আর ক্লান্তির চিহ্ন জেনসনের চোখে মুখে। দু-আঙুলে কপালের শিরা টিপে ধরে বললো–এদিকের সমাচার, কিছুদিন আগে সেই ক্যালটেক্স পেট্রোল পাম্পের পুলিশ টম স্যাঙ্কয়িস্ট সেই রিভালভারের গুলিতে মরেছিল সেই একই রিভালভারের গুলিতে বারলেও মরেছে।

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন হারমাস, তারপর?

তারপর আর কি, আমরা শহরের সব টাকমাথা লোকের খোঁজে উঠে পড়ে লেগেছি, সেই রিভালভারের খোঁজও চালিয়ে যাচ্ছি। আমার দপ্তরের প্রায় সব লোককেই এই কাজে লাগিয়ে দিয়েছি।

আচ্ছা জেনসন, পেট্রোল পাম্প থেকে কতটাকা ডাকাতি হয়েছিল, বলো তো?

তিন হাজারের কিছু বেশি।

 ডাকাতের কোনো বর্ণনা… ।

হা, হা লম্বা, কোট পরা-ও ভালো কথা কদিন আগে মার্লবোরো হোটেলের ম্যানেজার আমায় এক ডায়েরি করে গেছে, তাদের হোটেল থেকে একটা ওভারকোট আর একটা টুপি নাকি চুরি গেছে। টুপিটা পালকের। ডাকাতের মাথাও নাকি পালকের টুপি ছিল। আগে ভেবেছিলাম ডাকাতটা বাইরের লোক। হাইওয়ে ধরে মোটরে যাবার সময় সেটা থামিয়ে ডাকাতি করে চম্পট দেয়। কিন্তু এখন দেখছি সেসব না, ডাকাতটা শহরেরই কেউ।

ডাকাতের বর্ণনাটা তুমি কার কাছে পেয়েছে।

পাম্পের কর্মচারী হ্যারি ওয়েবার-এর কাছ থেকে। এমনও হতে পারে যে চোখের সামনে খুন, লুঠতরাজ দেখে সে ঘাবড়ে গিয়েছিল। কি বলতে হয়তো তাই কি বলে বসেছে। হয়তো ডাকাত এবং আমাদের সেই টাকমাথা উন্মাদ একই লোক।

হতে পারে। অসম্ভব কিছু নয়।..

শোনো এক কাজ করা যাক। আগামীকাল সকালে আমাকে নিয়ে একবার তুমি জেসনস্ গ্লেন এ চলল। আমার মাথায় একটা মতলব আছে। দেখি, কতদূর কি করতে পারি। না হয় অনর্থক তোমার খানিকটা সময়ই নষ্ট হবে।

না, না, সময় নষ্ট কিসের। ভালোই হল আমার নিজেরও একবার ওখানে যাবার ইচ্ছে ছিল। তা তোমার মতলবটা কি?

ধীরে বন্ধু ধীরে। হারমাস উঠে দাঁড়ালো। আস্তে আস্তে সবই জানতে পারবে, তাহলে ওই কথাই রইলো, কাল সকালে আমরা যাচ্ছি। চলি, মৃদু হেসে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।

.

বড় রাস্তা ছেড়ে প্লেন-এর ধুলো মাটির পথের দিকে সবে গাড়ির মোড় ফিরিয়েছেন জেনসন, হারমাস হাত তুললেন থামো থামো।

জেনসন সজোরে ব্রেক চেপে গাড়ি থামালেন। সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালেন হারমাস-এর দিকে।

হারমাস হেসে বললেন খেলা তো এখান থেকেই শুরু হে? তোমার গাড়ির চাকায় আগেকার পায়ের ছাপ-টাপ মুছে যাবার আগে একবার রাস্তাটা পায়ে হেঁটেই পরখ করে দেখি।

প্রস্তাবটা বেশ যুক্তিযুক্ত। দুজনেমনে। আগাগোড়া মাটির রাস্তা।কাদা তখনো শুকোয়নি। কয়েক পা এগিয়েই নরম মাটিতে চাকার ছাপ দেখা গেলো।

বাঃ বাঃ মেঘ না চাইতেই জল। সোলাসে চেঁচিয়ে উঠলেন হারমাস, এরকম দাগ যদি ঘটনাস্থলের আশেপাশেকোথায় পাওয়া যায় তাহলে বুঝবো, আমাদের সময় শুধু শুধু নষ্ট হচ্ছে না। দাগটা ভালো করে দেখো, চাকার বাঁ দিকটা প্রায় ক্ষয়ে গেছে। সুতরাং এ দাগ আবার দেখলে না চেনার কোন কারণই নেই।

জেনসন ভালো করে দাগটা পরীক্ষা করে মুখ তুললোহ তা অবশ্য নেই কিন্তু….।

এখানে আর কিন্তু নয় চলো এগোই।

দুজনে ফিরে এসে গাড়িতে বসলেন। জেনসন্ গাড়ি ছাড়লেন। ঘুরে ঘুরে পাহাড়ের গা বেয়ে উঠে যাওয়া সরু রাস্তা ধরে উঠতে লাগলো গাড়ি। অবশেষে একসময় উপত্যকায় এষে গাড়ি থামিয়ে দুজনে নামলেন।

প্রায় এক ঘন্টা খোঁজাখুঁজির পর চাকার দাগ নজরে এলো। জেনসনই দাগটা প্রথম দেখলো। হারমাসকে তিনি চীৎকার করে ডাকলেন এদিকে এসো হারমাস, পেয়েছি।

ছুটতে ছুটতে হারমাস এলেন, আলবাত পেতেই হবে, কই দেখি।

 হারমাস হমড়ি খেয়ে দাগের ওপর ঝুঁকে পড়লেন। খুটিয়ে খুটিয়ে ভালো করে দেখে ঘাড় নাড়লেন। বুঝলে জেনস আততায়ী গাড়িটাকে এই ঝোঁপের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছিল। এমনভাবে রেখেছিল যাতে চট করে নজরে না পড়ে।

সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু ওটা যে খুনীর চাকার দাগ সেটা বুঝলে কি করে?

কিভাবে বুঝলাম তার ব্যাখ্যা অবশ্য আমি করতে পারবো না। তবে হ্যাঁ, একটা কাজ করতে পারি আমার যুক্তির পক্ষে আমি আমার এক মাসের মাইনে বাজি রাখতে পারি। তোমার মনে আছে মিসেস বারলোকে জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেছিলেন যে তার স্বামীই তাকে এখানে আনতে বাধ্য করেছিল।

হ্যাঁ মনে থাকবে না কেন?

আমি কাল কোর্ট রোড হাউস রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলাম। পানশালার নিগ্রো ওয়েটারটির সঙ্গে অনেক কথাই হলো। সে বললো বারলো মোটেই গ্লেন-এ আসতে চায়নি, মিসেস বারলেই আগাগোড়া পীড়াপীড়ি করেছিলেন এখানে আসার জন্য এবং স্ত্রীর কথাতেই তিনি,অনিচ্ছাসত্ত্বেও এখানে আসতে রাজী হন। স্বামীকে রাজী করাতে গিয়ে দুজনের তর্কাতর্কি নাকি একসময় হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছেছিল। সে যা হোক। বারলো রাজী হতে মিসেস বারলো গিয়ে ঢুকলেন মেয়েদের বাথরুমে এবং মিনিট দশেক পর দুজনে হাত ধরাধরি করে বেরোলেন।

বাথরুমে গিয়ে দশ মিনিট কাটানোর কোন মানেই হয় না। আমার মনে কেমন যেন একটা সন্দেহ হল।

তাহলে কি উনি টেলিফোনে কারো সঙ্গে কথা বলেছিলেন। গেলাম অপারেটরের ঘরে। অপারেটার বলল, রাত নটা চল্লিশ নাগাদ তার কাছে এমউড ৬৮০০৯, এই লাইনটি চাওয়া হয়েছিল। খোঁজ-খবর নিয়ে জানলাম,নম্বরটা এখানে আমার একটু আগে দেখাবড় রাস্তার পাশের টেলিফোন বুথের নম্বর। সুতরাং দুয়ে দুয়ে চার। ম্যাডক্স এক্ষেত্রেও যথারীতি নির্ভুল। যতদুর মনে হয় মিসেস বারলো এবং তার প্রেমিক দুজনে মিলে বারলোকে খুন করেছে। প্রেমিকটি আগে থেকেই এখানে এসে অপেক্ষা করছিল। ফোনে তাকে মিসেস বারলো আসার খবর দেয়। সে ঝোঁপের আড়ালে গাড়ি লুকিয়ে রেখে অপেক্ষা করতে থাকে। এবং ওরাও যায়, পৌঁছবার সঙ্গে সঙ্গে সে বারলোকে হত্যা করে।

তারপর সেই প্রেমিকটি প্রেমিকাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে চোয়ালের হাড়ে ঘুষি মেরে সরিয়ে দিয়ে ধর্ষণ করে, এই তো তুমি বলতে চাও?না হারমাস, এটা একেবারে ছেলেমানুষী যুক্তি হয়ে যাচ্ছে।

এক্ষেত্রে আমি তর্ক না করে ম্যাডক্স-এর কথার পুনরাবৃত্তি করবো। তিনি আমাকে বলেছেন, পঞ্চাশ হাজার ডলারের জন্য তিনি অমন ধর্ষিত ও আক্রান্ত হতে রাজী।

সে তোমার ম্যাডক্স রাজী হতে পারেন কিন্তু একজন মহিলার পক্ষে সেটা সম্ভব নয়।

সম্ভব বন্ধু সবই সম্ভব। ডিটেকটিভ এজেন্সির সেই দশ পৃষ্ঠা রিপোর্টটা এখানে আসার আগে আমি পড়ে এসেছি। আচ্ছা, মেয়েতো নয় একখানা চীজ। জেল বললো, বেশ্যাবৃত্তি বলল, সব দিক দিয়েই সমান ওস্তাদ। বারলোকে বিয়ে করার আগে রাভায় রাস্তায় খদ্দেরকুড়িয়ে বেড়াত। ম্যাডক্স ঠিকই বলেছেন ওর মতো মেয়ের পক্ষে টাকা রোজগারের জন্য অসাধ্য কিছুই নেই।

তাহলে তুমি বলছো সেই উন্মাদ যৌনবিকারগ্রস্ত লোকটাই ওর প্রেমিক?

না, আমার মনে হয়, পেট্রোল পাম্পের খুন এবং বারলো খুন এ দুটো সেই প্রেমিকটিরই কাজ। বারলোর খুনের সময় উন্মাদের কাণ্ডকারখানাটাকে সে মূলধন করেছে। এজন্যই পাম্পের সেই পুলিস এবং বারলো, এরা দুজন একই পিস্তলের গুলিতে মারা গেছে।

হারমাস, তবুও একটা কিন্তু থেকে যায়। পঞ্চাশ হাজার ডলার যার হাতের মুঠোয় সে তিন হাজার ডলারের জন্য ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করতে যাবে কেন?

হ্যাঁ তা ঠিকই। এখনও অনেক জট খোলা বাকি আছে। সব একে একে ছাড়াতে হবে। এক কাজ করা যাক। চলল, আমরা আবার মিসেস বারলোর কাছে যাই। উনি এর মধ্যেই একবার মিথ্যে বলেছেন, আর একবার দেখাই যাক।

বেলাশেষের স্নান রোদ ঘরের দেয়ালে ইড়ি-মিড়ি এঁকেছে, আলোর আলপনা, মেগ জানালায় বসে আছে। তার মুখে রোগভোগের ক্লান্তি, শরীরে অবসাদ। হারমাস এবং জেনসন এসে ঘরে ঢুকলেন।

মিসেস বারলো আপনাকে আর একটু কষ্ট দিতে এলাম। জেনসন্ কোনোরকম ভূমিকা না করে বললো, শুনলাম দু-এক দিনের মধ্যেই নাকি আপনি এখান থেকে ছাড়া পাবেন।

মেগ-এর নীল চোখের তারা একটু কেঁপে উঠল, দুজনের চোখে দৃষ্টি বুলিয়ে সে মাথা নীচু করলো। হ্যাঁ, ডাক্তার আমাকে বলেছেন।

হারমাস এক পা এগিয়ে এলেন, মাথা নীচু করে দু হাতের তালু দেখলেন। বললেন মিসেস বারলো আপনি সেদিন বলেছিলেন আপনি এবং মিঃ বারলো কোর্ট রোডহাউস রেস্তোরাঁয় নৈশভোজ শেষ করে গিয়েছিলেন জেসন গ্লেন-এ। আপনার স্বামীই নাকি আপনাকে যেতে বাধ্য করেন, কি তাই তো?

হ্যা

আপনার কি প্লেনে যাবার তেমন ইচ্ছে ছিল না?

না ছিল না। আমি বারবার তাকে বলেছিলাম, জায়গাটা নিরাপদ না, ভালো না। কিন্তু কে কার কথা শোনে। হেসেই উড়িয়ে দিলো আমার কথা। নেশা আমরা দুজনেই করেছিলাম। কিন্তু ফিল এর নেশাটা সেদিন বোধহয় একটু বেশী হয়ে গিয়েছিল।

হারমাস চোখ তুলে তাকালো তাহলে ওর ইচ্ছাতেই আপনারা গিয়েছিলেন। আপনার তেমন কোন ইচ্ছেই ছিল না।

না ছিল না। চোখ তুলেই চোখ নামিয়ে নিলো মেগ।

বেশ, আর একটা প্রশ্ন, জেসন গ্লেন-এ পৌঁছে আপনারা কি কোনো গাড়ি বা অন্য কাউকে দেখতে পেয়েছিলেন?

না, তখন কেউ ছিল না।

 পৌঁছবার কতক্ষণ পর আপনারা আক্রান্ত হন?

মিনিট পাঁচেক কি দু-এক মিনিট বেশীও হতে পারে।

 যদি আগাগোড়া ঘটনার একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন সুবিধে হয় আমাদের।

আমি আর ফিল কথা বলছিলাম হঠাৎ একঝলক আগুন, শব্দ, ফিল মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো। চোখ তুলেই আমি দেখতে পেলাম সেই লোকটাকে। আমার দিকে পিস্তল উচিয়ে আমাকে নেমে আসতে বললো। নেমেই আমি এলোপাথাড়ি ছুটলাম। কিন্তু লোকটা তিন লাফেই পেছন থেকে এসে আমাকে জাপটে ধরলল। বাধা দেবার চেষ্টা করলাম, বেপরোয়া হাত-পা ছুঁড়লাম। ওর টুপিটা মাথা থেকে খসে পড়লো, তখনই মাথা জোড়া টাকটা চোখে পড়ল।

মিসেস বারলো এক মিনিট। জেনস হাত তুললেন, টাকের ব্যাপারটা আচ্ছা এমন তো নয় যে লোকটা খুব ফরসা মাথার চুল ধবধবে সাদা চাঁদের আলোয় আপনার হয়তো টাক বলে মনে হয়েছে।

না, ভুল আমার হয়নি, লোকটার মাথা জোড়া টাক।

 আবার তাকে দেখলে আপনি চিনতে পারবেন?

 হ্যাঁ কেন পারবো না। পারবো।

বেশ তারপর কি হলো?

কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি চললো। পিস্তলের গুতো দিয়ে সে আমার মুখে আঘাত করলো, তারপর ভয়ে উত্তেজনায় দু-হাত মুঠো করলো মেগ, জ্ঞান হতে দেখি, আমার জামা-টামা সব ছেঁড়া। যন্ত্রণায় সমস্ত শরীর যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে। টলতে টলতে উঠে গাড়ির কাছে এলাম, ফিল একই ভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। তার শরীর বরফের মতো ঠাণ্ডা। কোনোক্ৰমে এলাম বড় রাস্তায় আমি। তারপর আর পারলাম না, ব্যস্, এটুকু ছাড়া আর কিছুই আমার মনে নেই। পরে জ্ঞান হতে চোখ মেলে দেখি, এই ঘরের বিছানায় আমি শুয়ে। শরীরে প্রচণ্ড যন্ত্রণা।

মেগ থামতে ঘরে নামলো এক অখণ্ড নীরবতা। হারমাস মাথা নীচু করে কি যেন ভাবলেন কয়েক মুহূর্ত, তারপর মুখ তুলে বললেন মিসেস বারলো, মৃত্যুর দশদিন আগে আপনার স্বামী পঞ্চাশ হাজার ডলারের এক বীমা করিয়েছিলো আমাদের কোম্পানির কাছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে এ প্রসঙ্গে আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে পারি। তাহলে নিশ্চয়ই অন্যায় কিছু হবে না। জানেনই তো এরকম পরিস্থিতিতে স্বভাবতই মনে কিছু প্রশ্ন আসে, আর প্রশ্ন এলেই তার…

আর প্রশ্ন করে কি হবে। মেগ-এর গলার স্বর করুন শোনল, যে গেলে তাকে তত আর ফেরাতে পারবো না।

সবই বুঝি মিসেস বারলো। তবু তদন্তের খাতিরে আমার এ ধৃষ্টতাটুকু আপনি ক্ষমা করবেন। আচ্ছা মিসেস বারলো আপনি নিশ্চয়ই আপনার স্বামীকে খুব ভালবাসতেন তাই তো?

সে কথা কি বলার অপেক্ষা রাখে মিঃ হারমাস।

না, তা নয়। তবে আপনারা কি স্বামী স্ত্রীর মতোই বসবাস করতেন?

প্রশ্ন শুনে মেগ-এর চোখে আগুন ঝরে পড়লো। সে বলল মিঃ জেনস প্লীজ আপনার এই চালাক সাথীটি ক্রমশই আমার পক্ষে অসহ্য হয়ে উঠছেন, এসব প্রশ্নের জবাব দিতে আমি বাধ্য নই।

ঠিক বলেছেন মিসেস বারলো, একেবারে খাঁটি কথা বলেছেন। হারমাস বললেন আমি জানি, এসব প্রশ্ন অত্যন্ত ব্যক্তিগত। উত্তর দেওয়া না দেওয়া সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। তবু, ঐ যে বললাম, তদন্তের খাতিরে এমন দু-একটা অন্যায় প্রশ্ন আমাদের না করে উপায় নেই। সে যাকগে, এখন বলুন, মিঃ বারলোর সঙ্গে কি সেদিন তার পিস্তলটা ছিল?

না, মেগ-এর চোয়াল শক্ত হল, কিন্তু এ প্রশ্ন কেন?

এমনিই, আমার দু-একজন পিস্তল-চালক বন্ধু যখন কোথাও বেড়াতে যান, সঙ্গে সব সময় পিস্তল রাখেন। তা আপনার স্বামীর অমন অভ্যাস ছিল নাকি?

ছিল না বলেই তো জানি, তবে ইদানিং যদি অবশ্য…..

 পিস্তলটা কি বাড়িতেই আছে?

জানি না, কিন্তু ফিল-এর কথা এর মধ্যে আসছে কেন?

প্রয়োজন আছে বলেই আসছে, মিসেস বারলো কিনা প্রয়োজনে আপনার মতো অসুস্থ কোন মহিলাকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে বিরক্ত করা যে ঠিক না এটুকু জ্ঞান অন্ততঃ আমার আছে। তাহলে পিতলটা বাড়িতেই পাবো?

না পাবেন না, ফিল অনেকদিন আগেই কাকে দিয়ে দিয়েছে।

 দিয়ে দিয়েছেন! কাকে দিয়ে দিয়েছেন?

কাকে জানি না। হয়তো বিক্রী করে দিয়েছে, তিনি কতদিন আগে একথা বলেছিলেন?

 ঠিক মনে নেই।

কতদিন? একমাস…ছমাস?

 ছ-মাস নয়। একটু ভাবলো নদশ মাস হবে হয়তো।

ঠিক আছে মিসেস বারলো। আপাততঃ এটুকুই। পরে আবার দেখা হবে।

সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে জেন-এর কোমরে কনুই দিয়ে খোঁচা দিলো হারমাস, কি কেমন দিলাম। বাবা, স্টিভ হারমাসের পাল্লায় পড়েছে এত সহজে ছাড়াছাড়ি নেই। আমাদের এখন প্রথম কাজ ওর প্রেমিকটিকে খুঁজে বার করা।

হারমাস পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটে ঠেকালেন। হঠাৎ জেনসনের দিকে তাকিয়ে বললেন ওর সেই প্রেমিক যুবক নিশ্চয়ই ওর বাড়িতে যেত। আর বাড়িতে যা ধুলো তাতে নিশ্চয়ই হাতের ছাপ পড়ে থাকবে। তুমি তোক পাঠিয়ে দাও। ওরা গিয়ে যতগুলো হাতের ছাপ পায় তুলে আনুক। পিতলের বাক্সটারও ছাগ নিতে বলল।

জেনসন ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালেন। দুজনে মিলে হোটেলে এলো। হারমাস বললো ও ভালো কথা প্রু টাউনে স্মল আর্মস্ ক্লাবটা কে চালায় হে? তাকে পাবোই বা কোথায়?

ক্লাবেই পাবে। সাইকার স্ট্রীটে ক্লাব। হ্যারি সিমুর সম্পাদক।

 হারমাস গুডনাইট জানিয়ে হোটেলে ঢুকে গেলেন।

হারমাস নিজের কার্ডখানা এগিয়ে দিলেন। হ্যারি সিমুর চেয়ার ছেড়ে উঠে হাত মিলিয়ে বললেন, বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি?

বিশেষ কিছু নয় মিঃ ফিলিপ বারলোর রিভলভার সম্পর্কে দু-একটা সংবাদ আমাকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে। শুনলাম বারলো নাকি তার রিভলভারটা ন-দশ মাস আগে কাকে দিয়ে দিয়েছেন, আপনি এ বিষয়ে কিছু জানেন?

সিমুর বলল, দিয়ে দিয়েছে! একথা আপনাকে কে বললো, সে তো রিভলভার হাতছাড়া করবার লোক নয়। তারতো একজোড়া রিভলভার ছিল। ৩৮ বোরের অত ভালো রিভলভার সচরাচর দেখা যায় না। একটা রিভলভার আমি ওর কাছ থেকে গত সপ্তাহে নিয়েছিলাম।

আচ্ছা মিঃ সিমুর আপনাদের টিপ পরীক্ষার জায়গা কোনটা? সেখানে বারলো যে পিস্তলটা দিয়ে টিপ পরীক্ষা করেছিলেন তার কয়েকটা কার্তুজ কি এখনও খুঁজে পেতে পারি।

হা হা কেন পাওয়া যাবে না।

ঠিক আছে ধন্যবাদ।