১০. বিপদ বাসায়
এসে দেখি সারা বাসা থমথম করছে। বল্টু আমার দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে বলল, আজ তোমাকে ধোলাই দেয়া হবে।
আমাকে? আমি ঢোক গিলে বললাম, কেন?
তুমি আমার আংটি চুরি করেছ।
আমি চমকে উঠলাম। কী সর্বনাশ! রা পড়ে গেছি? জোর করে অবাক হওয়ার ভান করে বললাম, আমি!
হ্যাঁ। চুরি করে তোমার বিছানার নিচে রেখেছ।
বিছানার নিচে? আমি একটু অবাক হলাম, ঘুলঘুলির উপর রেখে গিয়েছিলাম, বিছানার নিচে কেমন করে এল?
বল্টু হাতে কিল দিয়ে বলল, আজকে তোমাকে রাম-ধোলাই দেবে। আম্মা বলেছে, তোমরা চোরের গুষ্টি।
ইচ্ছে হল বল্টুর মাথাটা ধড় থেকে ছিঁড়ে আলাদা করে ফেলি, কিন্তু সেটা তো ইচ্ছে করলেই করা যায় না। নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে আমি ডাকলাম, টুকুনজিল।
কোনো সাড়া নেই। আমি আবার ডাকলাম টুকুনজিল–তুমি কোথায়?
তবু কোনো সাড়া নেই। তাহলে কি চলে গেছে? কিন্তু একবার আমাকে বলে যাবে না? সোনা দিয়ে বৈদ্যুতিক যোগাযোগ ঠিক করার পর তার মহাকাশযান গতিবেগ ফিরে পেয়েছে, আর কোনো সমস্যা নেই, তাই আর দেরি করে নি। পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। আমার বিশ্বাস হতে চাইল না, আবার ডাকলাম, টুকুনজিল।
তবু কোনো সাড়া নেই।
টুকুনজিল থাকলে আর কোনো সমস্যা ছিল না—এত বড় একটা ব্যাপারের সামনে সোনার আংটি একটা তুচ্ছ জিনিস। কিন্তু টুকুনজিল যদি ফিরে চলে গিয়ে থাকে, তা হলে টুকুনজিলের কথা মুখে আনা মানে নিজেকে পাগল প্রমাণ করা। আগেরবার তো শুধু ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছেন—এবারে নিশ্চয়ই ধরে একেবারে পাগলাগারদে দিয়ে আসবেন।
বিছানার নিচে সোনার আংটিটা পাওয়া গেছে। এখন সবাইকে বোঝাব কেমন
করে? যদি টুকুনজিল ফিরে না আসে তাহলে বলা যায় ছোট খালার বাসায় থাকা আমার শেষ হয়ে গেল! ভালোই হল হয়তো, খামোকা মা-বাবা ভাই-বোন সবাইকে ছেড়ে এখানে পড়ে আছি। এখানে আসার পর থেকে কতরকম যন্ত্রণা! কিন্তু মা মনে বড় কষ্ট পাবেন। ভিন্ন গ্রহের এক প্রাণী যেন তার মহাকাশযান সারাতে পারে, সেজন্যে মোনার আংটি চুরি করেছি কথাটা কাউকেই বিশ্বাস করানো সম্ভব না। বাবা হয়তো বিশ্বাস কবেন, কিন্তু বাবা বিশ্বাস করলেই কী আর না করলেই কী?
আমার মনটা এত খারাপ হল যে বলার নয়, ইচ্ছে হল ডাক ছেড়ে কাঁদি, কিন্তু কেঁদে লাভ কি?
খাবার টেবিলে কেউ কোনো কথা বলল না। খালু অবশ্যি এমনিতেই বেশি কথা বলেন না, ছোট খালা সেটা পুষিয়ে নেন। আজ ছোট খালা একটিবার মুখ খুললেন না। সাধারণত বল্টু আর মিলি বেশ বকরবকর করে, আজ মনে হয় ভয়ের চোটে তারাও বেশি কথা বলছে না। বর মুখে অবশ্যি সারাক্ষণই একটা আনন্দের হাসি লেগে রইল, ‘আমাকে ধোলাই দেয়া হবে, এর মাঝে বল্টু যদি আনন্দ না পায়, তাহলে কে আনন্দ পাবে?
পুরো খাওয়াটা কোনো রকম কথাবার্তা ছাড়াই শেষ হয়ে যেত, কিন্তু এর মাঝে টেলিফোন এল। ছোট খালু টেলিফোনে খানিকক্ষণ কথা বলে আবার খেতে বসলেন, টেলিফোন করেছেন ডাক্তার চাচা, কিছু-একটা অস্বাভাবিক জিনিস ঘটেছে তাঁর চেম্বারে। ছোট খালু নিজে থেকে না বললে জানার উপায় নেই, আমার আজকে জিজ্ঞেস করার সাহস হচ্ছে না। ছোট খালা জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে কামরুলের চেম্বারে।
চুরি।
কী চুরি হয়েছে?
এখনো ধরতে পারছে না। কিছু ফাইল। বিলুর ফাইলটাও।
ফাইল দিয়ে কী করবে চোর?
সেটাই তো কথা।
কেমন করে চুরি হল?
বুঝতে পারছে না, দরজা-জানালা কিছু ভাঙে নি, কী ভাবে ভিতরে ঢুকে গেছে।
আশ্চর্য ব্যাপার!
এইটুকু কথা বলার পর আবার সবাই চুপ করে গেল। ইলিশ মাছের ডিম রান্না হয়েছে আজকে, আমার খুব ভালো লাগে ইলিশ মাছের ডিম খেতে, কিন্তু আজ আর খাওয়ায় কোনো আনন্দ নেই।
খাওয়া শেষ হবার পর খালু বললেন, বল্টু আর মিলি, তোমরা তোমাদের ঘরে যাও।
বল্টু বলল, আমরা থাকি, আব্বা?
ছোট খালু গম্ভীর গলায় বললেন, না।
বল্টু আর মিলি উঠে নিজের ঘরে গিয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারার চেষ্টা করতে লাগল। খালু চেয়ারে হেলান দিয়ে মেঘস্বরে বললেন, বিলু, তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।
কথাটা কি আমার আর বুঝতে বাকি থাকে না, তবু আমি মুখে একটা কৌতূহলের ভাব ফোটানোর চেষ্টা করি, কি কথা, খালু?
তোমার ছোট খালার একটা আংটি আজ সকাল থেকে পাওয়া যাচ্ছিল না। সেটা তোমার ঘরে পাওয়া গেছে।
আমার ঘরে? আমি খুব অবাক হবার ভান করলাম, কোথায়?
ছোট খালা বললেন, তোর বিছানার নিচে।
বিছানার নিচে? কী আশ্চর্য! আমি তখনো অবাক হবার ভান করতে থাকি। জিনিসটা খুব সোজা নয়।
খালু আবার মেঘস্বরে বললেন, আংটিটা কেমন করে তোমার ঘরে গেল বোঝাতে পারবে?
আমি কী আর বলব? টুকুনজিল থাকলে পারতাম, কিন্তু সে চলে গেছে, এখন আমি কেমন করে বোঝাব? আমি মাথা নাড়লাম, পারব না।
ছোট খালা সরু চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন, এবারে হঠাৎ একেবারে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন, চিৎকার করে বললেন, তোকে এখানে আনাই ভুল হয়েছে। ছোটলোকের জাত। প্রথম দিন স্কুলে গিয়ে গুণ্ডার মতো মারপিট করে এসেছিস। এই বয়সে সিগারেট খাওয়া শিখছিস। এতেই শেষ হয় নি, এখন চুরি করা শিখেছিস। কতদিন থেকে চুরি করছিস কে জানে। ছোটলোকের জাত, কোনদিন বাসায় কার গলায় ছুরি চালিয়ে দিবি–
ছোট খালার কথা শুনে আমার মাথায় একেবারে আগুন ধরে গেল, অনেক কষ্ট করে নিজেকে শান্ত করলাম। খালু বললেন, আহ্ শানু, তুমি কী বলছ এইসব?
ছোট খালা চেয়ার থেকে স্নাফিয়ে উঠে এক পাক ঘুরে আঙুল থেকে আংটিটা খুলে খাবার টেবিলের উপর ছুড়ে দিয়ে বললেন, এই আংটিটার কি পা আছে? নিজে নিজে হেঁটে গেছে বিলুর ঘরে হেঁটে হেঁটে গেছে?
এরপর যে জিনিসটা ঘটল তার জন্যে কেউ প্রস্তুত ছিল না। হঠাৎ করে আংটিটা ছোট একটা লাফ দিল টেবিলের উপর। তারপর ঠিক মানুষের হাঁটার ভঙ্গিতে টেবিলের উপর হেঁটে বেড়াতে শুরু করল। ছোট খালার কাছাকাছি এসে আবার ছোট ছোট দু’টি লাফ দিল আংটিটা।
ছোট খালা একটা চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে পিছনে সরে এলেন। খালু দাঁড়াতে গিয়ে তাল হারিয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন, কোনোমতে টেবিল ধরে সামলে নিলেন। আমিও একটা চিৎকার দিচ্ছিলাম, হঠাৎ বুঝে গেলাম কী হয়েছে। টুকুনজিল এসেছে। টুকুনজিল!!
ছোট খালা ঢোক গিলে বললেন, কী হচ্ছে এটা? কী হচ্ছে?
তার কথা শুনেই কি না জানি না, আংটিটা আবার হেঁটে বেড়াতে শুরু করল। আমি অনেক কষ্ট করে হাসি চেপে বললাম, দেখেছ ছোট খালা? দেখেছ? এই আংটিটা নিজে নিজে হেঁটে যেখানে খুশি চলে যায়!
কেন? কেন যাচ্ছে? হায় আল্লাহ!
খালু আংটিটা ধরার চেষ্টা করলেন, ধরতে পারলেন না, হাত ফসকে আংটিটা একটা লাফ দিয়ে ডালের বাটিতে ড়ুবে গেল।
ঠিক তখন একটা আলোর ঝলকানি দেখলাম, সাথে সাথে ছোট খালা একটা ভয়ঙ্কর চিৎকার দিলেন।
খালু ছোট খালার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে, শানু? কি হয়েছে?
ছোট খালা কাঁপতে কাঁপতে তাঁর হাতটি মেলে ধরলেন, বল্টু আর মিলিও ছুটে এসেছে তাদের ঘর থেকে। সবাই মিলে দেখল হাতের উল্টো পিঠে ছোট গোল পোড়া দাগ।
বল্টু শুকনো মুখে বলল, সিগারেটের ছ্যাকা। ঠিক বিলুর মতো।
ছোট খালা প্রায় কাঁদতে শুরু করলেন। বললেন, এক্ষুণি হল। এইমাত্র—এইমাত্র কে জানি ছ্যাঁকা দিল।
হঠাৎ করে ছোট খালা আমার দিকে ঘুরে তাকালেন, আমার দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন, এই বিলু—বিলু সব জানে। জিনের আছর আছে। আমি শুনেছি সারা রাত জিনের সাথে কথা বলে।
খালু ছোট খালার হাত ধরে বললেন, আহ! কী আজেবাজে কথা বলছ।
ছোট খালার হিস্টিরিয়ার মতো হয়ে গেল, চিৎকার করে বললেন, বাজে কথা বলছি আমি? বাজে কথা? ওর চোখের দিকে তাকাও, দেখেছ কী রকম দৃষ্টি? এটা কি মানুষের দৃষ্টি? হায় আল্লাহ, আমি কী সর্বনাশ করেছি। নিজের ঘরে শয়তান ডেকে এনেছি। বাণ মেরে দিচ্ছে, যাদু করে দিচ্ছে সবাইকে ছেলেপুলের সংসার আমার তছনছ করে দিচ্ছে—
আমি কিছু-একটা বলার চেষ্টা করলাম, খালু ধমক দিয়ে বললেন, যাও, তোমার ঘরে যাও!
আমি আমার ঘরে বসে শুনতে পেলাম ছোট খালা হাউ হাউ করে কাঁদছেন। কী যন্ত্রণা!
ফিসফিস করে বললাম, টুকুনজিল।
কি হল?
তুমি কোথায় গিয়েছিলে? ডেকে পাচ্ছিলাম না!
ইঞ্জিনটা ঠিক হয়েছে কি না পরীক্ষা করে দেখলাম।
ঠিক হয়েছে?
নিরানব্বই দশমিক নয় নয় নয় নয় নয় নয় নয় ভাগ।
তা হলে তো ঠিকই হয়ে গেছে।
সোনাতে ভেজাল মিশানো ছিল, আলাদা করি নি। তাই অল্পকিছু গোলমাল আছে।
কোথায় গিয়েছিলে? চতুর্থ গ্রহ। দ্বিতীয় চন্দ্র।
আমি অবাক হয়ে বললাম, মঙ্গল গ্রহে? মঙ্গল গ্রহের চাঁদে?
হ্যাঁ।
এত তাড়াতাড়ি আবার ঘুরে চলে এসেছ। এত তাড়াতাড়ি?
আমি খুব তাড়াতাড়ি যেতে পারি।
কী মজা! তুমি এখন তোমার দেশে ফিরে যেতে পারবে?
পারব।
কবে যাবে?
সময় সংকোচনের প্রথম প্রবাহের দ্বিতীয় পর্যায়ে মূল তরঙ্গের পর।
সেটা কবে?
শুরু হয়ে গেছে। আমি চমকে উঠে বললাম, তার মানে তুমি চলে যাবে?
হ্যাঁ। কালকে যাওয়া সবচেয়ে সুবিধে। পরশুদিন বেশ কষ্ট হবে। তার পরের দিন খুব কঠিন, সাফল্যের সম্ভাবনা চার দশমিক তিন। তার পরের দিন সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি।
তুমি চলে যাবে।
টুকুনজিল কোনো উত্তর দিল না। একটু পরে বলল, তোমার মস্তিষ্কে অবতরঙ্গ তৈরি হচ্ছে, মূল তরঙ্গের পাশে দুটি ছোট তরঙ্গ—কেন এটা হচ্ছে?
তুমি চলে যাবে, তাই আমার মন খারাপ হচ্ছে।
মন খারাপ? মন খারাপ মানে কি?
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, তুমি মন খারাপ মানে জান না? তোমার কখনো মন খারাপ হয় না?
না। সেটা কেমন করে হয়?
আমি একটু মাথা চুলকালাম, যার কখনো মন খারাপ হয় না, তাকে কেমন করে বোঝাব মন খারাপ কী জিনিস? একটু ভেবে বললাম, মন খারাপ হচ্ছে মন ভালো হওয়ার উল্টোটা। হাসিখুশির উল্টো হচ্ছে মন খারাপ।
হাসিখুশি? সেটা কি?
তুমি হাসিও জান না? আমি খুকখুক করে হেসে ফেললাম শুনে।
তুমি কী করলে এটা?
আমি একটু হাসলাম।
হাসলে এরকম শব্দ করতে হয়?
হ্যাঁ, একেকজন মানুষ একেক রকমভাবে হাসে। কেউ হাঃ হাঃ করে শব্দ করে, কেউ হোঃ হোঃ করে শব্দ করে, কেউ খিকখিক শব্দ করে–
সম্পূর্ণ যুক্তিবহির্ভুত ব্যাপার। তুমি আবার হাস দেখি।
এমনি, এমনি কেমন করে হাসব, একটা হাসির ব্যাপার হলেই শুধু হাসা যায়।
অত্যন্ত কৌতূহল-উদ্দীপক ব্যাপার। মানুষের মাঝে অনেক কিছু শেখার আছে। হাসি। মন খারাপ। আর কী আছে তোমাদের?
আমি মাথা চুলকালাম, বললাম, তয় বলে আরেকটা জিনিস আছে।
ভয়?
হ্যাঁ ভয়। একটু ভয় পাও দেখি।
আমি আবার খুকখুক করে হেসে বললাম, খামোক আমি ভয় পাব কেমন করে? একটা ভয়ের জিনিস হোক, তখন–
সেটা কী রকম?
আমি আবার মাথা চুলকালাম, অনেক যখন বিপদ হয় তখন ভয় পায় মানুষ।
সত্যি?
হ্যাঁ। তোমার যখন বিপদ হয়েছিল, তুমি ভয় পেয়েছিলে না?
না। আমাদের কোনো অনুভূতি নেই। আমাদের হচ্ছে যুক্তি-তর্ক আর হিসেব। চুলচেরা হিসেব।
তোমাদের কোনো অনুভূতি নেই? রাগ-দুঃখ, ভয়-ভালবাসা কিছু নেই?
না।
ভারি আশ্চর্য! টুকুনজিল বলল, তুমি আমাকে শেখাবে?
তুমি যদি শিখতে চাও, শেখাব। আগে থেকে বলে রাখি, তোমার কিন্তু লাভ থেকে ক্ষতিই বেশি হবে।
আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। বাসার সামনে দুটি মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে আছে। অন্ধকারে দেখা যায় না, কিন্তু মনে হয় ভিতরে কেউ বসে আছে। শুধু মনে হয় বসে বসে এদিকে তাকিয়ে আছে। কিছু-একটা ব্যাপার আছে এর ভিতরে। সবাইকে এখন বলে দেয়ার সময় হয়েছে, তাহলে আর আমার কোনো দায়িত্ব থাকবে না। আমি ডাকলাম, টুকুনজিল।
বল।
আমি কি এখন তোমার কথা সবাইকে বলতে পারি?
পার। কাকে বলবে তুমি?
আমার ডাক্তার চাচাকে বলেছিলাম, বিশ্বাস করেন নি। মনে করেছিলেন, আমি পাগল। আমি একটু হাসলাম—
টুকুনজিল বলল, তুমি হাসলে এখন, তার মানে এটা হাসির ব্যাপার?
হ্যাঁ। বুঝতে পারলে, কেন এটা হাসির ব্যাপার?
এখনো বুঝি নি। ঠিক আছে বল, কাকে বলবে?
আমার স্যারকে। স্যার আমার কথা বিশ্বাস করবেন। তুমি কি সেই আংটির খেলাটা দেখাতে পারবে? ক্লাসের সবাইকে।
পারব। তুমি যদি চাও, তা হলে তোমাকে শূন্যে ভাসিয়ে রাখব সবার সামনে।
পারবে তুমি? পারবে?
পারব। খুব সহজ। আমার ইঞ্জিনের এখন অনেক শক্তি।
আমি খুশিতে একেবারে হেসে ফেললাম।
টুকুনজিল বলল, আবার হাসলে তুমি। এটা হাসির ব্যাপার? এটা হাসির ব্যাপার?
অনেক কথা হল আমার টুকুনজিলের সাথে। প্রথম যখন দেখা হয়েছিল, একেবারে ভালো করে কথা বলতে পারত না, একটা কথা বলত এক শ’ বার, এখন প্রায় মানুষের মতো কথা বলতে শিখে গিয়েছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, তার হাসতে শেখার চেষ্টা। মাঝে-মাঝেই হাসার মতো শব্দ করে বেশির ভাগ সময়েই ভুল জায়গায়। আমি তাকে শুধরে দিচ্ছি, কে জানে, তার গ্রহে ফিরে যাবার আগে সে হয়তো হাসতে শিখে যাবে।