ভীম দুর্য্যোধন, করে মহারণ,
দেখে সবে কুতূহল।
দেখিতে সমর, লইয়া অমর,
আসিলেন আখন্ডল।।
চড়িয়া বাহন, করে আগমন,
তেত্রিশ কোটি অমর।
যার যেই বেশ, করিয়া বিশেষ,
বসিলা যুড়ি অন্বর।।
অপ্সরী অপ্সর, কিন্নরী কিন্নর,
গন্ধর্ব্ব পিশাচ রক্ষ।
প্রেত ভূতগণ, না যায় গণন,
আসিলেক লক্ষ লক্ষ।।
হংসে পদ্মাসন, বৃষে পঞ্চানন,
পার্ব্বতী কেশরী যানে।
দেব জলেশ্বর, আসিল সত্বর,
চড়িয়া নিজ বাহনে।।
হরিণে পবন, নরে বৈশ্রবণ,
মুষিকে বিঘ্নবিনাশন।
হইয়া কৌতুকী, চাপি মত্ত শিখী,
আসিলেন ষড়ানন।।
শমন মহিষে, পরম হরিষে,
আসেন দেখিতে রণ।
অষ্টলোকপালম সজ্জা করি ভাল,
করিলেন আগমন।।
দিবা নিশাপতি, রমণী সংহতি,
করি রথ আরোহণে।
যত সিদ্ধগণ, না যায় গণন,
আসেন যুদ্ধ সদনে।।
দেবি ঋষি আদি, নাহিক অবধি,
নারদাদি মুনি আর।
ঊর্দ্ধরেতা যত, হয়ে উল্লসিত,
করিলেন আগুসার।।
সবে স্থানে স্থানে, বসিলেন যানে,
দেখিতে সমর রঙ্গ।
ভীম দুর্য্যোধন, দোঁহে করে রণ,
উঠিল রণ তরঙ্গ।।
দুই মহাবলা, গদা স্বন্ধে তুলি,
ফিরায় মন্ডলী করি।
সঘনে গর্জ্জন, করে দুই জন,
যেমন দুই কেশরী।।
যেন দুই হাতী, ধায় দ্রুতগতি,
পদভরে কাঁপে ক্ষিতি।
দুই বৃষে যেন, করয়ে গর্জ্জন,
কম্পিত শেষাহিপতি।।
ভীম বামাবর্ত্তে, ফিরে মহাসত্বে,
দক্ষিণে কৌরবপতি।
পর্ব্বত সমান, দুই বলবান,
ফিরিছে পবন গতি।।
বাকযুদ্ধ আগে, করে দোঁহে রাগে,
কেহ আর নহে ঊন।
ভীম মহাযোদ্ধা, ফিরাইছে গদা,
দুর্য্যোধন পুনঃ পুনঃ।।
সাঞি সাঞি ডাকে, গদা ঘন পাকে,
দুজনে ভ্রময়ে কোপে।
দুই পদভরে, টলমল করে,
সঘনে অবনী কাঁপে।।
দুই গদাঘাত, যেন বজ্রপাত,
ঠনঠনি শব্দ শুনি।
দুর্য্যোধন অঙ্গে, ভীম মহারঙ্গে,
করে গদার ঘাতনি।।
মহা গদাঘাত, খেয়ে কুরুনাথ,
পড়িল ধরণীতলে।
পড়ি ক্ষণমাত্র, ধৃতরাষ্ট্র পুত্র,
সেইক্ষণে উঠে বলে।।
পুনঃ দুই বীরে, গদা নিয়ে করে,
মন্ডলী করিয়া ফিরে।
গদার প্রহারম করে মহামার,
দুজনে হানে দোঁহারে।।
রাজা দুর্য্যোধন, হয়ে কোপ মন,
গদা প্রহারিল ভীমে।
বীর বৃকোদর, কাঁপি থর থর,
সঘনে পড়িল ভূমে।।
হয়ে অচেতন, পবন নন্দন,
ভূতলে পড়িল ঠায়।
দেখি নারায়ণে, বিনয় বচনে,
জিজ্ঞাসেন ধর্ম্মরায়।।
কহ দামোদর, কৌরব ঈশ্বর,
ভীমে গদা প্রহারিল।
ভীম মহাবল, হইয়া বিকল,
যুদ্ধে অচেতন হৈল।।
মহাবলবন্ত, কৌরব দুরন্ত,
ভীম হৈতে বলবান।
প্রলয় সংগ্রাম, করে অবিরাম,
কহ হেতু ভগবান।।
গোবিন্দ কহেন, করহ শ্রবণ,
দুয্যোধন রণে কৃতী।
জানাই তোমাতে, ভীমসেন হৈতে,
বলাধিক কুরুপতি।।
শুনি যুধিষ্ঠির, হইয়া অস্থির,
জিজ্ঞাসেন হরি স্থানে।
দুর্য্যোধন কৃতী, বলিলা শ্রীপতি,
বুঝি জয় নাহি রণে।।
কহেন শ্রীকান্ত, রাজা হও শান্ড,
ভয় নাহি কর মনে।
উপায় ইহারম আছে সারোদ্ধার,
কহিব দেব এক্ষণে।।
গোবিন্দ বচনে, স্থির হয়ে মনে,
রহিলেন ধর্ম্মসুত।
পবন-নন্দন, পাইয়া চেতন,
উঠিলেন অতি দ্রুত।।
পুনঃগদা তুলি, করিয়া মন্ডলী,
ভ্রমে ভীম দুর্য্যোধন।
নিজ ঊরুতলে, করাঘাত ছলে,
মারিলেন নারায়ণ।।
পবননন্দন, ছিল বিষ্মরণ,
আপন প্রতিজ্ঞা কথা।
কৃষ্ণের সঙ্কেতে, পড়িল মনেতে,
হইলেন সব জ্ঞাতা।।
বলরাম কাছে, যুদ্ধস্থলে আছে,
নাহিক অন্যায় রণ।
নাভির নীচেতে, গদা প্রহারিতে,
শাস্ত্রে নাহি কদাচন।।
এই ভয় মনে, পবন নন্দনে,
অন্যায় করিতে মন।
হলধর ভয়, ভাবিল হৃদয়,
রাম যদি ক্রুদ্ধ হন।।
সাত পাঁচ মনে, ভাবে ক্ষণে ক্ষণে,
যে করুন হলধর।
প্রতিজ্ঞা পালন, করিব আপন,
প্রহারিব ঊরুপর।।
এইরূপে দোঁহে, গদা লয়ে তাহে,
মন্ডলী করিয়া ভ্রমে।
দুর্য্যোধন গদা, মারিতে সর্ব্বদা,
উদ্যম করিল ভীমে।।
ঊরূর উপর, বীর বৃকোদর,
মারিতে না করে মন।
মস্তক উপর, মারিতে সত্বর,
ভাবিলেক দুর্য্যোধন।।
এক লাফ দিয়া শূন্যেতে উঠিয়া,
বারিব ভীমের গদা।
এই অনুমানি, কুরু নৃপমণি,
লাফ দিয়া উঠে তথা।।
দৈবের কারণ, না যায় খন্ডন,
দুর্য্যোধন লাফ দিতে।
ভীম গদাঘাত, যেন বজ্রপাত,
বাজে তাহার ঊরুতে।।
লোক দেখে রঙ্গে, দুই ঊরু ভঙ্গে,
ভূমে পড়ে দুর্য্যোধন।
দেখি দেবগণ, চমকিত মন,
ভীম করে আস্ফালন।।
ব্যাসের বচন, ভাবি অনুক্ষণ,
পাঁচালী কৈল রচন।
গদাপর্ব্ব বাণী অপূর্ব্ব বাহিনী,
কাশীদাসের কথন।।