গেল কোথায়? পেছনের বন থেকে বলল একটা কর্কশ কণ্ঠ।
দাঁড়িয়ে পড়লে কেন আবার? এস…অ্যাই ডক, বলল আরেকটা কণ্ঠ, খুঁজে বের করতে হবে ওদের। ঘন গাছপালার ভেতরে কথা বললে শব্দটা ঠিক কোনখান থেকে আছে বোঝা মুশকিল।
আমাদের গুলি করল কেন? মাটিতে গাল ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বলল রবিন।
জানি না, ফিসফিস করেই জবাব দিল কিশোর। সেটা জানার চেষ্টা করতে যাওয়াটাও এখন গাধামি। এক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল, এখানে পড়ে থাকাটা ঠিক না। খুঁজে বের করে ফেলবে।
অন্য দুজনও একমত হয়ে মাথা ঝাঁকাল। নিঃশব্দে উঠে পড়ল তিনজনে।
জলদি করো! পাইনের ভেতর দিয়ে চলার জন্যে তাগাদা দিল মুসা।
শব্দ না করে যতটা জোরে চলা সম্ভব তার পেছনে পেছনে চলল রবিন আর কিশোর। একপাশে রয়েছে এখন পাহাড়টা। তৃণভূমিটা পড়বে সামনে। সেদিকেই চলেছে ওরা।
আবার হলো গুলির শব্দ। ঝরঝর করে ওদের মাথায় ঝরে পড়ল পাইন নীড়ল।
ঝট করে বসে পড়ল আবার গোয়েন্দারা। চার হাত-পায়ে ভর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে সরে এল বিরাট এক পাথরের চাঙরের আড়ালে।
গেল কই? ঘোৎ ঘোঁৎ করে উঠল আবার ডকের কণ্ঠ। পেছনের ঘন জঙ্গলে রয়েছে।
বিচ্ছু! একেবারে বি্চছু একেকটা! বলল দ্বিতীয় কণ্ঠটা।
ভারি পায়ে হাঁটছে লোক দুজন। সাবধান হওয়ার প্রয়োজনই বোধ করছে না। পায়ের চাপে মট করে ভাঙল শুকনো ডাল।
এদিকেই আসছে দেখে আবার উঠে পড়ল মুসা। পাইনের ভেতর দিয়ে প্রায় ছুটে চলল।
ওই, ওই যে! চেঁচিয়ে উঠল ডক। মার, মার!
গুলির শব্দ হলো। ছুটে এসে গোয়েন্দাদের আশপাশের মাটিতে বিধতে লাগল। বুলেট। ছিটকে উঠল মাটি।
দৌড় দাও! চেঁচিয়ে উঠল মুসা।
ছায়ায় ছায়ায় ছুটছে সে। পেছনে লেগে রয়েছে কিশোর আর রবিন। যাতে পথ না হারায় সেজন্যে পাহাড়টাকে নিশানা করে রেখেছে। সব সময়ই এক পাশে রেখেছে ওটাকে। হাঁপাতে আরম্ভ করেছে কিশোর। মনে মনে গাল দিচ্ছে নিজেকে। কয়েক দিন ব্যায়াম করেনি, অবহেলা করে, তার ফল পাচ্ছে এখন।
ঘন একটা ম্যানজানিটা ঝোপ দেখে তার আড়ালে এসে লুকাল ওরা।
ওদের দেখেছ? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
না, মাথা নাড়ল রবিন। মাথা থেকে বাবার ক্যাপটা খুলে একহাতে নিল, আরেক হাতে মুখের ঘাম মুছল। তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে, না কিশোর? টমেটোর মত লাল হয়ে গেছে মুখ।
আক্কেল হচ্ছে! ব্যায়াম বাদ দিয়েছি, আনফিট হয়ে গেছে শরীর। যাবেই।
চলো, আবার তাড়া দিল মুসা। এখানে থাকলে ধরা পড়ে যাব।
ছায়ায় ছায়ায় আবার ছুটতে লাগল তিনজনে।
খসাতে পেরেছি? আরও কিছু দূর আসার পর রবিন বলল।
হয়তো, জবাব দিল কিশোর, ঠিক বলা যাচ্ছে না!
ছেড়ে দেয়ার পাত্র নয় ওরা, মুসা বলল, কথা শুনে তো তাই মনে হলো।
পশ্চিমে এগিয়ে চলল তিন গোয়েন্দা। পাহাড়টাকে আগের মতই এক পাশে। রেখেছে। যতটা সম্ভব গাছপালার ভেতরে থাকার চেষ্টা করছে। খোলা জায়গায় একদম বেরোচ্ছে না।
আরও মাইল দুই একটানা হাঁটল ওরা। পেরিয়ে এল প্রচুর বুনো ফুল, ঘন পাইনের জটলা, পাথরের চাঙড়, আর সেই টলটলে পানির ঝর্নাটা, যেটা থেকে পানি ভরেছিল রবিন।
আর কদ্দূর? মুসা জানতে চাইল।
ঠিক পথেই এগোচ্ছি মনে হচ্ছে, কিশোর বলল। আর বেশিক্ষণ লাগবে না।
মিনিটখানেক জিরিয়ে নিয়ে আবার হাঁটতে লাগল ওরা।
ওই যে! হাত তুলে দেখাল মুসা।
বিশাল তৃণভূমিটার দক্ষিণ পাশ দিয়ে বন থেকে বেরোল ওরা।
প্লেনটা কোথায়? বলে উঠল কিশোর।
তাকিয়ে রয়েছে তিনজনেই। চমকে গেছে। সেসনাটা নেই। ভাঙা ডানাটাও গায়েব! এ কি করে হয়?
দাঁড়াও, হাত তুলে অন্য দুজনকে এগোতে বারণ করল মুসা। সাবধানে গলা লম্বা করে তাকাল সামনের দিকে। আছে। লুকিয়ে রাখা হয়েছে ওটাকে!
তাই তো! বলল রবিন, ডালপাতা দিয়ে ঢেকে ফেলেছে! দেখো, আমাদের এস ও এসটাও নেই!
ওপর থেকে যাতে কেউ না দেখতে পায়, মুসা বলল।
বুঝলে, ধীরে ধীরে বলল কিশোর, কেউ আছে এখানে, যে আমাদেরকে পছন্দ করতে পারছে না।
তা তো বুঝতেই পারছি, রবিন বলল। কিন্তু কে? কেন?
পথ হারিয়েছ নাকি তোমরা? বলে উঠল ভারি একটা কণ্ঠ।
চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরল তিনজনে।
বিশালদেহী একজন মানুষ দাঁড়িয়ে। সোনালি চুল, চোখে বড় বড় কাঁচওয়ালা একটা সানগ্লাস। দক্ষিণ-পুবের বন থেকে বেরিয়ে ওদের দিকেই আসছেন।
সাহায্য লাগবে? আন্তরিক হাসি হাসলেন তিনি। পরনে খাকি পোশাক, পিঠে বাধা ব্যাকপ্যাক, ডান কাঁধে ঝোলানো চামড়ার খাপে পোরা রাইফেল। খাপের ঢাকনাটা খোলা, হাঁটার তালে তালে গায়ের সঙ্গে বাড়ি খাচ্ছে।
কোত্থেকে এলেন আপনি? জানতে চাইল মুসা। বেশ অবাক হয়েছে।
শিকারে বেরিয়েছি, জবাব দিলেন লোকটা। কপালটা আজ খারাপ, কিছুই পাইনি। এদিকটায় আগে আর. আসিনি। সিয়েরার এই এলাকা আমার কাছে। নতুন। মোটা, মাংসল একটা হাত বাড়িয়ে দিলেন তিনি। মুসার মনে হলো ভালুকের থাবা। আমার নাম ফ্রাঙ্কলিন জোনস। আবার হাসলেন তিনি। হাত মেলালেন তিন গোয়েন্দার সঙ্গে। ওরা পরিচয় দিল নিজেদের।
পরিচয়ের পর প্রথম কথাটাই জিজ্ঞেস করল রবিন, আপনার গাড়ি আছে, মিস্টার জোনস?
আছে, মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন জোনস। উঁচু পাহাড়টা দেখালেন হাতের ইশারায়, ওদিকটায়। অনেক দূরে। কাঠ নেয়ার একটা কাঁচা রাস্তা আছে উত্তরে। ডায়মণ্ড লেকে যাওয়ার হাইওয়েতে গিয়ে পড়েছে।
হোক দূর, হেঁটে যেতে কোন আপত্তি নেই আমাদের। চলুন।
এক মিনিট, জোনস বললেন, তোমাদেরকে লিফট দিতে আমারও আপত্তি নেই। কিন্তু জানতে হবে, দেয়াটা কতখানি জরুরী।
বিমান দুর্ঘটনা আর তার বাবার নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার কথা জানাল রবিন। শেষে বলল, তাড়াতাড়ি চলুন। বাবা কি অবস্থায় আছে কে জানে!
আর কিছু ঘটেনি তো? একটু আগে বুনের ভেতর গুলির শব্দ শুনেছি।
চট করে দুই সহকারীর দিকে তাকিয়ে নিল কিশোর। ওদের পেছনেই লেগেছিল লোকগুলো, গুলি করে মারতে চেয়েছিল, জোনসকে একথা বললে হয়তো তিনি ভয় পেয়ে যাবেন, ওদের আর লিফট দিতে রাজি হবেন না। তাই মিথ্যে কথা বলুল কিশোর, হবে হয়তো কোন শিকারি-টিকারি।
তাড়াতাড়ি করা দরকার, তাগাদা দিল রবিন।
দ্বিধা করলেন জোনস। মনে হচ্ছে, আরও ব্যাপার আছে, তোমরা লুকাচ্ছ আমার কাছে। ঠিক আছে, বলতে না চাইলে নেই। সাহায্য আমি করব তোমাদের।
তৃণভূমির মাঝখান দিয়ে আগে আগে রওনা হলেন জোনস। সোজা এগিয়ে। চলেছেন পাহাড়ের দিকে। ডানে রয়েছে রবিন, বায়ে কিশোর, আর মুসা রয়েছে পেছনে।
আপনার নামটা পরিচিত লাগছে, কিশোর বলল, বিখ্যাত লোক মনে হয় আপনি?
নাহ, তেমন কিছু না, হাসলেন জোনস। বেকারসফিল্ডে গোটা দুই ছোট রেস্টুরেন্ট আছে আমার। এখানে তোমার বাবা কেন এসেছিল, রবিন?
মিস্টার মিলফোর্ড একজন সাংবাদিক, সেকথা জোনসকে জানাল রবিন। ডায়মণ্ড লেকে খবর সংগ্রহ করতে যাচ্ছিল, সেকথাও বলল।
সিগারেট বের করলেন জোনস। আঁতকে উঠল মুসা, এরকম অঞ্চলে সিগারেট ধরানো ভয়ানক বিপজ্জনক, দাবানল লেগে যেতে পারে। বলতে যাচ্ছিল সেকথা। কিন্তু ইশারায় তাকে চুপ থাকতে বলল কিশোর। যে সিগারেটটা বের করেছেন। জোনস, সেটাতে লম্বা ফিল্টার লাগানো, সাদা কাগজ, আর জোড়ার কাছে সবুজ বন্ধনী। যে দুটো গোড়া কুড়িয়ে পেয়েছে কিশোর, ঠিক একই রকম সিগারেটের। জোনস নামটাও চেনা চেনা লাগছে, কিন্তু মনে করতে পারছে না কোথায় শুনেছে।
যে লোকটার কাছে যাচ্ছিল বাবা, বলছে রবিন, সম্ভবত তার নাম হ্যারিস হেরিং। পকেট থেকে বাবার নোটবুক বের করে দেখে নিল নামটা। হ্যাঁ, এই নামই। শুনেছেন নাকি নামটা কখনও?
আশ্চর্য! জোনস বললেন, সত্যিই অবাক লাগছে। ওকে চিনি না। কিন্তু আজ সকালে রেডিওতে শুনলাম, গতকাল ডায়মণ্ড লেকে যাওয়ার পথে গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করে মারা গেছে হ্যারিস হেরিং নামে এক লোক। ছুটি কাটাতে এসেছিল সে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে পাশের খাদে পড়ে গিয়ে আগুন ধরে যায়। গাড়িতে। সঙ্গে সঙ্গে মারা গেছে বেচারা!
তাই নাকি! নিঃশ্বাস ভারি হয়ে গেছে রবিনের।
চুপ হয়ে গেল তিন গোয়েন্দা। ভাবছে হেরিঙের মৃত্যুর কথা। জোনসের কাঁধে ঝোলানো রাইফেলের খাপের দিকে চোখ পড়ল কিশোরের। ঢাকনাটা বাড়ি খাচ্ছে বার বার। ঢাকনা ওপরে উঠলেই দেখা যাচ্ছে ভেতরের কালো ধাতব জিনিসটার শরীর। ফায়ার আর্মস সম্পর্কে আগ্রহ আছে তার। পড়াশোনা করেছে। রাইফেলটার আকারটা আর দশটা রাইফেলের মত নয়, পেটের কাছটায় ফোলা। শক্তিশালী অস্ত্র।
বুঝতে পারছি তোমরা আর মিস্টার মিলফোর্ড ইমপরট্যান্ট লোক, জোনস বললেন। তোমরা যে এখানে আছ কে কে জানে?
রবিন আর কেউ না বলে দেয়ার আগেই তাড়াতাড়ি জবাব দিয়ে দিল কিশোর, অল্প কয়েকজন। তাদের মধ্যে খবরের কাগজের লোকও রয়েছে।
তাই নাকি, রবিন? রবিনের দিকে ফিরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন জোনস।
তার মাথাটা যখন আরেক দিকে ঘুরে গেছে, খাপের ডালা তুলে ভেতরের জিনিসটা ভালমত দেখার চেষ্টা করল কিশোর।
খচখচ করছে তার মন। সিগারেটের ব্যাপারটা কাকতালীয়, একথা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। মনে পড়েছে, ইনডিয়ানদের গায়ে লাঞ্চ খাবার সময় যে বাক্সগুলোকে ডিনার টেবিল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল, ওগুলোতে জোনস। ট্রাকিং কোম্পানির নাম লেখা ছিল দেখেছে। একটা কুঁড়ের সামনে ফেলে রাখা সমস্ত বাক্সতে দেখেছে একই নাম ছাপ মারা। ওই কুঁড়েতে দেখা গেছে হালকাপাতলা লোকটাকে, যার সঙ্গে কথা বলেছিলেন মোড়ল, যে ইশারায় মালটিকে জানিয়েছে গাড়ি তৈরি। তার মানে মিথ্যে কথা বলেছেন জোনস, এর আগেও তিনি এসেছেন এই অঞ্চলে। ঘন ঘন এসেছেন।
আড়চোখে কিশোরের দিকে তাকাল রবিন। রাইফেল কেসের ভেতরে দেখার চেষ্টা করছে কিশোর, এটা দেখে অবাক হলো সে। দ্রুত একবার চোখ মিটমিট করেই সামলে নিল। কিশোরকে সাহায্য করা দরকার এখন। মুখে মধুর হাসি ফুটিয়ে তুলে জোনসের দিকে তাকাল সে। কিশোরের কথাই সমর্থন করে জবাব দিল তার প্রশ্নের, হ্যাঁ, জানে। আমাদের যাওয়ার কথা সিটি এডিটরকে জানিয়েছে। বাবা। ম্যানেজিং এডিটরকেও জানিয়ে রেখেছে, কারণ হোটেলের বিলগুলো ওই মহিলাকেই শোধ করতে হবে।
পাশে কাত হয়ে ঝুঁকে এসেছে, খাপের ভেতর উঁকি দেবে এই সময় আচমকা দাঁড়িয়ে গেলেন জোনস।
ঝট করে খাপ থেকে হাত সরিয়ে আনল কিশোর। ঝুঁকে জুতোর ফিতে বাঁধার ভান করল, যেন খুলে গেছে ওটা।
শেষবারের মত লম্বা একটা টান দিয়ে জ্বলন্ত সিগারেটটা মাটিতে ফেলে জুতো দিয়ে পিষে মারলেন জোনস। এরকম জায়গায় সিগারেটের গোড়া ফেলাটা যেন সইতে পারল না মুসা, অনেক সময় জুতো দিয়ে থেঁতলানো সিগারেটেও আগুন থেকে যায়, পুরোপুরি নেভে না, আর সেটা থেকে সৃষ্টি হয় আগুন, বিড়বিড় করে এসব কথা বলে নিচু হয়ে গোড়াটা তুলে নিয়ে পকেটে রেখে দিল, নিরাপদ জায়গায় নিয়ে গিয়ে ফেলবে বলে।
তোমরা কখন যাচ্ছ বলা হয়েছে? আবার হাঁটতে আরম্ভ করেছেন জোনস। উঁচু, ধূসর দেয়ালটার কাছে প্রায় পৌঁছে গেছেন তারা।
গতকালই যাওয়ার কথা ছিল, রবিন বলল। বুঝে ফেলেছে, জোনসকে বিশ্বাস করতে পারছে না কিশোর, কাজেই সেই মতই কথা বলতে লাগল গোয়েন্দা সহকারী।
রবিনের দিকে তাকিয়ে তার সঙ্গে কথা বলছেন জোনস, এই সুযোগে আরেকবার ডালা তুলে ভেতরে দেখার চেষ্টা চালাল কিশোর। হেসে ঠাট্টা করে মাঝে মাঝেই মুসা বলে ওকে, পকেটমার হলেও তুমি উন্নতি করতে পারতে। বাপরে বাপ, কি হাত সাফাই! আসলেই, কাজটা খুব ভাল পারে গোয়েন্দাপ্রধান। অনেক সময় বাজি ধরে মুসা আর রবিনের পকেট মেরে দিয়েছে, টেরই পায়নি। ওরা।
তাহলে তো তোমাদেরকে খুঁজতে কাউকে পাঠাবেই ওরা, জোনস বললেন।
খাপের ভেতরে দেখার জন্যে সাবধানে পাশে ঝুঁকে এল কিশোর।
যে-কোন মুহূর্তে সার্চ পাটি চলে আসতে পারে, রবিন বলল।
আরও তাড়াতাড়ি করা দরকার, মুসা বলল। ওরা এসে পড়ার আগেই আমরা চলে যেতে পারলে ঝামেলা বাঁচত। বলতে বলতে জোনসের একেবারে পাশে চলে এল সে, কিশোরের কাছে, সে-ও দেখার চেষ্টা করল খাপের ভেতরে কি আছে।
রাইফেলের ওপরের ক্যারিইং হ্যাঁণ্ডেল দেখতে পেল কিশোর। অস্ত্রটার অস্বাভাবিক আকৃতির মানে বুঝে ফেলল।
হঠাৎ আরেকবার দাঁড়িয়ে গেলেন জোনস।
এই কি করছ! রাগত গলায় বললেন তিনি। বলেই কিশোরের হাতটা চেপে ধরে এক ঝটকায় সরিয়ে দিলেন। পিছিয়ে গেলেন এক পা। সরু হয়ে এল চোখের পাতা। খাপ থেকে টান দিয়ে বের করে নিলেন রাইফেল।
হু, যা ভেবেছি, বিড়বিড় করল কিশোর, এম সিক্সটিন! খাপটা তৈরিই হয়েছে এভাবে, যাতে এম-১৬ রাইফেলের বিশেষ হ্যাঁণ্ডেল, পিস্তল গ্রিপ আর ফোলা ম্যাগাজিন জায়গা হয়ে যায়।
কি বলো? কিশোরের দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচাল রবিন।
এম সিক্সটিন প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল ভিয়েতনামের যুদ্ধে, বলতে থাকল। কিশোর, দুরুদুরু করছে বুক। এখন পৃথিবীতে বেশ জনপ্রিয় অস্ত্র এটা। তবে এগুলো ব্যবহার হয় মানুষ শিকারের জন্যে, জানোয়ার নয়। কে আপনি, মিস্টার, জোনস? আমাদেরকে নিয়ে কি করার ইচ্ছে?
চেয়েছিলাম ভাল কিছুই করতে, জবাব দিলেন জোনস, তোমরা তা হতে দিলে না। বেশি ছোঁক ছোঁক করলে তার ফল ভাল হয় না কোনদিনই। আর কোন উপায় রাখলে না আমার জন্যে। যাও, পাহাড়ে চড়। আমার সঙ্গেই যেতে হচ্ছে। তোমাদের।