১০. উনিশ, বিশ, খালি মোর ডিশ
এরকুল পোয়ারো ক্লান্ত, শ্রান্ত পদক্ষেপে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে সামান্য কয়েকজনকে দেখা গেল, তিনি আপন মনে হেঁটে চলেছেন। এমন সময় একজন তাঁর সামনে এসে দাঁড়ালেন। পোয়ারো চমকে উঠলেন। কাছে দাঁড়ানো মানুষটিকে দেখে তিনি চিনতে পারলেন।
এরকুল পোয়ারো কাঁধ ঝাঁকিয়ে করমর্দন করলেন।
বার্নেস বললেন–উনি কি তার দোষ স্বীকার করেছেন?
এরকুল পোয়ারো বললেন–হ্যাঁ, উনি সব স্বীকার করেছেন। এর ন্যায্যতার সমর্থক চাইছিলেন একজন। তিনি বলতে চাইছিলেন, দেশের উপকারে তাঁকে লাগবে।
বার্নেস বললেন–তা লাগতে পারে। আপনিও তো তাই মনে করেন, মঁসিয়ে পোয়ারো?
–হ্যাঁ, মনে করি।
–তাহলে এবার আপনি কি বলবেন?
–আমার বক্তব্য, মানুষ মাত্রই ভুল করে থাকে।
–কথাটা ঠিক বলেছেন আপনি। কিন্তু এ-কথাটা আমার মাথায় আসেনি।
তারা দুজনে নীরবে হেঁটে চললেন। কিছুটা যাওয়ার পর বার্নেস মুখ খুললেন। বললেন আপনাকে চিন্তামগ্ন দেখাচ্ছে। কি ভাবছেন?
পোয়ারো আবৃত্তির সুরে বললেন তুমি যেহেতু প্রভুর আদেশ অবমাননা করেছ, তিনিও তেমনি তোমাকে রাজা হওয়া থেকে বঞ্চিত করলেন।
বার্নেস ভারিক্কি চালে বললেন–ওহ, বুঝেছি। আপনি বাইবেলের বাণী শোনালেন। আর এভাবে ভাবাটা আপনার পক্ষে সম্ভব, মঁসিয়ে পোয়ারো।
দু’জনে আরও কিছুটা এগোলেন। বার্নেস দাঁড়িয়ে পড়লেন। বললেন আমি এখান থেকে টিউব রেলে উঠব। শুভরাত্রি পোয়ারো। একটু থেমে আবার বললেন–আপনাকে একটা কথা জানানো হয়নি।
বলুন, কি বলবেন?
–আমি আপনার কাছে ঋণী ও কৃতজ্ঞ। আপনাকে অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল পথে চালিত করেছিলাম। এরজন দুঃখিত ও ক্ষমা চাইছি। প্রকৃত কথা হল, অ্যালবার্ট চ্যাপম্যান কিউ এক্স ৯১২-কে আমি জানি।
এরকুল পোয়ারো চমকে উঠে প্রশ্ন করলেন–কি বলছেন আপনি? এতদিন কথাটা গোপন করেছিলেন কেন?
–কেন সেটা বলতে পারব না। আসলে আমিই হলাম অ্যালবার্ট চ্যাপম্যান। এইজন্য ব্যাপারটাতে এত উৎসাহ দেখিয়েছিলাম। আমার কোনো স্ত্রী ছিল না। আর হবেও না। স্ত্রী ভাগ্য আমার নেই।
কথাটা শেষ করেই বার্নেস ওরফে অ্যালবার্ট চ্যাপম্যান হেসে উঠলেন। তারপর আর এক মুহূর্ত সেখানে দাঁড়ালেন না। তিনি দ্রুত চলে গেলেন।
পোয়ারো নিথর নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। মিনিট কয়েক কেটে গেল। তার চোখ বিস্ফারিত হয়ে উঠল। ভ্রু যুগল কুঁচকে গেল।
তারপর আপন মনে বলে চললেন–উনিশ, বিশ, খালি মোর ডিশ–
সম্বিৎ ফিরে পেতে তিনি চলতে শুরু করলেন। অবশেষে তিনি বাড়ি এসে পৌঁছলেন।