১০. আসল তিতুনি চুপচাপ

আসল তিতুনি চুপচাপ গালে হাত দিয়ে জানালার কাছে বসে আছে। পর্দার ফাঁক দিয়ে সে বাইরে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। বাইরে অনেক রকম কাজকর্ম চলছে। নানা ধরনের গাড়ি আসছে-যাচ্ছে, গাড়ির ভেতরে কী আছে কে জানে। কেউ যেন সন্দেহ না করে সে জন্যে গাড়িগুলো ঠিক তাদের বাসার সামনে রাখছে না, দূরে নিয়ে রাখছে। একসাথে বেশি মানুষ আসে না, একজন-দুজন আসে। তিতুনি বুঝতে পারছে তাদের বাসাটাকে চারিদিক থেকে নানা যন্ত্রপাতি দিয়ে ঘিরে ফেলেছে। বিদেশি মানুষ দুটোও একবার-দুইবার বাসার সামনে থেকে ঘুরে গেছে। যারা তাদের বাসার চারপাশে কাজ করছে তারা কথাবার্তা বলে না, যদি বলতে হয় চাপা স্বরে বলে, তাই কী বলছে ঠিক শুনতে পাচ্ছে না। সে যে বাসার ভেতরে আছে সেটা যেন বাইরের মানুষেরা বুঝতে না পারে সে জন্যে তিতুনি খুবই সাবধানে আছে। চলাফেরা করছে খুবই কম, যদিও বা একটু এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যেতে হয়, নিচু হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে যাচ্ছে।

একটু পরে অন্ধকার হয়ে যাবে, তখন সে আর আলো জ্বালাতে পারবে না, অন্ধকারে থাকতে হবে। অন্ধকারে কেমন করে কী করবে বুঝতে পারছে না। আগে ভেবেছিল ফ্রিজ থেকে কিছু খাবার বের করে গরম করে খেয়ে ফেলবে, এখন সেটাও করতে পারছে না। সারাদিন শুধু রুটি আর কলা খেয়ে কাটিয়ে দিতে হচ্ছে। দুপুরবেলা খুব সাবধানে তিতুনি দুইটা ডিম সিদ্ধ করে নিয়েছে। রাত্রে একটা ডিম খেয়ে নিবে, ডিমের মাঝে প্রোটিন থাকে, পেটের মাঝে অনেকক্ষণ থাকবে।

ফ্রিজে একটু দুধও আছে। খুব বেশি নেই, তাই একটু বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে খাচ্ছে যেন শেষ না হয়ে যায়। এমনিতে সে একেবারেই দুধ খেতে চায় না। কেমন জানি গন্ধ গন্ধ লাগে, এখন ভিন্ন কথা। বিপদে পড়লে বাঘে নাকি ঘাস খায় আর তিতুনি একটু দুধ খেতে পারবে না?

আজ সকালে তার খুব দুশ্চিন্তা ছিল রাত্রি বেলা সে একা একা কেমন করে থাকবে? ভূতের ভয়ে সে নিশ্চয়ই হার্টফেল করে মরেই যাবে। এখন অবশ্যি ভিন্ন কথা-আজ রাতে আর যেটা নিয়েই ভয় থাকুক ভূতের ভয় হবে না। তাদের বাসা ঘিরে এত মানুষ, এত যন্ত্রপাতি, ভূত নিয়ে ভয় পাবার সুযোগ কোথায়? সময় কোথায়?

কিন্তু তার বুকের ভেতর একটা দুশ্চিন্তা খচখচ করছে। এলিয়েন মেয়েটাকে যদি সত্যি ধরে ফেলে তখন কী হবে? মেয়েটাকে কি জোর করে আটকে রাখবে? পুলিশ যে রকম করে রিমান্ডে নেয় এই এলিয়েন মেয়েটাকেও কী রিমান্ডে নিবে? অত্যাচার করবে? কেটে-কুটে ফেলবে? মেয়েটা যে দেখতে হুবহু তার মতো সেটা নিয়ে কি কোনো সমস্যা হবে?

তিতুনি ভেবে ভেবে কোনো কূল-কিনারা পায় না। এলিয়েন মেয়েটার সাথে একটু কথা বলতে পারলে হতো কিন্তু সে তো ঢাকায় বসে আছে। সেখানে কী যন্ত্রণা পাকাচ্ছে কে জানে। বড় ফুপুর মতো সুইট মানুষ দুনিয়াতে আর একজনও আছে কি না সন্দেহ কিন্তু তার ছেলে-মেয়েগুলো কেমন যেন! টোটনের সাথে খাতির কিন্তু তাকে একেবারে দেখতে পারে না। এলিয়েন তিতুনির সাথে কোনো কিছু নিয়ে বড় ফুপুর ছেলে-মেয়ের লেগে যাবে না তো?