হযরত ইসমাইল (আ) এর দাওয়াত ও তাবলীগের কারণে আরবের সাধারণ মানুষ দ্বীনে ইবরাহীমীর অনুসারী ছিলো। তারা একমাত্র আল্লাহর এবাদাত করত এবং তাওহীদ বা একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিলো। কিন্তু দিন যতোই যেতে লাগলো তারা দ্বীনের শিক্ষা ততোই শিক্ষা ততোই ভুলে যেতে থাকলো। তুবও তাদের মধ্যে তাওহীদের আলো এবং হযরত ইবরাহীম (আ) এর শিক্ষা কিছু কিছু অবশিষ্ট ছিলো। ইতিমধ্যে বনু খোজাআ গোত্রের সর্দার আমর আবনে লোহাই নেতৃত্বে দেয়ার মতো অবস্থানে চলে এলো। ছোটবেলা থেকে এ লোকটি ধর্মীয় পূণ্যময় পরিবেশে প্রতিপালিত হয়েছিলো। ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে তার আগ্রহ ছিলো অসামান্য। সাধারণ মানুষ তাকে ভালোবাসার চোখে দেখতো এবং নেতৃস্থানীয় ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ হিসাবে মনে করে তার অনুসরণ করতো। এই পর্যায় এ লোকটি সিরিয়া সফর করে। সেখানে যে মূর্তিপূজা করা হচ্ছে, সে মনে করলো এটাও বুঝি আসলেই একটা ভালো কাজ। সিরিয়ায় অনেক নবী আবির্ভূত হয়েছেন এবং আসমানি কিতাব নাযিল হয়েছে। কাজেই সিরিয়ার জনগণ যা করেছে, সেটা নিশ্চয়ই ভালো এবং পুণ্যর কাজ। এরূপ চিন্তা করে সিরিয়া থেকে ফেরার পথে সে হোবাল নামের এক মূর্তি নিয়ে এসে সেই মূর্তি কাবাঘরের ভেতর স্থাপন করলো। এরপর সে মক্কাবাসীদের সেই মূর্তিপূজার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে শেরেক করার আহবান জানালো। মক্কার লোকেরা ব্যাপকভাবে তার ডাকে সাড়া দিলো। মক্কার জনগণকে মূর্তিপূজার করতে দেখে আরবের বিভিন্ন এলাকার লোক তাদের অনুসরণ করলো। কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণাদের বৃহত্তর আরবের লোকেরা মনে করতো ধর্মগুরু। এ কারণে তারাও মূর্তিপূজায় মক্কার লোকদের অনুসরণ করলো। এমনি করে আরবের মূর্তিপূজার প্রচলন হলো।
হোবাল ছাড়াও আরবের প্রাচীন মূর্তি ছিলো মানাত। এ মূর্তি লোহিত সাগরের উপকূলে কোদাইদ এলাকার মুসাল্লাল নামক জায়গায় স্থাপস করা হয়েছিলো। এরপর তায়েফে লাত নামে একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়। নাখলা নামক স্থানে ওযযা নামে একটি মূর্তি রেখে তার পূজা হয়। এ তিনটি ছিলো আরবের সবচেয়ে বড় বড় মূর্তি।
এসব মূর্তির অনুসরণে অল্পকালের মধ্যে হেজাযের সর্বত্র শেরকের আধিক্য এবং মূর্তি স্থাপনের হিড়িক পড়ে যায়। বলা হয়ে থাকে যে, একটি জিন আমর ইবনে লোহাইয়ের অনুসারী ছিলো। সে আমরকে জানালো যে, নূহের জাতির মূর্তি অর্থাৎ ওয়াদ্দা, সূরা, ইয়াগুজ, ইয়াউক এবং নাসর জেদ্দায় প্রোথিত রয়েছে।
এ খবর জানার পর আমর ইবনে লোহাই জেদ্দায় গেলো এবং এ সকল মূর্তি খুঁড়ে বের করলো। এরপর সেসব মূর্তি মক্কায় নিয়ে এলো। হজ্জ মৌসুমে সেসব মূর্তি বিভিন্ন গোত্রের হাতে তুলে দেয়া হলো। গোত্র গুলো নিজ নিজ এলাকায় সেসব মূর্তি নিয়ে গেলো। এমনিভাবে প্রত্যেক গোত্র এবং পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক ঘরে ঘরে মূর্তি স্থাপিত হলো।
পালাক্রমে পৌত্তালিকরা কাবাঘরের মুর্তি দ্বারা পরিপূণ করলো। মক্কা বিজয়ের সময়ে কাবার ঘরের তিনশত ষাটটি মূর্তি ছিলো। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে নিজ হাতে সেসব মূর্তি ভাঙ্গেন। তিনি একটি ছুরি দিয়ে গুঁতো দিতেন, সাথে সাথে সে মূর্তি নীচে পড়ে যেতো। এরপর তাঁর নির্দেশে সব মূর্তি কাবাঘর থেকে বাইরে বের করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিলো। মোটকথা শেরেক এবং মূর্তি পূজা ছিলো আইয়ামে জাহেলিয়াতে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় কাজ। মূর্তি পুজা করে মনে করতো যে, তারা হযরত ইবরাহীম (আ) এর দ্বীনের ওপরই রয়েছে।
পৌত্তলিকদের মধ্যে মূর্তিপুজার কিছু বিশেষ নিয়ম প্রচলিত ছিলো। এর অধিকাংশই ছিলো আমর ইবনে লোহাই-এর আবিষ্কার। আমরের এ সকল কাজকে মক্কার লোকেরা প্রংশসার চোখে দেখতো। ইবরাহীমের দ্বীনে পরিবর্তন নয় বরং এসবকে তারা মনে করতো বেদাতে হাসানা। নিচে পৌত্তলিকদের মূর্তি পুজার কয়েকটি প্রচলিত রেওয়াজ তুলে ধরা হচ্ছে।
(এক) আইয়ামের জাহিলিয়াতে পৌত্তলিকরা মূর্তির সামনে নিবদিত চিত্তে বসে থাকতো এবং তাদের কাছে আশ্রয় চাইতো। তাদের জোরে জোরে ডাকতো এবং প্রয়োজন পূরণ, মুশকিল আসান বা সমস্যা সমাধানের জন্যে তাদের কাছে সাহায্য চাইতো। তারা বিশ্বাস করতো যে, মূর্তিরা আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করিয়ে দেবে।
(দুই) মূর্তিগুলোর উদ্দেশ্য হজ্ব এবং তাওয়াফ করা হতো। তাদের সামনে অনুনয় বিনয় করা হতো তাদের সেজতা করা হতো।
(তিন) মূর্তিগুলোর জন্যে উপঢৌকন এবং নযরানা পেশ করা হতো। কোরবানী পশু অনেক সময় মূর্তির আস্তানায় নিয়ে যবাই করা হতো। তবে সেটা করা হতো মূতির নামে। যবাইয়ের এই উভয় রকমের কথা কোরআনে আল্লাহ উল্লেখ্য করেছেন। সেই পশুও হারাম করা হয়েছে, যা মূর্তি-পূজার বেদীর উপর বলি দেয়া হয়।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, এসব পশুর গোশত খেয়ো না, যার ওপর আল্লাহর নাম নেয়া হয়নি। অর্থাৎ গায়রুল্লাহর নামে যবাই করা হয়েছে এমন কিছুই আহার করো না।
(চার) মূর্তির সন্তষ্টি লাভের একটা উপায় এটা ছিলো যে, পৌত্তলিকরা তাদের পানাহারের জিনিস, উৎপাদিত ফসল এবং চতুষ্পদ জন্তুর একাংশ মূর্তির জন্য পৃথক করে রাখতো। মজার বিষয় হচ্ছে তারা আল্লাহর জন্যে ও একটা অংশ রাখতো। পরে বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে আল্লাহর জন্যে রাখা অংশ মূর্তির কাছে পেশ করতো। কিন্তু মূর্তির রাখা অংশ কোন অবস্থায়ই আল্লাহর কাছে পেশ করতো না।
(পাঁচ) যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ যেসব শস্য ও পশু সৃষ্টি করেছেন তন্মধ্যে থেকে তারা আল্লাহর জন্যে একাংশ নির্দিষ্ট করে এবং নিজেদের ধারণা মতে বলে, তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে না কিন্তু যা আল্লাহর অংশ, তা তাদের দেবতাদের কাছে পৌঁছায়। তারা যা মীমাংসা করে, তার বড়ই নিকৃষ্ট।
(পাঁচ) মূর্তিদের সন্তষ্টি পাওয়ার একটা উপায় তারা নিধারণ করেছিলো যে, পৌত্তলিকরা উৎপাদিত ফসল এবং চতুষ্পদ পশুর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের করতো। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারা তাদের ধারণা অনুসারে বলে, এসব গবাদিপশু ও শস্যক্ষেত্র নিষিদ্ধ। আমরা যাকে ইচ্ছা করি, সে ছাড়া কেউ এসব আহারে করতে পারবে না এবং কতক গবাদিপশুর পিঠে আরোহণ নিষিদ্ধ করার সময় তারা আল্লাহর নামে নেয় না।
(ছয়) এসব পশুর মধ্যে ছিলো বাহিরা, সায়েবা, ওয়াসিলা এবং হামী। ইবনে ইসহাক বলেছেন, আর বাহিরা সায়েবার কন্যা শাবককে বলা হয়। সায়েবা সেই উটনীকে বলা হয় যার পর্যায়ক্রমে দশবার মাদী বাচ্চা হয়। এর মধ্যে কোন নর বাচ্চা হয় না। মেহমান ছাড়া অন্য কেউ তার দুধ পান করে না। এগরবারের সময় এই উটনী যে বাচ্চা দেয় সে বাচ্চাকে মায়ের সাথে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়া হয়। তার পিঠেও আরোহণ করা হয় না। তার পশম কাটা হয় না। মেহমান বাদে কেউ তার দুধ পান করে না। এই উটনী হচ্ছ বাহিরা। তার বাচ্চা হচ্ছে সায়েবা।
ওয়াসিলা সেই বকরিকে বলা হয়ে যে বকরি দু’টি করে পাঁচবার পর্যায়ক্রমে মাদী বাচ্চা প্রসব করে। অর্থাৎ পাঁচবারে দশটি মাদী বাচ্চা দেয় এবং এর মধ্যে কোন নর বাচ্চা দেয় না। এই বকরিকে ওয়াসিলা বলা হয়, যেহেতু তারা সব বাচ্চাকে পরস্পর সাথে জুড়ে দেয়। এরপর এসব বকরি ষষ্ঠবারে যে বাচ্চা প্রসব করে, সে বাচ্চা গোশত শুধু পুরুষেরা খেতে পারে, মহিলাদের জন্যে তার গোশত নিষিদ্ধ। তবে কোন বাচ্চা বা শাবক মৃত প্রসব করলে সেই বাচ্চাকে নারী-পুরুষ সবাই খেতে পারে।
হামী সেই পুরুষ উটকে বলা হয়, যার বীর্য থেকে পরপর দশটি মাদী বাচ্চা জন্ম নেয়। এর মাঝে কোন নর বাচ্চা জন্ম না নেয়। এ ধরণের উটের পিঠ সংরক্ষিত রাখা হয়। এদের পিঠে কাউকে আহোরণ করতে দেয়া হয় না, গায়েরপশম কাটা হয় না। উটের পালের মধ্যে এ উটকে স্বাধীনভাবে বিচরণের জন্যে ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়া এদের দিয়ে অন্য কোন প্রকার কাজও নেয়া হয় না। আইয়ামে জাহেলিয়াতে প্রচলিত এসব প্রকারের মূর্তি পূজা এবং রীতিনীতির প্রতিবাদ করে আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন, বাহিরা, সায়েবা, ওয়াসিলা এবং হামী আল্লাহ স্থির করেননি কিন্তু কাফেররা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে এবং তাদের অধিকাংশই তা উপলদ্ধি করে না।
আল্লাহ তায়ালা কোরআনে আরো বলেন, ওরা আরো বলে, এসব গবাদি পশুর গর্ভে যা রয়েছে তা আমাদের পুরুষদের জন্যে নির্দিষ্ট এবং সেটা আমাদের স্ত্রীদের জন্যে অবৈধ আর সেটি যতি মৃত হয়, তবে নারী পুরুষ সবাই ওতে অংশীদার। তাদের এরূপ বলার প্রতিফল তিনি তাদের দেবেন। তিনি প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ।
চতুষ্পদ পশুদের উল্লেখিত্য শ্রেণীবিন্যাস অর্থাৎ বাহিরা, সায়েবা প্রভৃতির অন্য অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে। ইবনে ইসহাকের ব্যাখ্যার সাথে এর কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।
হযরত সাইদ ইবনে মোসায়েব (রা) বলেন, এসব পশু হচ্ছে ওদের তাগুতাদের জন্যে। সহীহ বোখারীতে বর্ণিত হয়েছে যে, মূর্তির নামে পশু সর্বপ্রথম আমর ইবনে লোহাই ছেড়েছিলো।
আরবের লোকেরা এ বিশ্বাসের সাথে এসব আচার অনুষ্ঠান পালন করতো যে, মূর্তি তাদেরকে আল্লাহর কাছাকাছি পৌঁছে দেবে এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে সুপাইশ করবে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, পৌত্তালিকরা বলতো আমরাতো এদের পূজা এজন্যে করি যে, এরা আমাদের আল্লাহর সান্নিধ্য এনে দেবে।
আল্লাহ তায়ালা কোরআনে আরো বলেন, ওরা আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত করে তা ওদের ক্ষতিও করে না, উপকারও করে না। এরা বলে, এগুলো আল্লাহর কাছে আমাদের জন্যে সুপারিশকারী।
মক্কায় পৌত্তালিকরা আযলাম অর্থাৎ ফাল-এর তীর ব্যবহার করতো। “আযলাম” হচ্ছে “যালামুন” শব্দের বহুবচন। যালাম সেই তীরকে বলা হয়, যে তীরে পালক লাগানো থাকে না। ফালগিরির জন্যে ব্যবহার করা এই তীর প্রকারের হয়ে থাকে। এক প্রকারের তীরে হাঁ এবং না লেখা থাকে। এ ধরণের তীর সফর, বিয়ে ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা হয়। ফালে যদি হাঁ প্রকাশ পায়, তবে পরিকল্পিত কাজ করা হয়। যদি না লেখা থাকে, তবে এক বছরের জন্যে স্থগিত রাখা হয়। পরের বছর পুনরায় সে কাজ করতে ফাল এর তীর ব্যবহার করা হয়। ফালগিরি দ্বিতীয় শ্রেণীর তীরের মধ্যে পানি, দীয়ত বা ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি শব্দ উৎকীর্ণ থাকতো।
তৃতীয় প্রকারের তীরের মধ্যে লেখা থাকতো তোমাদের মধ্য থেকে অথবা তোমাদের বাইরে থেকে। এ ধরণের তীরের কাজ ছিলো যে, কারো বংশ পরিচয়ের ক্ষেত্রে সন্দেহ থাকলে তাকে একশত উটসহ হোবাল মূর্তির সামনে হাযির করা হতো। সেসব উট তীরের মালিক সেবায়েতকে দেয়া হতো। সে এসব তীর একসাথে মিলেয়ে ঘোরাতো। এলোমেলো করতো। এরপর একটি তীর বের করতো। যদি সেই তীরে লেখা থাকতো যে, তোমাদের মধ্যে থেকে, তবে সেই ব্যক্তি গোত্রের একজন সম্মনিত ব্যক্তি হিসাবে পরিগণিত হতো। যদি সেই তীরে লেখা থাকতো যে, তোমাদের বাইরের লোক। তবে সেই ব্যক্তিকে শক্রপক্ষের লোক মনে করা হতো। যদি তীরে গায়ে লেখা থাকতো মিশ্র, তবে সেই ব্যক্তির পদমর্যাদার কোন উন্নতি অবনতি হতো না। তাকে গোত্রের মধ্যে পূর্বের মতোই সাধারণ ভাবে জীবন যাপনের অধিকার দেয়া হতো।
পৌত্তালিকদের মধ্যে প্রায় একই ধরণের আরো একটি রেওয়াজ চালু ছিলো। সেটা হচ্ছে জুয়া খেলা এবং জুয়ার তীর। এ তীরের চিহ্নিতকরণ অনুযারী উট যবাই করে সেই উটের গোশত বন্টন করা হতো।
আরব পৌত্তালিকরা যাদুকর ও জ্যোতিষীদের কথার ওপর বিশ্বাসী রাখতো। এরা ভবিষ্যদের ভালোমন্দ সম্পর্কে কথা বলতো। কেউ দাবী দাবী করতো যে, তার অনুগত একটি জ্বীন রয়েছে, সেই জ্বীন তাকে খবন এনে দিচ্ছে। কেউ দাবী করতো যে, তার মধ্যে খোদাপ্রদত্ত মেধা এবং বিচক্ষণতা রয়েছে। এই মেধা বিচক্ষণতা এবং দূরদর্শিতার কারনে সে নির্ভূল ভবিষ্যবাণী করতে পারে। এদের মধ্যে আররাফ নামে একটা শ্রেণী ছিলো। এরা চুরির ঘটনা সম্পর্কে কথা বলতো। চোরাই মাল উদ্ধার এবং চুরির জায়গা এরা সনাক্ত করতো। জ্যোতিষী সেসব লোককে বলা হতো, যারা নক্ষত্রের গতি সম্পর্কে গবেষণা করতো এবং হিসাব-নিকাশ করে বিশ্বের ভবিষ্যত ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে ভবিষ্যবাণী করতো।
জ্যোতিষীর কথার ওপর বিশ্বাস স্থাপন কা প্রকৃতপক্ষে নক্ষত্রের ওপর বিশ্বাস স্থাপনের শামিল। মক্কার পৌত্তালিকরা নক্ষত্রের ওপর বিশ্বাস রাখতো এবং বলতো, অমুক অমুক নক্ষত্র থেকে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়।
একই ধরণের আরো কাজ তারা ভালোমন্দে নিরূপণের জন্যে করতো। সেটা হচ্ছে খরগোশের খাঁটুর একখানি হাঁড় ঝুলিয়ে দিতো। কিছু দিন এ মাস, কিছু পশু, কিছু নর এবং কিছু নারীকে তারা অশুভ মনে করতো। অসুস্থ লোকদের স্পর্শ তারা দূরে থাকতো এবং তার দেখাকে ক্ষতিকর মনে করতো। রূহু বেরিয়ে যাওয়ার পর উল্লুকে পরিণত হয় বলে তারা ধারণা করতো। নিহিত ব্যক্তি আততায়ীর কাছ থেকে বদলা নেয়া না হলে নিহিত ব্যক্তির রূহ শান্তি পায় না বলে তারা বিশ্বাস করতো। নিহিত ব্যক্তির আত্মা পাহাড়ে প্রান্তরে ঘুরে বেড়ায় এবং পিপাসা, পিপাসা, আমাকে পান করাও, পান করাও বলি চিৎকার করতে থাকে বলে তারা বিশ্বাস করতো। হত্যার ক্ষতি পূরণ নেয়া হলে নিহিত ব্যক্তির রূহ শান্তি পায় বলে তারা বিশ্বাস করতো।