করি কেশ গুটি, বান্ধা ঊর্দ্ধ ঝুঁটি,
বেষ্টিত বৃক্ষের লতা।
পরম হরিষে, ধাইল রণে সে,
শুনিয়া সংগ্রাম-কথা।।
ঘোর ডাক পাড়ে, নানা অস্ত্র ছাড়ে,
হইল উভয়ে রণ।
ভগদত্ত-রাজ, পুরন্দরাত্মজ,
মুখামুখি দুইজন।।
দোঁহে ধনুর্দ্ধর, ফেলে নানা শর,
যাহার যতেক শিক্ষা।
মারুত অনল, সূর্য্য বসু জল,
বিবিধ মন্ত্রেতে দীক্ষা।।
অষ্ট অহর্নিশি, দোঁহে উপবাসী,
বিশ্রাম না করে ক্ষণে।
দেখি ভগদত্ত, বলে মহামত্ত,
হাসিয়া বলে অর্জ্জুনে।।
নিবর্ত্তহ রণ, ইন্দ্রের নন্দন,
তুমি হও সখা-সুত।
তোমার জনক, ত্রিদশ পালক,
সখা মম পুরুহূত।।
মনে ছিল ভ্রম, তোমার বিক্রম,
জানিলাম এতদিনে।
কিসের কারণ, কর তুমি রণ,
হেথা সে আইলা কেনে।।
বলে ধনঞ্জয়, ধর্ম্মের তনয়,
কুরুকুলে হন রাজা।
করিলেন ক্রতু, চাহি এই হেতু,
দিবা তাঁরে কিছু পূজা।।
যদি মোর প্রতি, হইয়াছ প্রীতি,
তবে নিবেদন করি।
ক্ষম মম দোষ, দেহ কিছু কোষ,
প্রাগজ্যোতিষ-অধিকারী।।
হরিষে রাজন, দিল বহু ধন,
পার্থেরে পূজি বিশেষে।
লয়ে তাঁর পূজা, পার্থ মহাতেজা,
চলিলেন অন্য দেশে।।
বিবিধ পর্ব্বতে, নৃপ শতে শতে,
কতেক লইব নাম।
দিয়া ধনচয়, কেহ মিলে তায়,
কেহ না করে সংগ্রাম।।
উলূকের পতি, বৃহন্ত নৃপতি,
করিল অনেক রণ।
মোদাপুর ধাম, দেবক সুদাম,
তিনে দিল বহুধন।।
রাজা সেনাবিন্দু, দিল রত্নসিন্ধু,
পৌরব পর্ব্বত-রাজা।
লোহিত মণ্ডল, রাজা মহাবল,
করিল অনেক পূজা।।
ত্রিগর্ত্ত-মণ্ডলে, জিনি বীর হেলে,
সিংহপুরে সিংহরাজ।
বাহ্লীক দরদ, রাজা যে কামদ,
বৈসে কামগিরি-মাঝ।।
অপূর্ব্ব সে দেশে, নানা বর্ণ অশ্বে,
শুক-ময়ুরের রঙ্গে।
কৌতুকে অর্জ্জুন, নিল অশ্বগণ,
বিবিধ রতন সঙ্গে।।
নৃপতি যবন, কৈল মহারণ,
হারিয়া ভজিল আসি।
ভুবনে অপূর্ব্ব, দিল বহুদ্রব্য,
নানা বর্ণে রাশি রাশি।।
তবে একে একে, জিনিয়া সবাকে,
উঠিল হেমন্ত-গিরি।
তাহে যত ছিল, হেলায় জিনিল,
গন্ধর্ব্ব-দানব পুরী।।
পর্ব্বত কৈলাস, কুবেরের বাস,
যক্ষ রক্ষ কোটি কোটি।
মানুষ কিন্নর, হইল সমর,
হৈল বিজয়ী কিরীটী।।
ইন্দ্রের কোঙর, ইন্দ্র সম শর,
মারিলেক বহু যক্ষ।
পলাইল ডরে, কহিল কুবেরে,
পুরে পশিল বিপক্ষ।।
শুনি বৈশ্রবণ, লয়ে বহু ধন,
পূজিল পাণ্ডুর সুতে।
স্নেহভাষে তায়, করিল বিদায়,
পার্থ যান তথা হৈতে।।
নগর হাটক, নিবাসী গুহ্যক,
জিনি পাইলেন ধন।
লয়ে রত্ন ধন, চলেন অর্জ্জুন,
হৈয়ে আনিন্দত মন।।
মান সরোবর, তথা বীরবর,
দেখি হইলেন সুখী।
অমর-নগরী, অপ্সর কিন্নরী,
কোটি কোটি শশিমুখী।।
জিতেন্দ্রিয় ধীর, পার্থ মহাবীর,
নাহি চান কারো পানে।
সেই সরোবাসী, ছিল বহু ঋষি,
আশিস্ করে অর্জ্জুনে।।
তথা হৈতে চলে, মহা কুতূহলে,
অতিশয় শীঘ্রগামী।
সংগ্রামে প্রচণ্ড, তেজেতে মার্ত্তণ্ড,
জিনিয়া ভারত-ভূমি।।
তাহার উত্তর, যান বীরবর,
হরিবর্ষ-নামে খণ্ড।
দেখি দ্বারপাল, ধায় পালে পাল,
হাতে করি লৌহদণ্ড।।
দেখিয়া মানুষে, সর্ব্বজন হাসে,
অতি অপরূপ বাসি।
বিস্ময়-অন্তরে, কহে অর্জ্জুনেরে,
তুমি যে বড় সাহসী।।
মানব-শরীরে, আসিলে এধারে,
কভু নাহি দেখি শুনি।
নিবর্ত্তহ তুমি, অগম্য এ ভূমি,
কাহার শকতি জিনি।।
ভারত দিগন্ত, আইলা মতিমন্ত,
তুমি কি ভ্রান্ত হইলে।
এ পুর উত্তর, কুরুর নগর,
হেথায় কি হেতু আইলে।।
দেখিতে না পাবে, কি যুদ্ধ করিবে,
নাহি নরলোক-গতি।
কুন্তীর নন্দন, শুনিয়া বচন,
বলেন দ্বারীর প্রতি।।
ধর্ম্ম-নরবর, ক্ষত্রিয় ঈশ্বর,
তাঁহার আমি কিঙ্কর।
তোমা না লঙ্ঘিব, পুরে না পশিব,
দেহ কিচু মোরে কর।।
শুনি ততক্ষণ, দ্বারপালগণ,
অনেক রতন দিল।
লয়ে ধনঞ্জয়, সানন্দ হৃদয়,
দক্ষিণ মুখে চলিল।।
আসিবার কালে, বহু মহীপালে,
জিনিয়া নিলেন কর।
বাদ্য কোলাহলে, চতুরঙ্গ-দলে,
চলিল নিজ নগর।।
মণি মরকত, কনক রজত,
মুকুতা-প্রবাল-রাশি।
বিবিধ বসন, গো আদি বাহন,
লয়ে কত দাস-দাসী।।
জয় জয় শব্দে, শঙ্খের নিনাদে,
প্রবেশি ইন্দ্রপ্রস্থতে।
ইন্দ্রের আত্মজ, ত্যজিয়া সে সাজ,
গেলেন ধর্ম্ম-অগ্রেতে।।
ভূমিতলে পড়ি, দুই কর যুড়ি,
দাণ্ডাইয়া কত দূরে।
করিয়া কোমল, কহেন সকল,
ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠিরে।।
তোমার প্রতাপে, উত্তরের নৃপে,
সবে আনিলাম বশে।
সবে দিল কর, দেখ নৃপবর,
পাইলাম যে যে দেশে।।
হরিষে রাজন, করি আলিঙ্গন,
তুষিলেন মৃদু-ভাষে।
আনিলেন যাহা, কোষে রাখি তাহা,
পার্থ গেলেন নিবাসে।।