পুত্রশোকে রণে আসে রাজা দশানন।
দেখি অগ্রসর হন ঠাকুর লক্ষ্মণ।।
লক্ষ্মণের সঙ্গে আসে বীর বিভীষণ।
বিভীষণে দেখি করে রাবণ চিন্তন।।
এই পাপ হৈতে মোর সবংশে নিধন।
ইহারে বধিয়া শেষে বধিব লক্ষ্মণ।।
এতেক ভাবিয়া দুষ্ট অতি ক্রোধমনে।
লক্ষ্মণে ছাড়িয়া অস্ত্র মারে বিভীষণে।।
এড়িলেন শেলপাট ভীষণ দর্শন।
দিব্য অস্ত্র এড়ি তাহা কাটিল লক্ষ্মণ।।
মহাক্রোধে পুনঃ শেল মারে বিভীষণে।
পুনশ্চ লক্ষ্মণ তাহা কাটে দিব্য বাণে।।
দুই শেল অস্ত্র যদি কাটিল লক্ষ্মণ।
ময়দত্ত শেল হাতে লইল রাবণ।।
ডাকিয়া কহিল তবে লক্ষ্মণের তরে।
বুঝিলাম বীরপণা, রক্ষা কৈলে পরে।।
আপনা সংবর শীঘ্র, যায় শক্তিবর।
দেখিয়া লক্ষ্মণ বীর হলেন ফাঁফর।।
প্রাণপণে বাণ মারে, নারে নিবারিতে।
কালদ্ণ্ড সম শক্তি আসে শূন্যপথে।।
নির্ভয়ে বাজিল গিয়া লক্ষ্মণের বুকে।
পড়িল লক্ষ্মণ বীর, রক্ত উঠে মুখে।।
শোকাকুল রঘুনাথ হলেন অজ্ঞান।
পর্ব্বত আনিল তবে বীর হনূমান।।
পর্ব্বতে ঔষধি ছিল, তার অনুভবে।
লক্ষ্মণ পাইল প্রাণ, আনন্দিত সবে।।
কাল পূর্ণ হৈল, রণে আসিল রাবণ।
আপনি গেলেন রণে কমললোচন।।
রাবণে দেখিয়া রথে রঘুনাথে ক্ষিতি।
ইন্দ্র পাঠাইল রথ মাতলি সংহতি।।
সেই রথে রঘুনাথ চড়েন কৌতুকে।
মাতলি লইল রথ রাবণ সম্মুখে।।
অপ্রমিত যুদ্ধ হৈল দুই মহাবলে।
উপমা নাহিক স্বর্গ মর্ত্ত্য রসাতলে।।
যার যত শিক্ষা ছিল, দোঁহে কৈল রণ।
মহাক্রোধভরে তবে কমললোচন।।
রাবণের দশ মুণ্ড কাটিলেক শরে।
পুনর্ব্বার উঠে মুণ্ড বিধাতার বরে।।
পুনঃ পুনঃ যতবার কাটেন রাবণে।
বিনাশ না হয় দুষ্ট পূর্ব্বের সাধনে।।
যোড়করে বিভীষণ করে নিবেদন।
অন্য অস্ত্রে না মরিবে দুর্জ্জয় রাবণ।।
মৃত্যুবাণ আছে ওর মন্দোদরী পাশ।
সে বাণ আনিলে হবে রাবণের নাশ।।
হণূমানে নিবেদিল কমললোচন।
ছলেতে আনিল বাণ পবননন্দন।।
সেই বাণ লয়ে রাম যুড়িল ধনুকে।
ক্রোধভরে মারিলেন রাবণের বুকে।।
হেনমতে ভূমিতলে পড়ে দশানন।
পুষ্পবৃষ্টি কৈল তবে যত দেবগণ।।
তবে সীতা আনিল রাক্ষস বিভীষণ।
দেখিয়া কহেন তাঁরে কমললোচন।।
তোমারে রাখিল দশ মাস নিশাচর।
না জানি আছিল সীতা কেমন প্রকার।।
আমারে করিবে নিন্দা, এই বড় ভয়।
পরীক্ষা দেহ ত সীতা যদি মনে লয়।।
এমত শুনিয়া সীতা অতি দুঃখ মনে।
অগ্নিকুণ্ড জ্বালাইতে কহেন লক্ষ্মণে।।
লক্ষ্মণ করিল কুণ্ড, প্রবেশিলা সীতা।
কৌতুক দেখিতে যত আসিল দেবতা।।
রামের আদেশে সীতা পড়েন অনলে।
হেন কালে উঠে অগ্নি সীতা লয়ে কোলে।।
ব্রহ্মা আদি সর্ব্বদেব একত্র মিলিল।
করিয়া অনেক স্তুতি রাম্যেরে কহিল।।
আপনা না জানি কর মনুষ্য-আচার।
তুমি নারায়ণ, সীতা লক্ষ্মী-অবতার।।
আসিল দেখিতে তোমা যত পিতৃলোক।
এই দেখ, দশরথ তোমার জনক।।
দেবগণ বলে, রাম মাগ ইষ্টবর।
শুনিয়া কহেন রাম জীউক বানর।।
পরে রাম সম্ভাষণ করি সর্ব্ব জন।
যত দেবগণ গেল আপন ভবন।।
বিভীষণে দেন রাম রাজ্য অধিকার।
বানর কটকে কৈল বহু পুরষ্কার।।
সসৈন্যে গেলেন রাম অয্যোধ্যা নগর।
সিংহাসন বসিলেন হয়ে রাজ্যেশ্বর।।
মহাভারতের মাঝে রামের আখ্যান।
পাঠে ধর্ম্ম পুণ্য লভে, জন্মে দিব্যজ্ঞান।।