ব্যাস বলে, পূর্ব্ব তত্ত্ব জান মুনিগণ।
শুনহ দ্রুপদ রাজা পূর্ব্ব বিবরণ।।
ক্রেতাযুগে দ্বিজকন্যা আছিল দ্রৌপদী।
পতিবাঞ্ছা করি শিব পূজে নিরবধি।।
রচিয়া মৃত্তিকা-লিঙ্গ নানা পুষ্প দিয়া।
ঘৃত মধু উপচার বাদ্য বাজাইয়া।।
অবশেষে প্রণমিয়া পড়ি ক্ষিতিতলে।
পতিং দেহি পতিং দেহি পঞ্চবার বলে।।
হেনমতে বহুকাল পূজয়ে মহেশ।
তুষ্ট হৈয়া বর তাহে দেন ব্যোমকেশ।।
পঞ্চস্বামী হবে তোর পরম সুন্দর।
শুনিয়া বিস্ময় মানি কহে যোড় কর।।
কেন হেন উপহাস কর শূলপাণি।
লোকে বেদে বহির্ভূত অপূর্ব্ব কাহিনী।।
শঙ্কর বলেন, কন্যে কি দোষ আমার।
স্বামীবর তুমি যে মাগিলা পঞ্চবার।।
অকারণে কন্যা আর করহ রোদন।
কখন খণ্ডন নহে আমার বচন।।
হইবে তোমার স্বামী পঞ্চ মহারথী।
ক্ষিতিমধ্যে হৈবে তবু সর্ব্বশ্রেষ্ঠা সতী।।
পৃথিবীতে ঘুষিবেক তোমার চরিত্র।
তম নাম নিলে লোক হইবে পবিত্র।।
এত বলি অন্তর্হিত হইলেন হর।
গঙ্গাজলে গিয়া কন্যা ত্যজে কলেবর।।
পুনঃ সেই কন্যা জন্মে কাশীরাজালয়ে।
সেই জন্ম পতিহীন যৌবন সময়ে।।
না হইল বিবাহ যৌবনকাল গেল।
আপনারে তিরস্কারি তপ আরম্ভিল।।
হিমাদ্রি পর্ব্বতে তপ করে অনুক্ষণ।
তপস্যা দেখিয়া চমৎকার দেবগণ।।
নিকটে আইল সবে দেখিয়া অদ্ভুত।
ধর্ম্ম ইন্দ্র পবন অশ্বিনী-যুগ্মসুত।।
জিজ্ঞাসিল, কন্যা তপ কর কি কারণে।
এমত কঠোর তপ এ নব-যৌবনে।।
স্বামী-ইচ্ছায় তপস্যা কর বরাননে।
যারে ইচ্ছা বর তুমি আমা পঞ্চজনে।।
এত শুনি চাহে কন্যা পঞ্চজন পানে।
সবার সমান রূপ দেখিল নয়নে।।
কাহারে বরিব, হেন ভাবিতে লাগিল।
অধোমুখ হৈয়া কন্যা নিঃশব্দে রহিল।।
কন্যার হৃদয়-কথা জানি পঞ্চজন।
পঞ্চজন বর তারে দিল ততক্ষণ।।
ত্যজ তপ, এই দেহ ত্যজ, কন্যা তুমি।
পর-জন্মে আমরা হইব তব স্বামী।।
এত বলি অন্তর্হিত হৈল দেবগণ।
তপস্যা করিয়া কন্যা ত্যজিল জীবন।।
সেই কন্যা তব গৃহে হইল দ্রৌপদী।
অযোনি-সম্ভবা জন্ম হৈল যজ্ঞভেদী।।
ধর্ম্ম ইন্দ্র বায়ু আর অশ্বিনী-যুগল।
পঞ্চ-অংশে জন্মিল পাণ্ডব মহাবল।।
পাণ্ডবের হেতু কৃষ্ণা ধাতার নির্ম্মাণ।
পূর্ব্বের নির্ব্বন্ধ ইহা কে করিবে আন।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান।।