১০৮তম অধ্যায়
দক্ষিণদিকে গমনের মাহাত্ম্য
“ ‘হে বান্ধব! পূর্ব্বে সূৰ্য্যদেব বিধিবিহিত যজ্ঞের দক্ষিণস্বরূপ এই দিক তাঁহার গুরু কশ্যপকে প্রদান করিয়াছিলেন; তিন্নিমিত্ত এই দিক দক্ষিণানামে প্রসিদ্ধ হইয়াছে। শ্রবণ করিয়াছি, সমস্ত লোকের পিতৃপক্ষ ও উষ্ণান্নভোজী দেবগণ এই দক্ষিণদিকে অবস্থান করেন। এই দিকে ত্রয়োদশ বিশ্বদেব পিতৃগণের সহিত লৌকিক যজ্ঞের তুল্যভাগী হইয়াছেন; এই দিক ধর্মের দ্বিতীয় দ্বার বলিয়া নির্দ্দিষ্ট আছে। এই দিকে ত্রুটি ও লবপ্রভৃতি কালের গণনা হইয়া থাকে। এই দিকে দেবর্ষি, পিতৃলোক ও রাজর্ষিগণ পরমসুখে বাস করেন। এই দিকে সত্য, ধর্ম্ম ও কর্ম্ম প্রতিষ্ঠিত আছে; ইহাই আত্মনিষ্ঠ ব্যক্তিদিগের গতি ও কর্ম্মক্ষেত্ৰ। এই দিকে সকল লোককেই গমন করিতে হয়; কিন্তু স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তিগণ কখন সুখ লাভ করিতে সমর্থ হয় না। এই দিকেই প্রতিকূলচারী বহু সহস্র রাক্ষস সৃষ্ট হইয়াছে; অকৃতাত্মগণ তাহাদিগকে দর্শন করে। গন্ধর্ব্বগণ এই দিকের মন্দরকুঞ্জে [মন্দরগিরিকাননে] এবং ঋষিদিগের আশ্রমে ও ব্রাহ্মণগণের সদনে মনোহর গাথাসকল গান করিয়া থাকে। এইদিকে রৈবতক মনু গাথাসংকলিত সামগান শ্রবণ করিয়া স্ত্রী, অমাত্য ও রাজ্য পরিত্যাগপূর্ব্বক অরণ্যে গমন করিয়াছেন। এই দিকে সাবর্ণি ও যবক্রীততনয় এরূপ সীমা সংস্থাপিত করিয়াছেন যে, সূৰ্য্যদেব তাহা অতিক্রম করিতে পারেন না। এই দিকে পুলস্ত্যনন্দন মহাত্মা রাবণ তপস্যা করিয়া অমরগণের নিকট অমরত্ব প্রার্থনা করিয়াছিলেন। এই দিকে বৃত্ৰাসুর ব্যবহারদোষে দেবরাজের দ্বেষভাজন হইয়াছিল। এই দিকে সমস্ত প্ৰাণ সমাগত ও পুনরায় পঞ্চধা হইয়া বিনির্গত হইয়া থাকে। এই দিকে দুরাচার মনুষ্যগণ স্বকৃত দুষ্কৃতের ফলভোগ করে। এই দিকে বৈতরণী নদী বৈতরণ [পারের-উদ্ধারের] দ্রব্যসমূহে পরিবৃত হইয়া আছে। এই দিকে গমন করিলেও সুখ দুঃখের অবসান হয়। এই দিকে দিনকর প্রত্যাবৃত্ত হইলে সুরস। জলসকল ক্ষয় হইতে থাকে এবং তিনি পুনরায় উত্তরদিকে গমন করিয়া হিমবর্ষণ করিতে থাকেন। আমি পূর্ব্বে ক্ষুধার্ত্ত ও চিন্তিত হইয়া এই দিকে গমনপূর্ব্বক পরস্পর যুধ্যমান [যুধ্যরত] অতিবৃহৎ গজ ও কচ্ছপ লাভ করিয়াছিলাম। এই দিকে চক্ৰধনুনামে মহর্ষি সূৰ্য্য হইতে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন; যিনি সগরবংশধ্বংসকারী কপিলদেব বলিয়া বিখ্যাত হইয়াছেন। এই দিকে শিবনামী ব্রাহ্মণী সকল বেদ অধ্যয়ন [স্ত্রীলোকের বেদপাঠ নিষিদ্ধ। সত্যাদি যুগে গার্গী, বাৎসী প্রভৃতি কতিপয় বিপ্ৰকন্যা উপনয়নসাংস্কার গ্রহণ করিয়া অবিবাহিত থাকিয়া চিরব্রহ্মচৰ্য্য ও গুরুগৃহে বাসপূর্ব্বক উপনিষদাদি বেদপাঠ ও স্বয়ং হোম করিতেন। একালের নারীগণের জন্য মম্বাদি ঋষি বৈদিক সংস্কার ব্যবস্থা করিয়াছেন—স্ত্রীলোকের বিবাহই উপনয়ন, পতিসেবা, গুরুগৃহে বাস এবং গাৰ্হস্থ্যপালন হোমস্থানীয়। একালে সাক্ষাৎ উপনয়নসংস্কার, গুরুগৃহে বাস, ব্রহ্মচৰ্য্য, বেদপাঠ, অগ্নিতে আহুতি প্রভৃতি নাই। আলোচ্য শিবানম্নী ব্রাহ্মণী পূর্বোক্ত গার্গী, বাৎসীর মত একজন। ইঁহারা সাধারণের অনুকরণস্থানীয় নহেন।] করিয়া দুরপনেয় সন্দেহে নিপতিত হইয়াছিলেন। এই দিকে বাসুকি, তক্ষক ও ঐরাবতনাগকর্ত্তৃক পরিরক্ষিত ভোগবতী নগরী সন্নিবেশিত আছে। সেই নগরী হইতে বহির্গত হইবার সময় ঘোরতর তিমির [অন্ধকার] প্রতীয়মান হয়; স্বয়ং ভানু [সূৰ্য্য] বা কৃশানু [অগ্নি], তাহা ভেদ করিতে সমর্থ হয়েন না। হে গালিব! তুমি যদি প্রাচীর দিকে গমন কর, তাহা হইলে সেই দিকের বৃত্তান্ত শ্রবণ কর।’ ”