সপ্তাধিকশততম অধ্যায়
বিদুরের পূর্ব্বজন্ম-মাণ্ডব্য উপাখ্যান
জনমেজয় জিজ্ঞাসা করিলেন, ভগবান! ধর্ম্মরাজ কি দুষ্কর্ম্ম করিয়াছিলেন যে, তিনি শাপগ্রস্থ হইলেন এবং কোন্ ব্রহ্মর্ষির শাপেই বা তিনি শূদ্রযোনি প্রাপ্ত হইলেন? বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ ! শ্রবণ করুন। মাণ্ডব্য নামে এক সত্যবাদী, জিতেন্দ্রিয়, তপোনোরত, পরম-ধার্ম্মিক ব্রাহ্মণ ছিলেন। সেই মৌনব্রতাবলম্বী মহাতপাঃ আশ্রমের দ্বারদেশস্থ বৃক্ষমূলে উপবেশনপূর্ব্বক ঊর্দ্ধবাহু হইয়া যোগভ্যাস করিতেন। এইরূপে বহুকাল অতীত হইলে একদিবস লোপ্ত্রহারী কতিপয় দস্যু মাণ্ডবের আশ্রমে প্রবিষ্ট হইল। তস্করেরা নগরপালদিগের ভয়ে ভীত হইয়া তথায় স্তেয়-ধন লুক্কায়িত করিয়া প্রচ্ছন্নভাবে অবস্থিতি করিতে লাগিল। অনন্তর অনুগামী নগরপাল-সকল তথায় উপস্থিত হইয়া ঋষিকে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ”’হে দ্বিজোত্তম! তস্করেরা কোন্ পথ দিয়া পলায়ন করিয়াছে, শীঘ্র আজ্ঞা করুন, আমরা সেই দিকে তাহাদিগকে অন্বেষণ করি। ”ঋষি মৌনব্রতাবলম্বী ছিলেন, সুতরাং ভাল-মন্দ কিছুই বলিলেন না ।
মাণ্ডব্যের শূলবেধ
অনন্তর রাজপুরুষেরা ইতস্ততঃ অন্বেষণ করিতে করিতে লুক্কায়িত স্তেয়-ধন আশ্রমে দেখিতে পাইল। তখন ঋষির প্রতি তাহাদিগের বিলক্ষণ সন্দেহ হওয়াতে তাহারা সেই ঋষিকে ও দস্যুদলকে রুদ্ধ করিয়া রাজগোচরে আনয়ন করিল। রাজা নগরপালদিগের মুখে সমস্ত বৃত্তান্ত অবগত হইয়া ঋষি ও তস্করগণের প্রাণবধরূপ দণ্ডবিধান করিলেন। রাজপুরুষেরা আজ্ঞা পাইবামাত্র তপোধনকে শূলে আরোপিত করিয়া হৃত-ধন গ্রহণপূর্ব্বক রাজসমীপে প্রত্যাগমন করিল। তপোনিষ্ঠ মুনিবর আপন দুরবস্থার বিষয় কিছুই জানিতে পারিলেন না এবং তাঁহার তপস্যার ভঙ্গ হইল না। তিনি শূলবিদ্ধ ও আহারবিহীন হইয়াও বহুকাল পর্য্যন্ত জীবনধারণ করিয়াছিলেন। একদা রজনীযোগে কতিপয় মহর্ষি পক্ষিরূপ ধারণ করিয়া তথায় আগমনপূর্ব্বক মাণ্ডবের তাদৃশী দুরবস্থা দর্শনে যৎপরোনাস্তি দুঃখিত হইয়া তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ”হে দ্বিজোত্তম! আপনি এমন কি পাপ করিয়াছেন যে, শূলবিদ্ধ হইলেন? বলুন, শুনিতে আমাদিগের নিতান্ত বাসনা হইতেছে।”