অন্তর্য্যামী সর্ব্বজ্ঞ সকল মুনিগণ।
পাণ্ডব বিবাহ হেতু কৈলা আগমন।।
শিষ্যসহ পরাশর মহা তপোবল।
জমদগ্নি জৈমিনি শ্রীঅসিত দেবল।।
কৌণ্ডমুনি মাণ্ডব্য ভার্গব জরদগব।
দুর্ব্বাসা লোমশ আঙ্গিরস তপোধন।।
শিষ্য ষষ্টি-সহস্রে আইল দ্বৈপায়ন।।
যতেক আইল মুনি লিখনে না যায়।
দ্বারী সব আসি দ্রুত দ্রুপদে জানায়।।
শুনিয়া দ্রুপদ-রাজা শীঘ্রগতি উঠি।
আগুসরি প্রণমিল ভূমে শির লুঠি।।
গললগ্নীকৃতবাসে করি সম্ভাষণ।
বসিবারে সবে দিল উত্তম আসন।।
পাদ্য-অর্ঘ্য ধূপ দীপ গন্ধে কৈল পূজা।
যোড়হাতে দাঁড়াইল পাঞ্চালের রাজা।।
আমার ভাগ্যের কথা কহনে না যায়।
সে কারণে মুনিগণ আইলা হেথায়।।
আছিল সন্দেহ এই বিবাহ কারণ।
বিধিদাতা সংসারে তোমরা সর্ব্বজন।।
যে বিধান কহিবা, করিব সেইমত।
বিচারিয়া সব কথা দেহ অভিমত।।
মুনিগণ বলে শুন ইহা কি কহিব।
পূর্ব্বে যে ধাতার সৃষ্ট তাহা কি ঘুচাব।।
কৃষ্ণার বিবাহ হেতু এই নিরূপণ।
ঘটিবে যে পঞ্চপতি বিধির লিখন।।
সুরভির শাপ আর পমুপতি-বরে।
পঞ্চপতি পাবে সতী কহিনু তোমারে।।
মুনিগণ-মুখে শুনি এতেক বচন।
মৌনী হৈয়া রহিলেন দ্রুপদ-রাজন।।
ধৃষ্টদ্যুন্ন বলে, এ ত নাহিক সংসারে।
লোকে যাহা নাহি, তাহা করি কি প্রকারে।।
এহেন করিতে কর্ম্ম লোকে উপহাস।
এমত নিন্দিত কর্ম্ম কহ কেন ভাষ।।
যুধিষ্ঠির বলিলেন, অন্য নাহি জানি।
মায়ের বচন যে অধিক বেদবাণী।।
মুনিগণমুখে শুনিয়াছি পূর্ব্ব বাণী।
জটিল ব্রাহ্মণ ছিল সর্ব্বশাস্ত্রজ্ঞানী।।
যত দ্বিজগণে তিনি করান পঠন।
সর্ব্বশাস্ত্র বেদাগম গ্রন্থ ব্যাকরণ।।
পড়াইয়া পিছে দেন এই উপদেশ।
জটিল ব্রাহ্মণ ছিল সর্ব্বশাস্ত্রজ্ঞানী।।
যতি দ্বিজগণে তিনি করান পঠন।
সর্ব্বশাস্ত্র বেদাগম গ্রন্থ ব্যাকরণ।।
পড়াইয়া পিছে দেন এই উপদেশ।
যত শাস্ত্র হৈতে শুন কহি যে বিশেষ।।
মাতার যে আজ্ঞা যত্নে করিবা পালন।
না করিবা দ্বিধা রহে বেদের বচন।।
লোক বেদ হৈতে গুরুশ্রেষ্ঠ আমি জানি।
সর্ব্বগুরু হৈতে শ্রেষ্ঠ জননীরে মানি।।
জননী আমারে আজ্ঞা দেন এই মত।
পঞ্চজনে বাঁটি লহ অন্য ভিক্ষা মত।।
ধর্ম্মাধর্ম্ম বলি তাহা কি খণ্ডিতে পারে।
অধর্ম্মেতে আছে ধর্ম্ম, ধর্ম্মে পাপ করে।।
অধর্ম্ম কর্ম্মেতে মম মন নাহি রয়।
এ কর্ম্ম করিতে মম চিত্তে বড় লয়।।
সে কারণে বুঝি এই ধর্ম্ম আচরণ।
বিশেষে খণ্ডিতে নারি মায়ের বচন।।
অনন্তরে বলিতে লাগিল বৃকোদর।
কার শক্তি লঙ্ঘিবেক ধর্ম্মের উত্তর।।
বেদশাস্ত্র লোক আমি সবার বাহির।
আমা সবাকার ধাতা কর্ত্তা যুধিষ্ঠির।।
আমরা না মানি শাস্ত্র কিম্বা অন্য জনে।
ধর্ম্ম-আজ্ঞা পালন করি যে প্রাণপণে।।
কে লঙ্ঘিবে, যে আজ্ঞা করেন যুধিষ্ঠির।
অনেক সহিনু এ পাঞ্চাল নৃপতির।।
পুনঃ পুনঃ ধর্ম্মবাক্য করিলে হেলন।
অন্যজন হৈলে আজি নিতাম জীবন।।
সম্বন্ধে শ্বশুর আনি গুরুমধ্যে গণি।
তেঁই মম ক্রোধেতে রহে তব জীবনী।।
লোকে বেদে যদি বলে, নহে ভীত মন।
আজি হৈতে সর্ব্বশাস্ত্র করহ লিখন।।
ধর্ম্মপুত্র যুধিষ্ঠির যে আজ্ঞা করিবে।
কারহার আছয়ে শক্তি কে তাহা দূষিবে।।
হেনকালে কুন্তী মুনি হইল বাহির।
কৃতাঞ্জলি বন্দে সব চরণ মুনির।।
ব্যাসের চরণে ধরি সকরুণে কয়।
আমারে নিস্তার কর, মিথ্যা বাক্যে ভয়।।
যা বলিল যুধিষ্ঠির, সেই সত্য কথা।
যেন মতে মম বাক্য না হয় অন্যথা।।
মুনি বলে, ত্যজ ভয়ষ না কর ক্রন্দন।
অলঙ্ঘ্য তোমার বাক্য নহিবে লঙ্ঘন।।
মহাভারতের কথা সুধার সাগর।
কাশীরাম দাস কহে, শুনে সাধু নর।।