১০৭তম অধ্যায়
গুরুদক্ষিণা সংগ্ৰহাৰ্থ পূর্ব্বদিগগমন প্রসঙ্গ
“গরুড় কহিলেন, “হে গালিব! বুদ্ধিপ্রণেতা [জ্ঞানের সংযোগকারী] ভগবান বিষ্ণু আমাকে অনুজ্ঞা করিয়াছিলেন, পূর্ব্ব, দক্ষিণ, পশ্চিম বা উত্তর প্রথমে কোন দিকে গমন করিব? তোমার যাহা ইচ্ছা হয় বল। সকল লোকপ্রকাশক ভগবান মরীচিমালী [সূৰ্য্য] যে দিকে সমুদিত হয়েন, সাধ্যগণ সন্ধ্যাকালে যে দিকে তপস্যা করেন, বিশ্বব্যাপিনী [সর্ব্বজীবে স্থিতা] বুদ্ধি প্রথমে যে দিকে আবির্ভূত হইয়াছিলেন, যজ্ঞসকল নিয়ন্ত্রিত করিবার নিমিত্ত যে দিকে ধর্মের দুই চক্ষু বিদ্যমান আছে, যে দিকে আহুতি প্ৰদান করিলে সেই আহুত হব্য সকল দিকেই গমন করে, সেই প্ৰাচী দিক দিবস ও স্বৰ্গপথের দ্বারস্বরূপ। এই দিকেই দক্ষ প্রজাপতির কন্যা অদিতিপ্রভৃতির গর্ভে কশ্যপের ঔরসে প্রজাসকল উৎপন্ন ও বৰ্দ্ধিত হইয়াছিলেন, এই দিকে দেবগণ শ্ৰীলাভ করিয়াছিলেন, এইদিকে ইন্দ্রের অভিষেক সম্পন্ন হইয়াছিল এবং এই দিকে দেবগণ তপস্যা করিয়াছিলেন। পূর্ব্বকালে দেবগণ প্রথম এই দিকে বাস করিয়াছিলেন; এই নিমিত্ত ইহার নাম পূর্ব্বদিক হইয়াছে এবং ইহাই পূর্ব্বতনদিগের অধিকৃত বলিয়া বিখ্যাত। এই দিকে দেবগণ সুখার্থী হইয়া সমুদয় কর্ম্ম সম্পাদন করিয়াছিলেন; এই দিকে ভূতভাবন ভগবান ব্ৰহ্মা সমস্ত বেদ গান করিয়াছিলেন; এই দিকে সাবিত্রীদেবী সবিতার মুখ হইতে সমুৎপন্ন হইয়া ব্ৰহ্মবাদিগণকে আশ্রয় করিয়াছিলেন; এই দিকে সূৰ্য্যদেব যাজ্ঞবল্ক্যকে যজুর্ব্বেদসকল প্ৰদান করিয়াছিলেন; এই দিকে সোমরস বরলাভ করিয়া যজ্ঞে সুরগণের পেয় হইয়াছেন; এই দিকে হুতাশন পরিতৃপ্ত হইয়া আপনাকে প্রসূতি সোমরস, ঘৃত ও দুগ্ধাদিম্বরূপ জল উপভোগ করেন; এই দিকে বরুণদেব পাতাল আশ্রয় করিয়া শ্ৰীলাভ করিয়াছেন; এই দিকে মিত্র ও বরুণের যজ্ঞকালে পুরাতন বশিষ্ঠের উৎপত্তি, প্রতিষ্ঠা ও নিধন হইয়াছিল; এই দিকে ওঁকারের দশসহস্ৰ পথ উৎপন্ন হইয়াছে; এই দিকে ধূমপায়ী মুনিগণ আজ্যধূম পান করিয়া থাকেন; এই দিকে বরাহপ্রভৃতি ভূরি ভূরি পশু প্রেক্ষিত [যজ্ঞে উৎসৰ্গার্থ স্নাত] হইয়াছিল; এই দিকে দেবরাজ দেবগণের নিমিত্ত যজ্ঞভাগ পরিকল্পিত করিয়াছেন এবং এই দিকে হুতাশন সমুদিত ও জাতক্ৰোধ হইয়া অহিতকারী কৃতঘ্ন মানব ও অসুরগণকে সংহার করেন। এই পূর্ব্বদিকই ত্রিলোকের দ্বার, স্বর্গের দ্বার ও সুখের দ্বার। যদি তোমার ইচ্ছা হয়, চল, এই পূর্ব্বদিকেই [পূর্ব্বদিকের এত অধিক মাহাত্ম্য বলিয়াই দৈবকাৰ্য্য পূর্ব্বদিকে করার প্রশস্ততা] গমন করি। আমি যাহার বাক্যের অধীন, তাঁহার প্রিয়কাৰ্য্য করা আমার অবশ্য কর্ত্তব্য; অতএব হে গালিব! তুমি বল, তাহা হইলেই আমি গমন করিব অথবা অন্যান্য দিকের বিষয় শ্রবণ করা।’ ”