১০৬তম অধ্যায়
বিষণ্ণ দেবগণকে ব্ৰহ্মার অভয়দান
লোমশ কহিলেন, “হে মহারাজ! তখন সর্ব্বলোকপিতামহ ব্ৰহ্মা সেই সমস্ত দেবগণকে কহিলেন, “হে সুরগণ! তোমরা স্ব স্ব অভিলষিত স্থানে গমন কর! বহুকালের পর মহারাজ ভগীরথ স্বীয় জ্ঞাতিগণের নিমিত্ত এই পয়োনিধিকে পুনর্ব্বার প্রকৃতিস্থ করিবেন।” অনন্তর দেবগণ পিতামহের বাক্যানুসারে স্বস্ব স্থানে গমন করিয়া সেই কালযোগ প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন।”
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “হে ব্ৰহ্মন। কাহারা মহারথ ভগীরথের জ্ঞাতি? মহারাজ ভগীরথ যে ঈদৃশ দুরূহ ব্যাপারে হস্তার্পণ করিয়াছিলেন, তাহার কারণ কি এবং সরিৎপতিই বা কিরূপে পরিপূর্ণ হইল? এই সকল বিষয় সবিশেষ শ্রবণ করিবার নিমিত্ত আমার একান্ত কৌতুহল জন্মিয়াছে, আপনি অনুগ্রহ করিয়া ঐ সকল রাজগণের চরিত্র কীর্ত্তন করুন।”
যুধিষ্ঠিরসমীপে লোমশমুনিকর্ত্তৃক সগরবৃত্তান্ত বর্ণন
বিপ্রবর লোমশ ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠিরকর্ত্তৃক এইরূপ অভিহিত হইয়া মহাত্মা সাগরের বৃত্তান্ত কীর্ত্তন করিতে লাগিলেন। “হে রাজন! ইক্ষ্বাকুবংশে সগরনামে এক অসামান্য রূপগুণবলসম্পন্ন ভূপতি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ক্রমে ক্রমে হৈহয় ও তালজঙ্ঘ ভূপতিগণকে পরাজয়পূর্ব্বক রাজন্যগণকে আপনার বশংবদ করিয়া স্বচ্ছন্দে রাজ্য-শাসন করিয়াছিলেন। বৈদভী ও শৈব্যা নামে তাঁহার দুই রূপযে বনবতী মহিষী ছিলেন। বহুকাল অতীত হইল, তথাপি মহারাজ সগর স্বীয় সহধর্ম্মিণীগণের গর্ভে অনুরূপ অপত্যলাভ করিতে পারিলেন না। তখন তিনি পুত্ৰকামনায় পত্নীদ্বয় সমভিব্যাহারে কৈলাস-পর্ব্বতে গমনপূর্ব্বক কঠোর তপস্যা আরম্ভ করিলেন। তিনি এইরূপে কিয়াৎকাল তপস্যা করিয়া পরিশেষে পিনাকপাণি ভগবান শূলপাণির সাক্ষাৎ লাভ করিলেন। মহারাজা সগর ভগবান ভূতভাবন ভবানীপতিকে অবলোকন করিবামাত্র স্বীয় পত্নীদ্বয়-সমভিব্যাহারে তাহার চরণে প্ৰাণপাত করিয়া পুত্র প্রার্থনা করিলেন। ত্রিশূলধারী ত্রিপুরান্তক পরম পরিতুষ্ট হইয়া সস্ত্রীক সগর-নরপতিকে তৎক্ষণাৎ বর প্রদান করিলেন, “হে রাজন! তোমার এক মহিষীর গর্ভে ষষ্টিসহস্ৰ পরমাদর্পিত মহাবলপরাক্রান্ত পুত্ৰ জন্মিবে; কিন্তু তাহারা সকলেই এককালে করাল কালকবলে নিপতিত হইবে। আর অন্য মহিষীর গর্ভে একমাত্র পুত্র সমুৎপন্ন হইবে, সেই তোমার বংশরক্ষা করিবে।” ভগবান রুদ্র সগরকে এইরূপ বরপ্রদানানন্তর সেই স্থানে অন্তর্হিত হইলেন; মহারাজা সগরও স্বাভিলষিত বরলাভে সাতিশয় সন্তুষ্ট হইয়া পত্নীদ্বয়-সমভিব্যাহারে স্বীয় ভবনে গমন করিলেন।
“কিয়দ্দিন পরে সগর-নৃপতির উভয় সহধর্ম্মিণীই গর্ভিণী হইলেন। বৈদভী যথাকলে এক অলাবু প্রসব করিলেন। শৈব্যার গর্ভে এক সুররূপী সুকুমার নবকুমার জন্মিল। মহীপতি সগর সেই বৈদভীপ্রসূত অলাবু পরিত্যাগ করিতে মানস করিতেছেন, এমত সময়ে অন্তরীক্ষ হইতে অতি গভীরনিঃস্বন এই বাক্য তাঁহার কর্ণকুহরে প্রবিষ্ট হইল, “হে রাজন! তুমি পূর্ব্বাপর। পৰ্য্যালোচনা না করিয়া সহসা পুত্র পরিত্যাগ করিও না; পরম যত্নসহকারে এই অলাবুমধ্য হইতে বীজ-সকল নিষ্কাশিত করিয়া ষষ্টিসহস্ৰ ভাগে বিভক্ত করিয়া ঘৃতপূর্ণ উপস্বেদযুক্ত [অগ্নির তাপে উষ্ণ] কুম্ভসমূদয়ের মধ্যে রক্ষা কর, তাহা হইলেই তোমার ষষ্টি-সহস্ৰ পুত্ৰলাভ হইবে। দেবাদিদেব মহাদেব এইরূপ নিয়মেই তোমার পুত্রোৎপত্তি নির্দেশ করিয়াছেন, তুমি কদাচ অন্যথা ভাবিও না।’ ”