এইরূপ নিয়মেতে কত কাল গেল।
রাজ্য দিতে রঘুনাথে রাজা বিচারিল।।
পাত্র মিত্র ডাকি সবে কহে সমাচার।
অধিবাস কর রামে দিব রাজ্যভার।।
কৈকেয়ী, দাসীর মুখে শুনি এই কথা।
অতিমানে রহিলেন ভরতের মাতা।।
রজনীতে দশরথ গেল তাঁর স্থানে।
দেখিলা, কৈকেয়ী আছে মহা অভিমানে।।
অনেক সাধিতে রাজা শেষে কহে রাণী।
পাসরিলা মহারাজ পূর্ব্বের কাহিনী।।
দুই বর দিতে মোরে কৈলে অঙ্গীকার।
সেই বর দিয়া আজি সত্যে হও পার।।
রাজা বলে, প্রাণপ্রিয়ে এই কোন্ দায়।
অবিলম্বে বর লহ, দিব সর্ব্বথায়।।
কৈকেয়ী কহিল, নাথ এই এক বর।
ভরতে করহ এবে রাজ্য দণ্ডধর।।
দ্বিতীয় করহ পূর্ণ এই অভিলাষ।
চতুর্দ্দশ বর্ষ যাবে রাম বনবাস।।
এতেক শুনিয়া রাজা কৈকেয়ীর বাণী।
মূর্চ্ছিত হইয়া শোকে পড়িল ধরণী।।
চৈতন্য পাইয়া রাজা উঠি কতক্ষণে।
কৈকেয়ীরে বর দিয়া রহে দুঃখমনে।।
তবে রাম শুনিয়া এ সব সমাচার।
পালিতে পিতার সত্য করি অঙ্গীকার।।
বিদায় লইতে যান নৃপতির স্থানে।
ধূলায় ধূসর রাজা অতি দুঃখ মনে।।
তথা না পাইয়া কিছু পিতার উত্তর।
বিদায় লইতে যান মায়ের গোচর।।
শ্রীরামের বনবাস, শুনি এই বাণী।
শোকভরে হতজ্ঞান কান্দে মহারাণী।।
বিলাপ করিয়া পুত্রে কত কৈল মানা।
মধুর বচনে রাম করেন সান্ত্বনা।।
পিতৃসত্য পালিবারে চলিলেন বন।
সংহতি চলিল সীতা, অনুজ লক্ষ্মণ।।