১০১তম অধ্যায়
নারদ-মাতলির রসাতল-বিচরণ
“নারদ কহিলেন, “হে মাতলে! এই রসাতলনামে সপ্তম পাতাল, অমৃতসম্ভবা গোমাতা সুরভি এই স্থানে অবস্থান করেন। তাঁহা হইতে নিরন্তর পৃথিবীর সমস্ত সারসম্ভূত ষড়্বিধরসসম্পন্ন অনুপম রসাযুক্ত ক্ষীর নিঃসৃত হইয়া থাকে। পূর্ব্বে পিতামহ ব্ৰহ্মা অমৃতপনে পরিতৃপ্ত হইয়া যখন তাহার সার উদগিরণ করিয়াছিলেন, তখন অনিন্দিতা সুরভি তাহার মুখ হইতে উৎপন্ন হইয়াছেন। তাঁহার ক্ষীরধারা মহীতলে নিপততিত হইয়া পরমপবিত্র ক্ষীরনিধি [দুগ্ধসমুদ্র] সমুৎপন্ন করিয়াছে। ক্ষীরের ফেনদ্বারা ঐ সাগরের পর্য্যন্তপ্রদেশ [পরিধি-বেষ্টন] পরিবেষ্টিত হওয়াতে উহা পুষ্পিতবৎ প্রতীয়মান হইতে লাগিল। কতকগুলি মুনি ফেনপানপূর্ব্বক উগ্ৰ তপস্যায় নিমগ্ন হইয়া তথায় অবস্থান করেন; এই নিমিত্ত তাঁহারা ফেনপ বলিয়া বিখ্যাত হইয়াছেন; দেবগণও তাঁহাদিগের নিকট ভীত হইয়া থাকেন। সুরভির গর্ভসম্ভূত আর চারটি ধেনু চতুর্দ্দিকে অবস্থানপূর্ব্বক ঐ সকল দিক প্রতিপালন ও ধারণ করিয়া আছেন। তাহাদিগের মধ্যে সুরূপ পূর্ব্বদিক, হংসিকা দক্ষিণদিক, মহানুভবা বিশ্বরূপ সুভদ্ৰা পশ্চিমদিক এবং সর্ব্বকামপ্রসূতি [সর্ব্বাভীষ্টপ্ৰদাত্রী] ঐলবিলানাম্নী ধেনু অতি পবিত্র উত্তরদিক পালন ও ধারণ করিতেছেন।
“ ‘দেব ও অসুরগণ মন্দর পর্ব্বতকে মন্থনদণ্ড করিয়া ঐসকল ধেনুর দুগ্ধমিশ্রিত সমুদ্রজল মন্থনপূর্ব্বক বারুণী [সুরা], লক্ষ্মী, অমৃত, অশ্বরাজ উচ্চৈঃশ্রব এবং মণিশ্রেষ্ঠ কৌস্তুভ সমুদ্ধৃত করিয়াছেন। এক সুরভি সুধাভোজীদিগকে [সৰ্পগণকে] সুধা, সুধাভোজীদিগকে [পিতৃগণকে] স্বধা ও অমৃতভোজীদিগকে [দেবগণকে] অমৃতদানের নিমিত্ত দুগ্ধ নিঃসরণ করেন। পূর্ব্বে রসাতলবাসীরা এই বিষয়ে এক গাথা গান করিতেন, অদ্যাপি তাহা শ্রুতিগোচর হইয়া থাকে। পণ্ডিতেরা অদ্যাপি এই গাথা গান করিয়া থাকেন যে, রসাতলে যে প্রকার বাসসুখ, তাহা নাগলোকে নাই, স্বৰ্গলোকে নাই এবং বিমানে [অন্তরীক্ষলোকে]ও নাই।” ”